<p>গত ১৬ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান ভোলার দৌলতখান উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. শাহজাহান (২৬)। শাহজাহান মারা যাওয়ার পরদিনই তার ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ফাতেমা বেগমকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন বাসা থেকে বের করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকি স্বামীর রেখে যাওয়া ভাড়া বাসায়ও থাকতে দেওয়া হয়নি তাকে। রাতের আঁধারে সেখান থেকেও তাড়িয়ে দিয়েছেন শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। </p> <p>পরে ঢাকায় বোনের বাসায় দুই মাস থেকে এখন আশ্রয় হয়েছে ভোলার দৌলতখান উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ছোটধলী গ্রামের অসহায় বৃদ্ধা মায়ের কাছে। বৃদ্ধা মা কবিতা বেগম নিজেই মানুষের সহযোগিতায় চলেন। এরই মধ্যে স্বামীহারা অন্তঃসত্ত্বা মেয়েরও দায়িত্ব এখন তার কাঁধে। এদিকে নিজের চিকিৎসার খরচ ও অনাগত সন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে দিশেহারা অন্তঃসত্ত্বা ফাতেমা বেগম।</p> <p>শাহজাহানের স্ত্রী ফাতেমা বেগম জানান, তার স্বামী শাহজাহান ঢাকার নিউমার্কেট এলাকায় ফুটপাতে পাপোশ বিক্রি করতেন। আর ঢাকার কামরাঙ্গিরচর এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। গত ১৬ জুলাই সকালে বাসা থেকে দোকানের উদ্দেশে বের হন। বিকাল ৩টার দিকে স্বামীর মোবাইল থেকে এক অপরিচিত লোক ফোন করে জানায়, তার স্বামী শাহজাহান আহত হয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে আছেন। এ খবর পেয়ে তিনি দ্রুত বাসা থেকে ঢাকা মেডিক্যালে যান। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, তার স্বামী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ছাত্রদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ চালকালে নাকের ডান পাশে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যালে নেওয়ার আগেই তিনি মারা যান। এ খবর জানার পর স্ত্রী ফাতেমা স্বামীর লাশ দেখতে চাইলে সেখানে থাকা পুলিশ তাকে প্রথমে লাশ দেখতে দিতে চায়নি। একপর্যায়ে অনেক কান্নাকাটি ও অনুরোধের পর কোনোমতে মর্গের দরজা খুলে এক নজর দেখতে দিয়েছেন। স্বামীর রক্তাক্ত মরদেহ দেখে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। জ্ঞান ফিরলে তিনি জানতে পারেন, তার স্বামীকে পুলিশ আজিমপুর গোরস্থানে দাফন করেছে।</p> <p>ফাতেমা আরো জানান, হাসপাতাল থেকে তিনি কামরাঙ্গির চর শ্বশুরের বাসায় যান। পরদিন তার শাশুড়িসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন সেই বাসা থেকে তাকে বের করে দেন। পরে স্বামীর ভাড়া বাসায় যান তিনি। সেখান থেকেও রাতের আঁধারে তাকে বের করে দেওয়া হয়। বাসা থেকে কিছুই আনতে পারেননি। শুধু পরনে যা ছিল তা নিয়ে চলে আসতে হয়েছে। দুই মাস কামরাঙ্গীরচরে বোনের বাসায় থেকে পরে দৌলতখানে মায়ের কাছে চলে আসেন।</p> <p>কান্নাজড়িত কণ্ঠে ফাতেমা বেগম বলেন, দুই বছর আগে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়েছিল তাদের। ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে ভাড়া বাসায় স্বামী-স্ত্রী বসবাস করতেন। স্বামী শাহজাহান ফুটপাতে পাপোশ বিক্রি করে যা আয় করতেন তা দিয়েই তাদের সংসার চলত। কিন্তু স্বামীর করুণ মৃত্যুর পর গর্ভে ছয় মাসের সন্তান নিয়েও ঠাঁই হয়নি শ্বশুরবাড়িতে। এমনকি জামায়াতে ইসলামী থেকে দেওয়া দুই লাখ টাকাসহ বিভিন্ন লোকের থেকে পাওয়া অনুদানগুলোও শ্বশুরবাড়ির লোকজন আত্মসাৎ করেছেন। তাকে নানা অপবাদ দিয়ে বাসা থেকে বের করে দিয়েছেন। </p> <p>এ অবস্থায় ভোলার জেলা প্রশাসক তাদের বাড়িতে গিয়ে ২০ হাজার টাকা অনুদান দিয়েছেন। আরো এক অফিস থেকে ১০ হাজার টাকা অনুদান দিয়েছেন। এ দিয়েই কোনোমতে চলছে তার জীবন। ফাতেমা বেগম তার স্বামী হত্যার বিচার ও অনাগত সন্তানের ভবিষ্যতের নিশ্চয়তার জন্য সরকারের কাছে সহায়তা চান।</p> <p>ফাতেমার মা বৃদ্ধা কবিতা বেগম কালের কণ্ঠকে জানান, তার দুই মেয়ে এক ছেলে। ফাতেমা ছোট থাকতেই তার বাবা মারা যায়। ছেলে ও মেয়েদের বিয়ে দিয়ে মোটামুটি চিন্তামুক্ত হয়েছিলেন তিনি। ছেলের দেওয়া সামান্য টাকা ও মানুষের সহায়তায় তার দিন কাটতো। কিন্তু হঠাৎ মেয়ে ফাতেমার স্বামী মারা যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি। শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে তাড়িয়ে দেওয়ায় সে এখন তার কাছে আশ্রয় নিয়েছে। এখন মেয়ে ও অনাগত সন্তানের ভরণপোষণ নিয়ে চোখ মুখে অন্ধকার দেখছেন।</p> <p>কবিতা বেগম কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার নিজেরই অন্যের সহযোগিতায় চলতে হয়। তার মধ্যে স্বামীহারা অন্তঃসত্ত্বা মেয়ে ফাতেমার খরচ জোগাব কি করে। সরকারের সহযোগিতা না পেলে কীভাবে দিন কাটবে মেয়েটির?</p>