ক্রীড়া প্রতিবেদক : ভারত যত শক্তিশালীই হোক, তাদের বিপক্ষে সব সময় জিততে চায় বাংলাদেশ। সেই পণ নিয়েই লড়াই করেন ফুটবলাররা। তবে ঠাণ্ডা মাথায় হিসাব কষে অবলীলায় ভারতকে হারানোর ঘোষণা কমই শোনা যায়, বরং তখন আসে চোখে চোখ রেখে লড়াইয়ের কথা। কোচরা তো আরো সংযমী হন, ‘আমরা সব সময় জেতার জন্যই মাঠে নামি’—এমন নিরাপদ বাক্য আউড়ে যান।
সেখানে গতকাল সৌদি ক্যাম্প শেষে দেশে ফেরা হাভিয়ের কাবরেরার মন্তব্য শুনুন, ‘হামজার সঙ্গে দেখা হওয়ার অপেক্ষা করছি। তার সঙ্গে বসে ভারতকে হারানোর ছক কষতে হবে।’
আগের দিন বাংলাদেশে পা রেখেই, ‘ইনশাআল্লাহ আমরা উইন খরমু’ বলে যে আত্মবিশ্বাসটা ছড়িয়েছেন হামজা চৌধুরী, সেটিরই নগদ প্রতিফলন খোদ কাবরেরার কণ্ঠে, যিনি সাধারণত রাখঢাক রেখেই নিজেদের লক্ষ্যের কথা বলতে পছন্দ করেন। হামজার ভারত সম্পর্কে খুব বেশি ধারণা আছে মনে করার কোনো কারণ নেই।
নিজেই বলেছেন, কিছু কিছু তাদের বিষয়ে তিনি জানেন। ভারত ফুটবলে ভীষণ উচ্চাভিলাষী, এই অঞ্চলের অন্য দলগুলোর তুলনায় র্যাংকিংয়ে ঢের এগিয়ে, নিয়মিত এশিয়ান কাপে খেলে এবং সুনীল ছেত্রীর মতো উঁচু মানের একজন স্ট্রাইকারও তাদের আছে—ভারতের ফুটবল নিয়ে গুণগান করার মতো এমন অসংখ্য তথ্য এ দেশের ফুটবল অনুসারীরা দিতে পারেন। কিন্তু হামজা যেটুকু তাদের দেখেছেন, তাঁর কথা শুনে মনে হয়নি এর বেশি কিছু তাঁর দেখার দরকার আছে, এবং তাতেই তিনি নির্ভার যে এই দলকে হারাতে সমস্যা হবে না। স্নানঘাটে তাঁর বাড়ির উঠানে সুনীল ছেত্রীর অবসর ভেঙে ফেরার কথাও শোনানো হলো, কিন্তু হামজার উত্তর শুনে মনে হয়নি, তাতে কিছু যায়-আসে।
এই হামজা কোচসহ পুরো দলকে উদ্দীপ্ত করবেন, এটাই তো স্বাভাবিক। আগামীকাল শিলংযাত্রার আগেই তাই বলেছেন, ‘হামজা দলে যোগ হওয়া মানে ভীষণভাবে আমাদের শক্তি বাড়া। ইউরোপে, প্রিমিয়ার লিগে খেলা এই ফুটবলার এখানে এসেছে...নিশ্চিত সে পার্থক্য গড়ে দিতে যাচ্ছে।’ ভারতকে নিয়ে এর পরপরই অবশ্য নিজের সহজাত সতর্কতা নিয়ে কথা বলেছেন স্প্যানিশ এই কোচ, ‘দল হিসেবে ভারত শক্তিশালী কোনো সন্দেহ নেই। আমরাও প্রতিনিয়ত শক্তি বাড়াচ্ছি।
ম্যাচে তাই ফিফটি-ফিফটি লড়াই হবে।’
তবে মানতেই হবে, এবারের আগে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের সম্ভাবনা এতটা বেশি কখনোই ছিল না। ভারতীয় কোচের অবসর ভাঙিয়ে সুনীল ছেত্রীকে ফেরানোয়ও সেই বার্তা। কাবরেরাও বলেছেন, ‘হামজার জবাবেই ভারত সুনীলকে ফিরিয়েছে। তাতে ম্যাচের আকর্ষণও বেড়েছে অনেক।’ তা নিয়ে কারো সন্দেহ থাকার কথা নয়। সেই ম্যাচ ঘিরে উত্তেজনার পারদ ক্রমেই বাড়ছে। জাতীয় দলের জার্সিতে হামজা বলে লাথি মারছেন, দলকে জেতাতে লড়ছেন—এই দৃশ্যই তো বাংলাদেশের ফুটবলভক্তদের জন্য এখন পরম প্রার্থিত। ভারতবধ এখন তারই অনুষঙ্গ। দুদিন আগেই ইংল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী দল শেফিল্ড ইউনাইটেডের হয়ে পুরো ৯০ মিনিট খেলা সেই হামজাকে বাংলাদেশের মাঠে বল পায়ে প্রথম দেখা যাবে আজই। হবিগঞ্জ থেকে গতকাল রাতেই ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে সতীর্থদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন তিনি। আজ সকালে দলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ফটো সেশন তাঁর দুপুরে, কোচ হাভিয়ের কাবরেরা ভারত ম্যাচ নিয়ে দেশ ছাড়ার আগে সংবাদ সম্মেলন করবেন, সেখানে হামজারও থাকার কথা। সন্ধ্যায় বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় জাতীয় দলের সঙ্গে প্রথম অনুশীলনে নামবেন হামজা।
জাতীয় স্টেডিয়ামে দীর্ঘ সংস্কারকালীন সময়ে বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনাই জাতীয় দলের হোম ভেন্যু হয়ে উঠেছে প্রায়। এই মাঠে লেবানন, ফিলিস্তিন, মালদ্বীপ, আফগানিস্তান ম্যাচসহ বেশ কিছু ম্যাচে দর্শক উন্মাদনা জাগিয়েছেন জামাল ভূইয়ারা। কিংসের সেই মাঠেই র্যাংকিংয়ের ১৮৫তম দেশটির হয়ে ফুটবলে নতুন গল্প লিখতে চলেছেন ইংলিশ ফুটবলের শীর্ষ পর্যায় থেকে আসা হামজা। পরশু দেশে পা রাখার পর থেকেই এই তারকাকে নিয়ে মাতামাতির শেষ নেই। সোমবার পুরো দিনটা ভক্ত, সমর্থক আর গণমাধ্যমের জন্য ব্যয় করেছেন তিনি। গতকাল পরিবারের সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন, দুস্থদের মাঝে ঈদ উপহার বিলিয়েছেন ১০ লাখ টাকা, স্ত্রী ওলিভিয়াকে নিয়ে বেড়িয়েছেন গ্রামের রাস্তায়। রাতে ঢাকার বিমানে চড়েছেন তিনি।