পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আনুমানিক পৌনে দুই কোটি (এক কোটি ৭২ লাখ ৭০ হাজার) মানুষ বৃহত্তর ঢাকা ছাড়বে। তারা ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ মহানগরসহ ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলার স্থায়ী-অস্থায়ী বাসিন্দা। এই বিপুলসংখ্যক মানুষের ৬০ শতাংশ যাবে সড়কপথে। বাকি ৪০ শতাংশ নৌ ও রেলপথে যাবে।
এই হিসাবে এবার সড়কপথে ঈদযাত্রীর সংখ্যা এক কোটি তিন লাখ ৬২ হাজার। সড়কে এবারও জনভোগান্তি ও দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। গতকাল রবিবার নাগরিক সংগঠন নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি এবং ঢাকার গণমাধ্যমকর্মীদের সংগঠন শিপিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন রিপোর্টার্স ফোরাম (এসসিআরএফ) ঈদপূর্ব যৌথ পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে। তবে প্রতিবেদনে বলা হয়, এ বিষয়ে সরকারি নির্দেশনা কার্যকর হলে জনভোগান্তি ও দুর্ঘটনা কমতে পারে।
এদিকে ঈদুল ফিতরের সরকারি ছুটি শুরু আগামী ২৮ মার্চ। কিন্তু এরই মধ্যে রাজধানী ছাড়তে শুরু করেছে মানুষ। যানজটের ভোগান্তি এড়াতে আগেভাগেই অনেকে গ্রামের পথে রওনা দিচ্ছেন। ফলে বাস, ট্রেন ও লঞ্চ টার্মিনালগুলোতে যাত্রীদের ভিড় বাড়ছে।
সর্বশেষ জনশুমারি ও অন্যান্য সূত্রের বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা বিভাগের জনসংখ্যা সাড়ে চার কোটি। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে বাস করে দুই কোটি। দেশের প্রায় ৭০ শতাংশ তৈরি পোশাক কারখানা গাজীপুরে হওয়ায় ওই সিটির জনসংখ্যা প্রায় ৭৫ লাখ। আর নারায়ণগঞ্জ সিটিতে বাস করে ৩০ লাখ মানুষ। সব মিলিয়ে তিন মহানগরের জনসংখ্যা তিন কোটি পাঁচ লাখ।
এ ছাড়া এই তিন জেলায় প্রায় ৫৫ লাখ এবং মানিকগঞ্জ ও নরসিংদী জেলায় ৪৬ লাখ মানুষের বসবাস। অর্থাৎ সিটি করপোরেশনগুলোর বাইরে এই পাঁচ জেলার জনসংখ্যা এক কোটি এক লাখ। মূলত বৃহত্তর ঢাকার এসব জেলার উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষ ঈদে স্বজনদের কাছে যায়।
ঈদুল ফিতর উপলক্ষে এসব জনবহুল শিল্প ও বাণিজ্য শহরের ৫০ শতাংশ এবং জেলার অন্যান্য স্থানের ২০ শতাংশ মানুষ আবাসস্থল ছেড়ে যায়। এই হিসাবে ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ মহানগরের এক কোটি ৫২ লাখ ৫০ হাজার (জনসংখ্যার ৫০ শতাংশ) মানুষ বাড়িতে যাবে। এই পাঁচ জেলার অন্যান্য স্থান থেকে যাবে আরো ২০ লাখ ২০ হাজার (জনসংখ্যার ২০ শতাংশ)।
এসসিআরএফ সাধারণ সম্পাদক লায়ন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বিপুলসংখ্যক মানুষকে মাত্র এক সপ্তাহে সুশৃঙ্খলভাবে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার সক্ষমতা সড়ক পরিবহন খাতে নেই। দূরপাল্লার অনেক সড়কের কোনো কোনো স্থান এখনো বেহাল। সারা দেশে সড়কে পাঁচ শতাধিক ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক রয়েছে।
ঢাকা ছাড়ছে মানুষ : গতকাল সকালে গাবতলী ও মহাখালী বাস টার্মিনালে দেখা গেছে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়। অগ্রিম টিকিট বিক্রির সময় (১৪-২০ মার্চ) যাত্রীদের উপস্থিতি কম থাকলেও এখন টিকিট কেটেই বাড়ির পথে রওনা দিচ্ছে সাধারণ মানুষ। এদিকে আজ সোমবার থেকে অগ্রিম টিকিট কাটা যাত্রীরা বাড়ির পথে রওনা দিবেন। ট্রেনের অগ্রিম টিকিট আগে বিক্রি হলেও বাসের অগ্রিম টিকিটে যাত্রীদের আগ্রহ দেখা যায়নি।
গতকাল দুপুর ১টার দিকে সায়দাবাদ বাস টার্মিনালে যাত্রীদের ভিড় দেখা যায়। সেখানে তিশা কাউন্টারে থাকা যাত্রী আহসান হাবিব বলেন, ‘অগ্রিম টিকেট না কাটলেও আজকে অগ্রিমই চলে যাচ্ছি।
গতকাল কমলাপুর রেলস্টেশনেও একই চিত্র দেখা গেছে। আগে টিকিট কাটা যাত্রীরা স্বস্তিতে থাকলেও শেষমুহূর্তে টিকিটের জন্য আসা যাত্রীরা বিপাকে পড়েছেন। ঈদ উপলক্ষে বিশেষ ট্রেন চালু হলেও সেটিতেও টিকিটের চাহিদা তুঙ্গে।
এদিকে, আজ থেকে ঈদযাত্রার চাপ বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষত ২৮ মার্চ সরকারি ছুটি শুরু হলে রাজধানী প্রায় ফাঁকা হয়ে যাবে। তবে আগেভাগেই যাত্রা শুরু করলেও অনেকেই দীর্ঘক্ষণ যানজটে আটকে পড়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
পরিবহন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত বাস, ট্রেন ও লঞ্চের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তারপরও শেষমুহূর্তের চাপে ভোগান্তি এড়ানো সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে যাত্রীরা সংশয়ে রয়েছেন।