<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সাধারণত ছোট ছোট খুপরি ঘরের আড়ালেই থাকে কিশোর অপরাধীরা। তবে তারা মাদক সেবন করে প্রকাশ্যে। আশপাশের মার্কেটগুলো থেকে তারা নিয়মিত চাঁদাবাজি করে। বস্তিতে নিয়মিত চলে জুয়ার আসর। এলাকায় ছিনতাইয়েও তারা জড়িত। তাদের বিচরণ রয়েছে রাজধানীজুড়ে। পুলিশের ভাষ্য, কিশোর অপরাধীরা ফের বেপরোয়া হয়ে ওঠায় পুলিশ আগের চেয়ে মাঠ পর্যায়ে বেশি সক্রিয়। </span></span></span></span></p> <p><strong><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">৩ জানুয়ারি সরেজমিনে রাজধানীর মিরপুর </span></span></span></span></strong></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রূপনগর এলাকার আলোকদি ঝিলপার বস্তিতে গিয়ে জানা যায়, এই বস্তিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে একটি বড় অপরাধীচক্র। এরা মিরপুর এলাকায় ডাকাতির সঙ্গেও জড়িত। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">২০০৬ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নির্দেশে প্রায় ৩০০ সাংবাদিক পরিবারের আবাসন গড়ে তুলতে ঢাকা সাংবাদিক সমবায় সমিতিকে রাজধানীর পল্লবীর ঝিলপার মসজিদের পাশে সাত একর জমি বরাদ্দ দেয় জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই এই বিশাল জমি অবৈধভাবে দখলে নেয় ঢাকা-১৬ আসনের দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস মোল্লার লোকজন। তারা এর একাংশে বস্তি বানিয়ে ভাড়া দেয় আর অন্য অংশে গড়ে তোলে গরুর খামার।  </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বস্তির ১৩ জনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অপরাধীচক্রের হাত থেকে অসহায় কয়েক হাজার বস্তিবাসীও মুক্তি পেতে চায়। কিশোর অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণ করে বেশ কয়েকজন </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বড় ভাই</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">, যারা সরকার পরিবর্তনের আগেও সক্রিয় ছিল।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মাকসেদুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, বস্তিকেন্দ্রিক যেসব অপরাধী রয়েছে, তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। অন্যদিকে মাদক নিয়ন্ত্রণে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাংবাদিক কলোনি দখল করে বস্তি নির্মাণের পর সেখানে দোকান ও অস্থায়ী মার্কেট গড়ে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও ওয়াসার পানির সংযোগের ব্যবস্থাও করে সাবেক এই সংসদ সদস্যের অনুগত পেটোয়া বাহিনী। প্রতি মাসে এখান থেকে ভাড়া তুলত তারা। গত ৫ আগস্টের পর থেকে ইলিয়াস মোল্লা আত্মগোপনে থাকলেও থেমে নেই অবৈধ কার্যক্রম। অভিযোগ রয়েছে, এই রাজনৈতিক নেতার ইশারায় এবং নাজুক যোগাযোগব্যবস্থার সুযোগে বস্তিটি এখন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের মূল আবাসস্থল। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রূপনগর থানার ওসি মো. মোকাম্মেল হক বলেন, বস্তিকেন্দ্রিক মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণে তাঁরা কাজ করছেন। সেই সঙ্গে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণেরও চেষ্টা চলছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ইস্টার্ন হাউজিংয়ের এক পাশে অবস্থিত ঝিলপার বস্তি। একটি সরু রাস্তাই বস্তির প্রবেশপথ। ঝিলের অন্য পাশের বাঁশের সাঁকো পার হয়েই বস্তিতে ঢুকতে হয়। বস্তিতে হাজারের বেশি স্থাপনা গড়ে উঠেছে। রয়েছে বাড়িঘর, দোকানপাট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। আছে টিনের ঘর, আধাপাকা ঘর ও বহুতল ভবন। বস্তির মধ্যেই গড়ে উঠেছে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আণবিক শক্তি আবাসিক এলাকা</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> নামের আবাসন ব্যবস্থা, যেখানে পাকা ভবনের পাশাপাশি বহুতল ভবনও গড়ে উঠেছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বস্তিতে প্রবেশ করতেই দেখা যায়, একদল কিশোর বাড়ি বাড়ি গিয়ে টোকেন দিয়ে টাকা সংগ্রহ করছে। জানতে চাইলে তারা বলে, এটা পানির বিল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন চাঁদা উত্তোলনকারী জানান, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের জন্য পৃথক লোকজন টাকা উত্তোলন করেন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কথিত বাড়ির মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি মাসে বিদ্যুতের জন্য ৫০০, গ্যাসের জন্য ৩০০ এবং পানির বিল ২০০ টাকা দিতে হয়। তবে স্থাপনাভেদে অবৈধ সংযোগ নেওয়া এসব বিল প্রদানে কিছুটা তারতম্য দেখা গেছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এলাকাবাসী জানায়, স্থানভেদে অনেকেই এই চক্রের কাছ থেকে ঘর ও জমি কিনেছেন স্থানভেদে তিন থেকে ২০ লাখ টাকায়। ঝিলের পারে গড়ে ওঠা টিনের ঘরগুলোর ভাড়া কমবেশি সাড়ে তিন হাজার টাকা। কিছুটা ভালো স্থানে পাকা ভবনগুলোতে এক রুমের ভাড়া পড়ে সাত হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে জায়গা কেনা হলেও বস্তিজুড়ে অবৈধ বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির লাইন পরিচালনা করছে ওই চক্রটি। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অবৈধ বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সংযোগের পাশাপাশি ফুটপাত থেকে টাকা তোলাও এই চক্রের আরেকটি আয়ের মাধ্যম। প্রতিটি দোকানের জন্য চাঁদা দিতে হয় ৮০ থেকে ১৫০ টাকা। বিদ্যুৎ বিল হিসেবে প্রতিটি লাইটের জন্য দিতে হয় ২০ থেকে ৫০ টাকা। ময়লার জন্য দিতে হয় আরো ২০ থেকে ৩০ টাকা। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ইলিয়াস মোল্লার বোনের ছেলে সালমান মোল্লা অবৈধভাবে গড়ে ওঠা বস্তি ও দোকানঘর স্থাপন করে ভোগদখল করে আসছেন। শুধু বিদ্যুৎ বিল বাবদ বস্তিবাসীর কাছ থেকে প্রতি মাসে চার লাখ টাকা করে চাঁদা উত্তোলন করেন। বস্তির পূর্ব পাশে অবৈধ স্থাপনা থেকেও তিন লাখ টাকা উত্তোলন করেন। এ ছাড়া ইলিয়াস মোল্লার ছোট ভাই আলী মোল্লার বডিগার্ড চিকন হারিসের নেতৃত্বে সাব্বির ও গাজী এই জায়গার পশ্চিম পাশের গড়া স্থাপনা থেকে বস্তি ও দোকানঘর ভাড়াবাবদ প্রতি মাসে তিন লাখ থেকে চার লাখ টাকা চাঁদা তোলেন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">একাধিক বস্তিবাসী জানায়, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বস্তির নিয়ন্ত্রক হিসেবে ইলিয়াস মোল্লার নাম ছিল </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ওপেন সিক্রিট</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">। বিভিন্ন স্তরের কর্মীরা ভাগে ভাগে চাঁদার অর্থ আদায় করলেও মূল কোষাগার ছিল সাবেক এই সংসদ সদস্যের বাড়ি। চাঁদা তোলা কর্মীদের মধ্যে অন্যতম ছিল </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">টাকলা হাবিব</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">। তিনি ময়লা কামালের আদেশে একাংশের চাঁদা তুলতেন। বিভিন্ন মাধ্যম থেকে আদায়কৃত চাঁদার অর্থ লতিফ মোল্লাকে দিতেন কামাল। লতিফ মোল্লা হয়ে এই অর্থ যেত ইলিয়াস মোল্লার কাছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, ঝিলপার নতুন রাস্তা নিয়ন্ত্রণ করে ইলিয়াস মোল্লার ভাগিনা সালমান মোল্লার ড্রাইভার ফজলু। মন্দির থেকে মোড় পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করে ইলিয়াস মোল্লার ছোট ভাই আলী মোল্লার অফিসের স্টাফ বেলাল ও মাসুদ। ইলিয়াস মোল্লার চাচাতো ভাই জসিম মোল্লার হয়ে বস্তি নিয়ন্ত্রণ করে তুফান। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মাদকের একাধিক স্পট</span></span></strong></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ঝিলপার বস্তিতে মাদকের একাধিক স্পট রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ময়নার স্পট</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">। গাঁজা থেকে শুরু করে প্রায় সব ধরনের মাদক পাওয়া যায় এই স্পটে। এলাকার বাইরে থেকেও মাদকসেবীরা এই স্পটে আসে। ঝিলপারের শেষ প্রান্তে রূপনগর এলাকায় সন্ত্রাসী সামছুর নেতৃত্বে সোহেল, ফারুক ও আনোয়ার গংদের ইয়াবা ও গাঁজার সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছে। মাদক বিক্রির জন্য ফারুক ও আনোয়ারদের টং দোকান ব্যবহার করে তারা। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বস্তি ঘিরে গড়ে ওঠা চক্রটি অবৈধ পানি, গ্যাস ও বিদ্যুতের ভাড়া আদায়, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা ছাড়াও বিভিন্ন দিবস ও উৎসবকে কেন্দ্র করে আয়োজন করে জুয়ার আসর। ফুটপাতে ছক্কা নিয়ে বসা, ক্রিকেটে বাজি লাগানোসহ বিভিন্ন জুয়া খেলার মাধ্যমেও মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয় তারা। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">স্থানীয়দের দাবি, এখানকার বস্তিতে লুকিয়ে থাকা সন্ত্রাসীদের হাতে ৫ আগস্ট বিভিন্ন থানা ও নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজত থেকে লুট হওয়া কিছু অস্ত্র এখানে থাকতে পারে। মিরপুর এলাকায় অপরাধ কর্মকাণ্ডে এসব অস্ত্র ব্যবহৃত হচ্ছে বলে তারা আশঙ্কা করছে।</span></span></span></span></p>