‘দেখাবে গাইবান্ধা ,দেখবে দেশ, রেকর্ড করবে বাংলাদেশ ’ এই শ্লোগানই তাদের শক্তির উৎস। গাইবান্ধা-সাঘাটা-ফুলছড়ি সড়কের ১০ কিলোমিটার জুড়ে রং তুলি হাতে তারুণ্যের বাধভাঙা জোয়ার দেখে আলোকচিত্র শিল্পী কুদ্দুস আলমের চোখের কোণায় আনন্দের অশ্রু শেষ পর্যন্ত লুকোনো গেল না। ক্যামেরা থেকে চোখ সরিয়ে বললেন, ‘২৪ঘন্টার মধ্যে দশ কিমি সড়কে আলপনা আঁকার এই চ্যালেঞ্জ আমাদের ছেলে মেয়েরা জিতলে সারা পৃথিবী বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশকে চিনবে, আমাদের গাইবান্ধাকে চিনবে।’
বৃহস্পতিবার পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে জেলা শহরের পুলিশ লাইনের সামনে পাবলিক ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব গাইবান্ধার (পুসাগ) শিক্ষার্থীরা সড়কে আঁকতে শুরু করেন বাহারী আল্পনা।
আঁকতে আঁকতে তাঁরা পৌঁছে যাবেন সাঘাটা উপজেলার ভাঙ্গামোড় অবধি। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন সরকারি মেডিক্যাল কলেজ’র শিক্ষার্থী আর স্থানীয় বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা। তারা একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছেন আর রঙয়ের বন্যায় ঝলমল করে ওঠছে সড়কটি। চারদিকে অবাক বিস্ময়ে দেখছেন পথচারীরা। জেলার বাইরে থেকেও এসেছেন মানুষ। যাদের মধ্যে তরুণ-তরুণীর সংখ্যাই বেশি।
অংশগ্রহণকারী কলেজছাত্রী পত্র লেখা দাস তুনতুন জানালেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি, বঙ্গবন্ধুকে দেখেনি। কিন্তু হৃদয়জুড়ে যে বাংলাদেশ, সেই ত্রিশ লক্ষ মানুষের আত্মদানের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশই আমাদের প্রেরণা।
শিল্পকর্মে অংশগ্রহণের শুরুতে আমারা সবাই কেঁদেছি।
সংগঠনের সভাপতি হুসেইন মো. জীম জানালেন, ২৪ ঘণ্টার এই আঁকার ব্যায় ধরা হয়েছে ২০ লাখ ৯২ হাজার টাকা। তিনি জানান, এটি হবে বিশ্বের দীর্ঘতম আলপনা। গ্রিনেস বুক অব ওর্য়াল্ড রেকর্ডে স্থান পাওয়ার ব্যাপারেও তারা শতভাগ আশাবাদী। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষকে স্মরণীয় করে রাখতেই তাদের এই বিশ্বের দীর্ঘতম আলপনা উৎসব।
মুক্তিযুদ্ধ গবেষক অধ্যাপক জহুরুল কাইয়ুম জানালেন, আজ গাইবান্ধা শিল্প, সাহিত্য সংস্কৃতি অঙ্গণের মানুষ শুধু নয়। গাইবান্ধাবাসীর সব পথ গিয়ে মিশেছে ওই সব তরুণদের চলার পথের সাথে। পিছিয়ে পড়া এই জেলাটিকে আবারও সামনের সারিতে নিয়ে আসবার জন্য তরুণদের এই উদ্যোগ সকলকে উদ্বুদ্ধ করেছে। সবচেয়ে বড় কথা তারুণ্য নতুন করে মুক্তিযদ্ধের চেতনায় শাণিত হয়ে মাতৃভূমিকে ভালোবেসে স্বপ্ন দেখছে।
দিনের শেষভাগে গাইবান্ধার সীমানা ছাড়িয়ে দেখা হলো তারুণ্যের আবেগে টগবগ করে ফুটতে থাকা তরুণ-তরুণীদের সাথে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক একে প্রামাণিক পার্থ ও নির্বাহী সভাপতি ডা. তন্ময় নন্দী জানান, সকলেই তাদের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। কাজের সময় সড়কের দু’পাশের মানুষ ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।
সাদা টি-শার্টে রঙয়ের আঁকিবুঁকি নিয়ে হাসিমুখে তাসনিয়া বিনতে ফেরদৌস বললেন, মানুষ অনেক ভালো। অনেকেই তো পানি আর বিস্কুট নিয়ে বারবার খাবার কথা বলেছেন।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাঘাটার ভাঙ্গামোড়ে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে এই অংকনের উদ্বোধন করেন। এ সময় সেখানে পুলিশ সুপার মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, জেলা পরিষদ পরিষদ চেয়ারম্যান আতাউর রহমানসহ অন্যরা অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।