ঢাকা, শনিবার ১২ এপ্রিল ২০২৫
২৯ চৈত্র ১৪৩১, ১২ শাওয়াল ১৪৪৬

ঢাকা, শনিবার ১২ এপ্রিল ২০২৫
২৯ চৈত্র ১৪৩১, ১২ শাওয়াল ১৪৪৬

শিবির নেতার ওপর হামলা, ছাত্রদলকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বার্তা

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
শিবির নেতার ওপর হামলা, ছাত্রদলকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বার্তা
সংগৃহীত ছবি

গাজীপুরের তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসা শাখা ছাত্রশিবিরের ওয়ার্ড সভাপতি ফজলে রাব্বি সিফাতের ওপর ছাত্রদলের হামলা এবং পরবর্তীতে পুলিশের উপস্থিতিতে জেরাপূর্বক ভিডিও রেকর্ডিং, থানায় আটকে রেখে আইনি অধিকার থেকে বঞ্চিত করার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

শুক্রবার সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ প্রতিবাদ জানায় সংগঠনটি।

সংগঠনের দপ্তর সেল সম্পাদক জাহিদ আহসান সাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইদানীং জুলাই গণঅভ্যুত্থান পূর্ব সময়ের মতো ভিন্নমত দমনের বিভিন্ন প্রবণতা ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গত কয়েকদিনে মারধরের প্রক্ষাপট এবং ঘটনাক্রম পর্যবেক্ষণ করে ছাত্র রাজনীতিতে পূর্বের ফ্যাসিবাদী সময়ের মতো সহিংসতা বহাল তবিয়তে ফেরার আশঙ্কা করছি।

 

আরো পড়ুন
দুঃখ প্রকাশ করে যা বললেন ছাত্রদলের হামলার শিকার শিবির নেতা

দুঃখ প্রকাশ করে যা বললেন ছাত্রদলের হামলার শিকার শিবির নেতা

 

এতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম অংশীজন হলেও বারবার সহিংসতামূলক ঘটনার সাথে তাদের সংশ্লিষ্টতা ইতিমধ্যে প্রমাণিত। ছাত্রদলকে সহিংসতার পথ ছেড়ে মেধা ও মননের রাজনীতি চর্চার আহ্বান জানানো যাচ্ছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের সকল মত এবং পথের ছাত্রদের সাথে নিয়ে গণঅভ্যুত্থানের আশা আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ গড়তে “আমব্রেলা সংগঠন” হিসেবে ভূমিকা পালন করবে। ছাত্র সংগঠনসমূহকে ধৈর্য্যশীল আচরণ বজায় রাখার অনুরোধ করা হচ্ছে।

জাহিদ আহসান বিবৃতিতে বলেন, আহত ফজলে রাব্বি সিফাতের আশু সুস্থতা কামনা করছি। বাঁধাহীনভাবে বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার লক্ষ্যে ইতিমধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ভুক্তভোগী পক্ষের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করছেন। সহিংসতার রাজনীতি বন্ধ এবং আইনশৃঙ্ক্ষলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অন্তর্বর্তী সরকারকে আরো উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে।
 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ড. ইউনূসে লাভ কী, সারজিসেরই প্রধানমন্ত্রী হওয়া উচিত : দুদু

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
ড. ইউনূসে লাভ কী, সারজিসেরই প্রধানমন্ত্রী হওয়া উচিত : দুদু
শামসুজ্জামান দুদু। ফাইল ছবি

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, ‘এতবড় গণ-অভ্যুত্থান আমরা সংঘটিত করেছি। আমাদের ছেলেমেয়েরা এক সাগর রক্ত দিয়েছে। সেটিকে রক্ষা করতে হবে, দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। এখন জরুরি কাজগুলো করে নির্বাচন দিতে হবে।

সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে অংশ নিয়ে শামসুজ্জামান দুদু এসব কথা বলেন।

সরকারের ৫ বছর থাকা নিয়ে সঞ্চালক জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর মন্তব্যের প্রসঙ্গ টানলে দুদু বলেন, ‘এই সরকারের ৫ বছর, ১০ বছর থাকার কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করা ঠিক না। এতে বিপদ হতে পারে আমাদের।’

তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় তারই (সারজিস আলম) প্রধানমন্ত্রী হওয়া উচিত; ড. ইউনূস এলে লাভ কী, সে যখন বুঝতে পেরেছে।

সবকিছু নিয়ে ছেলেমানুষি করা ঠিক হবে না। নির্বাচন করলে ড. মুহাম্মদ ইউনূস যদি মনে করেন, ৫ বছর কেন মানুষ ভোট দিলে ১০ বছর থাকবেন।’

বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘নির্বাচন ছাড়া ৫ বছর তাকে কীভাবে রাখব? ভোট করার মতো অবস্থা নেই, কম সংস্কার, বেশি সংস্কার; এই বিষয়গুলো আমার কাছে হাস্যকর মনে হয়। নব্বই গণ-অভ্যুত্থানের পর একটা সাংবিধানিক সরকারই ছিল, ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব হয়েছে।

এটাও সাংবিধানিক সরকার। দুটো ৯০ দিন চলে গেল। অর্থাৎ, একটি বিদায়ী সরকারের ৯০ দিনের মধ্যে আরেকটা নির্বাচিত সরকার আসার কথা। সেটি নেই। এদের মাথায় এগুলো কাজ করছে না।

তিনি বলেন, ‘সারজিস আলম একটি রাজনৈতিক দলের দায়িত্বশীল। ভারত কী চায় এটি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বড় ঘটনা না। তারা কী জিনিস তা আমরা ৫২ বছরে বুঝেছি। এখন গুরুত্বপূর্ণ হলো মানুষকে ক্ষমতায়ন করা। ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। এতে কার্পণ্য করলে বাংলাদেশকে অনিশ্চয়তার মধ্যে নিয়ে যাবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু করতে যে পরিবর্তন দরকার, সেটা করে নির্বাচন দিতে হবে। ৮ মাসে রোডম্যাপও পাওয়া গেল না। আওয়ামী লীগের রাজনীতি-নির্বাচন অনেক পরের ব্যাপার, তারা যে নিপীড়ন-নির্যাতন করেছে তারা বের হলেই মানুষ ধরবে।’

শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘এই দেশে মুসলিম লীগ পাকিস্তান সৃষ্টি করেছিল ও বড় আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে। কিন্তু প্রথম নির্বাচনের পরেই তারা ধুয়েমুছে গিয়েছিল। ১৯৫৪ এর নির্বাচনে আমরা দেখেছি। আওয়ামী লীগ তো একবার শেখ মুজিবের মাধ্যমে শেষ হয়েছে। এবার শেখ হাসিনা বাকিটুকু শেষ করেছে।’

মন্তব্য

‘৫ বছরের ম্যান্ডেট দিন, দুর্নীতিমুক্ত দেশ উপহার দেব’

সদর দক্ষিণ-লালমাই (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
সদর দক্ষিণ-লালমাই (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
শেয়ার
‘৫ বছরের ম্যান্ডেট দিন, দুর্নীতিমুক্ত দেশ উপহার দেব’
সংগৃহীত ছবি

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও কুমিল্লা-১০ আসনে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী মুহাম্মদ ইয়াছিন আরাফাত বলেছেন, আগামী দিনের রাজনীতি হবে সুস্থ ধারার, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাস, দখলদারি, দুর্নীতি ও মাদকমুক্ত রাজনীতি। মাত্র ৫ বছরের জন্য আমরা ম্যান্ডেট চাই। কথা দিচ্ছি দুর্নীতিমুক্ত, দুঃশাসনমুক্ত রাষ্ট্র উপহার দেব, ইনশাআল্লাহ। 

শুক্রবার (১১ এপ্রিল) রাতে কুমিল্লার লালমাই উপজেলার আটিটি বাজারে জামায়াতের ইউনিয়ন সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

 

আরো পড়ুন
জমি দখল করে বিএনপি কার্যালয় নির্মাণচেষ্টার অভিযোগ

জমি দখল করে বিএনপি কার্যালয় নির্মাণচেষ্টার অভিযোগ

 

তিনি বললেন, আমরা দেখেছি যখন বাংলাদেশ দুর্নীতিতে পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তখন অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়েও জামায়াতে ইসলামীর ২ জন মন্ত্রীর ৩ টি মন্ত্রণালয়ে ১ টাকার দুর্নীতিও কেউ বের করতে পারেনি। আস্থা রাখতে চাই, প্রধানমন্ত্রীসহ সকল মন্ত্রণালয় যদি জামায়াতে ইসলামীকে দেওয়া হয় ১ টাকার দুর্নীতিও জামায়াতে ইসলামী করবে না। 

পেরুল দক্ষিণ ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. হায়াতুন্নবীর সভাপতিত্বে সম্মেলনে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন- কুমিল্লা-৯ আসনের জামায়াত মনোনীত প্রার্থী ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি ড. সৈয়দ সরওয়ার উদ্দিন সিদ্দিকী, জেলা জামায়াতের অফিস সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম সরওয়ার মজুমদার কামাল, লালমাই উপজেলা আমির মাওলানা আব্দুন নূর, সেক্রেটারি মাওলানা মু. ইমাম হোসাইন, সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা মফিজুল ইসলাম, মু. কামাল হোসেন, কবি ফারুক আহমেদ, মেসবাহুল ইসলাম, বাগমারা দক্ষিণ ইউনিয়ন জামায়াতের আমির মাওলানা নঈম উদ্দিন সিদ্দিকী, পেরুল উত্তরের আমির ডা. জাহাঙ্গীর আলম, বাগমারা ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদের সভাপতি শিল্পী জিয়াউর রহমান প্রমুখ।
 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য
গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন

গোপনে ঢাকায় জমায়েতের চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
গোপনে ঢাকায় জমায়েতের চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ
সংগৃহীত ছবি

আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে শেখ হাসিনাকে ঢাকায় ফেরানোর দাবিতে শক্তি প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে দলীয় নেতাকর্মীদের সমবেত হতে বলা হয়েছে। এই তথ্য ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, যা সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে।

বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে চট্টগ্রামের সব থানাকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। সম্প্রতি গোয়েন্দা পুলিশের একটি গোপন রিপোর্টে এমন তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।

গোয়েন্দাদের ধারণা, পতিত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা রাজধানীতে অস্থিরতা তৈরি কিংবা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরাতে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এই প্রেক্ষাপটে নতুন করে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় পুলিশ প্রশাসন সতর্ক অবস্থানে গেছে।

আরো পড়ুন
সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতো ফরহাদের স্ত্রী-ভগ্নিপতি-ভাই

সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতো ফরহাদের স্ত্রী-ভগ্নিপতি-ভাই

 

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, গত ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর চট্টগ্রামে সহিংসতা, দখল, সংঘর্ষ ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক কর্মকাণ্ডে সরাসরি জড়িয়ে পড়েছে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা। একদিকে রাজনৈতিক শূন্যতা, অন্যদিকে পুলিশের দুর্বল মনোবলের সুযোগে এসব অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।

বুধবার (৯ এপ্রিল) চট্টগ্রাম জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিএসবি) থেকে সব থানায় একটি চিঠি পাঠানো হয়। এতে অস্থির পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ সদস্যদের জন্য ৮ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়, যার মধ্যে রয়েছে— সন্দেহভাজনদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ, যাদের নামে মামলা আছে তাদের মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে অবস্থান শনাক্ত করে গ্রেপ্তার, গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চেকপোস্ট বসানো, নৌঘাট, রেলস্টেশন ও বাসস্ট্যান্ডে নজরদারি বাড়ানো, বিএনপি ও জামায়াতপন্থি স্থানীয় নেতাদের সহায়তায় ঢাকামুখী যাত্রা প্রতিহত করা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নজরদারি করে উসকানিদাতাদের শনাক্তকরণ, অর্থদাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া, ভাড়ায় চালিত গাড়ি ও স্ট্যান্ডগুলোর ওপর নজর রাখা।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) মাহমুদা বেগম বলেন, ‘নগরীতে পুট ও নাইট পেট্রোল, নতুন নতুন চেকপোস্ট, এবং মিনি টিম গঠন করে কাজ করা হচ্ছে। যেসব এলাকা অস্থিরতার ঝুঁকিতে আছে, সেখানে বাড়তি ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম জেলা ডিএসবির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জুনায়েত কাউছার বলেন, ‘আমি নির্দিষ্ট কোনো চিঠির বিষয়ে নিশ্চিত নই, তবে হুমকি বা গুজব পেলে আমরা নিয়মমাফিক প্রস্তুতি নিই, যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা না ঘটে। পুলিশ সবসময় সচেতন ও সতর্ক রয়েছে।’

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন ফরহাদের স্ত্রী-ভগ্নিপতি-ভাই

ইয়াদুল মোমিন, মেহেরপুর প্রতিনিধি
ইয়াদুল মোমিন, মেহেরপুর প্রতিনিধি
শেয়ার
সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন ফরহাদের স্ত্রী-ভগ্নিপতি-ভাই
সংগৃহীত ছবি

আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতাপশালী মন্ত্রীদের একজন ছিলেন সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। কখনো রাজনীতির মাঠে না দেখা গেলেও ২০১৪ সালে বিএনপিবিহীন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এমপি নির্বাচত হন ফরহাদ হোসেন। পরের বছর দলের জেলা সম্মেলনে এমপির ক্ষমতায় হয়ে যান মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। অথচ এর আগে তিনি জেলা, কিংবা কোন অঙ্গ সংগঠনের কমিটির সদস্যও ছিলেন না।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও এমপি পদ পেয়ে শুরু করেন দলের ত্যাগী নেতাদের কোণঠাসা করা।

মেহেরপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে ফরহাদ হোসেনের বাড়ি। মন্ত্রী থাকাকালে তার বাড়ির সামনে খোলা জায়গায় অগণিত প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেলের সারি দেখা যেত। এই বাড়িটিতে কখনো রাত নামত না।

দলীয়, সামাজিক কার্যক্রম, বদলি-প্রমোশনের তদবির ও দেনদরবারে নারী-পুরুষের ভিড় লেগে থাকত সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত। বাড়িটিতে হাজিরা না দিলে মন্ত্রীর আস্থাভাজন হওয়া যেত না। জেলা, পুলিশ প্রশাসনসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীরাও হাজিরা দিতে বাধ্য হতেন। না হলে তাকে হতে হতো হয়রানির শিকার।

জেলাজুড়ে সরকারি কর্মকর্তা, দলীয় নেতাকর্মীকে উঠতে-বসতে হতো মন্ত্রী ও তার স্ত্রী মেহেপুরের অঘোষিত ‘রানী’ সৈয়দা মোনালিসা ইসলাম শীলার নির্দেশনা মতো। সেই বাড়িটি এখন সুনসান নীরবতা। গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর মানুষের ক্ষোভের চিহ্ন সেই বাড়ির সামনে। আর এসব ক্ষোভের কারণ—দলে মারাত্মকভাবে বিভাজন তৈরি, প্রশাসনকে অধীনস্থ কর্মচারীর মতো দেখা, দলে নেতৃত্ব সৃষ্টি হতে না দেওয়া, মন্ত্রী ও তার স্ত্রীর একক সিদ্ধান্তে সব কিছু করা, পরিবার ও নিকটাত্মীয়দের মুক্তিযোদ্ধার তালিকাভুক্ত করা, অনুগত না হলে প্রশাসনের কর্মকর্তা, সংবাদকর্মী বা দলীয় নেতার সঙ্গে কথা বন্ধ রাখা।

জানা যায়, ২০১৮ সালে নির্বাচনের পর প্রথমবারের মত জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে প্রতি শুক্রবার মেহেরপুরে আমলাদের হাট বসত।

দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সরকারি কর্মকর্তারা আসতো তদবির বাণিজ্য করতে। মেহেরপুরের আবাসিক হোটেলগুলো রমরমা ব্যবসা করতো ওই সময়গুলোতে। সেই দাপুটে মন্ত্রীর বাড়ির সামনে এখন নেই কোনো জনমানব। মন্ত্রীর বড়ভাই সহিদ সাদিক হোসেন বাবুল, মেজভাই শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি ইকবাল হোসেন বুলবুল বাড়িতে অবস্থান করলেও কেউ এখন বাড়ির বাইরে আসেন না।

পরিবারতন্ত্রের কমিটি

২০২২ সালে অনুষ্ঠিত সম্মেলন ফরহাদ হোসেনকে পুনরায় সভাপতি ও এম এ খালেককে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা দেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এর ১৩ মাস পর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্র।

কমিটিতে মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, তার ভগ্নিপতি আব্দুস সামাদ বাবলু বিশ্বাস সহসভাপতি ও পিরোজপুর ইউপি চেয়ারম্যান, বোন শামীম আরা হীরা জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য, স্ত্রী সৈয়দা মোনালিসা হোসেন সদস্য ও কেন্দ্রীয় যুব মহিলা লীগের সহসভাপতি, বড় ভাই ইকবাল হোসেন বুলবুল শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি, ছোট ভাই সরফরাজ হোসেন মৃদুল জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক, ভাইয়ের ছেলে আদিব হোসেন আসিফ মেহেরপুর সরকারি কলেজে ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন, চাচা প্রয়াত বোরহান উদ্দিন চুন্নু সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও আমঝুপি ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি মৃত্যুবরণ করলে তার ছেলে সেলিম আহমেদকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয়। গত ৫ আগস্ট পরবর্তী সে উপ-নির্বাচন হয়নি। চাচাতো ভাই মোমিনুল ইসলাম শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বারাদি ইউপি চেয়ারম্যান, চাচাতো ভাই আকবর জালাল ও বিয়াই (বোনের ভাসুর) সিরাজুল ইসলাম ও মামা সম্পর্কের রেজাউল হক মাস্টার পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদ।

কমিটি অনুমোদনের পর পরই মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ খালেক কালের কণ্ঠকে বলেছিলেন, সভাপতির নিকটাত্মীয় কেউ জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে নেই। প্রতিমন্ত্রীর যেসব আত্মীয়স্বজন এই কমিটিতে ঠাঁই পেয়েছেন, তারা সবাই সংগঠনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। এ ক্ষেত্রে নতুন করে কাউকে কোনো পদ পদবিতে রাখা হয়নি। তারা তাদের নিজের যোগ্যতা বলেই বিভিন্ন পদ-পদবিতে ঠাঁই পেয়েছেন।

কলেজশিক্ষক থেকে মন্ত্রী

ঢাকার সিটি কলেজে শিক্ষকতা করতেন ফরহাদ হোসেন। ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন নিয়ে আসেন মেহেরপুরে। বিএনপিবিহীন ওই নির্বাচনে মেহেরপুর-১ (সদর-মুজিবনগর) আসনে জয়ী হয়ে পরের বছর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ পেয়ে যান। এরপর ধীরে ধীরে মেহেরপুরে দলীয় রাজনীতি থেকে শুরু করে উন্নয়ন প্রকল্পের ঠিকাদারি পর্যন্ত সবই চলে যায় ফরহাদ হোসেনের পরিবারের দখলে।

ফরহাদ হোসেনের বাবা ছহিউদ্দীন বিশ্বাস ছিলেন মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন কমিটির সভাপতি এবং তিনি সংসদ সদস্য ছিলেন। তবে ফরহাদ হোসেন সংসদ সদস্য (এমপি) হওয়ার আগ পর্যন্ত দলের কোনো পদ ছিলেন না। এলাকায় কলেজশিক্ষক হিসেবেই তিনি পরিচিত ছিলেন। ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের চাচাতো বোন সৈয়দা মোনালিসা ইসলামকে বিয়ে করেন। ২০১৪ সালে মেহেরপুর-১ আসনের এমপি হওয়ার পর ২০১৫ সালের অক্টোবরে সরাসরি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বনে যান। সবশেষ ২০২২ সালেও দলের সম্মেলনে তিনি একই পদ পান। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর দলীয় সভানেত্রী ফরহাদ হোসেনকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন। সর্বশেষ ২০২৪ সালে তৃতীয়বারের মতো এমপি হয়ে একই মন্ত্রণালয়ে পূর্ণ মন্ত্রীর দায়িত্ব পান।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে ছিলেন ফরহাদ হোসেন ও তার পরিবারের সদস্যরা। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় কয়েকটি মামলায় ফরহাদ হোসেন, তার স্ত্রী সৈয়দ মোনালিসা হোসেন, ছোট ভাই সরফরাজ হোসেন মৃদুল, ভগ্নিপতি আব্দুস সামাদ বাবলু বিশ্বাস আটক করে কারাগারে পাঠানো হয়। তবে তার বোন শামীম আরা হীরা গ্রেপ্তার হলেও কিছুদিন পর তিনি জামিন পেয়ে বের হয়ে আসেন।

দলে তৈরি করেছিলেন বিভেদ

আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বলছেন, পরিবারের সদস্য, স্বজন ও ঘনিষ্ঠজনদের দলীয় বিভিন্ন পদে বসিয়েছেন সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। তাদের অনেককে জনপ্রতিনিধিও বানিয়েছেন। তাদের দিয়েই জেলার ঠিকাদারি থেকে শুরু করে বিভিন্ন কলেজ-বিদ্যালয়ে নিয়োগ, সরকারি কর্মচারীদে বদলি বাণিজ্য সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। বিপরীতে কোণঠাসা করেছেন দলের ত্যাগী নেতাদের। তার বিপক্ষে গেলে দলীয় নেতা-কর্মীদের নানাভাবে নির্যাতনের অভিযোগও রয়েছে। ফরহাদের ভাই ও ভগ্নিপতির দাপটে দলীয় নেতা-কর্মী ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা তটস্থ থাকতেন। ২০১৪ সালের এমপি হওয়ার পর থেকে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এক পাশে ডিসি, আরেকপাশে এসপিকে নিয়ে মঞ্চে বসতেন। দলীয় অনেক সিনিয়র নেতাদেরও মঞ্চে জায়গা দিতেন না ফরহাদ হোসেন।

আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কয়েকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ফরহাদের আধিপত্যের বিরোধিতা করায় দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের নিষ্ক্রিয় করে রেখেছিলেন তিনি। এ নিয়ে দলের মধ্যে দুটি গ্রুপ তৈরি করে রেখেছিলেন। যার অন্যপক্ষে নেতৃত্ব দিতেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি গোলাম রসুল। তার সঙ্গে ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক অ্যাড. মিয়াজান আলী, সহসভাপতি ও সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাড. ইয়ারুল ইসলাম, মুজিবনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জিয়াউদ্দিন বিশ্বাস, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ও মেহেরপুর পৌর মেয়র মাহফুজুর রহমান রিটন প্রমুখ। দলীয় কোন্দলের কারণে এ সব নেতারা স্থানীয় সরকারের গুরত্বপূর্ণ পদে থাকলেও তাদের নানাভাবে হয়রানি করতেন এবং উন্নয়নমূলক কাজে সরাসরি বাঁধা দিতেন।

ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ

মেহেরপুরের বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের উন্নয়ন কাজের ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ করতেন ফরহাদ হোসেনের ভগ্নিপতি আব্দুস সামাদ বাবলু বিশ্বাস ও ভাই সরফরাজ হোসেন মৃদুল। মূলত অন্যদের প্রতিষ্ঠানের নামে কাজ নিয়ে বাবলু বিশ্বাস তা নিয়ন্ত্রণ করতেন বলে জানিয়েছেন ঠিকাদারেরা।

২০২৩ সালের ২০ অক্টোবর সরফরাজ হোসেনের বিরুদ্ধে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকার চেক প্রত্যাখ্যানের (ডিজঅনার) মামলা করেছিলেন দেবাশীষ বাগচি নামের এক ব্যক্তি। সে মামলায় চলতি বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি মেহেরপুর অর্থঋণ আদালত সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের ছোট ভাই সরফরাজ হোসেন মৃদুলের এক বছর জেল, ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা জরিমানা করে রায় দেন। আদেশে বলা হয়, ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা জরিমানার ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা বাদীকে এবং ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে। বাদী দেবাশীষ বাগচি মৃদুলের ব্যবসায়ী অংশিদার ছিলেন।

মামলার বাদী দেবাশীষ বাগচি বলেন, ২০১৫ সাল থেকে তিনি সরফরাজের সঙ্গে যৌথভাবে ঠিকাদারি ব্যবসা শুরু করেন। ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত গণপূর্ত, জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা প্রকৌশলী, এলজিইডিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩৫টি দরপত্র তিনি প্রভাব খাটিয়ে বাগিয়ে নেন। এর আনুমানিক মূল্য প্রায় ২৭ কোটি টাকা। ২০২১ সালে জানুয়ারিতে সরফরাজ হঠাৎ কিছু না বলে তাকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দেন। পাওনা টাকা চাইলে পুলিশ দিয়ে হয়রানি শুরু করেন। এক পর্যায়ে পাওনা টাকা বাবদ গত বছরের ১২ জুলাই ১ কোটি ৮০ লাখ টাকার একটি চেক দেন। কিন্তু টাকা উত্তোলন করতে গেলে দেখা যায় ব্যাংক হিসাবে কোনো টাকা নেই। পরে আদালতে মামলা করেন তিনি।

আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৪ সালের আগে ছোট একটি ওষুধের দোকানের ব্যবসা করতেন সরফরাজ হোসেন মৃদুল। যেখানে তেমন মূলধনও ছিল না। ভাই এমপি হওয়ার পর পরই তিনি ঠিকাদারি ব্যবসায় যুক্ত হন। প্রভাব বিস্তার করে দরপত্র বাগিয়ে নিতেন। মেহেরপুর শিক্ষা প্রকৌশল, গণপূর্ত, এলজিইডি, সড়ক বিভাগ, হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দরপত্র প্রভাব খাটিয়ে বাগিয়ে নিতেন এবং নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করতেন ওই সকল উন্নয়নমূলক কাজগুলোতে। ফলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে একাধিকবার বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়তেন। এমনকি কয়েকটি কাজ প্রতিষ্ঠান বুঝে না নিলে প্রভাব খাটিয়ে তা বুঝিয়ে দিতেন। তিনি পৌরসভা কমিউনিটির সামনে বড় বাজার সড়কের পাশে ৬ কাটা জমি কিনে সেখানে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করেন। এ ছাড়া ঢাকাতে দুটি ফ্ল্যাট, মেহেরপুর শহরের অদূরে দিঘীরপাড়ায় ১০ বিঘা জমি কিনেছেন সরফরাজ হোসেন মৃদুল।

দাপট দেখিয়েছেন ভাই-ভগ্নিপতি

আব্দুস সামাদ বাবলু বিশ্বাস ফরহাদ হোসেনের ভগ্নিপতি ও তিনি পিরোজপুর ইউপির চেয়ারম্যান। ২০২৪ সালের নির্বাচন উপলক্ষ্যে বিভিন্ন জনসমাবেশে তিনি নিজেকে বড় মাস্তান পরিচয় দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আব্দুল মান্নানকে হুমকি দিতেন। ওই সময় তার একটি বক্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিলো। তিনি বলেছিলেন ‘কিসের ভয় দেখায়, আমি তো বুঝতি পারিনি। আমার চেয়ে মাস্তান বেশি আছে কেউ? আমার চেয়ে যন্ত্রপাতি কারও বেশি আছে? আমার চেয়ে কি টাকা তাদের বেশি আছে? তাহলে ভয় কিসের দেখায়?’ একই সভায় তিনি বলেছিলেন, ‘পিরোজপুর ইউনিয়নের চারটি সেন্টারে (ভোটকেন্দ্রে) আমি যেন দেখতে না পাই কোনো এজেন্ট আছে ওই চাপা দেওয়া জিনিসের (ট্রাক প্রতীকের)।’

মন্ত্রীর ভগ্নিপতি হওয়ার সুবাদে বাবলু বিশ্বাসের বিরুদ্ধে কারও কোনো কথা বলার সাহস ছিল না। ১০ বছর পিরোজপুর ইউনিয়নের দাদ বিল তিনি দখলে রেখেছিলেন। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বিভিন্ন ভাতা ও সরকারি সুবিধা দিতে তিনি প্রতিজনের কাছে থেকে নিতেন টাকা। ৫ আগস্টের পর স্থানীয় লোকজন বাবলু বিশ্বাসের বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করেন। এর পর তিনি দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকার পর ঢাকার ভাটার এলাকা থেকে পুলিশের কাছে ধরা পড়েন।

মেহেরপুর সরকারি বালিকা ও বালক উচ্চবিদ্যালয়ে দুটি ছয়তলাবিশিষ্ট একাডেমি ভবনের নির্মাণকাজ চলছে। প্রতিটি ভবন নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ছয় কোটি টাকা। বালিকা বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের ঠিকাদার বাবলু বিশ্বাস, বালক বিদ্যালয়টির ঠিকাদার সরফরাজ হোসেন।

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর গত ২৯ আগস্ট মেহেরপুর শহরের ক্যাশবপাড়ায় ফরহাদ হোসেনের ফুফাতো ভাই শাজাহান সিরাজের ভাড়া বাড়ি থেকে কোটি টাকা মূল্যের বিপুল পরিমাণ সরকারি মালামাল জব্দ করে যৌথ বাহিনী। ফরহাদ হোসেনের পক্ষে শাজাহান সিরাজ বাড়িটি ভাড়া নিয়েছিলেন। জব্দ মালামালের মধ্যে ছিল বিনামূল্যে বিতরণের কোরআন শরিফ, কম্বল, বিভিন্ন ধরনের ক্রীড়াসামগ্রী, সেলাই মেশিন, হুইলচেয়ার, চিকিৎসকের অ্যাপ্রোন, পিইপি, শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রিপস, অক্সিজেন সিলিন্ডার, শিক্ষার্থীদের টিফিন বক্স। এসব সামগ্রীর গায়ে লেখা ছিলো ‘বিক্রয়ের জন্য নহে’।

ফরহাদ হোসেনের ভাগ্নে সাবেক ছাত্রনেতা ও ব্যবসায়ী নেতা আমিনুল ইসলাম খোকনও ছিল মেহেরপুরের আরেক ত্রাস। তার বড়বাজারের ব্যবসায়িক কার্যালয়ে বসত সালিস। যে কোন কাজ করাতে আমিনুল ইসলাম খোকনের সুপারিশ লাগতো। হাসপাতাল, সমাজসেবা, ব্যবসা থেকে শুরু করে সব ধরনের কাজ হতো তার হুকুমে।

হলফনামাতেই ১০ বছরে আয় ১২ গুণ

গত তিনটি সংসদ নির্বাচনে জমা দেওয়া ফরহাদ হোসেনের হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০১৪ সালে নির্বাচনের আগে শিক্ষকতা করে বছরে আয় করতেন ৬ লাখ ১২ হাজার ৩৪০ টাকা। ১০ বছর পর সেই আয় বেড়ে দাঁড়ায় বছরে ৭৭ লাখ ১ হাজার ৮৫০ টাকা।

তার স্ত্রী সৈয়দ মোনালিসা ইসলামের নগদ ৫ লাখ টাকা ও ৪০ ভরি সোনা ছিল। এখন তার সম্পদের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ২০ লাখে। যদিও মোনালিসা ইসলামের আয়ের উৎসের কোনো তথ্য উল্লেখ নেই।

তবে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ঘুষের টাকা তিনি বা তার স্ত্রী গুণে গ্রহণ করতেন। তিনি ক্ষমতার দাপটে নামে বেনামে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। তার স্ত্রী অনলাইন জুয়া (ক্যাসিনো) নিয়ন্ত্রণ, স্কুল-কলেজে নিয়োগ বাণিজ্য, সরকারি কর্মকর্তাদের ব্যবহার করে হাজার হাজার কোটি টাকা অবৈধ আয় করেছেন। অবৈধ আয় দিয়ে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার ছেলের মাধ্যমে কানাডায় বাড়ি কিনেছেন বলে জানা গেছে। ৫ আগস্টের পর তিনি সপরিবারে কানাডায় পালিয়ে গেছেন বলেও গুজব ছড়িয়েছিল।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) মেহেরপুরের সভাপতি ড. গাজী রহমান বলেন, মানুষ যখন পছন্দমাফিক প্রতিনিধি নির্বাচিত করার সুযোগ পান না, ঠিক তখনই গণতন্ত্র বিলুপ্ত হতে থাকে। ঠিক সে রকম একটি নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় ফরহাদ হোসেনের মত মানুষ এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। যার ফলে মানুষের কথা বলার অধিকার হরণ হয়ে গিয়েছিলো। এমনকি তিনি রাষ্ট্রের বড় পদ দখল করে ঘুষ-বাণিজ্য, অনিয়ম ও লটুপাটের স্বর্গ গড়ে তুলেছিলেন এবং আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের কোণঠাসা করে পরিবারতন্ত্র কায়েম করেছিলেন।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ