<p> সুন্দরী তরুণীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলত সুদর্শন তরুণ আবুল কালাম। পরে বিয়ের কথা বলে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে সহযোগীদেরসহ ওই তরুণীদের ওপর পৈশাচিক নির্যাতন চালাত। নির্যাতনের দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণ করে তা ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে নির্যাতনের শিকার তরুণীর অভিভাবকদের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করত। এমনই একটি ঘটনা সম্প্রতি ঘটেছে গাজীপুরের শ্রীপুরে। ওই চক্রের তিন সদস্য জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য দিয়েছে বলে পুলিশ জানায়।</p> <p> ওই ঘটনার শিকার তরুণীর মোবাইল ফোনের কললিস্টের সূত্র ধরে গত ৩১ আগস্ট রাতে পুলিশ কথিত প্রেমিক আবুল কালাম আজাদকে গ্রেপ্তার করে। আবুল কালাম আজাদ গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নের কায়েতপাড়া গ্রামের মৃত আবদুল হাকিমের ছেলে। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত ১ সেপ্টেম্বর রাতে পুলিশ একই গ্রামের মফিজ উদ্দিনের ছেলে মোখলেসুর রহমান ও ছমির উদ্দিনের ছেলে আবদুল লতিফকে গ্রেপ্তার করে। অভিযানের কথা টের পেয়ে একই গ্রামের অন্য সহযোগী আবুল হাসেম ডাক্তারের ছেলে ইকবাল হোসেন পালিয়ে যায়।</p> <p> গ্রেপ্তারকৃত তিন তরুণ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। গত মঙ্গলবার বিকেলে গাজীপুরের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম রেহেনা আক্তার আসামিদের জবানবন্দি গ্রহণ করেন। পরে তাদের জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।</p> <p> শ্রীপুর মডেল থানার উপপরিদর্শক এম এ মজিদ বলেন, গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুর এলাকার যমুনা কারখানার শ্রমিক রূপালীর (২৫) সঙ্গে গত ছয় মাস আগে মোবাইল ফোনে পরিচয় হয় আবুল কালামের। রূপালী রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার মারিয়া গ্রামের কৃষক মো. মকবুল হোসেনের মেয়ে। আবুল কালাম আজাদ নিজেকে পাশের একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক পরিচয় দিয়ে ওই মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে।</p> <p> স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আবুল কালাম আজাদ জানায়, বিয়ের কথা বলে গত ১৫ আগস্ট সন্ধ্যায় রূপালীকে নিয়ে সে প্রথমে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তায় যায়। পরে বাসে রাত সাড়ে ১০টার দিকে তারা বরমী পেঁৗছায়। বরমী বাজার থেকে পাশের গিলাশ্বর গ্রামে বাটারফ্লাই মার্কেটিং কম্পানির কৃষি খামারের পাশে গিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে তারা। এ সময় তার তিন সহযোগীকে ফোনে ডেকে আনে সে। তাদের দেখে সন্দেহ হলে রূপালী বেগম ছুটে পালানোর চেষ্টা করেন। রূপালীকে ধাওয়া করে ধরে চারজন দুই দফা পৈশাচিক নির্যাতন চালায়। এ সময় পুলিশের কাছে গিয়ে সব ঘটনা ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি দিলে তাঁকে শ্বাসরোধে হত্যা করে তারা। হত্যার পর গলায় ওড়না পেঁচিয়ে লাশ সীমানাপ্রাচীরের খুঁটির সঙ্গে ঝুলিয়ে রেখে তারা পালিয়ে যায়।</p> <p> জবানবন্দিতে আবুল কালাম আজাদ আরো জানায়, হত্যাকাণ্ডের পরদিন অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনা জানতে না পারায় রূপালীর মা-বাবার কাছ থেকে তারা মোটা অঙ্কের টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করে। গত ২৩ আগস্ট সে রূপালীর বাবাকে ফোন দেয়। পরে রূপালী বেগমকে অপহরণ করা হয়েছে জানিয়ে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না দিলে মেয়ের লাশও খুঁজে পাবে না বলে সে রূপালীর বাবা মো. মকবুল হোসেনকে হুমকি দেয়।</p> <p> শ্রীপুর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) খান আবুল কাশেম জানান, রূপালী বেগমের বাবা মো. মকবুল হোসেন মেয়েকে ফেরত পাওয়ার আশায় পুলিশকেও ঘটনা জানায়নি। মকবুল হোসেন মুক্তিপণের টাকা নিয়ে দর কষাকষি করতে থাকেন। এ সময় রূপালী বেগমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের কললিস্টের সূত্র ধরে আবুল কালাম আজাদকে আটকের পর বেরিয়ে আসে আসল ঘটনা। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছে, মোবাইল ফোনে তরুণীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ের কথা বলে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে সহযোগীদের নিয়ে নির্যাতন চালাত। নির্যাতনের দৃশ্য ধারণ করে রাখা হতো মোবাইল ফোনে। পরে ওই ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে নির্যাতিতদের অভিভাবকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করত।</p> <p> শ্রীপুর মডেল থানার ওসি মহসিন-উল কাদির জানান, চক্রের অন্য সদস্য ইকবাল হোসেনকে গ্রেপ্তারের পর সব আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে রিমান্ডের আবেদন করা হবে।</p> <p>  </p>