খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) চাকরি ফিরে পাওয়া তিন কর্মকর্তা আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বরখাস্তকালীন সময়ের বেতন তুলে নিয়েছেন। এই বেতন মোট ৫২ লাখ টাকা। আদালতের রায়ে উল্লেখ করা হয়, ‘চাকরিতে পুনর্বহাল হলেও পূর্বের কোনো বেতন দাবি করতে পারবেন না।’ তবে তাঁরা তা মানেননি।
তবে ওই বেতন তোলার বিষয়ে যুক্তি তুলে ধরে তিন কর্মকর্তা বলছেন, এ ঘটনায় তাঁরা প্রতিহিংসার শিকার। বেতন তোলা আইনসিদ্ধ হয়েছে কি না, তা যাচাই করে দেখছে কেসিসি।
কেসিসির সূত্র মতে, ২০০৭ সালে তৎকালীন মেয়র শেখ তৈয়েবুর রহমান গ্রেপ্তার হলে আত্মগোপনে চলে যান কেসিসির সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোল্লা মারুফ রশিদ, অ্যাসেসর শেখ হাফিজুর রহমান এবং বাজার সুপার শেখ শফিকুল হাসান দিদার। দীর্ঘদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় ২০০৮ সালের ১৫ এপ্রিল তাঁদের চাকরি স্থগিত করা হয়।
এরপর ২০১৩ সালের ৫ মে এক অফিস আদেশে তাঁদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। চাকরি ফেরত পেতে ওই তিন কর্মকর্তা আদালতে রিট করেন। ২০১৫ সালে তৎকালীন মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনি সাময়িক বরখাস্ত হলে প্যানেল মেয়র-১ ও ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের তৎকালীন কাউন্সিলর আনিসুর রহমান বিশ্বাসকে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব দেওয়া হয়। রায়ের আলোকে ভারপ্রাপ্ত মেয়র আনিসুর রহমান বিশ্বাস ওই তিন কর্মকর্তাকে চাকরিতে পুনর্বহাল করেন।
আদালতের রায়ে যেহেতু যোগদান করলেও আগের বেতন না নিতে বলা হয়, এ জন্য ৯ বছরে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি কেসিসি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর ওই তিন কর্মকর্তা ৫২ লাখ টাকা তুলে নেন। এর মধ্যে দুজন ১৭ লাখ করে ৩৪ লাখ এবং অন্যজন ১৮ লাখ টাকা নেন।
তবে রায়ের বিষয়টি নজরে এলে বিপাকে পড়ে কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি বাজেট কাম অ্যাকাউন্টস অফিসারকে বিষয়টি যাচাই-বাছাই করতে বলা হয়েছে বলে জানান কেসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লস্কার তাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, রায়ের বিষয়টি উপস্থাপন না করে সাবেক মেয়র মনিরুজ্জামান মনির একটি পত্রের আলোকে বরখাস্তকালীন বেতন দেওয়া হয় ওই তিন কর্মকর্তাকে। তবে রায় দেখে মনে হচ্ছে তাঁরা ওই সময়ের বেতন পাবেন না। তাই টাকাটা ফেরত আনা যায় কি না, সেই চেষ্টা চলছে।
এ ব্যাপারে বাজার সুপার শেখ শফিকুল হাসান দিদার বলেন, ‘রায়ে বলা আছে কেসিসি ইচ্ছা করলে যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে, যার আলোকে আমরা বেতন তুলেছি। আমরা আসলে প্রতিহিংসার শিকার।’
ইংরেজিতে দেওয়া রায়ের সংশ্লিষ্ট অংশের বাংলা করলে যা দাঁড়ায়, তা হলো, ‘অতএব, পূর্বোক্ত সিদ্ধান্ত থেকে প্রতীয়মান হয় যে আবেদনকারীকে তাঁর চাকরিতে পুনর্বহাল করা যেতে পারে, কিন্তু তিনি তাঁর পূর্ববর্তী বেতন এবং সুযোগ-সুবিধা দাবি করতে পারবেন না। তবু তিনি তাঁর স্থগিতাদেশের সময়কালে জীবিকা নির্বাহ ভাতা পাওয়ার অধিকারী হবেন এবং উপরন্তু, সংশ্লিষ্ট সময়কালে করপোরেশনে তাঁর অনুপস্থিতির সত্যতা বিবেচনা করে ওই সময়কালের জন্য তাঁকে অন্যান্য কী কী সুবিধা দেওয়া যেতে পারে, এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব করপোরেশনের।’