ঢাকা, রবিবার ১৩ এপ্রিল ২০২৫
৩০ চৈত্র ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৬

ঢাকা, রবিবার ১৩ এপ্রিল ২০২৫
৩০ চৈত্র ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৬

এআইয়ের ব্যবহারে বাড়বে মাছের উৎপাদন

মোস্তাফিজ নোমান, ত্রিশাল, ময়মনসিংহ
মোস্তাফিজ নোমান, ত্রিশাল, ময়মনসিংহ
শেয়ার
এআইয়ের ব্যবহারে বাড়বে মাছের উৎপাদন

সারা দেশের মাছের যত চাহিদা তার ১০ ভাগের বেশি উৎপাদিত হয় ময়মনসিংহে। জেলার বেশির ভাগ মাছ উৎপাদিত হয় ত্রিশাল উপজেলায়। দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে এই উপজেলার সব ধরনের ব্যবসায়ী মাছ চাষে সফলতা দেখেছেন। তবে কয়েক বছর ধরে গুনতে হচ্ছে লোকসান।

খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি, জমিভাড়া, গুণগত মানের সমস্যা এবং পোনাকে মাছে পরিণত করার ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়ে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

অল্প জমিতে উৎপাদন বাড়াতে এবং অপচয় রোধে ব্যবহৃত হচ্ছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই প্রযুক্তি সংবলিত অ্যাপ। গত সাত মাসে এআই প্রযুক্তির সহায়তায় মাছ চাষ করে সফলতা পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, উপজেলার উৎপাদিত মাছের খরচ প্রায় দেড় শ কোটি টাকা এবং প্রায় দুই শ হেক্টর জমির অপচয় কমাতে সহায়ক হবে এআই প্রযুক্তি।

উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, ত্রিশাল উপজেলার তিন হাজার ২৮৬ হেক্টর জমিতে ছোট-বড় প্রায় ২৫ হাজার পুকুরে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ হয়। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ পাঙ্গাশ। প্রায় ৯ হাজার মৎস্য চাষি প্রতিবছর গড়ে ৭০ হাজার মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন করেন। এই মাছ উৎপাদনে চাষিদের ব্যয় হয় ৮০০ কোটি টাকার বেশি।

এত টাকা ব্যয়ের পরও মাছ বিক্রি করে চাষিরা ন্যায্য লাভের মুখ দেখতে পান না। বড় চাষিরা তাঁদের পুঁজি খাটিয়ে লাভের মুখ দেখলেও ক্ষুদ্র্র চাষিরা লোকসান গুনে এই ব্যবসা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। এর অন্যতম কারণ অক্সিজেন সমস্যায় মাছের মড়ক এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পানির গুণগত মান ঠিক না রাখতে পারা। এ ছাড়া মাছের চাহিদা অনুযায়ী খাবারের পরিমাণ নির্ণয় না করায় খাদ্যের অপচয় হয়। এতে খরচ বেড়ে যায়।
ত্রিশাল উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এই সমস্যা সমাধানে অ্যাকোয়া কালচার ৪.০ নামের একটি এআই সফটওয়্যার তৈরি করা হয়।

ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি) সংবলিত যন্ত্র ব্যবহার করে ভিন্ন ভিন্ন বেশ কয়েকটি সেন্সরের সমন্বয়ে সফটওয়্যারটি সার্বক্ষণিকভাবে পুকুরের তথ্য সংগ্রহ করে। এরপর এআইয়ের মাধ্যমে স্বংয়ক্রিয়ভাবে সমাধান বাতলে দেয়।

পুকুরের পরিবেশ জানার জন্য নেক্সাস ফিশ নেটওয়ার্ক নামের একটি অ্যাপ তৈরি করা হয়। অ্যাপটির মাধ্যমে একজন চাষি ঘরে বসেও তাঁর পুকুরে উৎপাদিত মাছের সার্বক্ষণিক চাহিদা জানতে পারবেন এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারবেন। এআই সংবলিত অ্যাপটির সহায়তায় সমপরিমাণ জমিতে ছয় গুণ বেশি মাছ উৎপাদন করা যাবে।

উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এ বছরের এপ্রিলে কানিহারী ইউনিয়নের সরকারি এক পরিত্যক্ত পুকুরের ৫৮ শতাংশ জমিতে ৬৫ হাজার পাঙ্গাশের পোনা দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে এআই অ্যাপটি ব্যবহার করা হয়। মাছের খাবার চাহিদা পূরণ ও পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহে অ্যাপটির সঙ্গে ১২টি যন্ত্রের সংযোগ আছে।

এই পদ্ধতি ব্যবহারে গত সাত মাসে ৫৫ গ্রামের পোনার ওজন হয়েছে এক হাজার ২০০ গ্রাম। প্রতিটি মাছে খরচ হয়েছে ১০৫ টাকা।

মৎস্য চাষি ইদ্রিস আলী বলেন, আমরা সাধারণত ৫৮ শতাংশ জমিতে সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১১ হাজার মাছ উৎপাদন করে থাকি। ৫০ থেকে ৬০ গ্রামের একটি পোনাকে এক কেজির মাছে পরিণত করতে আমাদের খরচ হয় ১১০ থেকে ১১৫ টাকা। আর যদি খাদ্য ও পানির গুণগত মান, স্বাভাবিক অক্সিজেন সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটে, তবে মাছের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়। তখন ব্যয় দাঁড়ায় ১২০ টাকা। এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বাভাবিক বৃদ্ধি নিশ্চিত করা গেলে প্রতি কেজি মাছে উৎপাদন খরচ কমবে ১০ থেকে ১৫ টাকা। আর একই পরিমাণ জমিতে ছয় গুণ বেশি মাছ উৎপাদন সম্ভব।

অপর এক চাষি জাকির হোসেন বলেন, এআই সংবলিত অ্যাপ ব্যবহার করে মাছের চাহিদা অনুযায়ী খাবার দেওয়া গেলে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ অপচয় কমানো যাবে। এতে একজন চাষি অনেক বেশি লাভের মুখ দেখতে পাবেন।  

এআই প্রযুক্তিতে মাছ চাষ প্রকল্পের কারিগরি পরামর্শক রনি সাহা কালের কণ্ঠকে বলেন, অত্যাধুনিক অ্যাকোয়া কালচার ৪.০ প্রযুক্তি ও বিদ্যমান পুকুরে ভার্টিক্যাল এক্সপানশন পদ্ধতির সমন্বিত ব্যবহারে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে একজন চাষি প্রতিনিয়ত তার পুকুরের অক্সিজেন লেভেল, কাদার পরিমাণ, পানির দূষণ সম্পর্কে সার্বক্ষণিক তথ্য পাবে। প্রতিষেধক যন্ত্র ব্যবহার করে এআই স্বয়ংক্রিয়ভাবে সমস্যার সমাধান দেবে। তা ছাড়া মাছের যতটুকু খাবারের চাহিদা, শুধু তা গ্রহণের পরই স্বয়ংক্রিয়ভাবে খাবার দেওয়া বন্ধ হয়ে যাবে। সময় ও চাহিদা অনুযায়ী মাছ আবার তার খাবার গ্রহণ করবে। আর এই প্রযুক্তি ব্যবহারে একজন চাষির অতিরিক্ত তিন থেকে চার লাখ টাকা ব্যয় হবে। তবে সঠিকভাবে ব্যবহার করে আমাদের পাইলট প্রকল্পের অংশটুকু থেকে সাশ্রয় হয়েছে ১৫ লাখ টাকা। এতে মাছের দাম কম বা খাদ্যের দাম স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকলেও একজন চাষিকে লোকসান গুনতে হবে না। এআইয়ের ভেতরে এত বেশি তথ্য সরবরাহ করা আছে, যা দিয়ে একজন চাষি প্রতি মিনিটের অক্সিজেন লেভেল, টেম্পারেচার, সম্ভাব্য টেম্পারেচার, খাবারের চাহিদা, পানিতে কী সমস্যা হচ্ছেসব কিছু জানতে পারবে।

এই পদ্ধতি ব্যবহারের উদ্ভাবক ও ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জুয়েল আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, সাত মাসের একটি পরীক্ষামূলক ব্যবহারে আমরা প্রত্যাশার চেয়ে বেশি সফলতা পেয়েছি। এখন চাষিরা এই পদ্ধতি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের আগ্রহ দেখাচ্ছে। আধুনিক এই প্রযুক্তি ব্যবহারে একদিকে যেমন জমির সাশ্রয় হবে, অন্যদিকে চাষিদের উৎপাদন খরচ কমায় তারা অধিক মুনাফা পাবে।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

সূর্যমুখী চাষে ঝুঁকছেন কৃষক বাড়বে তেল উৎপাদন

    ♦ সীতাকুণ্ডে ২ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছেন ১৪ কৃষক ♦ ফুলের সৌন্দর্য দেখতে ভিড় জমাচ্ছে চারপাশের বহু গ্রামের মানুষ ♦ প্রতি তিন কেজি বীজ থেকে এক কেজি তেল উৎপন্ন হয়
সৌমিত্র চক্রবর্তী, সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম)
সৌমিত্র চক্রবর্তী, সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম)
শেয়ার
সূর্যমুখী চাষে ঝুঁকছেন কৃষক বাড়বে তেল উৎপাদন

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে কয়েক বছর ধরেই সূর্যমুখী চাষ ক্রমে বাড়ছে। এর বীজ থেকে পাওয়া তেল উৎপাদনে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি সূর্যমুখী ফুল দেখতে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের যে আগ্রহ, তাতে উৎসাহিত হয়ে অনেক শৌখিন কৃষক সূর্যমুখী চাষে আগ্রহী হচ্ছেন বলে তাঁরা জানিয়েছেন। অন্যদিকে কৃষকদের এ আগ্রহে চাষাবাদে আরো বেশি সমৃদ্ধ হচ্ছে উপজেলা কৃষি বিভাগ। নির্দ্বিধায় সে কথাই জানালেন কৃষি কর্মকর্তারা।

উপজেলা কৃষি অফিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সীতাকুণ্ডে সূর্যমুখী চাষ বাড়ছে। কৃষি বিভাগের সার্বিক সহযোগিতা পেয়ে কিছু কৃষক কয়েক বছর ধরে এখানে সূর্যমুখী চাষে যুক্ত হওয়ায় এটি উপজেলার কৃষির সাফল্যে নতুন পালক যোগ করেছে। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, এবার সীতাকুণ্ড উপজেলার দুই হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছেন ১৪ কৃষক। তাঁদের ক্ষেতে ফলনও হয়েছে বেশ ভালো।

এতে তাঁরা লাভবান হবেন আশা করলেও চৈত্রের দাবদাহে পানিসংকট তীব্র হওয়ায় কোথাও কোথাও ফলন কম হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ও বারৈয়াঢালা এলাকায় সূর্যমুখীর ক্ষেত পরিদর্শনকালে কথা হয় বেশ কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে। তাঁদের মধ্যে অন্যতম বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের দক্ষিণ কলাবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা কৃষক ও রাজনীতিবিদ ডা. কমল কদর। তিনি জানান, এবার তিনি ১২ শতক জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন।

এ জমি চাষের জন্য বীজ, সার, ফসফেট ও কীটনাশক দিয়েছে উপজেলা কৃষি অফিস।

স্থানীয় ব্লকের দায়িত্বে থাকা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা পিপাস কান্তি চৌধুরীও সার্বক্ষণিক যোগাযোগের মাধ্যমে সঠিক উপায়ে চাষাবাদে দারুণ সহযোগিতা করেছেন। এসব সহযোগিতা পেয়ে তিনি চাষাবাদ করে এখন সফল। কৃষক ডাক্তার কমল কদর আরো বলেন, এই জমি চাষ করতে তাঁর খরচ হয়েছে পাঁচ-ছয় হাজার টাকার মতো। এরই মধ্যে ফুলগুলো বীজে পরিণত হয়েছে।

১২ শতক জমিতে বীজ উৎপন্ন হবে ৯০ থেকে ১০০ কেজি। তিন কেজি বীজে এক লিটার তেল হয়। আর বাজারে প্রতি লিটার তেল বিক্রি হয় ৫০০ টাকায়। এ হিসাবে ৯০ কেজি বীজ থেকে ৩০ লিটার তেল পাওয়া গেলে তা বিক্রি হবে ১৫ হাজার টাকা।

তবে কত টাকা আয় হলো তার চেয়েও তিনি বেশি আনন্দিত এ কারণে, যখন ক্ষেতে সূর্যমুখী ফুল ফুটেছে তখন চারপাশের বহু গ্রামের মানুষ এই ফুলের সৌন্দর্য দেখতে আসে। অনেক আত্মীয়-স্বজন এসে এই ফুলের সঙ্গে ছবি তুলেছে দারুণ আনন্দে। তিনি বলেন, এর চেয়ে ভালো লাগার আর কী হতে পারে।

প্রায় একই কথা বলেন, বাঁশবাড়িয়া কোট্টাবাজারের আরেক সফল কৃষক ইব্রাহিম হোসেন টিপু। তিনি বলেন, ২৪ শতক জমিতে কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সহযোগিতা পেয়ে সূর্যমুখী চাষ করেছেন। জমিতে ফুল আসার পর থেকে অসংখ্য মানুষ ছুটে এসেছে এই ফুল দেখতে ও ফুলের সঙ্গে ছবি তুলতে। এই জমিতে তাঁর মোট খরচ প্রায় ১৬ হাজার টাকা। এখন ফুলগুলো বীজে পরিণত হচ্ছে। তবে পানিসংকটে এই জমির ফুলগুলো আকারে কিছুটা ছোট হয়েছে। পানি পেলে আরো বড় হতো গাছ ও ফুল। তবু তিনি খরচের দ্বিগুণের চেয়ে বেশি টাকার তেল পাবেন বলে আশাবাদী। তবে তিনিও উচ্ছ্বসিত সূর্যমুখীর টানে প্রতিদিন শত শত মানুষ এখানে ছুটে আসায়। তিনি বলেন, এই ফুল চাষের মাধ্যমে মানুষকে যে আনন্দ দেওয়া যায়, তা আর কোনো চাষেই বোধ হয় দেওয়া যায় না। পানির চাহিদা পূরণ করা গেলে আগামীতে আরো বেশি জমিতে সূর্যমুখী চাষ করবেন তিনি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাবিবুল্লা বলেন, ‘আসলে সূর্যমুখীর চাষ দিন দিন বাড়ছে। আমরা সূর্যমুখী চাষে উৎসাহী করতে সরকারের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করছি। এতে অনেক শৌখিন কৃষক এখন সূর্যমুখী চাষ করছেন। ফলে চাষাবাদ বিগত কয়েক বছর পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। তবে পানিসংকটের জন্য কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন মেনে নিয়ে তিনি বলেন, এটি প্রাকৃতিক বিষয় হলেও আমরা স্যালো বা ডিপ মেশিন স্থাপনের বিষয়ে কী করা যায়, তা দেখছি।

 

মন্তব্য

চীনা পণ্যে ‘মেড ইন ভিয়েতনাম’ ট্যাগ

    এরই মধ্যে হোয়াইট হাউসের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারোসহ অন্য উপদেষ্টারা চীনা পণ্যে ‘মেড ইন ভিয়েতনাম’ লেখা লেবেল নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন
বাণিজ্য ডেস্ক
বাণিজ্য ডেস্ক
শেয়ার
চীনা পণ্যে ‘মেড ইন ভিয়েতনাম’ ট্যাগ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার সময় থেকে ‘চায়না প্লাস ওয়ান’ নীতি গ্রহণ করে বিভিন্ন দেশ। চীনের বাইরে বিনিয়োগ বাড়ানোর এই প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে বেশি লাভবান হয় ভিয়েতনাম। ভৌগোলিক অবস্থান ও সস্তা শ্রম বিনিয়োগ আকর্ষণে বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে দেশটি। এমন পরিস্থিতিতে ট্রাম্প প্রশাসনের আরোপিত শুল্কের প্রভাব যেকোনোভাবে এড়াতে চায় তারা।

আপাতত দেশটির ওপর আরোপিত ৪৬ শতাংশ শুল্ক আগামী তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছেন ট্রাম্প। এই সময়কে কাজে লাগিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মন জয় করতে মরিয়া তারা। নিজেদের ভূখণ্ড ব্যবহার করে চীনা পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানোর ওপর কড়াকড়ি আরোপ করেছে দেশটি। চীনে সেমিকন্ডাক্টরের মতো স্পর্শকাতর পণ্য রপ্তানির বিষয়ে নিয়ন্ত্রণ আরো বাড়াতে যাচ্ছে ভিয়েতনাম।
দেশটির সরকারি নথি দেখে এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম রয়টার্স।

শুল্ক এড়ানোর অভিনব কৌশল চীনের

এরই মধ্যে হোয়াইট হাউসের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারোসহ অন্য উপদেষ্টারা চীনা পণ্যে ‘মেড ইন ভিয়েতনাম’ লেখা লেবেল নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। চীনের ওপর আরোপিত ১৪৫ শতাংশ শুল্ক এড়িয়ে যেতে চীনা পণ্যে ‘মেড ইন ভিয়েতনাম’ লেখা হচ্ছে। এরই জের ধরে যেকোনো ধরনের ‘বাণিজ্য জালিয়াতি’ শক্ত হাতে প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়েছে ভিয়েতনাম সরকার।

তবে এই বাণিজ্য জালিয়াতি কিভাবে হচ্ছে বা কারা করছে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য দেয়নি ভিয়েতনাম। গত বছর ভিয়েতনাম থেকে ১৩ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করে যুক্তরাষ্ট্র। ভিয়েতনামের বাণিজ্য উদ্বৃত্তের পরিমাণ ছিল ১২ হাজার ৩০০ কোটি ডলার। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি থাকায় ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিতে শুরু করে ভিয়েতনাম। কূটনৈতিকভাবে এই সমস্যা সমাধানে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে সিনেটর, বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ভিয়েতনামের উপপ্রধানমন্ত্রী হো ডুক ফোক।
রপ্তানিনির্ভর ভিয়েতনামের আশা, স্থগিতাদেশ শেষে শুল্কের মাত্রা কমিয়ে ২২ শতাংশ থেকে ২৮ শতাংশ করবে যুক্তরাষ্ট্র। গত মার্চে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার সময় মার্কিন কর্মকর্তারা এমন ইঙ্গিত দেন বলে জানিয়েছে রয়টার্স। যুক্তরাষ্ট্রের সুনজের থাকতে চাইলেও সরাসরি চীনের বিরোধিতা করছে না ভিয়েতনাম। প্রতিবেশী দেশ চীন থেকে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ আসে তাদের। এ ছাড়া ভিয়েতনামের রপ্তানি করা পণ্য তৈরিতেও চীনের সংশ্লিষ্টতা থাকে। ‘চায়না প্লাস ওয়ান’ নীতির সুদূরপ্রসারী প্রভাব বুঝতে পেরে অনেক চীনা কম্পানি ভিয়েতনামের মাটিতে কারখানা স্থাপন করেছে। এসব কারখানায় তৈরি পণ্য পাঠানো হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে। অনেক ক্ষেত্রে এসব পণ্য ভিয়েতনামের কর্মীরাই তৈরি করেন। পণ্যের গায়ে থাকে ‘মেড ইন ভিয়েতনাম’ লেবেল। কিছু ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির জন্য পণ্য আনা হয় চীন থেকে।

সম্প্রতি পিটার নাভারো অভিযোগ করে বলেন, ‘শুল্ক এড়াতে ভিয়েতনামকে ট্রান্সশিপমেন্টের জন্য ব্যবহার করছে চীন।’ পণ্যের চালান নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে যানবাহন পরিবর্তন করতে হলে তাকে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বলে। সামরিক এবং বেসরকারি দুই ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা যায় এমন সব পণ্যের বাণিজ্য নিয়ে নতুন নীতিমালা তৈরি করতে যাচ্ছে ভিয়েতনাম। সূত্র : রয়টার্স

 

 

 

 

মন্তব্য
প্রনোদনা চান ব্যবসায়ীরা

তুলা আমদানিতে কমবে বাণিজ্য ঘাটতি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
তুলা আমদানিতে কমবে বাণিজ্য ঘাটতি

বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে মার্কিন তুলা আমদানির ক্ষেত্রে অতিরিক্ত প্রণোদনা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দেশের তৈরি পোশাক খাতের নেতারা। গতকাল শনিবার ঢাকায় এক আলোচনায় এ কথা বলেন এনভয় টেক্সটাইল লিমিটেডের চেয়ারম্যান কুতুবউদ্দিন আহমেদ। তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের তুলার দাম অন্যান্য উৎসর তুলনায় প্রতি পাউন্ডে প্রায় চার সেন্ট বেশি। এই বাড়তি খরচ পূরণের জন্য সরকারের বিদ্যমান প্রণোদনা ব্যবস্থায় পরিবর্তন এনে তা সামঞ্জস্য করলে আমদানিকারকরা মার্কিন তুলা আমদানিতে উৎসাহী হবেন।

বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি কুতুবউদ্দিন বলেন, ‘বর্তমান নগদ সহায়তার পরিবর্তে যদি সরকার আমাদের এই বাড়তি অর্থ মার্কিন তুলা আমদানির জন্য প্রণোদনা হিসেবে দেয়, তাহলে উদ্যোক্তারা সেখান থেকে তুলা আমদানিতে আগ্রহী হবেন।’

রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে বাংলাদেশ অ্যাপারেল ইয়ুথ লিডার্স অ্যাসোসিয়েশন (বায়লা) আয়োজিত ‘বায়লা রোডম্যাপ ২০৩০ : প্রতিযোগিতার ধারা পুনর্নির্ধারণ, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পকে পুনর্বিবেচনা’ শীর্ষক আলোচনাসভায় এসব কথা উঠে আসে।

আলোচনায় বক্তারা বলেন, অতিরিক্ত বিমানভাড়া ও বন্দরের অদক্ষতা বাণিজ্য প্রবৃদ্ধির পথে বড় বাধা। কুতুবউদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ থেকে বিমানভাড়া বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি, যার কারণে অনেক রপ্তানিকারক তৃতীয় দেশে পণ্য পাঠাতে ভারতীয় বন্দর ব্যবহার করেন।

আমদানিকারকরা শুল্ক বিভাগে হয়রানি বন্ধ, বন্দরে দ্রুত পণ্য খালাস এবং অবকাঠামো উন্নয়নের দাবি জানান, যেন বাংলাদেশ বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারে। কুতুবউদ্দিন প্রশ্ন তোলেন, ‘বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে সম্মেলন হচ্ছে, কিন্তু কি কখনো দেশীয় বিনিয়োগকারীদের কথা শোনার জন্য এমন সম্মেলন হয়েছে?’

বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, এলডিসি উত্তরণ-পরবর্তী সময় এবং মার্কিন শুল্ক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমদানি শুল্ক কমানো প্রয়োজন। বিশেষ করে কৃত্রিম তন্তু আমদানিতে উচ্চ শুল্ক একটি বড় সমস্যা। তিনি আরো বলেন, ব্যাংকিং খাত, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), কাস্টমসসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যাও আছে।

তবে কিছু খাতে, বিশেষ করে এনবিআর সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সরকার এরই মধ্যে উদ্যোগ নিয়েছে।

বিজিএমইএর আরেক সাবেক সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, ‘উচ্চ সুদের হার, ইউটিলিটি চার্জ এবং বন্দরে প্রশাসনিক বিলম্ব ব্যাবসায়িক পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তিনি বলেন, ‘বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থা দীর্ঘদিন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার কাঠামোর অধীনে চললেও ট্রাম্প প্রশাসনের সময় তা ভেঙে পড়ে। এখন তা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা কঠিন।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশকে সাধারণত সস্তা শ্রমের দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

কিন্তু যদি ভিয়েতনামের সঙ্গে তুলনা করি, তাহলে তাদের পরিবহন, সুদের হার, লজিস্টিকসসহ সংশ্লিষ্ট খরচ অনেক কম। ফলে আমাদের উৎপাদন ব্যয় খুব বেশি পার্থক্য তৈরি করে না। তার ওপর আমাদের দেশে সুদের হার অনেক বেশি, গ্যাসের দাম তিন গুণ বেড়েছে, আর যেসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্প স্থাপন করতে বলা হচ্ছে, সেগুলোরই সঠিক উন্নয়ন এখনো হয়নি।’

প্রশাসনিক জটিলতা নিয়ে তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘এনবিআর আমাদের অযথা হয়রানি করে কেন? বন্দরে যেখানে তিন দিনেই পণ্য খালাস হওয়া উচিত, সেখানে তা করতে ১০ দিন লাগে কেন? এবং কেন এক দশক পর পণ্যমূল্যের এইচএস কোডের মূল্যায়ন পদ্ধতিতে হঠাৎ করে পরিবর্তন আনা হলো?’

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন বিজিএমইএর প্রশাসক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান এবং অনন্ত গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরীফ জাহির। আলোচনাসভাটি সঞ্চালনা করেন বায়লার সভাপতি আবরার হোসেন সায়েম। অনুষ্ঠানে বায়লার ২০৩০ রোডম্যাপও উপস্থাপন করা হয়।

 

 

মন্তব্য

বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন মেরুকরণ

    ♦ ট্রাম্পের শুল্কের বিরুদ্ধে এক হচ্ছে চীনের নেতৃত্বে এশিয়া ও ইউরোপ ♦ আওয়াজ উঠছে মুক্তবাণিজ্যের
মুহাম্মদ শরীফ হোসেন
মুহাম্মদ শরীফ হোসেন
শেয়ার
বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন মেরুকরণ

যুক্তরাষ্ট্রের একজন শীর্ষ অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম পোসেন। তিনি চীনের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের শুল্ক আরোপকে তুলনা করেছেন ভিয়েতনাম যুদ্ধের সঙ্গে। তাঁর মতে, এই যুদ্ধে কেউ জিতবে না। উভয়ই কাদায় আটকে যাবে, যেখান থেকে আর বের হওয়ার পথ খুঁজে পাবে না।

পেটারসন ইনস্টিটিউট ইন ওয়াশিংটনের প্রধান অ্যাডাম পোসেন গার্ডিয়ানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আরো বলেন, ‘ট্রাম্পের এই কৌশল প্রেসিডেন্ট জনসন ও নিক্সনের ভিয়েতনাম যুদ্ধের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে যে আক্রমণাত্মক ভূমিকায় এই যুদ্ধে তারা জিতবে না, যদি আলোচনার পথে না যায়।’

বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন মেরুকরণতবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আলোচনায় না গেলেও অন্য দেশগুলোকে আলোচনায় এগিয়ে নিচ্ছে চীন। বিশ্বজুড়ে শুল্ক আরোপ করে ট্রাম্প যখন শত্রু-মিত্র সব দেশকেই দূরে ঠেলে দিচ্ছেন, তখন সেই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে চীন।

ট্রাম্পের পাহাড়সম শুল্কের বিরুদ্ধে চীন একদিকে পাল্টা জবাব দিচ্ছে, অন্যদিকে মার্কিন মিত্র ইউরোপ ও এশিয়ার দেশগুলোকে কাছে টানার কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

গত বুধবার অন্যান্য দেশের বাড়তি শুল্ক স্থগিত রাখলেও চীনের ওপর শুল্ক অব্যাহত রাখেন ট্রাম্প। চীনের প্রতিশোধমূলক শুল্কের জবাবে সেদিন শুল্কের হার আরো বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ করেন। গত বৃহস্পতিবার সেই শুল্ক আরো বাড়িয়ে ১৪৫ শতাংশ করেন তিনি।

এর জবাবে শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে শুল্ক ৮৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ করেছে চীন।

এর মধ্যেই চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং চেষ্টা করছেন যুক্তরাষ্ট্রের এই অযৌক্তিক চেষ্টার বিরুদ্ধে অন্য দেশগুলোকে কাছে টানার। চিনপিং বলেছেন, ‘শুল্কযুদ্ধে কেউ জেতে না। বিশ্বের বিরুদ্ধে গেলে তা নিজেকেই একঘরে করে রাখার শামিল।’ যুক্তরাষ্ট্রের এই ‘পীড়নের’ মোকাবেলা করতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও ভারতের সঙ্গে জোট বেঁধে লড়াই করার বার্তা দিয়েছেন তিনি।

এরই মধ্যে মার্কিন শুল্কের জবাব দিতে ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছে চীন। গত শুক্রবার বেইজিংয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট চিনপিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ। যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্কের মুখে নিজেদের বাণিজ্য সামাল দিতে ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়াসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশ সফরের পরিকল্পনা রয়েছে চীনের প্রেসিডেন্টের। স্পেনের প্রধানমন্ত্রীকে চিনপিং বলেন, ‘এই বাণিজ্যযুদ্ধে কেউ জিতবে না। বিশ্বায়নপ্রক্রিয়া রক্ষা করতে এবং যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা নিপীড়ন রুখে দিতে চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নকে হাত মেলাতে হবে। শুধু নিজ স্বার্থ নয়, আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য এটা করতে হবে।’

ট্রাম্পের শুল্কের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে আঞ্চলিক বাণিজ্য গড়ে তুলতে গত মাসে বৈঠক করেছিলেন দক্ষিণ কোরিয়া, চীন ও জাপানের মন্ত্রীরা। আওয়াজ উঠছে মুক্তবাণিজ্যেরও। গত বৃহস্পতিবার নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া জানিয়েছে, তারা উভয়ে অন্যান্য দেশের সঙ্গে আলোচনা করছে সম্ভাব্য একটি মুক্তবাণিজ্য গড়ে তোলার ব্যাপারে। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টোফার লুক্সন বলেন, তিনি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সহযোগিতার ব্যাপারে সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এর পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাহী প্রধানের সঙ্গেও কথা বলেছেন।

অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি উয়ং বলেন, ট্রাম্পের শুল্কের বিরুদ্ধে একটি যৌথ জবাব দেওয়ার জন্য তাঁরা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারতসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি সম্প্রচারমাধ্যম এবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘বেশ কিছু দেশ মুক্ত, স্বচ্ছ ও ন্যায্য বাণিজ্যের বিশাল সম্ভাবনা দেখছে।’

নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টোফার লুক্সন এক্সে দেওয়া এক পোস্টে জানান, তিনি সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী, ভিয়েতনামের প্রধানমন্ত্রী ও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এগিয়ে নিতে মুক্তবাণিজ্যের বিষয়ে কথা বলেছেন। তিনি আরো জানান, তিনি ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েনের সঙ্গেও এ বিষয়ে কথা বলেছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের একতরফা কৌশল হয়তো উল্টো ফল দেবে। বিশেষ করে পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো এখন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে তাকিয়ে থাকার বদলে ঝুঁকছে একে অন্যের দিকে; এবং অবশ্যই চীনের দিকেও।

থিংক চায়নাতে এক কলামে চারহার ইনস্টিটিউটের গবেষণা সহকারী হাও নান লেখেন, ‘পূর্ব এশিয়ার অর্থনৈতিক কাঠামো দিন দিন একে অন্যের ওপর আরো বেশি নির্ভরশীল হয়ে উঠছে। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ানের মতো মিত্র দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা চাপের মুখে নত হয়নি। তারা বরং নিজেদের মধ্যে ও চীনের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করতে মনোযোগ দিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে অঞ্চলটির ভেতরে আঞ্চলিক বাণিজ্য জোটগুলো আঞ্চলিক বিস্তৃত অর্থনৈতিক অংশীদারি আরসিইপি, ট্রান্স-প্যাসিফিক অংশীদারি চুক্তির পরিমার্জিত রূপ সিপিটিপিপি এবং বহুদিন ধরে স্থগিত থাকা চীন-জাপান-কোরিয়া মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (সিজেকেএফটিএ) গতি বাড়তে পারে।’

তিনি বলেন, ‘এই শুল্কই যুক্তরাষ্ট্রকে একঘরে করে ফেলছে। আঞ্চলিক বিস্তৃত অর্থনৈতিক অংশীদারি এখন বিশ্বের ৩০ শতাংশ জিডিপি নিয়ন্ত্রণ করছে। ট্রান্স-প্যাসিফিক অংশীদারিতে চীনের প্রবেশ নিয়েও আলোচনা চলছে, যেটা একসময় যুক্তরাষ্ট্রের হাতেই তৈরি হয়েছিল চীনকে রুখতে। এখন সেটাই যুক্তরাষ্ট্রের হাতের বাইরে। চীন, জাপান, কোরিয়া—এই তিন দেশ আবারও কাছাকাছি আসছে। গত ২২ ও ৩০ মার্চ টোকিও ও সিউলে তাদের বৈঠকে এ বার্তাই এসেছে যে তারা একসঙ্গে মোকাবেলা করবে এই শুল্ক সংকট।’

এদিকে দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আরো পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তারই অংশ হিসেবে হলিউডের চলচ্চিত্র আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ১৮টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে চীনের বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বৃদ্ধির বিরুদ্ধে গত বৃহস্পতিবার বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) নালিশ করেছে বেইজিং। চীন বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র যে হারে তাদের পণ্যে শুল্ক আরোপ করেছে, তাতে এমনিতেই চীনের কম্পানিগুলোর পক্ষে বাণিজ্য করা সম্ভব নয়। এরপর আরো শুল্ক আরোপিত হলে অগ্রাহ্য করবে তারা। ট্রাম্প সেই সিদ্ধান্ত নিলে বিশ্ব অর্থনীতির ইতিহাসে তা ‘প্রহসন’ হিসেবেই থেকে যাবে। পাশাপাশি আলোচনার টেবিলে আসতে পরস্পরের প্রতি সম্মান বজায় রাখতে হবে বলে বার্তা দিয়েছে বেইজিং। সেই সঙ্গে তাদের হুঁশিয়ারি, ওয়াশিংটন চীনের স্বার্থে আঘাত হানলে পাল্টা জবাব দিতে তৈরি চীন।
সূত্র : রয়টার্স, এএফপি, গার্ডিয়ান

 

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ