<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আছি</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> কবিতায় ছাতিমকে কিভাবে আপন বানিয়ে নিলেন, তা শুনুন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span> <span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ওই যে ছাতিম গাছের মতোই আছি, সহজ প্রাণের আবেগ নিয়ে মাটির কাছাকাছি, ওর যেমন এই পাতার কাঁপন, যেমন শ্যামলতা, তেমনি জাগে ছন্দে আমার আজকে দিনের সামান্য এই কথা।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ছাতিমগাছ অ্যাপোসাইনেসি বর্গের অন্তর্ভুক্ত উদ্ভিদ, যার বৈজ্ঞানিক বা দ্বিপদী নাম </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">Alstonia scholaris</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">। উদ্ভিদটির </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গণ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> নামটি নেওয়া হয়েছে স্কটিশ প্রকৃতিবিদ </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">Dr. Charles Alston </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">(১৬৮৫-১৭৬০) স্মরণে। আর </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রজাতি</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> নাম লাতিন </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">scholaris </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শব্দটি বোঝাচ্ছে, প্রাচীনকালে শিশুদের লেখার জন্য এই গাছের কাণ্ড কিভাবে স্লেট তৈরিতে ব্যবহৃত হতো।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এর আদি নিবাস ভারতীয় উপমহাদেশ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। ক্রান্তীয় অঞ্চলের এই গাছটি বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশের সর্বত্র জন্মে। আর্দ্র, কর্দমাক্ত, জলসিক্ত স্থানে ছাতিম বেশি জন্মে। ছাতিমের মূলাবর্তে সাতটি পাতা একসঙ্গে থাকে বলে সংস্কৃত ভাষায় একে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সপ্তপর্ণ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> বা </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সপ্তপর্ণা</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> নামে ডাকা হয়। ছাতিমগাছ হলো পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য উদ্ভিদ।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ছোটকালেই ছায়াস্নিগ্ধ নানা গাছের পদতলে মন জুড়িয়ে খেলতাম। এর সঙ্গে এখনো বন্ধুত্ব কম নয়। ছাতিমগাছকে গাঁওগেরামে ছাইত্তানিগাছও বলে। গাছে যখন ফুল ফোটে একদিকে  দৃষ্টিনন্দন, আরেক দিকে ফুলের গন্ধ যে কাউকে মাতালও করে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">যখন ছোট ছিলাম, নানা তিথির নানা সময়ে নানা আয়োজনে আমরা ছাতিম, হিজল, বরুণ, কচুরি, জারুল, ডুমুর, শিউলি, কামিনী, গন্ধরাজ, মল্লিকা কুড়িয়ে চট না বিছিয়ে লতাপাতা, বরুণপাতা, কখনো কলাপাতা, ছিটকিপাতা বিছিয়ে গাছের তলায় এবং দখিনা বাতাসে কী সুন্দর গা জুড়িয়ে খেলতাম!</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমরা যে ঘরে থাকতাম, এর হাত তিনেক দূরে অনেক বড় একটি ছাতিমগাছ ছিল। তাকে দেশি কবুতর, জালালি কবুতরের আশ্রয়স্থল মনে হতো। এতে দারুণভাবে আবেগাপ্লুত হতাম। আবার আনন্দও কম পেতাম না। পাশের বাড়ির অনেকেই, গ্রামের হিন্দু ধর্মাবলম্বী মাসি-পিসি এবং মুসলমান মানুষজনকেও রোগমুক্তির জন্য ছাতিমপাতা ছিঁড়ে নিতে দেখতাম।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ছাতিমগাছ ও এর ফুল সম্পর্কে নতুন প্রজন্মের অনেকটাই অজানা থাকতে পারে। ছাতিম ফুলের ম ম গন্ধ হেমন্তের মৃদু হাওয়ায় যখন ভেসে বেড়ায়, তখন মৌমাছি, ভ্রমরও নিজস্ব ভঙ্গিমায় তাল-বেতালে নৃত্যের মতো আবির্ভূত হয়ে ফুলে ফুলে ডানা মেলে এর গুণ-গানে মত্ত থাকে। এতে পথিকরাও দূর থেকে ছাতিমের সুবাসে এর গুণকীর্তন শুরু করে; বিশেষ করে যত দিন গাছে ফুল থাকে, সন্ধ্যা থেকে গভীর রাতের পরিবেশটাও অন্য রকম লাগে। এর ফুলের গন্ধ যে কাউকে মোহিত করে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এটি অযত্ন-অবহেলায় এখানে-সেখানে এমনিতেই বেড়ে ওঠে। ছাতিমের সরল উন্নত কাণ্ড কিছুদূর ওপরে গিয়েই হঠাৎ শাখা-প্রশাখার একটি ঢাকনা সৃষ্টি করে। আবার অল্প সময়ে ছাতিমগাছটি একে-ওকে ছাড়িয়ে অনেক দূর ওপরে উঠে যায় এবং পত্রঘন কয়েকটি চন্দ্রাতপের স্তর সৃষ্টি করে থাকে। এসব কারণে অনেক দূর থেকে ছাতিমগাছ শনাক্ত করা যায়।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এটি বৃহৎ চিরহরিৎ বৃক্ষ। উচ্চতা ৬০ থেকে ৭০ ফুট। গাছের রস তেতো, দুধের মতো আঠা থাকে। বাকল অমসৃণ ও ধূসর বর্ণের, ভারী। ডালাপালা চক্রাকারে সাজানো থাকে। গাছের গোড়ায় থাকে অধিক মূল। পাতা গুচ্ছ কিন্তু খসখসে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ফুল ছোট, সবুজাভ। ফল সাদা, সরু, গোলাকৃতি, গুচ্ছভাবে ঝুলে থাকে। কাঠ সাদা ও নরম। সাধারণত প্যাকিং বাক্স, পেনসিল, ম্যাচ বক্স এবং সস্তা দামের আসবাব তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। ছাতিমগাছের বাকল পুরনো ডায়রিয়া, হাঁপানি, ক্ষত, জ্বর, কোষ্ঠকাঠিন্য, একজিমা, আমাশয়, ম্যালেরিয়া ও হৃদরোগে ব্যবহৃত হয়।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গেল বছর তরু-পল্পব সংগঠনের পক্ষ থেকে ফল-ফলাদি, ছাতিমসহ নানা প্রজাতির ২০০ মোটামুটি বড় চারা বিতরণ করা হয়েছে, যা আমাদের বিদ্যাপীঠ বৈদ্যেরবাজার এনএএম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে রোপণ করেছিলাম। বছর দুয়েক আগেও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উভয় দিকে ছাতিমগাছ যেতে যেতে দেখা যেত। বর্তমানে এর পরিধি কমে গেছে।</span></span></span></span></p>