<p style="text-align:justify">কুড়িগ্রামে আগাম জাতের আলু চাষ করে চরম ক্ষতির মুখে পড়ছেন কৃষকরা। গত মৌসুমে ভালো ফলন এবং দামের আশায় এ বছরও চাষাবাদ করেছেন তারা। কিন্তু এবার অপ্রত্যাশিতভাবে আলুর বাজারদর কমে যাওয়ায় কৃষকরা লোকসানের কবলে পড়েছেন। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চড়া সুদের ঋণের বোঝা। কেউ অসুস্থ হয়ে চিকিৎসাধীন, আবার কেউ লোকসানের কারণে পারিবারিক দ্বন্দ্বে পড়েছেন।</p> <p style="text-align:justify">রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের নামার চর এলাকায় দুজন কৃষক লোকসানের ধাক্কায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তারা হলেন সবুর আলীর ছেলে তুহিন মিয়া (৪০) এবং নুর মোহাম্মদ আলীর ছেলে নুর জামাল (৪৫)।</p> <p style="text-align:justify">তুহিন মিয়া এ মৌসুমে ২০ একর জমিতে আলু চাষ করেছিলেন। ফলন ভালো হলেও বাজারদর কম থাকায় প্রায় ১১ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে তাকে। নুর জামালও একই পরিস্থিতির শিকার। তিনি প্রায় পাঁচ লাখ টাকা লোকসানের মুখে পড়েছেন। তুহিন মিয়া চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরলেও নুর জামাল রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">অন্যদিকে একই এলাকার আরেক কৃষক শুক্কুর আলী ধারদেনা করে ২০ একর জমিতে আলু চাষ করেছিলেন। চাষে ছয় লাখ টাকা লোকসান হওয়ায় তার স্ত্রী সফুরা বেগম (৩৫) অভিমানে স্বামী ও তিন সন্তানকে রেখে বাবার বাড়ি জামালপুরে চলে যান। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় তাকে বাড়ি ফেরানো হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">সরেজমিনে রাজারহাট ও উলিপুর উপজেলার তিস্তা নদীর চরাঞ্চলে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগের বছর সার ও বীজের দাম ছিল সহনশীল। ভালো ফলনের পাশাপাশি দাম পাওয়ায় কৃষকরা লাভবান হয়েছিলেন। কিন্তু এবছর সার ও বীজের মূল্যবৃদ্ধি এবং বাজারদরের পতনে তারা বিপাকে পড়েছেন।</p> <p style="text-align:justify">কৃষকরা জানান, এক বস্তা সার ৭০০-৮০০ টাকা থেকে বেড়ে ১২০০-১৬০০ টাকায় কিনতে হয়েছে। এক কেজি আলু বীজের দাম ১২০ টাকা থেকে বেড়ে ৫০০ টাকায় পৌঁছেছে। এসব কারণে ধারদেনা করতে বাধ্য হয়েছেন তারা। চড়া সুদে নেওয়া ঋণের হার প্রতি এক লাখ টাকায় ২৫ হাজার টাকা।</p> <p style="text-align:justify">উলিপুরের রামদাস ধনিরাম গ্রামের কৃষক কামাল হোসেন জানান, বর্তমানে আলুর বাজারদর ১৪-১৬ টাকা কেজি, অথচ উৎপাদন খরচ অনেক বেশি। প্রতি একর জমিতে বীজ, সার, কীটনাশকসহ মোট খরচ প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা, অথচ দাম পাচ্ছি না।</p> <p style="text-align:justify">রাজারহাটের বিদ্যানন্দ নামার চর এলাকার কৃষক শুক্কুর আলী বলেন, আমরা চরাঞ্চলের মানুষ, কৃষিকাজই আমাদের জীবিকা। ছয় লাখ টাকা লোকসানের বিষয়টি আমার স্ত্রী মানতে পারেনি। অভিমান করে চলে গিয়েছিল, পরে ফিরিয়ে এনেছি।</p> <p style="text-align:justify">রাজারহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুন্নাহার সাথী জানান, দুজন কৃষক আলু চাষে লোকসানের ধাক্কায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এ ছাড়া একজনের স্ত্রী বাবার বাড়ি চলে গিয়েছিলেন বলে জেনেছি।</p> <p style="text-align:justify">কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, জেলায় প্রায় ১২ হাজার মেট্রিক টন আলু বীজের চাহিদা থাকলেও বিএডিসি থেকে মাত্র ৪০০ মেট্রিক টন সরবরাহ করা হয়েছে। ফলে কৃষকদের বেশি দামে বীজ কিনতে হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ মৌসুমে আট হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রা ছিল সাত হাজার একশ হেক্টর। তবে কোল্ড স্টোরেজের অভাবে কৃষকরা উৎপাদিত ফসল সংরক্ষণ করতে না পারায় মাঠেই বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।</p> <p style="text-align:justify">কৃষকরা সরকারের কাছ থেকে ঋণ সহায়তা এবং কোল্ড স্টোরেজ সুবিধার দাবি জানিয়েছেন। অন্যথায়, তারা আগামীতে আলু চাষ থেকে সরে আসার হুমকি দিয়েছেন।</p>