<p>২০২১ সালের ডিসেম্বরে সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার মধ্যবাজারে অবস্থিত শয়তানখালী সেতুটি দেবে যেতে শুরু করে। পরে এক সময় সেতুটি সম্পূর্ণ ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে যায়। তখনই সেতুটির ওপর দিয়ে পথচারী ও যান চলাচল বন্ধ করে দেয় প্রশাসন। পরে সেতুর দক্ষিণ দিকে বাঁশের চাটাই দিয়ে পারাপারের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। এভাবে পারাপার হতে গিয়ে পথচারীদের দুর্ঘটনার শিকার হতে হচ্ছে। এতে সদর বাজারে মানুষের আনাগোনা কমে যাওয়ায় পশ্চিম বাজারে ব্যবসা-বাণিজ্যে ভাটা পড়েছে।</p> <p>এ ছাড়া সেতুর টেন্ডার প্রক্রিয়া ও ঠিকাদার নিয়োগে দীর্ঘসূত্রতায় সীমাহীন দুর্ভোগে পড়ে কান্দাপাড়া, মহদিপুর, মেউহারী, ঘুলুয়া, রাজাপুর, হলিদাকান্দা, আবুয়ারচর, মহিষের বাথান, নোয়াবন্দ, কামলাবাজ, ফাতেমানগর, লংকাপাথারিয়া, ভাটকপুরসহ ১৫-২০টি গ্রামের মানুষ। </p> <p>এলজিইডির হাওর এলাকায় উড়াল সড়ক ও ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় গত বছর সেতুটির নির্মাণ শুরু হলেও এখন পর্যন্ত সেতুটির ২০ শতাংশ কাজও সম্পন্ন হয়নি। ফলে দীর্ঘ চার বছরে ব্যবসায়ীরা ঋণগ্রস্ত হয়ে ব্যবসা ছেড়েছেন অনেকেই। </p> <p>এদিকে সেতুটির নির্মাণকাজ দ্রুত শেষ করার দাবিতে বুধবার (২ অক্টোবর)  দুপুরে উপজেলার মধ্যবাজারে ধর্মপাশা উপজেলার শিক্ষার্থী ও জনগণের উদ্যোগে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এতে শিক্ষার্থী শরীফুজ্জামান বারির পরিচালনায় বক্তব্য দেন ব্যবসায়ী মোজাম্মেল হক, আলী নূর, হাবিবুর রহমান, হাফিজুল ইসলাম, রাসেল আহমেদ, শিক্ষার্থী ফারুক আহমেদ প্রমুখ।</p> <p>ওই প্রকল্পের অধীনে ৩৭ মিটার দৈর্ঘ্যের শয়তানখালী সেতু নির্মাণসহ ধর্মপাশা থানার সামনে থেকে বাহুটিয়াকান্দা পর্যন্ত ১ হাজার ৪০০ মিটার সড়ক ও একটি কালভার্ট নির্মাণের জন্য ৯ কোটি ৯৭ লাখ ৮০ হাজার ৪৮০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ কাজ বাস্তবায়নের জন্য মাহবুব এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নিযুক্ত করে গত বছরের ২৬ মার্চ কার্যাদেশ দেয় এলজিইডি। </p> <p>আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সেতু ও সড়ক নির্মাণের কাজ শেষ করার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। ব্যবসায়ীরা মানববন্ধনে অভিযোগ করেন, সড়ক নির্মাণে অনিয়ম করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত সড়কে কাজও শেষ হয়নি। দীর্ঘ সময় ধরে সড়কের কাজ করায় বাজারের সার্বিক পরিবেশ বিনষ্ট হয়েছে। এখনো কালভার্টটিও নির্মাণ করা হয়নি।</p> <p>ব্যবসায়ী মোজাম্মেল হক বলেন, ‘শয়তানখালী সেতুটি এখন আমাদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেতুটি নির্মাণ না হওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।’ </p> <p>ব্যবসায়ী আলী নূর বলেন, ‘সেতুটি দ্রুত নির্মাণের জন্য আমরা বারবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে এখন পর্যন্ত সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় ক্রেতারা বাজারে না আসায় আমরা ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছি। পূর্ব বাজার যেতে হলে এক কিলোমিটার জায়গা ঘুরে যেতে হয়, যা খুবই দুঃখজনক।’ </p> <p>ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নিযুক্ত ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ বললেন, ‘অচিরেই কাজ শুরু হবে। আশা করা যায়, আগামী ৩-৪ মাসের মধ্যে সেতুর কাজ শেষ করা যাবে। সড়কের ১০০ মিটার কাজ বাকি আছে। খাদ্য গুদামসংলগ্ন এলাকায় জায়গাসংক্রান্ত কিছুটা ঝামেলা থাকায় তা করা সম্ভব হচ্ছে না। কালভার্ট নির্মাণ করলে কালভার্টের বিল পাব, নয়তো নয়।’ </p> <p>উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহাব উদ্দিন বললেন, ‘ওয়াটার লেভেল থেকে আট ফুট গভীরে বেইজ ঢালাই করতে হবে। কিন্তু সেখানে পানি থাকায় এখনই কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। কাজ শুরু করতে আরো কিছু সময় লাগবে। এ ক্ষেত্রে সময় বর্ধিত করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হবে।’</p>