উগ্রতা ডেকে আনে বিপর্যয়

মাওলানা হাফেজ আল আমিন সরকার
মাওলানা হাফেজ আল আমিন সরকার
শেয়ার
উগ্রতা ডেকে আনে বিপর্যয়

এক পরিপূর্ণ জীবন বিধানের নাম ইসলাম। ইসলাম শান্তি, স্বস্তি ও মানবতার কল্যাণ সুনিশ্চিত করার অনন্য আদর্শ। উগ্রতা, মারামারি, কাটাকাটি, সন্ত্রাস, রাহাজানি কিংবা উচ্ছৃঙ্খল আচরণ ইসলাম সমর্থন করে না। অহমিকা, ক্রোধ, হিংসা, কলহ থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দেয় ইসলাম।

ইসলামের সঙ্গে উগ্রতার কোনো সম্পর্ক নেই। ইসলাম সীমা লঙ্ঘনকারীদের কখনোই সমর্থন করে না। অথচ আমাদের সমাজে উগ্রতা আজ মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়ছে। হাটে-মাঠে-ঘাটে যেখানেই যাই সব জায়গায় আজ উগ্রতা আর উচ্ছৃঙ্খলতার ছড়াছড়ি।
মাহফিলের নামে উগ্রতা, রাজনীতির নামে উগ্রতা, রাষ্ট্র পরিচালনার নামে উগ্রতা, বিরোধিতার নামে উগ্রতা, প্রতিদ্বন্দ্বিতার নামে উগ্রতা, প্রতিশোধের নামে উগ্রতা, মতাদর্শ প্রচারের নামে উগ্রতাএমন কোনো জায়গা নেই যেখানে উগ্রতার বিষবৃক্ষ মাথা চাড়া দিয়ে দাঁড়িয়ে নেই। কিন্তু কেন এ ধ্বংসাত্মক প্রচেষ্টা? কেন এ আত্মঘাতী পদক্ষেপ? এ জাতি কি জীবনভর এমন চক্রেই আবদ্ধ থাকবে? কী ধর্মীয়, কী জাগতিকসব বিষয়ে আমরা যেন অসহিষ্ণু এক কুৎসিত জাতিতে পরিণত হয়েছি। অথচ আল্লাহ তাআলা বান্দাকে উগ্রতা নয়, নম্রতা গ্রহণ করার আদেশ করে বলেন, রহমানের বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে বিনম্রভাবে চলাফেরা করে এবং অজ্ঞ লোকেরা যখন তাদের সম্বোধন করে তখন তারা বিতর্ক এড়িয়ে বলে সালাম।

(সুরা : ফুরকান, আয়াত : ৬৩)

রহমানের বান্দাদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে এখানে আল্লাহ হাওনানা শব্দ ব্যবহার করেছেন।

অভিধানে এর অর্থ স্থির, গাম্ভীর্য, বিনয় ইত্যাদি উল্লেখ করা আছে। রহমানের বান্দারা যখন রাস্তায় চলে তখন তারা গর্বভরে চলে না। অহংকারীর মতো জমিনে পা ফেলে না। অহংকারীর মতো বুক ফুলিয়ে চলে না। তারা আত্মগর্বে বিভোর, স্বৈরাচারী ও বিপর্যয়কারীর মতো নিজের চলার মাধ্যমে শক্তি দেখানোর চেষ্টা করে না, বরং তাদের চালচলন হয় ভদ্র, মার্জিত ও সৎ স্বভাবসম্পন্ন ব্যক্তির মতো।

নম্রতার তাৎপর্য বোঝার জন্য একটি উদাহরণ দিচ্ছি। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ওপর আল্লাহর অনুগ্রহগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, কোমলতা ও নম্রতা। কেননা আর দ্বিন প্রচারের জন্য নম্রতাই বেশি প্রয়োজন। রাসুল (সা.) যদি কোমল না হয়ে কঠিন হৃদয়ের অধিকারী হতেন, তাহলে মানুষ হজরতের কাছে না এসে আরো দূরে সরে যেত। আল্লাহ বলেন, আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ রহমত এই যে আপনি তাদের প্রতি নম্রতা দেখাচ্ছেন। যদি আপনি কঠোর স্বভাবের হতেন, তবে তারা আপনার আশপাশ থেকে সরে পড়ত। সুতরাং তাদের ক্ষমা করুন এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। আর কাজকর্মে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করুন। অতঃপর যখন সংকল্প করবেন, তখন আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওয়াক্কুলকারীদের ভালোবাসেন।

(সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৫৯)

রুক্ষ, কর্কশ ভাষা ও উগ্র আচরণ সব সময় ঘৃণিত। মুসলমানের অন্যতম কাজ হলো তারা সব সময় দাঈ ইলাল্লাহ। শুধু নিজেই ইসলাম মানে না, বরং অন্যদেরও ইসলামের প্রতি আহ্বান করা তার দায়িত্ব। আর আল্লাহর পথে আহ্বানকারীদের প্রথম গুণ হতে হবে নরম ভাষায় কথা বলা। আল্লাহ যখন মুসা (আ.)-কে ফেরাউনের কাছে পাঠান তখন আল্লাহ বলেদিয়েছেন, অবশ্যই তার সঙ্গে যেন নরম ভাষায় কথা বলা হয়। আল্লাহ  বলেন, তার সঙ্গে নরম কথা বলো, হয়তো সে উপদেশ গ্রহণ করবে অথবা ভয় করবে।

(সুরা : তহা, আয়াত : ৪৪)

আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ নিজে কোমল, তিনি কোমলতা ভালোবাসেন। আর তিনি কোমলতার প্রতি যত অনুগ্রহ করেন, কঠোরতা এবং অন্য কোনো আচরণের প্রতি তত অনুগ্রহ করেন না।

(মুসলিম, হাদিস : ২৫৯৩)

আসুন! আমরা সর্বত্র উগ্রতা পরিহার করি।

 

লেখক : প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, চরপাথালিয়া সালমান ফারসি (রা.) মাদরাসা, গজারিয়া, মুন্সীগঞ্জ

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

মনীষীদের কথা

শেয়ার
মনীষীদের কথা

পৃথিবীতে মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ আনুগত্য হলো অন্তরালের জীবন পরিশুদ্ধ করা এবং অন্তরের ব্যাধি দূর করা।

আবদুল্লাহ ইবনে নূর (রহ.)

 

আমলের মাধ্যমে ইলম (দ্বিনি জ্ঞান) সজীব হয় যদি তা আল্লাহর দরবারে কবুল হয়, নতুবা তা মানুষের জন্য বোঝা হবে।

আলী ইবনে আবি তালিব (রা.)

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

প্রশ্ন-উত্তর

    সমাধান : ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকা
শেয়ার
প্রশ্ন-উত্তর

মাগরিব-এশা একাকী পড়ার সময় কিরাত

প্রশ্ন : আমি যদি মাগরিব বা এশার নামাজের সময় মসজিদে গিয়ে দেখি যে নামাজ শেষ হয়ে গেছে, তাহলে কি নামাজের কিরাত জোরে পড়ব, নাকি আস্তে পড়ব। উল্লেখ্য, আমি যখন বাসায় একাকী এসব নামাজ পড়ি, কিরাত জোরে পড়ি, যা অন্য রুম থেকে শোনা যায়। এভাবে নামাজ পড়লে শুদ্ধ হবে?

হুমায়ূন, নারায়ণগঞ্জ

উত্তর : জামাতে নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে যেসব নামাজে কিরাত জোরে পড়া হয়, সেই নামাজগুলো একাকী পড়ার সময় কিরাত আস্তে ও জোরে, উভয় পদ্ধতিতেই পড়া যায়। তবে অধিক জোরে না পড়ে স্বাভাবিক আওয়াজে পড়বে।

আর ওই নামাজ ওয়াক্তের পরে কাজা করার সময় কিরাত আস্তে পড়া আবশ্যক। (আদ্দুররুল মুখতার : ১/২৫১)

 

মসজিদের সম্পদ আত্মসাৎকারীর শাস্তি

প্রশ্ন : মসজিদের সম্পদ আত্মসাৎকারীর দুনিয়া ও পরকালে শাস্তি কী হবে?

আরিফ, আশুলিয়া

উত্তর : মসজিদের সম্পদ আত্মসাৎকারী কঠিন গুনাহগার হবে এবং তাওবা করে মসজিদের আত্মসাত্কৃত সম্পদ ফেরত না দিলে আখিরাতে আজাবের সম্মুখীন হবে। এলাকাবাসী তাকে দায়িত্ব থেকে বরখাস্ত করে দেবে এবং প্রয়োজনে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে। (আদ্দুররুল মুখতার : ৪/৩৮০)

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

কোরআন থেকে শিক্ষা

    পর্ব : ৭০১
শেয়ার
কোরআন থেকে শিক্ষা

আয়াতের অর্থ : নুহ বলেছিল, হে আমার প্রতিপালক আমাকে সাহায্য কোরো। কারণ তারা আমাকে মিথ্যাবাদী বলছে।...যখন তুমি ও তোমার সঙ্গীরা নৌযানে আসন গ্রহণ করবে তখন বোলো, সব প্রশংসা আল্লাহরই, যিনি আমাকে উদ্ধার করেছেন অত্যাচারী সম্প্রদায় থেকে। আরো বোলো, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে এমনভাবে অবতরণ করাও যা হবে কল্যাণকর; আর তুমিই শ্রেষ্ঠ অবতরণকারী।

তাতে অবশ্যই নিদর্শন আছে। আর আমি তাদেরকে পরীক্ষা করেছিলাম।  (সুরা : মুমিনুন, আয়াত : ২৬-৩০)

আয়াতগুলোতে নুহ (আ.)-এর মহাপ্লাবনের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।

 

শিক্ষা ও বিধান

১. নুহ (আ.)-এর দোয়ার ভাষা থেকে বোঝা যায় তিনি অপারগ হয়েই স্বজাতির বিরুদ্ধে দোয়া করেছিলেন।

২. আল্লাহর পক্ষ থেকে শাস্তির ফায়সালা হওয়ার পর দোয়া নিষ্ফল হয়ে যায়। তাঁর পূর্ব পর্যন্ত নিজ পরিবারের জন্য দোয়া করা যায়।

৩. আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, নুহ (আ.)-এর নৌকায় ৮০ মানুষ ছিল। তাদের মধ্যে তাঁর পরিবারের সদস্য ছিলেন আটজন।

৪. যানবাহনে আরোহণ ও অবতরণের সময় মাসনুন দোয়া পড়া উত্তম। এতে আল্লাহর রহমত পাওয়া যায় এবং যাত্রা নিরাপদ হয়।

৫. নৌযানে ওঠার সময় পড়তে হয় বিসমিল্লাহি মাজরেহা ওয়া মুরসাহা এবং নামার সময় পড়তে হয় রাব্বি আনজিলনি মুনজালান মুবারাকান ওয়া আন্তা খাইরুল মুনজিলিন। (তাফসিরে মুনির : ৯/৩৫৬)

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

কোরআনে সর্বাধিকবার ব্যবহৃত কয়েকটি শব্দ

শেয়ার
কোরআনে সর্বাধিকবার ব্যবহৃত কয়েকটি শব্দ

পবিত্র কোরআনে বহু শব্দের পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। সর্বাধিকবার এসেছে এমন ২০টি শব্দের বিবরণ দেওয়া হলো।

১. মিন : অর্থ থেকে। শব্দটি ২৩৬৬ বার ব্যবহৃত হয়েছে।

২. আল্লাহ : মহান স্রষ্টার সত্তাগত নাম। এসেছে ২১৫৩ বার।

৩. ফি : অর্থ ভেতর বা মধ্যে। ব্যবহৃত হয়েছে ১১৮৬ বার।

৪. মা : অর্থ যা (ইতিবাচক), না (নেতিবাচক)। ব্যবহৃত হয়েছে ১০১৩ বার।

৫. আল্লাজিনা : অর্থ যারা। ব্যবহৃত হয়েছে ৮১০ বার।

৬. আলা : অর্থ ওপর। ব্যবহৃত হয়েছে ৬৭০ বার।

৭. লা : অর্থ না। ব্যবহৃত হয়েছে ৬৬৮ বার।

৮. ইল্লা : ব্যতীত বা ছাড়া।

ব্যবহৃত হয়েছে ৬৬২ বার।

৯. ওয়া-লা : অর্থ এবং না। ব্যবহৃত হয়েছে ৬৫৮ বার।

১০. ওয়া-মা : অর্থ এবং না (নেতিবাচক) বা এবং যা (ইতিবাচক)। ব্যবহৃত হয়েছে ৬৪৬ বার।

১১. ইন্না : অর্থ নিশ্চয়ই। ব্যবহৃত হয়েছে ৬০৯ বার।

১২. আন্না : অর্থ নিশ্চয়ই। ব্যবহৃত হয়েছে ৫৩৯ বার।

১৩. ক্বলা : অর্থ সে বলেছে বা তিনি বলেছেন। ব্যবহৃত হয়েছে ৪১৬ বার।

১৪. ইলা : অর্থ দিকে বা অভিমুখে। ব্যবহৃত হয়েছে ৪০৫ বার।

১৫. মান : অর্থ যে বা কে (প্রশ্নবোধ হলে)। ব্যবহৃত হয়েছে ৩৯৪ বার।

১৬. লাহুম : অর্থ তাদের জন্য। ব্যবহৃত হয়েছে ৩৭৩ বার।

১৭. ইন : অর্থ যদি। ব্যবহৃত হয়েছে ৩৫৭ বার।

১৮. সুম্মা : অর্থ অতঃপর। ব্যবহৃত হয়েছে ৩৩৭ বার।

১৯. লাকুম : অর্থ তোমাদের জন্য। ব্যবহৃত হয়েছে ৩৩৭ বার।

২০. বিহি : অর্থ তার মাধ্যমে। ব্যবহৃত হয়েছে ৩২৭ বার।

জর্দান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রকাশিত গবেষণাপত্র দিরাসাতুন ইহসাইয়্যাতুন লি-কালিমাতিল কোরআনিল কারিম অবলম্বনে

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ