শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বিলাসপুর ইউনিয়ন যেন ককটেল বিস্ফোরণের জনপদ। বিগত চার দশক ধরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে প্রায় প্রতিটি সংঘর্ষেই ব্যবহার করা হচ্ছে ককটেল বোমা। গত ২৫ বছরে ককটেলের আঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত সাতজন, আহত হয়েছেন কয়েক শতাধিক মানুষ। বর্তমানে দুই বিরোধী পক্ষের নেতৃত্বে রয়েছেন বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান কুদ্দুস বেপারী ও পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী জলিল মাদবর।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা নদীর তীরে অবস্থিত বিলাসপুর ইউনিয়নটি নদীভাঙন ও চরাঞ্চলের জমি দখল, মাছ ধরা, বালু উত্তোলন ও নৌপথ নিয়ন্ত্রণসহ নানা ইস্যুতে দুই পক্ষ দীর্ঘদিন ধরে সংঘর্ষে লিপ্ত। ১৯৮৪ সালের ইউপি নির্বাচনের পর থেকে এই বিরোধ শুরু। বর্তমানে নেতৃত্বে আছেন জাজিরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও বিলাসপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কুদ্দুস বেপারী ও বিলাসপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও পরাজিত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী জলিল। এই দুই পক্ষ রাজনৈতিক সমর্থনও পেয়ে এসেছে।
সাবেক সংসদ সদস্য বি এম মোজাম্মেল হক ও ইকবাল হোসেন অপু নামক দুই আওয়ামী লীগ নেতার আশীর্বাদে উভয় পক্ষই আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে। দুই পক্ষের সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে ওঠে।
গত বছর ২৭ মার্চ ও ২৪ এপ্রিল সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় প্রাণ হারান বিলাসপুরের সজিব মুন্সি ও কিশোর সৈকত সরদার। দুটি মামলায় কুদ্দুস ও জলিল কারাগারে যান।
কুদ্দুস সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পেয়ে আবার সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে পুলিশের করা একটি মামলায় র্যাব তাঁকে গ্রেপ্তার করে। জলিল এখনো কারাগারে। সর্বশেষ গত শনিবার কুদ্দুস ও জলিল সমর্থকদের মধ্যে ফের ভয়াবহ সংঘর্ষে শতাধিক ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। আহত হয় উভয় পক্ষের ১৫ জন। এতে মারুফ মালের একটি হাতের কবজি উড়ে যায় এবং হাসান মুন্সি মারাত্মক আহত হন।
ককটেল বিস্ফোরণে সন্তান হারানো সজিব মুন্সির মা নুরুন্নাহার বেগম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কুদ্দুস বেপারী ও তাঁর আত্মীয়রা আমাদের বাড়িতে ককটেল ফেলে আমার ছেলেকে মেরে ফেলেছে। কুদ্দুস বেপারীর আরেক নাম বোমা কুদ্দুস। তিনি তাঁর ভাই ও ভাইয়ের ছেলেদের দিয়ে বোমা তৈরি করেন। এই বোমা কুদ্দুসের কারণে আমার ছেলেকে হারিয়ে ছেলের বউ ও শিশুসন্তান নিয়ে কষ্টে আছি।’
ককটেল বিস্ফোরণে নিহত সৈকত সরদারের মা শাহানাজ আক্তার বলেন, ‘এলাকায় জলিল, কুদ্দুসের সমর্থকদের মধ্যে মারামারি প্রায়ই লাগে। তাঁদের এই ককটেল বোমার মারামারিতে আমার ছেলে দূর থেকে ভিডিও করছিল, তখন তার ওপর ককটেল পড়লে সে মারা যায়। জানি না, ওদের কারণে আর কত মায়ের বুক খালি হবে।’
বিলাসপুরে ওই দুটি পক্ষের মধ্যে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করেই বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এতে সাধারণ গ্রামবাসী আতঙ্কে থাকেন। এত বোমার উৎস কোথায়? এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নড়িয়া সার্কেল) ড. আশিক মাহমুদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিলাসপুরে আধিপত্য বিস্তারের লড়াই করছে দুটি পক্ষ দীর্ঘদিন ধরে। আপনারা জানেন, আমরা ওই এলাকায় টহল বাড়িয়েছি। আমরা রাতে তল্লাশি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। দুষ্কৃতকারী যারা আছে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা এবং আদালতে সোপর্দ করার চেষ্টা করছি।’