<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সারা দেশের মাছের যত চাহিদা তার ১০ ভাগের বেশি উৎপাদিত হয় ময়মনসিংহে। জেলার বেশির ভাগ মাছ উৎপাদিত হয় ত্রিশাল উপজেলায়। দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে এই উপজেলার সব ধরনের ব্যবসায়ী মাছ চাষে সফলতা দেখেছেন। তবে কয়েক বছর ধরে গুনতে হচ্ছে লোকসান। খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি, জমিভাড়া, গুণগত মানের সমস্যা এবং পোনাকে মাছে পরিণত করার ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়ে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অল্প জমিতে উৎপাদন বাড়াতে এবং অপচয় রোধে ব্যবহৃত হচ্ছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই প্রযুক্তি সংবলিত অ্যাপ। গত সাত মাসে এআই প্রযুক্তির সহায়তায় মাছ চাষ করে সফলতা পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, উপজেলার উৎপাদিত মাছের খরচ প্রায় দেড় শ কোটি টাকা এবং প্রায় দুই শ হেক্টর জমির অপচয় কমাতে সহায়ক হবে এআই প্রযুক্তি।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, ত্রিশাল উপজেলার তিন হাজার ২৮৬ হেক্টর জমিতে ছোট-বড় প্রায় ২৫ হাজার পুকুরে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ হয়। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ পাঙ্গাশ। প্রায় ৯ হাজার মৎস্য চাষি প্রতিবছর গড়ে ৭০ হাজার মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন করেন। এই মাছ উৎপাদনে চাষিদের ব্যয় হয় ৮০০ কোটি টাকার বেশি। এত টাকা ব্যয়ের পরও মাছ বিক্রি করে চাষিরা ন্যায্য লাভের মুখ দেখতে পান না। বড় চাষিরা তাঁদের পুঁজি খাটিয়ে লাভের মুখ দেখলেও ক্ষুদ্র্র চাষিরা লোকসান গুনে এই ব্যবসা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। এর অন্যতম কারণ অক্সিজেন সমস্যায় মাছের মড়ক এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পানির গুণগত মান ঠিক না রাখতে পারা। এ ছাড়া মাছের চাহিদা অনুযায়ী খাবারের পরিমাণ নির্ণয় না করায় খাদ্যের অপচয় হয়। এতে খরচ বেড়ে যায়। ত্রিশাল উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এই সমস্যা সমাধানে অ্যাকোয়া কালচার ৪.০ নামের একটি এআই সফটওয়্যার তৈরি করা হয়। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি) সংবলিত যন্ত্র ব্যবহার করে ভিন্ন ভিন্ন বেশ কয়েকটি সেন্সরের সমন্বয়ে সফটওয়্যারটি সার্বক্ষণিকভাবে পুকুরের তথ্য সংগ্রহ করে। এরপর এআইয়ের মাধ্যমে স্বংয়ক্রিয়ভাবে সমাধান বাতলে দেয়।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পুকুরের পরিবেশ জানার জন্য নেক্সাস ফিশ নেটওয়ার্ক নামের একটি অ্যাপ তৈরি করা হয়। অ্যাপটির মাধ্যমে একজন চাষি ঘরে বসেও তাঁর পুকুরে উৎপাদিত মাছের সার্বক্ষণিক চাহিদা জানতে পারবেন এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারবেন। এআই সংবলিত অ্যাপটির সহায়তায় সমপরিমাণ জমিতে ছয় গুণ বেশি মাছ উৎপাদন করা যাবে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এ বছরের এপ্রিলে কানিহারী ইউনিয়নের সরকারি এক পরিত্যক্ত পুকুরের ৫৮ শতাংশ জমিতে ৬৫ হাজার পাঙ্গাশের পোনা দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে এআই অ্যাপটি ব্যবহার করা হয়। মাছের খাবার চাহিদা পূরণ ও পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহে অ্যাপটির সঙ্গে ১২টি যন্ত্রের সংযোগ আছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এই পদ্ধতি ব্যবহারে গত সাত মাসে ৫৫ গ্রামের পোনার ওজন হয়েছে এক হাজার ২০০ গ্রাম। প্রতিটি মাছে খরচ হয়েছে ১০৫ টাকা। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মৎস্য চাষি ইদ্রিস আলী বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমরা সাধারণত ৫৮ শতাংশ জমিতে সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১১ হাজার মাছ উৎপাদন করে থাকি। ৫০ থেকে ৬০ গ্রামের একটি পোনাকে এক কেজির মাছে পরিণত করতে আমাদের খরচ হয় ১১০ থেকে ১১৫ টাকা। আর যদি খাদ্য ও পানির গুণগত মান, স্বাভাবিক অক্সিজেন সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটে, তবে মাছের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়। তখন ব্যয় দাঁড়ায় ১২০ টাকা। এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বাভাবিক বৃদ্ধি নিশ্চিত করা গেলে প্রতি কেজি মাছে উৎপাদন খরচ কমবে ১০ থেকে ১৫ টাকা। আর একই পরিমাণ জমিতে ছয় গুণ বেশি মাছ উৎপাদন সম্ভব।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অপর এক চাষি জাকির হোসেন বলেন, এআই সংবলিত অ্যাপ ব্যবহার করে মাছের চাহিদা অনুযায়ী খাবার দেওয়া গেলে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ অপচয় কমানো যাবে। এতে একজন চাষি অনেক বেশি লাভের মুখ দেখতে পাবেন।   </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এআই প্রযুক্তিতে মাছ চাষ প্রকল্পের কারিগরি পরামর্শক রনি সাহা কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অত্যাধুনিক অ্যাকোয়া কালচার ৪.০ প্রযুক্তি ও বিদ্যমান পুকুরে ভার্টিক্যাল এক্সপানশন পদ্ধতির সমন্বিত ব্যবহারে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে একজন চাষি প্রতিনিয়ত তার পুকুরের অক্সিজেন লেভেল, কাদার পরিমাণ, পানির দূষণ সম্পর্কে সার্বক্ষণিক তথ্য পাবে। প্রতিষেধক যন্ত্র ব্যবহার করে এআই স্বয়ংক্রিয়ভাবে সমস্যার সমাধান দেবে। তা ছাড়া মাছের যতটুকু খাবারের চাহিদা, শুধু তা গ্রহণের পরই স্বয়ংক্রিয়ভাবে খাবার দেওয়া বন্ধ হয়ে যাবে। সময় ও চাহিদা অনুযায়ী মাছ আবার তার খাবার গ্রহণ করবে। আর এই প্রযুক্তি ব্যবহারে একজন চাষির অতিরিক্ত তিন থেকে চার লাখ টাকা ব্যয় হবে। তবে সঠিকভাবে ব্যবহার করে আমাদের পাইলট প্রকল্পের অংশটুকু থেকে সাশ্রয় হয়েছে ১৫ লাখ টাকা। এতে মাছের দাম কম বা খাদ্যের দাম স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকলেও একজন চাষিকে লোকসান গুনতে হবে না। এআইয়ের ভেতরে এত বেশি তথ্য সরবরাহ করা আছে, যা দিয়ে একজন চাষি প্রতি মিনিটের অক্সিজেন লেভেল, টেম্পারেচার, সম্ভাব্য টেম্পারেচার, খাবারের চাহিদা, পানিতে কী সমস্যা হচ্ছে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সব কিছু জানতে পারবে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এই পদ্ধতি ব্যবহারের উদ্ভাবক ও ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জুয়েল আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সাত মাসের একটি পরীক্ষামূলক ব্যবহারে আমরা প্রত্যাশার চেয়ে বেশি সফলতা পেয়েছি। এখন চাষিরা এই পদ্ধতি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের আগ্রহ দেখাচ্ছে। আধুনিক এই প্রযুক্তি ব্যবহারে একদিকে যেমন জমির সাশ্রয় হবে, অন্যদিকে চাষিদের উৎপাদন খরচ কমায় তারা অধিক মুনাফা পাবে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p>