<p>গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে প্রাণঘাতী হামলা করে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। হামাসের আক্রমণের সঙ্গে সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা দেয় ইসরায়েল এবং গাজায় সর্বাত্মক আক্রমণ শুরু করে তারা। ইসরায়েলের আক্রমণে গাজায় এখন পর্যন্ত ৪৩ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে। যাদের বেশির ভাগ নারী ও শিশু। ইসরায়েল ফিলিস্তিনের গাজায় নির্বিচারে বোমাবর্ষণ করছে। তা থেকে রক্ষা পাচ্ছে না হাসপাতাল, বিদ্যালয়, উদ্বাস্তু শিবির, ধর্মীয় উপাসনালয় কোনো কিছুই।</p> <p>ইসরায়েলের নির্বিচার আক্রমণে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, জাদুঘর, মসজিদ, চার্চসহ বহু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ক্ষতিগ্রস্ত ও ধ্বংসের মুখে পড়েছে। ইউনেসকোর তথ্য মতে, ৭ অক্টোবর ২০২৩ থেকে সেপ্টেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত ৬৯টি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন ধ্বংস হয়েছে। যার মধ্যে আছে ১০টি ধর্মীয় স্থান, ৪৩টি এমন স্থাপনা, যার ঐতিহাসিক ও শৈল্পিক মূল্য আছে, দুটি স্থানান্তরযোগ্য সাংস্কৃতিক সম্পদ, ছয়টি স্মৃতিস্তম্ভ, একটি জাদুঘর ও সাতটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। ইউনেসকো স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখেছে এসব নিদর্শনের ২০ থেকে ৫১ শতাংশ পর্যন্ত ধ্বংস হয়ে গেছে। সংস্থাটির আশঙ্কা বাস্তব ক্ষতির পরিমাণ এর থেকেও বেশি হতে পারে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েল কর্তৃক নানা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন লুট করার বিভিন্ন তথ্য প্রকাশ পেয়েছে।</p> <p>অধিকৃত পশ্চিম তীরের বিরজেইত বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা দাবি করেছেন, ইসরায়েলি বাহিনী চলতি বছরের শুরুতে গাজার আল ইসরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিন হাজারেরও বেশি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন লুট করেছে এবং লুটের ঘটনা ধামাচাপা দিতে বিশ্ববিদ্যালয়টি ধ্বংস করে দিয়েছে।<br /> ভৌগোলিকভাবে গাজা মিসর ও লেভেন্টের মধ্যে অবস্থিত। ইতিহাসের পরিক্রমায় গাজায় বিভিন্ন সাম্রাজ্যের পদছায়া পড়েছে এবং প্রত্যেকে নিজের ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক স্মৃতিস্মারক সেখানে রেখে গেছে। মিসরীয়, অ্যাসেরিয়ান, রোমান, খ্রিস্টান ও মুসলিম শাসনের স্মৃতিচিহ্নগুলো হয়তো আজ ধ্বংস হয়েছে নতুবা ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকির মধ্যে আছে।</p> <p>উসমানীয় ঐতিহাসিক ড. ইয়াকুব আহমেদ মনে করেন, সাংস্কৃতিক চিহ্ন বিলুপ্ত করা জায়নবাদীদের একটি সুপরিকল্পিত পরিকল্পনার অংশ। এর মাধ্যমে তারা ফিলিস্তিনিদের তাদের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক শিকড় থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চায়। তারা ফিলিস্তিনিদের ইতিহাস অস্বীকার করে এমন একটি আখ্যান প্রতিষ্ঠা করতে চায়।</p> <p>গাজার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বর্ণনা মতে, অক্টোবর ২০২০-এর পর গাজার এক হাজার ২৪৫টি মসজিদের ৮১৪টিই ধ্বংস করেছে। তাদের আক্রমণে ১৪৮টি মসজিদ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৭ ডিসেম্বরের আক্রমণে গাজার জেইতুন এলাকায় অবস্থিত ঐতিহাসিক উসমান বিন কাশকার মসজিদ ধ্বংস হয়ে যায়, যা ১২২০ সালে নির্মিত। ৮ ডিসেম্বরের হামলায় ধ্বংস হয় গ্রেট ওমরি মসজিদ। এটি ফিলিস্তিন অঞ্চলের সবচেয়ে প্রাচীন মসজিদ। খলিফা ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর নামে মসজিদ খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে নির্মাণ করা হয়। যুদ্ধের শুরুতে সাইয়েদ আল হাশিম মসজিদকে লক্ষ্যে পরিণত করে ইসরায়েলি বাহিনী। </p> <p>মুহাম্মদ (সা.)-এর পূর্বপুরুষ হাশিম বিন আবদে মানাফের নামানুসারে তা নির্মাণ করা হয়। তিনি গ্রীষ্মকালীন বাণিজ্যিক সফরে এসে গাজায় মারা যান। মামলুক শাসকরা তা নির্মাণ করেন। ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে উসমানীয়রা মসজিদের পুনর্নির্মাণ করেন। ইসরায়েলের নির্বিচার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাচ্ছে খ্রিস্টান চার্চগুলো। সেন্ট পোরফেরিয়াসের নামে প্রতিষ্ঠিত গ্রিক অর্থডক্স চার্চ গাজার প্রাচীনতম উপাসনালয়গুলোর একটি, বরং সমগ্র খ্রিস্টানজগতের মধ্যে তা প্রাচীনতম। চার্চটি ৪০৭ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত এবং দ্বাদশ খ্রিস্টাব্দে তা পুনর্নির্মাণ করা হয়। নিকটস্থ আল আহলি ব্যাপিস্ট হাসপাতালে আক্রমণের সময় প্রাচীন এই চার্চ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আল আহলি হাসপাতালের বয়স ১৪১ বছর এবং এটি গাজার সবচেয়ে পুরনো হাসপাতাল।</p> <p><em>মিডল ইস্ট আই অবলম্বনে</em><br />  </p>