<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শত শত বছর আগে থেকে আমাদের জনপদে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও অন্যান্য নৃগোষ্ঠী একসঙ্গে বসবাস করে আসছে। কিন্তু তাদের মধ্যে তেমন কোনো সমস্যা অতীতে ছিল না, এখনো নেই বলে আমরা মনে করি। আমাদের বসবাসের ধরন দেখলে কারো মনে হবে না যে আমরা আলাদা কোনো সত্তা। তবে কোনো বিশেষ কারণে আমাদের বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীকে একে অপর থেকে আলাদা মনে করিয়ে দেয়। এ কথা সত্য যে আমরা ধর্মীয়ভাবে আলাদা এবং প্রত্যেকে যার যার ধর্ম পালন করি। যার যার ধর্ম পালনে আমাদের স্বাধীনতা আছে। একসঙ্গে চলা এবং ওঠাবসার ক্ষেত্রে কোনো সীমাবদ্ধতা আছে বলে আমাদের মনে হয় না। আমরা যে একসঙ্গে বসবাস করি, তা সম্ভব হয়েছে আমাদের সাংস্কৃতিক অভিন্নতার কারণে। পাশাপাশি আমরা মানুষ হিসেবে সবাই শতভাগ স্বাধীনও নই। কোনো না কোনো কারণে অন্যের ওপর আমাদের নির্ভরশীল হতে হয়। আমরা হিন্দু-মুসলমান যা-ই হই না কেন, যেহেতু আমরা দীর্ঘদিন একসঙ্গে বসবাস করে আসছি। ফলে একত্রে বসবাস এবং পারস্পরিক আদান-প্রদান আমাদের মধ্যে একটি স্বাভাবিক সাংস্কৃতিক বলয় তৈরি করেছে। এর ফলে আমরা এমন একটি জায়গায় নিজেদের চিন্তা করি, যেখান থেকে আলাদা ভাবার সুযোগ অনেক কম। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রথমত, আমাদের ভাষা এক এবং অভিন্ন। আমি যদি ভুল না করে থাকি, তাহলে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ছাড়া আমাদের সবার ভাষা এক। এমনকি নৃগোষ্ঠীরাও বাংলা ভাষা জানে। তারা যেমন নিজেদের ভাষা জানে, তেমনি প্রয়োজনে বাংলা ভাষাও শিখতে হয়। কাজেই ভাষার দিক থেকে আমরা কাউকে আলাদা করতে পারি না। আমাদের পোশাক, চালচলন, খাদ্যাভ্যাস সবই এক। আমরা বলে থাকি আমরা মাছে-ভাতে বাঙালি। একটি জাতিকে এক জায়গায় আনতে হলে যেটি দরকার তা হলো জীবনযাপনের <img alt="সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে হবে" height="320" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/12 December/17-12-2024/2.jpg" style="float:left" width="320" />উপাদানগুলো একই রকম হওয়া। বিশ্বের অনেক দেশে দেখা যায়, মানুষের ধর্মীয় বিচারে তার সাংস্কৃতিক ভিন্নতা অনেক বেশি। এটি শুরু হয় ভাষা থেকে। যখন ধর্মীয় বিবেচনায় ভাষা আলাদা হয়, তখন কাছাকাছি আসা একটু কঠিন হয়। কেননা ভাষা এমন একটি মাধ্যম, যা মানুষকে কাছাকাছি আনতে যথেষ্ট সহায়তা করে। ধরুন, আপনি এমন একটি জায়গায় বসবাস করছেন, যেখানে সব ধর্মের মানুষের ভাষা এক এবং অভিন্ন। তখন একে অপরকে কাছে টানা এবং পারস্পরিক আদান-প্রদান যতটা সহজ হয়, অন্য কোনো জায়গায় তা সম্ভব হয় না। ছোট একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মানুষের সঙ্গে আমাদের ভাষাগত মিল থাকায় আমরা সেখানে গিয়ে সহজে ভাবের আদান-প্রদান করতে পারি। ঠিক ভারতের অন্য কোনো রাজ্যে সেটি সম্ভব হয় না। মোটাদাগে সাংস্কৃতিক ভিন্নতা একটি দেশের বিভিন্ন ধর্ম ও জাতিগোষ্ঠীর মধ্যকার সম্পর্ককে কিছুটা ম্লান করে দেয়। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অতীতেও আমাদের দেশে বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্ব ও সংঘাত দেখা দিয়েছে। এমনকি পাহাড়েও পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে সংঘাত চরম পর্যায়ে ছিল। এখন তেমনটি নেই, তবে মাঝে মাঝে সংঘাত দেখা দেয়। কিন্তু এমন সংঘাতের বিশেষ কারণ ও উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে। এর সঙ্গে এ দেশের বেশির ভাগ হিন্দু-মুসলমানের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা সাংস্কৃতিক দৃষ্টিকোণ থেকে সবাই বাঙালি। কেননা আমরা বহুকাল থেকে একসঙ্গে বড় হয়ে আসছি। আমরা একই দোকানে চা খেয়ে আসছি। দোকানটি হিন্দু কিংবা মুসলমানের হোক। আমাদের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে সবাই একত্রে বসবাস করছে। আমরা একই ধরনের পাত্রে খাওয়াদাওয়া করি। আমরা একই কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ের আয়োজন করি। কিন্তু তার পরও কেন আমাদের মধ্যে বারবার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। আমরা সাধারণ মানুষ কখনো নিজেদের একে অপরের প্রতিপক্ষ ভাবতে পারি না। প্রতিহিংসাপরায়ণ হতে পারি না। আমরা প্রত্যেকে শান্তিপ্রিয় এবং সবাই জাতি-ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে শান্তিতে থাকতে চাই। আমরা সবাই মিলে একটি সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে অতীতে যেমন ছিলাম, তেমনি ভবিষ্যতেও থাকতে চাই। কেননা আমাদের ভাষা এক, আমাদের পোশাক এক এবং আমাদের খাদ্যাভ্যাসও এক। আমরা কিভাবে একে অপরকে আলাদা ভাবতে পারি। আসুন, আমরা সবাই মিলে সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হই এবং যেকোনো ধরনের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার চক্রান্ত কঠোরভাবে প্রতিহত করি। যে যেখানেই বসবাস করি না কেন, প্রত্যেকে সচেতন হই এবং দায়িত্বশীল আচরণ করি। সবাই ধৈর্য ধারণ করি এবং অন্যের প্রতি সহিষ্ণুতা প্রদর্শন করি। আমাদের প্রত্যেককে প্রতিজ্ঞা করতে হবে যে আমরা কোনোভাবেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হতে দেব না।       </span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : অধ্যাপক, সমাজকর্ম বিভাগ </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><a href="mailto:neazahmed_2002@yahoo.com" style="color:blue; text-decoration:underline"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">neazahmed_2002@yahoo.com</span></span></a></span></span></p>