<p>দুধের পাশাপাশি বাড়তি খাবার খেতে শুরু করার পর শিশুর মুখে অরুচি দেখা দিতে পারে। কিছু পছন্দ না হলে বা স্বাদ না লাগলে খেতে চায় না তারা। এ নিয়ে মায়েরা খুব পেরেশানিতে ভোগেন। শিশুদের নিয়ম করে পরিমিত খাবার খাওয়া জরুরি। কম খেলে বা খেতে না পারলে শরীর পর্যাপ্ত পুষ্টি পায় না। পুষ্টিবিহীন শরীর রোগজীবাণুর সঙ্গে লড়াই করার শক্তিও পায় না। এ জন্য সন্তানের পাতে নজর দিতে হবে। শিশুর রুচি কেন কমে যায় তা আগে খুঁজে বের করতে হবে। এরপর সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।</p> <p> </p> <p><strong>তাড়াহুড়ো নয়</strong></p> <p>বয়স ছয় মাস পেরোনোর পর ধীরে ধীরে শিশুকে প্রাত্যহিক খাবারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে। প্রথমে তেল, মসলা ও লবণ ছাড়া মাছ, মাংস, সবজি, ফলমূল খেতে দিতে হবে। যখন যে খাবার দিবেন সেটি টানা চার থেকে পাঁচদিন খাওয়ান। এতে খাবারটির সঙ্গে অভ্যস্থ হওয়ার সময় পাবে শিশু। খাওয়ানোর সময় শিশুর মানসিক অনুভূতিগুলো বোঝার চেষ্টা করতে হবে মাকে। কোন খাবার কতটুকু খাচ্ছে এ বিষয়ে মাকে দৃষ্টি রাখতে হবে। শিশু যে খাবারগুলো খেতে পছন্দ করছে তাকে সেই খাবারগুলো বেশি দিতে হবে। শিশু বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার খাবারে ধীরে ধীরে তেল, মসলা ও লবণ যোগ করুন। এতে খাবারের স্বাদে বদল আসবে। শিশু নতুন স্বাদ পাবে।</p> <p> </p> <p><strong>আয়রনের ঘাটতি</strong></p> <p>আয়রনের অভাব থেকে শিশুর মুখে অরুচি দেখা দিতে পারে। ছয় মাস থেকে এক বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে এজাতীয় সমস্যা বেশি দেখা যায়।</p> <p><strong>পেটে গ্যাস</strong></p> <p>পরিমাণের চেয়ে বেশি খাবার খাওয়ানো, খাবার হজম হওয়ার আগেই পুনরায় খাওয়ানোসহ নানা কারণে শিশুর পেটে অনেক সময় গ্যাস জমে। বদহজম হয়। পেটে গ্যাসের কারণেও শিশুর মুখে অরুচি দেখা দেয়। খাবার খেতে চায় না। মনে রাখতে হবে কম খেয়ে শিশুর মুখে অরুচি আসে না, বেশি খেলেই অরুচি আসে। অভিভাবকদের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।</p> <p> </p> <p><strong>শরীরচর্চা</strong></p> <p>খাওয়া নিয়ে মায়েরা যতটা সচেতন, শিশুর খেলাধুলা, হাঁটাচলা বা দৌড়াদৌড়ি নিয়ে ততটা সচেতন নন তারা। অনেক সময় মা-বাবার সঙ্গে খেলার বায়না ধরে শিশুরা। মাঠে খেলতে যেতে চায়। কিন্তু অভিভাবকরা অনেক সময় শিশুকে খেলতে দিতে চান না। ঘরের মধ্যে আটকে রাখেন। শারীরিক চর্চার অভাবেও শিশুর মুখে অরুচি আসতে পারে।</p> <p>অসুখবিসুখ</p> <p>মেনজাইটিস, নিউমোনিয়া, টাইফয়েড. ডায়রিয়া, আমাশয়, জন্ডিসসহ বিভিন্ন রোগে ভুগলেও শিশুর মুখে রুচি কমে যায়।</p> <p> </p> <p><strong>রুচি ফেরাতে করণীয়</strong></p> <p>শিশুকে খাবার খেতে জোর করা যাবে না। মায়েদের মধ্যে প্রায়ই দেখা যায় শিশুর মুখের সামনে খাবার বাটি নিয়ে ঘুরঘুর করেন। এতে শিশুরা আরো বিরক্ত হয়। খাবারের প্রতি আরো অনীহা তৈরি হয়। শিশুর ক্ষুধাভাব তৈরির জন্য সময় দিতে হবে। খেলাধুলা ও দৌড়াদৌড়ি করলে খাবার হজম হয়। ক্ষুধা বাড়ে। ক্ষুধা পেলে মুখে যতই অরুচি হোক, শিশু খাবেই। কোনো খাবার খেতে না চাইলে জোর করে তা খাওয়ানো থেকে বিরত থাকতে হবে। শিশুর পছন্দের খাবার বেছে নেওয়ার সুযোগ দিতে হবে। যে খাবার বেশি খেতে চাইবে সেটি খাওয়াবেন। তবে একই খাবার বারবার খাওয়াবেন না। প্রতিদিন নতুন ও ভিন্ন স্বাদের খাবার দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। পরিবারের সবাই মিলে একসঙ্গে খেতে বসতে হবে। এভাবেও শিশুর মধ্যে খাওয়ার আগ্রহ তৈরি হবে। শিশুকে কাউন্সেলিং করাতে হবে। খাবার কেন খেতে হবে, খেলে কী হবে এসব বিষয়ে তার সঙ্গে মজা করে আলোচনা করতে হবে। এভাবে শিশুর মধ্যে খাবারের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে হবে।</p> <p>চিবিয়ে এবং নিজে নিজের খাবার খেতে উত্সাহ দিতে হবে। দেরিতে ঘুমানো এবং দেরিতে ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস ত্যাগ করাতে হবে। এতেও শিশুর খাবারে অরুচি হয়। জিংকজাতীয় খাবার যেমন মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, ডাল, বাদাম এগুলো রুচি ফেরাতে সাহায্য করে। এসব খাবার খাওয়াতে হবে। প্যাকেটজাত, বোতলজাত ও টিনজাত খাবার শিশুর মুখে অরুচি আনে। এগুলো পরিহার করতে হবে। এর পাশাপাশি একজন চিকিত্সকের পরামর্শ নিতে পারেন।</p> <p> </p> <p> </p> <p> </p>