চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) প্রস্তাবিত আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রকল্পটি এখনো গ্রহণ করেনি সরকার। আলোর মুখ দেখেনি প্রকল্পটি। অথচ আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম পরিদর্শন করতে দুই বছর চার মাস আগে দক্ষিণ কোরিয়া গিয়েছিলেন তৎকালীন চসিক মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীসহ তিনজন। ওই সময় প্রায় এক সপ্তাহ বিদেশ ভ্রমণ করে দেশে আসার আট মাস পর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য তড়িঘড়ি করে ১০ কোটি টাকার বেশি অর্থ ব্যয়ে ৯ একর জায়গাও ক্রয় করেছিল চসিক।
এরপর আরো ১৯ মাস সময় অতিবাহিত হলেও প্রকল্পটি এখনো গ্রহণ হয়নি।
অভিযোগ উঠেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তৎকালীন চসিক মেয়র তড়িঘড়ি করে এসব জায়গা কিনেছেন। স্থানীয়দের কাছ থেকে কম দামে জমি কিনে করপোরেশনের কাছে বেশি দামে বিক্রি করেছেন তিনি।
এদিকে প্রস্তাবিত এই প্রকল্পের স্থান নিয়ে চসিকের ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডের সন্দ্বীপ কলোনি এলাকায় ‘জনরোষের’ সৃষ্টি হয়েছে।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধারখ্যাত পাহাড়, টিলা ও সমতলভূমি বেষ্টিত ওই এলাকায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্প হলে পরিবেশ হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। পাহাড়ের পাদদেশে টিলাভূমি, পুকুর ও কৃষিজমির এসব জায়গা কেনা হয়েছে প্রকল্প স্থাপনের জন্য। সেখানে প্রস্তাবিত এই প্রকল্পের জন্য আরো ৩০ থেকে ৪০ একর জায়গা কেনার কথা রয়েছে। পরিবেশ বিপর্যয়ের শঙ্কায় স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠনের পাশাপাশি ঘনবসতিপূর্ণ ওই এলাকার সর্বস্তরের মানুষ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্প এই এলাকায় না করার দাবিতে এরই মধ্যে বিক্ষোভ সমাবেশ, মানববন্ধনের পাশাপাশি তৎকালীন মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীকে স্মারকলিপি দিলেও করপোরেশন তার অবস্থান থেকে সরে আসেনি।
চসিকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্প গ্রহণের আগেই প্রকল্পের ধারণা নেওয়ার জন্য চসিক মেয়রের সঙ্গে করপোরেশনের তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক এবং রেজাউলের পিএস ও তৎকালীন প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মো. আবুল হাশেম বিদেশ সফর করেন। মেয়রের চাপেই এসব জায়গা কেনা হয়েছে। জমির বিভিন্ন মালিকদের কাছ থেকে অনেকটা কম দামে কেনা এসব জায়গা হাত বদল করে আবার করপোরেশন কিনেছে বেশি দামে। এ ছাড়া কেনা ৯ একর জমির মধ্যে চার একর জমির ‘ভুয়া মালিকানা’ নিয়ে এক ব্যক্তি আদালতে মামলা করেছেন। এতে চসিককেও বিবাদী করা হয়েছে।
এদিকে ওই প্রকল্প এখনো আলোর মুখ না দেখলেও চসিককে প্রতি মাসে লাখ টাকা গুনতে হচ্ছে। প্রকল্পের জন্য কেনা ৯ একর জায়গা রক্ষণাবেক্ষণ করতে বেশ কয়েকজন নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। তাঁদের বেতন-ভাতার পাশাপাশি সেখানে থাকার জন্য একটি স্থাপনাও নির্মাণ করা হয়। এ ছাড়া একদিকে প্রকল্পের স্থান নিয়ে এলাকাবাসীর আপত্তি, অন্যদিকে প্রকল্প হিসেবে এটি এখনো গড়ে না ওঠা, কেনা জায়গা নিয়ে মামলাসহ আরো বিভিন্ন কারণে প্রকল্পের ভবিয্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। প্রকল্পটি নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।
জানতে চাইলে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম গতকাল সোমবার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ওই প্রকল্প এখনো গ্রহণ হয়নি। তবে প্রস্তাবিত প্রকল্পের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে ৫০ একর জায়গা কেনার জন্য ৫০ কোটি টাকার অনুমোদন রয়েছে। একই মধ্যে প্রায় ১০ একর জায়গা কেনা হয়েছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আসলে তৎকালীন মেয়র জরুরি ভিত্তিতে নিজ উদ্যোগে তড়িঘড়ি করে এসব জায়গা কিনেছেন। জায়গায় কোনো সমস্যা আছে কি না তা আমার জানা নেই। আগের মেয়রসহ তিনজন বিদেশে গিয়েছিলেন। সর্বশেষ আমি গিয়েছি। তবে প্রস্তাবিত প্রকল্পটি গত সরকারের আমলের।’
স্থানীয়দের কাছ থেকে কম দামে কিনলেও করপোরেশন বেশি দাম দেখিয়েছে এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ‘জমি কেনার বিষয়টি পুরোপুরি দেখেছেন তৎকালীন মেয়র।’
প্রস্তাবিত এই প্রকল্পে চসিকের কনসালট্যান্ট প্রকৌশলী গোলাম সরোয়ার গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রকল্প গ্রহণের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় দক্ষিণ কোরিয়ার পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে। তবে প্রকল্পটা এখনো প্রক্রিয়াধীন। দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থায়নে প্রাক-সম্ভাব্যতার পর চসিক প্রায় ১০ একর জায়গা কিনেছে। পূর্ণাঙ্গ ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি এখনো হয়নি।’