<p>মহান আল্লাহ সুন্দর। তিনি সৌন্দর্য পছন্দ করেন। ইসলাম সৌন্দর্যচর্চার অনুমোদনও দিয়েছে। তবে এর একটি সীমারেখা নির্ধারিত আছে, যেন তা পাপে পরিণত না হয়। (মুসলিম, হাদিস : ৯১)</p> <p>যেসব সাজসামগ্রী হালাল বস্তু দ্বারা তৈরি, যা দ্বারা আল্লাহর সৃষ্টি করা গঠনে কোনো বিকৃতি ঘটে না, তা ব্যবহার করা জায়েজ। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সাজসজ্জা ইসলামী জীবনরীতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। ইসলাম নির্দেশ দেয় যে স্ত্রী যেন ঘরেও স্বামীর জন্য সর্বোত্তম সাজসজ্জা করে থাকে। স্বামীর উদ্দেশে সাজসজ্জা করা একটি ইবাদত। ‘আজীবনের সঙ্গী’ অথবা ‘সব সময় দেখছে’ বলে তার সামনে একেবারে অগোছালো থাকা ইসলামী শিক্ষাবিরোধী। (আলমুফাস্সাল ফি আহকামিল মারআ : ৩/৩৪৮)</p> <p>পোশাক : নারী ও পুরুষ যেহেতু পৃথক সত্তা। সৃষ্টিগতভাবে তাদের মধ্যে পার্থক্য আছে। এই পার্থক্য বজায় রাখা জরুরি। তাই নারীদের জন্য পুরুষের কাটছাঁটের পোশাক পরিধান করা এবং তাদের বেশ ধারণ করা নিষিদ্ধ। (বুখারি, হাদিস : ৫৫৪৬)</p> <p>টাইটফিট জামা, টাইটফিট বোরকা বা পাতলা পোশাক পরে বাইরে বের হওয়া কোনো মুসলিম নারীর জন্য জায়েজ নয়। (আলমুফাস্সাল ফি আহকামিল মারআ : ৩/৩৩০) আবু ইয়াজিদ মুজানি (রহ.) বলেন, হজরত ওমর (রা.) মহিলাদের কাতাবি (মিসরে প্রস্তুতকৃত এক ধরনের সাদা কাপড়) পরতে নিষেধ করতেন। লোকেরা বলল, এ কাপড়ে তার ত্বক দেখা যায় না। তিনি বলেন, ত্বক দেখা না গেলেও দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ফুটে ওঠে। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদিস : ২৫২৮৮)</p> <p>নিউ মডেল বা ফ্যাশনের জামা-কাপড় পরিধান করা তখনই বৈধ হবে, যখন তা পর্দার কাজ দেবে এবং তাতে কোনো কাফিরের অনুকরণ না হবে। আর নারীদের সালোয়ার টাখনুর নিচে থাকা উচিত। (ফাতহুল বারি : ১০/২৫৯)</p> <p>অলংকার  : নারীরা কাচ বা যেকোনো ধাতুর চুড়ি পরিধান করতে পারবে। সোনা, রুপা, পিতল, তামা ইত্যাদি ধাতুর সব রকম অলংকার ব্যবহার করতে পারবে। তাই কান ও নাক ফোঁড়াতেও পারবে। (আপকে মাসায়েল : ৭/১৩৮)</p> <p>পরচুলা : নারীরা পরচুলা ব্যবহার করতে পারে, যদি তা সুতা, পশম, কাপড় বা এজাতীয় কিছু দ্বারা তৈরি করা হয় এবং চুলের সাদৃশ্য না হয়। আর যদি মানুষের চুল দ্বারা তৈরি করা হয় বা চুলের সাদৃশ্য হয়, তাহলে তা ব্যবহার করা হারাম। (আলমুগনি : ১/৯৪)</p> <p>চুল কাটা : কোনো অপারগতা, অক্ষমতা, রোগ ইত্যাদি ছাড়া নারীদের মাথা মুণ্ডানো বা চুল ছাঁটা বৈধ নয়। (ফাতাওয়া আলমগিরি : ৫/৩৫৮)</p> <p>নারীদের মুখে পশম হলে করণীয় : নারীদের গোঁফ-দাড়ি হলে মুণ্ডিয়ে ফেলা মুস্তাহাব। কোনোভাবে মূল থেকে তুলে ফেলতে পারলে আরো ভালো। (আলমাজমু : ১/৩৪৯)</p> <p>নারীদের জন্য চেহারার অতিরিক্ত পশম তুলে ফেলা জায়েজ। (আপকে মাসায়েল : ৭/১৩৫)</p> <p>ভ্রু প্লাক করা : সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন উপায়ে ভ্রু চিকন করার যে প্রথা বর্তমানে প্রচলিত আছে, তা বৈধ নয়। (মুসলিম, হাদিস : ২১২৫)</p> <p>দাঁত ফাঁক করা : কৃত্রিমভাবে দাঁতের মধ্যে ফাঁক তৈরি করা জায়েজ নয়। তবে কোনো দাঁত অস্বাভাবিক বাঁকা বা অতিরিক্ত থাকলে তা সোজা করা বা তুলে ফেলা বৈধ। (সহিহ মুসলিম বি শরহিন নাবাবি : ১৪/১০৭)</p> <p>নখ বড় রাখা : হাত-পায়ের নখ বড় রাখা বিজাতীয়দের স্বভাব ও একটি ঘৃণিত কাজ। অনেক সময় নখের ভেতর ময়লা জমে খাবারের সময় পেটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। প্রতি সপ্তাহে হাত-পায়ের নখ কাটা সুন্নত। অন্তত দুই সপ্তাহে একবার কাটলেও চলবে। তবে ৪০ দিনের বেশি না কাটা অবস্থায় অতিবাহিত হলে গুনাহ হবে। (মুসলিম, হাদিস : ২৫৮)</p> <p>নেইলপলিশ : নেইলপলিশ যদি পবিত্র বস্তু দ্বারা প্রস্তুত করা হয়, তাহলে তা ব্যবহার করা জায়েজ। তবে নেইলপলিশ যেহেতু পানি প্রবেশের প্রতিবন্ধক, তাই তা নখে থাকা অবস্থায় অজু ও ফরজ গোসল হবে না। নখ থেকে তুলে অজু ও ফরজ গোসল করতে হবে। বারবার অজুর সুবিধার্থে নেইলপলিশ ব্যবহার না করাই অধিক নিরাপদ। (আপকে মাসায়েল : ৭/১৩৭)</p> <p>মেহেদি : নারীদের জন্য সর্বদা হাত-পা মেহেদি দ্বারা রাঙিয়ে রাখা মুস্তাহাব। এতে স্বামী আনন্দিত হয়। অজু-গোসলেও কোনো সমস্যা হয় না। কেউ কেউ পায়ে মেহেদি লাগানোকে খারাপ মনে করেন এই যুক্তিতে যে নবীজি (সা.) দাড়িতে মেহেদি লাগাতেন, অতএব, তা পায়ে লাগানো বেআদবি—এ যুক্তি ঠিক নয়। নবীজি (সা.) দাড়িতে তেল লাগাতেন, তাই বলে কি পায়ে তেল লাগানো বেআদবি হবে? (আউনুল মাবুদ : ১১/২২৩) মহানবী (সা.) তেল, ক্রিম ইত্যাদি ব্যবহার করতেন, তাই তেল ব্যবহার করা সুন্নত। ক্রিম, স্নো, পাউডার ইত্যাদি ব্যবহার করায় কোনো দোষ নেই, যদি এগুলোতে কোনো নাপাক বস্তু মিশ্রিত না থাকে। (আউনুল মাবুদ : ৫/২৭৬)</p> <p>সেন্ট, পারফিউম ও বডি স্প্রে : সেন্ট, পারফিউম, বডি স্প্রে ইত্যাদিতে যদি কোনো ধরনের নাপাক বস্তু মিশ্রিত না থাকে, তাহলে তা ব্যবহার করা জায়েজ। মুসলিম নারীরা গৃহের মধ্যে অবশ্যই সুগন্ধি ব্যবহার করবে। (তুহফাতুল আহওয়াজি : ৮/৭১)</p> <p>লেখক : শিক্ষক, জামিয়া আম্বরশাহ আল ইসলামিয়া, কারওয়ান বাজার, ঢাকা।</p>