বরগুনার আমতলীতে ঘন কুয়াশার কারণে গাছ থেকে ঝরে যাচ্ছে পানপাতা। ধারদেনা আর এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে লাখ লাখ টাকা খরচ করে পানের বরজ করার পর শীত মৌসুমের শুরুতেই চোখের সামনে বরজের পানপাতা এভাবে ঝরে যাওয়ায় চাষিদের সর্বনাশ হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি শীত মৌসুমে আমতলী উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে ১৩৩ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাষ হয়ে থাকে গুলিশাখালী, চাওড়া, আঠারগাছিয়া ও আরপাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নে।
শীত মৌসুমের শুরুতেই ঘন কুয়াশা ও শৈত্যপ্রবাহ না থাকলেও গত কয়েক দিনে ঘন কুয়াশার কারণে পানের বরজের পানপাতা লাল হয়ে ঝরে যাচ্ছে।
কুয়াশার হাত থেকে পানচাষিরা পানের পাতা রক্ষার জন্য পুরো বরজ পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে দেওয়ার পরেও শেষরক্ষা হচ্ছে না। লাখ লাখ টাকা খরচ করে একেকজন পানচাষি বরজ তৈরি করেছেন। নিজেদের চোখের সামনে এভাবে পানের বরজের পাতা লাল হয়ে ঝরে যেতে দেখে অনেক চাষিই কান্নায় ভেঙে পড়েন।
সরেজমিনে উপজেলার গোজখালী, ডালাচারা, পাতাকাটা, ঘটখালী, উত্তর ঘটখালী, তারিকাটা, ঘোপখালীসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, পান বরজের বিবর্ণ চিত্র। বরজের কঞ্চির সঙ্গে পানের লতা দাঁড়িয়ে থাকলেও ঘন কুয়াশা ও ঠাণ্ডায় পানপাতা শুকিয়ে লাল হয়ে ঝরে মাটিতে পড়ে আছে।
উপজেলার গোজখালী গ্রামের পানচাষি কপিল মাঝি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘ধারদেনা কইরা ১০ লাখ টাকা খরচ করে ৭০ শতাংশ জমিতে পান চাষ করেছি। কিন্তু শীত আর কুয়াশায় বরজের সব পানপাতা লাল হয়ে শুকিয়ে ঝরে পড়েছে।
বছর শেষে কী হবে বুঝতে পারছি না।’
গুলিশাখালী গ্রামের পানচাষি নজরুল প্যাদা বলেন, ‘এনজিওড্ডেগোনে টাহা ঋণ লইয়া ৫ লাখ টাহা খরচ কইর্যা ৪০ শতাংশ জমিতে পান চাষ করছি। শীত আর কুয়াশায় সব শ্যাষ অইয়া গ্যাছে। পাতা সব ঝইর্যা নষ্ট অইয়া গ্যাছে। এ্যাহন এনজিওর টাহা দিমু ক্যামনে হেই চিন্তায় আছি।
’
ঘটখালী গ্রামের পানচাষি আক্কাচ হাওলাদার বলেন, ‘রিমালের সময় বইন্যায় বর ভাইঙ্গা সব শ্যাষ অইয়া গেছিল। ধারদেনা আর এনজিওড্ডেগোনে টাহা আইন্যা আবার বরজ ঠিক হরছি। এ্যাহন শীত, কুয়াশা আর বাতাসে সব পান পাতা নষ্ট অইয়া যাওয়ায় মোগো সর্বনাশ অইয়া গেছে। এ্যাহন পরিবার ও পোলা মাইয়া লইয়া কি খামু আর কি দিয়া এনজিওর কিস্তি দিমু হেই চিন্তায় আছি।’
আমতলী শহরের পান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক চল্লি (৩৬টি পান) বড় সাইজের বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০ টাকায়। ছোট সাইজের এক চল্লি পান ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক ক্রেতাও এখন হিসাব করে পান কিনছেন।
ছুড়িকাটা এলাকার নারী পান ক্রেতা সোনিয়া বেগম বলেন, ‘পানের দাম দুই-তিন গুণ বাইর্যা গ্যাছে। যেই এক চল্লি পান ১ মাস আগে ২০ টাহায় কেনতাম, এ্যাহন হেই পান ৫০-৬০ টাহায় কিনি। দাম বাড়ায় পান খাওয়া কমাইয়া দিছি। এ্যাহন আর আগের মত পানি কিনি না।’
আমতলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ইছা বলেন, ‘ঘন কুয়াশা, অতিরিক্ত শীত ও আবহাওয়া মেঘলা থাকার কারণে পান গাছে ছত্রাকের আক্রমণ দেখা দেয়। এ রকম হয়ে থাকলে স্বল্প মাত্রায় জৈব বালাইনাশক প্রয়োগ করা যেতে পারে। এ ছাড়া শৈত্যপ্রবাহের হাত থেকে পানের বরজ রক্ষার জন্য পলিথিন টানিয়ে বেড়া দেওয়া হলে ছত্রাকের আক্রমণ কম হবে।’