ঈদুল ফিতরের আনন্দ যখন দোরগোড়ায়, তখন প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপনের আকুলতা ছড়িয়ে পড়েছে ঘরমুখো মানুষের মধ্যে। কর্মব্যস্ত শহর ছেড়ে নাড়ির টানে আপন নীড়ে ছুটছে লাখো মানুষ। ভিড় বাড়তে শুরু করেছে ট্রেন, লঞ্চ ও বাস টার্মিনালগুলোতে।
কমলাপুর রেলস্টেশন, গাবতলী, সায়েদাবাদ, মহাখালী বাস টার্মিনাল এবং সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
এই ভিড় আরো বাড়বে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা।
ট্রেন ছাড়ছে যথাসময়ে, নেই ভোগান্তি : ট্রেনে ঈদ যাত্রার দ্বিতীয় দিনে যাত্রীদের চাপ বেড়েছে। তবে বিলম্ব না ঘটায় তেমন ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে না। ঈদে বাড়ি যাওয়ার জন্য যাঁরা গত ১৫ মার্চে অগ্রিম টিকিট কেটেছিলেন, তাঁরাই গতকাল মঙ্গলবার ট্রেনে বাড়ির পথে যেতে পেরেছেন।
জানা যায়, জামালপুর এক্সপ্রেস (৭৯৯) ট্রেন নির্ধারিত সময়ে ঠিক সকাল ১০টায় ঢাকা স্টেশন ছেড়ে যায়। পঞ্চগড়গামী একতা এক্সপ্রেস (৭০৫) নির্ধারিত সময় ঠিক সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে ঢাকা স্টেশন ছেড়ে যায়। ঠিক সময়ে ট্রেন ছেড়ে যাওয়ায় যাত্রীদের মধ্যে বেশ উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। শাহীন হাওলাদার নামে এক যাত্রী বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, সময়মতো ট্রেন ছাড়ছে দেখে ভালো লাগছে।
শুনলাম সব ট্রেন যথাসময়ে ছেড়ে যাচ্ছে। সময়মতো ট্রেন না ছাড়লে পরিবার নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হতো।’
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১১টা পর্যন্ত ২১টি ট্রেন বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। কোনো ট্রেন ছাড়তে বিলম্ব হয়নি।
কমলাপুর স্টেশনের ম্যানেজার শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘এবারের চিত্র অন্য রকম।
বিনাটিকিটে যাত্রী যাওয়ার সুযোগ নেই। টিকিট অনলাইনে কাটা হয়ে গেছে। তাই যাঁরা ভ্রমণ করবেন তাঁরাই শুধু স্টেশনে আসছেন।’
তিনি জানান, প্রতিদিন ৪৩টি আন্তঃনগর ট্রেন ঢাকা থেকে ছেড়ে যায়। ২৫টি মেইল এক্সপ্রেস/কমিউটার ট্রেন ঢাকা থেকে ছেড়ে যায়। আগামী ২৭ তারিখ থেকে স্পেশাল ট্রেন ছেড়ে যাবে।
ফিরতি যাত্রার টিকিট বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ শতাংশ : ঈদুল ফিতর-পরবর্তী ফিরতি যাত্রার ট্রেনের আসনের অগ্রিম টিকিটের চাহিদা ঢাকা থেকে কম। রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা থেকে ফিরতে যাত্রা টিকিটের চাহিদা কম থাকায় টিকিটগুলো ধীরে ধীরে বিক্রি হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ টিকিট বিক্রি হয়েছে।
কয়েকটি রুটে আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট ইস্যু বন্ধ : ঈদুল ফিতর উপলক্ষে টিকিটধারী যাত্রীদের ভ্রমণ সুবিধার্থে ঢাকা-জয়দেবপুর-ঢাকা রুটে আন্তঃজোনাল আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট ইস্যু বন্ধ রেখেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ফলে যেসব যাত্রী অন্য জেলার আন্তঃনগর ট্রেনে ঢাকা থেকে জয়দেবপুর ও জয়দেবপুর থেকে ঢাকা স্টেশনে ভ্রমণ করতেন, তাঁরা ঈদের আগ পর্যন্ত ভ্রমণ করতে পারবেন না।
আগামীকাল ২৭ মার্চ বৃহস্পতিবার থেকে রেলপথের যাত্রায় মূল ভিড় শুরু হবে বলে জানিয়েছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ফাহিমুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, এই ভিড় চলবে গার্মেন্টস ছুটির দিন থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত। এ সময় যেন কেউ ট্রেনের ছাদে চড়তে না পারে সে জন্য স্টেশন এলাকায় ২৭ তারিখ থেকে কোনো মই ও টুল দেখতে পাবেন না। গতকাল দুপুরে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের ভিআইপি রুমে ঈদে ট্রেন ও যাত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক এক বৈঠক শেষে তিনি এ কথা বলেন।
ভিড় নেই বাস টার্মিনালে : রাজধানীর মহাখালী, গাবতলীসহ অন্যান্য বাস টার্মিনালগুলোতে যাত্রী থাকলেও নেই অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ। যাত্রীরা এসে সহজেই বাস পাচ্ছেন। পরিবহনসংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনেকেই আগেভাগে পরিবার-পরিজন নিয়ে বাড়ি চলে গেছে। দীর্ঘ ছুটির কারণে যাত্রীরা ধাপে ধাপে ঢাকা ছাড়ছে, ফলে চাপ কমেছে। আগামী দুই-এক দিনের মধ্যে যাত্রীর চাপ বাড়তে পারে।
গাবতলী টার্মিনালে মিলছে সব রুটের বাসের টিকিট। দেখা গেছে, অধিকাংশ কাউন্টার বন্ধও ছিল, যাত্রীও কম। শ্যামলী পরিবহনের এক কর্মী জানান, কাউন্টারে ভিড় না থাকলেও বাস পুরতে বেশি সময় লাগছে না। গার্মেন্টস ও সরকারি ছুটির কারণে ২৭, ২৮ ও ২৯ মার্চ থেকে ছুটি বাড়বে। তখন হয়তো বেশি চাপ পড়তে পারে।
সদরঘাটে আজ থেকে যাত্রী বাড়ার আশা : ঈদযাত্রাকে ঘিরে মন্ত্রণালয়ের দেওয়া নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছে লঞ্চ মালিক সমিতি। লঞ্চে যাত্রীসেবা নিশ্চিতকরণ, মাঝপথে যাত্রী ওঠানামা না করানো, পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেট, বয়া রাখাসহ যাত্রীসেবা নির্বিঘ্ন করতে সতর্কভাবে কাজ করছেন তাঁরা।