ঢাকা, সোমবার ১৭ মার্চ ২০২৫
৩ চৈত্র ১৪৩১, ১৬ রমজান ১৪৪৬

ঢাকা, সোমবার ১৭ মার্চ ২০২৫
৩ চৈত্র ১৪৩১, ১৬ রমজান ১৪৪৬
জবি ছাত্রী অবন্তিকার আত্মহত্যা

এক বছরেও অভিযোগপত্র দিতে পারেনি পুলিশ আসামিরা জামিনে

কুমিল্লা (উত্তর) প্রতিনিধি
কুমিল্লা (উত্তর) প্রতিনিধি
শেয়ার
এক বছরেও অভিযোগপত্র দিতে পারেনি পুলিশ আসামিরা জামিনে

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আইন বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্রী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যায় প্ররোচনা মামলার প্রতিবেদন এক বছরেও জমা দিতে পারেনি পুলিশ। এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছে অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম ও তাঁর পরিবার। এ ছাড়া জবির তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ না করায় ন্যায়বিচার নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন তাহমিনা।

মামলার অভিযোগ ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জবির বেশ কিছু শিক্ষার্থী অবন্তিকাকে মানসিক নির্যাতন করেন।

এ ঘটনায় অবন্তিকা জবি শিক্ষকদের সহযোগিতা চেয়েও না পেয়ে ছুটিতে গিয়ে গত বছরের ১৫ মার্চ কুমিল্লা নগরের বাগিচাগাঁওয়ের বাসায় ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করেন। এর আগে তিনি এ নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। পরে এ ঘটনায় অবন্তিকার মা আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা করেন।

ঘটনার রাত থেকে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে আন্দোলনে নামেন জবিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

পরে ১৮ মার্চ আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে জবির সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও অবন্তিকার সহপাঠী রায়হান আম্মান সিদ্দিককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাঁরা বর্তমানে জামিনে মুক্ত রয়েছেন। এ ঘটনার দুই দিন পর জবি প্রশাসন পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে।
তবে তাঁদের তদন্ত প্রতিবেদনে কী এসেছে তা জানানো হয়নি। জড়িতদের বিরুদ্ধে জবি প্রশাসন কোনো শাস্তিমূলক পদক্ষেপও নেয়নি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মামলার বাদী অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম। এরই মধ্যে তদন্তসংশ্লিষ্ট জবি প্রশাসন জানিয়েছে, তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ ও সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তাহমিনা শবনম বেগম বলেন, অবন্তিকা সহপাঠীর প্রেম প্রত্যাখ্যান করায় তাঁকে দেড় বছরের বেশি সময় ধরে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করে তাঁর কিছু সহপাঠী।
এতে শিক্ষকদের কাছে প্রতিকার চেয়েও আমার মেয়ে পায়নি। কারণ শিক্ষক-প্রক্টর সবাই ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে একই গ্রুপের লোক হওয়ায় এত দিন তদন্ত এগোয়নি। কিন্তু পুলিশ এক বছরেও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়নি। আমার সঙ্গে যোগাযোগও করেনি।

তাহমিনা বলেন, মৃত্যুর আগে অবন্তিকা ফেসবুক পোস্টে স্পষ্ট করেই বলে গেছে, আমি যদি কখনো সুইসাইড করি, তবে আমার মৃত্যুর জন্য একমাত্র দায়ী থাকবে আমার ক্লাসমেট আম্মান সিদ্দিকী আর তাঁকে সাপোর্টকারী জগন্নাথের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম। সুনির্দিষ্ট করে বলে গেলেও এখনো কেন মামলার চার্জশিট দিতে গড়িমসি করছে?

জবি সূত্র জানায়, এ ঘটনায় জবি প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটির আহবায়ক ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন। প্রতিবেদনের বিষয়ে মোবাইল ফোনে জাকির হোসেন বলেন, আত্মহত্যার ঘটনা তদন্তে ৪৫ জনকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে গত বছরের ১৩ জুন প্রতিবেদন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দেওয়া হয়েছে। 

এদিকে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে কী আছে, তা জানতে পারেনি অবন্তিকার পরিবার। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে মামলার বাদী তাহমিনা শবনম বলেন, ২০২৩ সালে অবন্তিকার বাবা মারা যান। আমার ছেলেও ছোট। মেয়ের বিচারের জন্য এখন একাই লড়াই করতে হচ্ছে আমাকে। মেয়েকে অনেক স্বপ্ন নিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য জবিতে ভর্তি করেছিলাম। কিন্তু সেখানকার কিছু শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মানসিক নির্যাতনে মেয়েকে অকালে জীবন দিতে হলো। এ মৃত্যুর দায় জবি প্রশাসন এড়াতে পারে না। তিনি বলেন, ঘটনার দুই হোতাকেও তো আদালত জামিন দিয়েছেন। তারা কি আদৌ শাস্তি পাবে?  তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে জবির রেজিস্ট্রার ও পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক শেখ গিয়াস উদ্দিন বলেন, গত জানুয়ারিতে সিন্ডিকেট সভায় অবন্তিকার আত্মহত্যার বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুসারে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে আত্মহত্যার সঙ্গে কারা জড়িত এ বিষয়গুলো স্পর্শকাতর। তাই এখনই এসব বিষয় গণমাধ্যমে প্রকাশ করা যাচ্ছে না। তবে যারাই জড়িত, বিধি অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

পুলিশ জানায়, অবন্তিকার মোবাইল ফোনের গ্যালারিতে থাকা বেশ কিছু ছবি, স্ক্রিন শট, মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপের খুদে বার্তা পাওয়া গেছে, যা তদন্তে সহায়ক হয়েছে। অবন্তিকার মোবাইল ফোনটি আদালতের অনুমতি নিয়ে পরীক্ষার জন্য ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়। এর প্রতিবেদনও এসেছে।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

সবিশেষ

বায়োহাইব্রিড প্রযুক্তি মেশিনকে অনুভূতির পরশ দেবে এবার

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
বায়োহাইব্রিড প্রযুক্তি মেশিনকে অনুভূতির পরশ দেবে এবার

উদ্ভিদ ও ছত্রাকের সহায়তায় রোবটদের সামগ্রিক সামর্থ্যের মাত্রা আগামী দিনগুলোতে আরো অনেক বেশি বাড়বে। গবেষকরা দাবি করেছেন, বায়োহাইব্রিড প্রযুক্তি রোবট বা মেশিনের অনুভূতিকে বেশ খানিকটা শাণিত করতে পারবে। এতে রোবট তথা মেশিনরা আহত হলে নিজেরাই তা সারিয়ে নিতে পারবে। গবেষকরা বলছেন, রোবটে যদি জীবন্ত টিস্যুর প্রয়োগ ঘটানো যায়, তাহলে এসব রোবট পরিবেশের সঙ্গে আরো সহজভাবে ইন্টারেক্ট করার সুযোগ পাবে।

গবেষকরা দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, এমন একটি রোবট উদ্ভাবন করতে, যে রোবট দেখতে হবে প্রাণবন্ত। তবে তারা এটা ভালো করেই জানেন, সিনথেটিক উপাদান দিয়ে তৈরি রোবট তেমন হতে পারবে না। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের কর্নেল ইউনিভার্সিটির গবেষক আনন্দ মিশ্র বলেন, প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে আমরা এখনো সিনথেটিক উপাদান দিয়ে প্রাণবন্ত রোবট বানাতে পারছি না।

পরিবেশের উপযোগী করে রোবট বানানোর কর্মযজ্ঞ চলমান থাকলেও নিশ্চিত কোনো তথ্য আমাদের হাতে এত দিন ছিল না।

গবেষকরা বলছেন, এমন রোবট বানাতে যে হবে, যে রোবট সব ধরনের পরিবেশে টিকে থাকতে পারবে। এরা যেমন আলো শনাক্ত করতে পারবে, গরম লাগলেও তা ধরতে পারবে। খাবারের স্বাদও নিতে পারবে। গবেষক আনন্দ মিশ্র জানালেন, রোবট তৈরিতে যদি ছত্রাক-টিস্যু ব্যবহার করা যায়, তাহলে সমস্যার বেশ খানিটা সমাধান হয়ে যাবে।

ছত্রাক উদ্ভিদ নয়। তবে ছত্রাকের মাঝে উদ্ভিদের বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। বিশেষ করে মাইসেলিয়াম। উল্লেখ্য, মাইসেলিয়াম ​​হলো একটি ছত্রাকের শিকড়সদৃশ গঠন যাতে একটি ভরের শাখা, থ্রেডসদৃশ হাইফাই থাকে। এর স্বাভাবিক রূপ হলো শাখাযুক্ত, সরু, আটকানো, অ্যানাস্টোমোসিং, হাইলাইন থ্রেড।

মাইসেলিয়াম দ্বারা গঠিত ছত্রাকের উপনিবেশগুলো মাটি এবং অন্যান্য অনেক স্তরে পাওয়া যায়। গবেষক মিশ্র জানান, এই ছত্রাক টিস্যু আলো, তাপ ও রাসায়নিক শনাক্ত করতে সক্ষম। মিশ্র ও তাঁর গবেষক দল দুটি রোবটে ইলেকট্রোডের সহায়তায় মাইসেলিয়াম টিস্যু সংযুক্ত করেছেন, যা এখন ইলেকট্রনিক সিগন্যাল পয়দা করতে পারছে, যা হার্ট ও নার্ভ সেল হিসেবে কাজ করছে। গবেষকরা মনে করছেন, তাঁরা এখন প্রাণবন্ত রোবট তৈরির পথে বেশ খানিকটা এগিয়ে যেতে পেরেছেন। সূত্র : সায়েন্স ডটঅর্গ

 

 

 

 

মন্তব্য

বিক্ষোভ সমাবেশ করেন ফ্যাসিবাদবিরোধী শিক্ষার্থীরা

শেয়ার
বিক্ষোভ সমাবেশ করেন ফ্যাসিবাদবিরোধী শিক্ষার্থীরা
রাজধানীর খামারবাড়ি মোড়ে গতকাল সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন ফ্যাসিবাদবিরোধী শিক্ষার্থীরা। এ সময় ওই এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। অনেকে হেঁটে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দেন। ছবি : কালের কণ্ঠ
মন্তব্য
রংপুর

হিমাগারগুলো আলু নিচ্ছে না, বিপাকে চাষিরা

রফিকুল ইসলাম, রংপুর
রফিকুল ইসলাম, রংপুর
শেয়ার
হিমাগারগুলো আলু নিচ্ছে না, বিপাকে চাষিরা

রংপুরে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় এক-তৃতীয়াংশ বেশি জমিতে আলু উৎপাদন হওয়ায় সেই আলু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন প্রান্তিক আলু চাষি ও ব্যবসায়ীরা। জায়গা সংকুলান না হওয়ার কারণ দেখিয়ে বেশির ভাগ হিমাগার কর্তৃপক্ষ আলু নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে জমিতে-রাস্তায় হাজার হাজার বস্তা আলু রেখে কৃষকরা দুশ্চিন্তায়।

এদিকে জমি থেকে দেরিতে ওঠা বীজ আলু হিমাগারে রাখতে না পারলে পরের বছর বীজ আলু নিয়ে হাহাকার পড়ে যাবে, সংকটে পড়বে দেশ।

এ কারণে অন্তত বীজ আলুগুলো হিমাগারে রাখার জোর দাবি তুলেছেন আলু চাষিরা।

কৃষকরা জানিয়েছেন, একদিকে দাম নেই, অন্যদিকে হিমাগার মালিকরা মাইকে ঘোষণা করছেন তাঁদের হিমাগারে আলু রাখতে পারবে না। এই অবস্থায় পুঁজি হারিয়ে রাস্তায় বসা ছাড়া উপায় নেই।

গতকাল রবিবার রংপুরের কাউনিয়া, নব্দিগঞ্জ পীরগাছা এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বিস্তীর্ণ মাঠে চাষিরা আলু তুলছেন।

কেউ কেউ আলু বস্তায় ভরে জমিতেই ফেলে রাখছেন, আবার অনেকে মহাসড়কের পাশে রাখছেন।

কৃষকরা বলছেন, অনুরোধ করার পরও আলু নিচ্ছে না হিমাগার কর্তৃপক্ষ। এমনকি দালাল ফড়িয়াদের বাকিতে আলু দিতে চাইলেও তাঁরা নিচ্ছেন না। উৎপাদন প্রতি কেজি ২০ টাকা হলেও ৮-৯ টাকা কেজি দরে গ্র্যানুলা আলু পাইকারদের দিতে চাইলেও জায়গা না থাকার অজুহাতে তাঁরাও নিচ্ছেন না।

জানা গেছে, রংপুর বিভাগের পাঁচ জেলায় এক লাখ ১৯ হাজার ৮৭৯ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু এর এক-তৃতীয়াংশ বেশি জমিতে আলু চাষ হয়েছে। কৃষকদের ভাষ্য, ২০১১ সালের পর এবারই এমন রেকর্ড আলু চাষ হয়েছে। চরাঞ্চলে যাঁরা আলু চাষ করেছেন, তাঁরা আগে তুলতে পারায় হিমাগারে রেখেছেন। কিন্তু সমতল জমিতে যাঁরা পরে আবাদ করেছেন তাঁরা আলু রাখতে পারছেন না।

কৃষকরা জানান, মূলত বীজ আলু দেরিতে ওঠে। এই বীজ আলু স্টোরে রাখতে না পারলে আগামী মৌসুমে আলু বীজের চরম সংকট দেখা দেবে।

নব্দিগঞ্জের মকবুল হোসেন বলেন, ১০০ বস্তা আলু নিয়ে গত শনিবার এসেছি অপু মুনশি হিমাগারের সামনে। এসে শুনি জায়গা নেই। কর্তৃপক্ষ আলু নেবে না বলে মাইকে ঘোষণা করছে। আমার সেই আলু এখন রাস্তায়। কাউনিয়ার মীরবাগে এমন কয়েক লাখ বস্তা আলু রাস্তায় পড়ে আছে।

অপু মুনশি হিমাগারের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, আলু নেওয়ার অনুমতি নেই। তাই নেওয়া হচ্ছে না।

বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর ও কৃষক সংগঠনের আহ্বায়ক আহসানুল আরেফিন তিতু হিমাগারে আলু নেওয়া বন্ধের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। অবিলম্বে আলু চাষিদের জন্য কোল্ড স্টোর খুলতে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

 

 

 

মন্তব্য
শু ভ কা জে স বা র পা শে

বসুন্ধরার সেলাই মেশিনে দুঃখ ঘুচবে তাঁদের

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
বসুন্ধরার সেলাই মেশিনে দুঃখ ঘুচবে তাঁদের
নীলফামারীতে বসুন্ধরা গ্রুপের উদ্যোগে তিন মাসের প্রশিক্ষণ শেষে গতকাল ২০ নারীর হাতে তুলে দেওয়া হয় সেলাই মেশিন। জেলা সদরের পূর্ব খোকসাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্বরে। ছবি : কালের কণ্ঠ

দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ অসচ্ছল নারীদের স্বাবলম্বী করতে সেলাই প্রশিক্ষণ ও বিনামূল্যে সেলাই মেশিন উপহার দেওয়ার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। এরই ধারাবাহিকতায় নীলফামারীর ২০ জন নারীকে প্রশিক্ষণ শেষে সেলাই মেশিন উপহার দেওয়া হয়েছে। গতকাল রবিবার এই নারীদের হাতে সেলাই মেশিন তুলে দেওয়া হয়। অন্যদিকে বসুন্ধরা শুভসংঘ রংপুর কারমাইকেল কলেজ শাখার নতুন কমিটির পরিচিতিসভা ও ইফতার মাহফিল আয়োজন করা হয়।

প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর : 

বসুন্ধরার সেলাই মেশিনে দুঃখ ঘুচবে তাঁদেরনীলফামারী : স্বামীর দিনমজুরির আয়ে ঠিকমতো সংসার চলে না। অর্ধাহার-অনাহার নিত্যদিনের সঙ্গী। এমন দুর্দশায় স্বামীকে সহযোগিতার প্রবল ইচ্ছা মনিরা আক্তারের (২৭)। এ জন্য কাজের সন্ধান করেছিলেন বিভিন্ন স্থানে।

কাজ জুটেছিলও পাশের গ্রামের একটি কারখানায়। কিন্তু প্রতিবন্ধী সন্তানকে রেখে কাজে যেতে পারেননি তিনি। কারণ, দুজনের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার একমাত্র ভরসা মা মনিরা। তাই তিনি বাড়িতেই কোনো কাজ করে টাকা উপার্জনের পথ খুঁজছিলেন।
কিন্তু দীর্ঘদিন চেষ্টা করেও কোনো উপায় করতে পারছিলেন না। ফিকে হতে শুরু করে সংসারে সচ্ছলতা ফেরানোর স্বপ্ন। অবশেষে তাঁর সেই স্বপ্নপূরণে এগিয়ে এসেছে বসুন্ধরা গ্রুপ। তিন মাস সেলাই প্রশিক্ষণ শেষে তাঁকে গ্রুপের পক্ষ থেকে উপহার দেওয়া হয়েছে সেলাই মেশিন।

গতকাল রবিবার জেলা সদরের পূর্ব খোকসাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্বরে এক অনুষ্ঠানে ২০ জন নারীর হাতে সেলাই মেশিন তুলে দেওয়া হয়।

দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নপূরণে সেলাই মেশিন পেয়ে আনন্দিত মনিরা। অনুভূতি প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘সংসারোত খুব কষ্ট। স্বামীর কিষান খাটার কামাই দিয়া ছয়টা মানষির খাবার জুটে না। কষ্টের কারণে মনটা চায় কোনো কাম-কাজ করি কামাই করিবার। কিন্তু ছাওয়া দুইটাক থুইয়া বাড়ি থাকি কোনঠে যাবার পারো না। এলা বসুন্ধরার মেশিন দিয়া বাড়িত বসি সেলাইর কাজ করি কামাই করির পারিম। এলা কামাই সংসারোত সহযোগিতা করির পারিমো।’

একই অনুষ্ঠানে সেলাই মেশিন পেয়েছেন আঁখি আক্তার (১৯)। খলিশাপচা গ্রামের আঁখি আক্তার দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। তাঁর বাবা অলিয়ার রহমানের দিনমজুরির আয়ে চলে তাঁদের সাত সদস্যের পরিবার। তিন বোন এক ভাইয়ের মধ্যে আঁখি সবার বড়। অভাব-অনটনের সংসারে এসএসসি পাসের আগেই বিয়ে দিতে চেয়েছিল পরিবার। কিন্তু আঁখি তাতে রাজি না হয়ে লেখাপড়া শিখে প্রতিষ্ঠিত হতে চান। এমন প্রবল ইচ্ছায় এসএসসি পাসের পর ভর্তি হন কলেজে। কিন্তু পরিবারের অর্থাভাবে লেখাপড়া প্রায় বন্ধের পথে। এ অবস্থায় আঁখি গ্রামে টিউশনি করে লেখাপড়া চালানোর উদ্যোগ নিয়েও হয়েছেন ব্যর্থ। এ জন্য খুঁজতে শুরু করেন সহজ কাজ করে নিজেরসহ ভাই-বোনদের লেখাপড়া চালাতে। সেই আঁখি আক্তারকে সেলাই মেশিন দিয়ে স্বপ্নপূরণ করেছে বসুন্ধরা গ্রুপ।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উচ্ছ্বাস রায়। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা জামায়াতে ইসলামীর কর্মপরিষদ সদস্য মো. মনিরুজ্জামান মন্টু।

পূর্ব খোকসাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে বক্তৃতা করেন বসুন্ধরা শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান, বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মো. মামুন, কালের কণ্ঠের প্রতিনিধি ভুবন রায় নিখিল, শুভসংঘ কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ইয়াছির আরাফাত রাফি, সদস্য ফরিদ মিয়া, আমিনুর রহমান, মো. গোলাম হোসেন, নিউজ-২৪-এর জেলা প্রতিনিধি আব্দুর রশীদ শাহ, বসুন্ধরা শুভসংঘ জেলা শাখার সহসাধারণ সম্পাদক দীপু রায় প্রমুখ।

রংপুর : বসুন্ধরা শুভসংঘ রংপুর কারমাইকেল কলেজ শাখার উদ্যোগে গত শনিবার নতুন কমিটির পরিচিতিসভা, ইফতার মাহফিল ও দুস্থদের মধ্যে ইফতারি বিতরণ করা হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা শুভসংঘের উপদেষ্টা ও কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. মোস্তাফিজুর রহমান।

বসুন্ধরা শুভসংঘ রংপুর কারমাইকেল কলেজ শাখার নব গঠিত কমিটির সভাপতি আহসান হাবিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা শুভসংঘ কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক সজীব সরকার, সহসভাপতি সাজ্জাদ হোসেন সোহাগ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরাফাত হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক  মুশফিকুর রহমান সজীব, অর্থবিষয়ক সম্পাদক শাহরিয়ার, সাবেকুন নাহার শিমলা, আইনুল হক, আসিফ, মানিক, হাসান হাবিব, ইসমাইল প্রমুখ।

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ