<p>ডালিম একটি সুস্বাদু ফল। এর আরবি প্রতিশব্দ ‘রুম্মান’। ডালিমের আদি নিবাস প্রাচীন পারস্য অঞ্চলে। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি আনার হয় ইরানে। তবে বর্তমানের পৃথিবীর প্রায় সব অঞ্চলেই আনার চাষ হয়।</p> <p>পবিত্র কোরআনের তিন স্থানে রুম্মান বা আনারের আলোচনা এসেছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তিনিই সৃষ্টি করেছেন এমন বাগানসমূহ, যার কিছু মাচায় তোলা হয় আর কিছু তোলা হয় না এবং খেজুরগাছ ও শস্য, যার স্বাদ বিভিন্ন রকম, জয়তুন ও আনার (ডালিম), যার কিছু দেখতে এক রকম আর কিছু ভিন্ন রকম। তোমরা তার ফল থেকে আহার করো, যখন তা ফল দান করে এবং ফল কাটার দিনেই তার হক দিয়ে দাও আর অপচয় কোরো না। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের ভালোবাসেন না।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ১৪১)</p> <p>এই ফল যে শুধু দুনিয়াতেই মানুষের জন্য নিয়ামত, তা কিন্তু নয়, বরং জান্নাতেও মহান আল্লাহ তাঁর এই নিয়ামত তাঁর জান্নাতি বান্দাদের জন্য রাখবেন। পবিত্র কোরআনে জান্নাতি ফলের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলা হয়েছে, ‘সেখানে আছে ফলমূল, খেজুর ও ডালিম।’ (সুরা : আর-রাহমান, আয়াত : ৬৮)</p> <p>তাফসিরবিদদের মতে, এখানে ফলমূলের কথা উল্লেখ করে আলাদা করে আবার খেজুর, ডালিমের কথা উল্লেখ করার কারণ হলো খেজুর ফল ও খাবার, আর ডালিম হলো ফল ও ওষুধ। (কুরতুবি)</p> <p>অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তিনিই আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন অতঃপর আমি এর দ্বারা সব ধরনের উদ্ভিদ উৎপন্ন করেছি। অতঃপর আমি এ থেকে সবুজ ফসল নির্গত করেছি, যা থেকে যুগ্ম বীজ উৎপন্ন করি। খেজুরের কাঁদি থেকে গুচ্ছ বের করি, যা নুয়ে থাকে এবং আঙ্গুরের বাগান, যাইতুন, ডালিম পরস্পর সাদৃশ্যযুক্ত এবং সাদৃশ্যহীন। বিভিন্ন গাছের ফলের প্রতি লক্ষ্য করুন, যখন তা ফলন্ত হয় এবং তার পরিপক্কতার প্রতি লক্ষ্য করুন। নিশ্চয় তাতে নিদর্শন রয়েছে ঈমানদারদের জন্য। (সুরা আনয়াম : ৯৯)</p> <p>সুবাহানাল্লাহ, ফলমূল ইত্যাদি মহান আল্লাহর অমূল্য নিয়ামত। এগুলোর দ্বারা মহান আল্লাহ মানুষের যেমন আহারের ব্যবস্থা করেন, তেমনি এগুলোর মধ্যে মানুষের রোগ নিরাময়েরও বিভিন্ন ঔষধি গুণ দিয়ে রেখেছেন। তাই সম্ভব হলে, সামর্থ্য থাকলে মাঝেমধ্যে ফল খাওয়ার চেষ্টা করা উচিত। বিশেষ করে ডালিম ফলের আছে বিশেষ স্বাস্থ্য উপকারিতা।</p> <p>হেলথ লাইন ডটকম ও হেলথ বেনিফিটস টাইমসের তথ্যমতে ডালিম রক্তে চিনির মাত্রা ঠিক রাখে। ডালিমের রসে ফ্রুক্টোজ থাকলেও এটি অন্য ফলের রসের মতো রক্তে চিনির মাত্রা বাড়ায় না। ডায়াবেটিক রোগীর ক্ষেত্রে নিয়মিত ডালিমের রস খেলে রক্তে চিনির মাত্রা ঠিক থাকে। শরীর থেকে মুক্ত ক্ষতিকর উপাদান কমিয়ে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী গুণাগুণ আছে ডালিমে। শরীরের ক্ষতিকর ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়ার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ডালিমের রস। ডালিমে থাকা আয়রন, ক্যালসিয়াম, শর্করা ও আঁশ (ফাইবার) রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করে দেহে রক্ত চলাচল সচল রাখে।</p> <p>এ ছাড়া ডালিম এমন একটি ফল যে এর খোসায়ও রয়েছে ঔষধি গুণ। আলী (রা.) বলেন, ‘তোমরা খোসাসহ ডালিম খাও। কেননা তা পরিপাকতন্ত্রকে পরিষ্কার করে।’ (মাজমাউজ জাওয়ায়েদ : ৫/৯৯)</p> <p> </p>