<p>ভুয়া অভিযোগ দিয়ে নেত্রকোনার মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহ আলম মিয়াকে ফাঁসাতে গিয়ে নিজেই ফাঁসলেন নূরুল আলম কামাল নামের এক কৃষক লীগ নেতা। </p> <p>ওই কৃষক লীগ নেতা খায়রুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির নাম ঠিকানা ব্যবহার করে জেলা প্রশাসক বরাবর ইউএনওর বিরুদ্ধে ভুয়া অভিযোগটি দায়ের করেন নূরুল আলম কামাল। কিন্তু ওই কৃষক লীগ নেতার এমন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য খাইরুল ইসলাম জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।</p> <p>স্থানীয় লোকজন ও লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, জলমহাল থেকে রাজস্ব আত্মসাতের কথা উল্লেখ করে গত ৪ সেপ্টেস্বর মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক বরাবর একটি অভিযোগ দায়ের করেন গোবিন্দশ্রী গ্রামের মৃত সুলতু মিয়ার ছেলে খায়রুল ইসলাম। কিন্তু খায়রুল ইসলাম কয়েক বছর ধরে জীবিকার তাগিদে পরিবার নিয়ে চট্টগ্রামে বসবাস করছেন। ইউএনওর বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। খাইরুল ইসলাম নিরক্ষর মানুষ। তার জাতীয় পরিচয়পত্রে টিপসহি থাকলেও অভিযোগে খায়রুল ইসলামের স্বাক্ষর ব্যবহার করা হয়েছে।</p> <p>এ নিয়ে এলাকায় সমালোচনার সৃষ্টি হলে খায়রুল ইসলামের সঙ্গে স্থানীয় সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা যোগাযোগ করলে তিনি চট্টগ্রাম থেকে মদন আসে। পরে জানতে পারেন তার নাম ঠিকানা ব্যবহার করে গোবিন্দশ্রী গ্রামের মাওলানা আব্দুল মন্নাফের ছেলে কামাল হোসেন মন্ডল ইউএনওর বিরুদ্ধে ভুয়া অভিযোগটি দায়ের করেন। প্রতারণা করে হয়রানি করার জন্য কামালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে ২ অক্টোবর জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন খায়রুল ইসলাম।</p> <p>খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামে দিনমজুরির কাজ করে সংসার চালাই। ৬ মাস আগে একবার বাড়িতে এসেছিলাম। এর পরে আর বাড়ি আসা হয়নি। এখন আমার নাম ঠিকানা ব্যবহার করে ইউএনও স্যারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমি তো ইউএনও স্যারকে চিনি না। জীবনে কখনো তাকে দেখিনি। আমার জীবনে ডিসি স্যারের অফিসে যাইনি। তাই এই ঘটনার জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দাবি জানিয়েছি।’</p> <p>গোবিন্দশ্রী গ্রামের মোহাম্মদ আলী বলেন, কৃষক লীগ নেতা নূরল আলম কামাল দলীয় প্রভাবে এলাকার খাল দখল ও খাস জমি দখল করে বিক্রি করেছে। সব সময় এলাকায় বিশৃঙ্খলা তৈরি করে রাখে। প্রভাব টিকিয়ে রাখতে কয়েক মাস আগে সে সাংবাদিকের কার্ড নিয়েছে। খায়রুল ইসলামের মতো একজন নিরীহ মানুষের নাম ব্যবহার করে ইউএনওর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করার প্রতিবাদ জানাই।’</p> <p>অভিযুক্ত কৃষক লীগ নেতা নূরুল আলম কামাল জানান, ‘অভিযোগের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। এটা কাঁদা ছোড়াছুড়ি ছাড়া আর কিছু নয়।’</p> <p>মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহ আলম মিয়া জানান, ‘গত মাসে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়ার খবর শুনেছি। আমি কোনো অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকলে অবশ্যই আমার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে কেউ এ কাজ করে থাকলে তদন্তের মাধ্যমে তা বের হয়ে আসুক। অপরাধী যেই হোক তার বিরুদ্ধে যেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’</p> <p>জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস জানান, ‘দুটো অভিযোগই পেয়েছি। তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’</p>