<p>অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার প্রায় দ্বিগুণ দামে কিনতে হয়েছে আলুর বীজ। একই সঙ্গে বেড়েছে সার ও কীটনাশকের দাম। শ্রমিকের মজুরি এবং চাষের খরচও বেশি। সব মিলিয়ে এ বছর আলু চাষে দ্বিগুণ খরচ হয়েছে বাগেরহাটের শরণখোলার চাষিদের।</p> <p><img alt="দুঃখ যায় না বাগেরহাটের আলু চাষিদের" height="580" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2025/1. january/11-01-2025/13-01-2024-p5-6.jpg" style="float:left" width="250" />এদিকে উত্তরবঙ্গসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার আগাম ওঠা নতুন আলুতে বাজার সয়লাব। দাম কিছুটা হাতের নাগালে থাকায় নতুনের স্বাদ নিচ্ছে ক্রেতা। অথচ উপকূলের উপজেলা শরণখোলায় সবেমাত্র বীজ বপন শেষ হয়েছে। আরো প্রায় দুই মাস পরে এই আলু যখন তোলা হবে, তখন আর নতুনের স্বাদ নেওয়ার এমন আগ্রহ থাকবে না। সারা বছরই আলুর চাহিদা থাকলেও দ্বিগুণ খরচ করে সামনে আলুর সঠিক দাম পাবেন কি না, সেই চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা।</p> <p>বিশেষ করে আলু সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই এ অঞ্চলে। বাগেরহাট জেলা এমনকি খুলনায়ও আলু সংরক্ষণাগার (কোল্ড স্টোরেজ) নেই। আলু সংরক্ষণ করতে যেতে হয় রংপুর কিংবা মুন্সীগঞ্জে। একজন মাঠ পর্যায়ের কৃষকের জন্য এত দূরে আলু সংরক্ষণ করা অনেকটাই কষ্টসাধ্য এবং ব্যয়বহুল। ফলে জমি থেকেই ফড়িয়াদের কাছে আলু বিক্রি করেন তাঁরা। এই সুযোগে মাঠ থেকে কম দামে আলু কিনে নিয়ে যান বিভিন্ন এলাকার ফড়িয়া। এর ফলেও ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন চাষিরা।</p> <p>কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গোপসাগর উপকূলীয় অঞ্চল হওয়ায় শরণখোলার মাটি ও বাতাসে লবণাক্ততার পরিমাণ তুলনামূলক বেশি, যে কারণে আমন ফসলের চাষাবাদ হয় একটু দেরিতে। এর ফলে আলুসহ শীতকালীন শাক-সবজি চাষের সময় অন্যান্য এলাকার চেয়ে পিছিয়ে যায়। তাই চাহিদার শীর্ষে থাকা আলু সঠিক সময় বাজারজাত করা সম্ভব হয় না।</p> <p>কৃষি বিভাগ জানায়, শরণখোলায় এ বছর ১০৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। গতবার চাষ হয়েছিল ৮৫ হেক্টরে। ফলন হয়েছিল এক হজার ৭৬০ মেট্রিক টন। এ বছর বেশি জমিতে আলু চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে দুই হাজার ৩০০ মেট্রিক টন ফলনের আশা করা হচ্ছে।</p> <p>উপজেলার খোন্তাকাটা ইউনিয়নের মঠেরপাড় গ্রামের চাষি মো. বাদল হাওলাদার জানান, গত বছর এক কেজি বীজের দাম ছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। এ বছর সেই বীজ ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেজি দরে কিনতে হয়েছে। গতবার দুই বিঘা জমিতে সব মিলিয়ে খরচ হয়েছিল ৬০ হাজার টাকা। ফলন ভালো হওয়ায় বেশ লাভবানও হয়েছিলেন। কিন্তু এবার সব কিছুর দাম বেশি হওয়ায় দুই বিঘায় খরচ হয়েছে এক লাখ ২০ হাজার টাকা। তাই খরচ ওঠা এবং লাভ হওয়া নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন তিনি। বাচ্চু হাওলাদারসহ অন্য চাষিরাও জানিয়েছেন হতাশার কথা।</p> <p>একই ইউনিয়নের রাজৈর গ্রামের চাষি মো. দুলু তালুকদার জানান, এ বছর আট বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছেন তিনি। বীজের দাম দ্বিগুণ। গতবার দৈনিক ৫০০ টাকার শ্রমিকের মজুরি এবার ৭০০ টাকা। ১৭ টাকার ইউরিয়া সার কেজিতে বেড়েছে ছয়-সাত টাকা। সব মিলিয়ে এবার খরচ হয়েছে দ্বিগুণ।</p> <p>দুলু তালুকদার জানান, সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় আলু তুলে মাঠে স্তূপ করে রাখতে হয়। হাজার হাজার মণ আলু খোলা মাঠে রেখে দুশ্চিন্তায় থাকতে হয় চাষিদের, যে কারণে মাঠ থেকেই কম দামে ফড়িয়াদের কাছে আলু বিক্রি করতে হয়। বাগেরহাট জেলায়ও যদি একটি কোল্ড স্টোরেজ থাকত, তাহলে আলু নিয়ে আর চিন্তা করতে হতো না। বাগেরহাট জেলা সদরে একটি কোল্ড স্টোরেজ করার দাবি জানিয়েছন আলু ব্যবসায়ী ও স্থানীয় চাষিরা।</p> <p>উপজেলা সদর রায়েন্দা বাজারের আলুর আড়তদার মো. নাসির মোল্লা জানান, এ বছর খাবার আলু ও বীজ আলুর দাম এত বৃদ্ধি, যা সাধারণ ক্রেতা ও চাষিদের রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে। এবার ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেজি দরে সাড়ে ৭০০ মণ বীজ আলু বিক্রি করেছেন তিনি। তবে আলু সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকলে দাম নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়তে হতো না চাষিদের।</p> <p>উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দেবব্রত সরকার বলেন, শরণখোলা উপজেলাটি অবস্থানগতভাবে উপকূলীয়। তাই এখানকার মাটিতে লবণের মাত্রা বেশি। এ কারণে চাষাবাদও সময় হিসাব করে করতে হয়। একসময় এ অঞ্চলে আমন ধান ওঠার পরে জমিতে আর কোনো ফসল হতো না। ধীরে ধীরে কৃষি উন্নয়নে সরকারের নানামুখী উদ্যোগ এবং আধুনিক চাষাবাদ প্রযুক্তি ব্যবহারে লবণাক্ততাকে জয় করে এখন সব ধরনের ফসল ফলছে।</p> <p> </p> <p> </p> <p> </p>