জরুরিভাবে এখনই দেশের নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারের পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে লিখিত মতামতে পার্টির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আপনাদের পাঠানো ‘স্প্রেড শিট’-এ অধিকাংশ প্রশ্নই অস্বচ্ছ, অসম্পূর্ণ, একপেশে ও ব্যাখ্যার দাবি করে। এমতাবস্থায় সেসব বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা ব্যতিরেকে এসব প্রশ্নের বিষয়ে টিক চিহ্ন দিয়ে মতামত দেওয়া সম্ভব কিংবা যথাযথ হবে বলে আমরা মনে করছি না। যে কারণে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।
রবিবার (২৩ মার্চ) দুপুরে সিপিবি সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্সের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে লিখিত মতামত জমা দেয়। এ সময় দলের সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ, সম্পাদক ডা. সাজেদুল হক রুবেল ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।
রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘ঐকমত্য কমিশনের সংস্কারের যে প্রস্তাবগুলো আমরা পেয়েছি তার প্রস্তাবনাগুলোর অনেক বিষয়ে আমরা একমত হলেও কোনো কোনো বিষয়ে, এমনকি মৌলিক কতিপয় বিষয়ে, আমাদের দ্বিমত ও আপত্তি আছে। ভিন্নমত আছে।
কিছু বিষয়ে বিকল্প অথবা নতুন প্রস্তাবও আমাদের আছে। এসব নিয়ে সামনাসামনি আলোচনায় আমরা আমাদের বক্তব্য তুলে ধরব।’
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ২০২৪-এর অভূতপূর্ব গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশবাসীর সামনে ব্যাপক, বিস্তৃত ও গভীর সংস্কারের মাধ্যমে দেশের রুগণ অবস্থা নিরসনের পথে এগিয়ে যাওয়ার যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, জনগণকে সম্পৃক্ত করেই সেই সংস্কারের কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হতে পারে। তাই জনগণের শক্তির ওপর নির্ভর করেই এই পথে এগোতে হবে।
যে যে ধরনের মৌলিক সংস্কার আজ অপরিহার্য হয়ে উঠেছে, একমাত্র আপামর জনগণই তার প্রকৃত কারিগর হতে পারে। তাই ব্যাপক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে জনগণকে সংস্কার প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করে এবং জনগণের মতামতকে ভিত্তি করেই আমাদের এ কাজ সম্পন্ন করতে হবে।’
আরো বলা হয়েছে, সিপিবি মনে করে যে ‘সর্বক্ষেত্রে রাষ্ট্রের সব ক্ষমতার মালিক জনগণ’ এবং রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে জনগণের সার্বভৌমত্ব ও যথাযথ কার্যকর ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে। এই লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা ও রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রশাসনিক কাঠামো, গণতন্ত্র, উপযুক্ত বিকেন্দ্রীকরণ, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, জনগণের কার্যকর নিয়ন্ত্রণ ও অংশগ্রহণ- এই নীতিমালার ভিত্তিতে মৌলিকভাবে ঢেলে সাজাতে হবে।
লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সংস্কার না করে অন্যান্য ক্ষেত্রে সাধিত কোনো সংস্কারকেই টেকসই করা যাবে না।
এ জন্য ‘অবাধ ও খোলা বাজার অর্থনীতি’র ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করতে হবে। দক্ষ ও দুর্নীতিমুক্তভাবে রাষ্ট্রীয় খাতকে প্রাধান্য দিয়ে তার পাশাপাশি, সমবায়ী খাত, ব্যক্তি খাত ও মিশ্র খাতসহ প্রতিটি খাতের যথাযথ ও সুপরিকল্পিত ভূমিকা নিশ্চিত করে স্বাধীন জাতীয় অর্থনৈতিক বিকাশের পথ সুগম করতে হবে। সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করতে হবে।
রুহিন হোসেন প্রিন্স লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘নির্বাচন যাতে প্রকৃতই অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য নির্বাচনের আগে এখনই সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য জরুরিভাবে দেশের নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কার সাধন করতে হবে। অপরাপর বিভিন্ন সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে আমরা এ সময়ে সংলাপের মাধ্যমে ঐকমত্যে পৌঁছানোর প্রচেষ্টা নিয়ে, ওই সব তথ্য-উপাত্ত নির্বাচিত সরকারের কাছে হস্তান্তর করতে পারব। এই কাজ করার জন্য যত দ্রুত সম্ভব গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরিত হলে তারাই জনগণের মতামতের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজ অগ্রসর করবে।’
এ ছাড়া জনগণের ওপরই এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভার ছেড়ে দিতে হবে।