গাজীপুর মহানগরীর বাসন এলাকার জায়ান্ট নিট ফ্যাশন কতৃর্পক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করায় গতকাল শনিবার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন শ্রমিকরা। ফলে সকাল থেকেই যান চলাচল বন্ধ হয়ে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়।
পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হলে দুই ঘণ্টা পর সকাল ১০টার দিকে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
পুলিশ ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল সকালে শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে এসে গেটে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধের নোটিশ দেখতে পান।
নোটিশে কর্তৃপক্ষ উল্লেখ করে—‘সার্বিক নিরাপত্তা, কারখানার সম্পত্তি এবং জান-মালের নিরাপত্তার স্বার্থে বাংলাদেশ শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারা মোতাবেক অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হলো।’
এর প্রতিবাদে শ্রমিকরা প্রথমে চান্দনা চৌরাস্তা-জয়দেবপুর সড়ক অবরোধ করেন। পরে তাঁরা মিছিল নিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। এ সময় বিক্ষোভ-ভাঙচুর এড়াতে আশপাশের ১০টির মতো কারখানায় ছুটি ঘোষণা করে কতৃর্পক্ষ।
খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেয়।
জানা গেছে, এর আগে গত বৃহস্পতিবার ওই কারখানার শ্রমিকরা বোনাস এবং ঈদের ছুটি ১০ দিনের দাবিতে কর্মবিরতি পালন করেন। উত্তেজিত শ্রমিকরা কারখানায় ব্যাপক ভাঙচুর এবং চার কর্মকর্তাকে মারধর করেন। এ ঘটনায় যৌথ বাহিনী চার শ্রমিককে আটক করে।
পরে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
গাজীপুর শিল্প পুলিশ-২-এর পুলিশ সুপার এ কে এম জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘জায়ান্ট নিট ফ্যাশনের শ্রমিকদের বেতন-বোনাস বকেয়া নেই। কারখানা বন্ধের প্রতিবাদে তাঁরা মহাসড়ক অবরোধ করেছিলেন। ওই জেরে আশপাশের ৮ থেকে ১০টি কারখানা ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।’
অন্যদিকে ঈদের ছুটি ১১ দিনের পরিবর্তে ১২ দিন করার দাবিতে সদর উপজেলার ভবানীপুর এলাকার গ্রিন ফাইবার কারখানার শ্রমিকরা সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন।
জয়দেবপুর থানার ওসি আব্দুল হালিম জানান, সেনাবাহিনী ও পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের সরিয়ে দেয়। এতে ১০ মিনিটের মতো সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে।
চট্টগ্রামে বকেয়ার দাবিতে সড়ক অবরোধ : চট্টগ্রাম নগরীর ইপিজেড এলাকায় জেএমএস গার্মেন্টস লিমিটেডে বকেয়া বেতনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন শ্রমিকরা। এতে ওই এলাকায় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
গতকাল সকাল ১০টা থেকে বিক্ষোভ শুরু করে নগরীর ফ্রি পোর্ট এলাকায় সড়কে অবস্থান নেন শ্রমিকরা। তবে দুুপুর ১টার দিকে পুলিশ শ্রমিকদের সড়ক থেকে সরিয়ে দিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
স্থানীয়রা জানিয়েছে, কাজ না থাকায় এবং ব্যাংকিং জটিলতার কারণে আগেই কারখানাটি লে-অফ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। লে-অফ চলাকালে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদি গত ২০ মার্চ ব্যাংকের মাধ্যমে এবং যাঁদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই, তাঁদের বিকাশ অ্যাকাউন্টে পরিশোধ করার কথা ছিল। কিন্তু কোনো শ্রমিক নির্দিষ্ট তারিখে বেতন পাননি। একটি নোটিশের মাধ্যমে মালিকপক্ষ জানায়, আগামী ২৫ মার্চ বেতন পরিশোধ করা হবে। শ্রমিকরা এই সিদ্ধান্ত না মেনে সড়ক অবরোধ করেন।
ইপিজেড এলাকায় সড়ক অবরোধের কারণে ওই সড়কে চলাচলকারী অনেককে হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। ফ্রি পোর্টের পর পেডাল রিকশায় কাছের গন্তব্যে যাওয়া গেলেও দূরের গন্তব্যে যেতে অতিরিক্ত ভাড়ায় অনেকে মোটরসাইকেলে চড়েছে। এ ছাড়া ফ্রি পোর্ট মোড়ে শ্রমিকরা অবস্থান নেওয়ায় নগরীর স্টিল মিল পর্যন্ত সড়কের উভয় পাশে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। ফলে বন্দর-পতেঙ্গার সঙ্গে সড়কপথে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। পতেঙ্গা এলাকার বিভিন্ন কনটেইনার ডিপো থেকে ছেড়ে আসা পণ্যবাহী ট্রাক-লরিও আটকা পড়েছে যানজটে।
চট্টগ্রাম শিল্প পুলিশের সুপার মোহাম্মদ সুলাইমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মালিকপক্ষ ২৫ মার্চ বকেয়া পরিশোধের আশ্বাস দিয়েছে। পরে শ্রমিকরা সেই আশ্বাস মেনে দুপুর ১টার দিকে সড়ক থেকে সরে যান। কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।’