ঈদযাত্রায় সিরাজগঞ্জ অংশের ৪৫ কিলোমিটার মহাসড়ক সচল করেছে কর্তৃপক্ষ। এতে যানবাহন চলাচলে তেমন বেগ পেতে হবে না চালকদের। তবে মহাসড়কে অনুমোদন বিহীন যানবাহন চলাচল এবং পার্শ্ব রাস্তার যানবাহন মহাসড়ক অতিক্রম করার সময় ঝামেলা সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ছাড়া রাতের বেলায় ডাকাত আতঙ্কে ভুগছেন যাত্রী ও চালকরা।
তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রস্তুত রয়েছে হাইওয়ে ও জেলা পুলিশ।
জানা গেছে, যমুনা সেতু পশ্চিম সংযোগ মহাসড়ক দিয়ে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের ২২ জেলার যানবাহন চলাচল করে থাকে। এসব যানবাহন সেতু অতিক্রম করার পর হাটিকুমরুল গোলচত্বরে গিয়ে তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। তবে পাবনা ও রাজশাহী মহাসড়কে যানবাহনের চাপ তুলনামূলক কম থাকলেও অধিকাংশ চাপ থাকে বগুড়ামুখী মহাসড়কে।
এই মহাসড়ক চার লেনে উন্নতিকরণের কাজ অনেকটা শেষের পথে। ঈদযাত্রায় বেশ কিছু উদ্যোগও নিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা
আরো পড়ুন
রান্নার স্বাদ-ঘ্রাণ দুটিই বাড়াবে এই পাতা
এ বিষয়ে সাসেক (২) প্রকল্পের ব্যবস্থাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, 'ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে ঝাঐল ওভারপাস খুলে দেওয়া হয়েছে। চালু করা হয়েছে সলঙ্গা, ঘুড়কা, সোনকা ও মির্জাপুরের আন্ডারপাস। এ ছাড়া ঢাকা থেকে বগুড়াগামী যানবাহনগুলোর সুবিধার্থে হাটিকুমরুল গোলচত্বরে চারটি পার্শ্ব রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে।
আশা করছি, ঈদযাত্রায় যানবাহনগুলো নিরাপদে চলতে পারবে।'
বাসচালক মানিক মিয়া বলেন, এবার মহাসড়ক অনেক ভালো আছে। তবে তিন চাকার যানবাহনসহ অবৈধ যানবাহনগুলোর চলাচল বন্ধ করতে হবে। এদের কারণেই মহাসড়কে দুর্ঘটনা বেশি ঘটে এবং দ্রুতগামী বাসের গতি কমে যায়। এ ছাড়া পার্শ্ব রাস্তা থেকে আসা যানবাহনগুলো মহাসড়ক অতিক্রম করার সময় যানজট লেগে যায়।
এসব বিষয়ে প্রশাসনের নজরদারি থাকতে হবে।
আরো পড়ুন
৫০ বছর মৃত্যুদণ্ডের অপেক্ষার পর অবশেষে মুক্তির পালা
বাসচালক মুক্তার হোসেন বলেন, রাতের বেলায় মহাসড়কে যানবাহনে ঢিল দিয়ে গাড়ি থামিয়ে ও রাস্তায় তাঁরকাটা ফেলে চাকা প্যাংচার করে ডাকাতি করা হয়ে থাকে। যা ঈদযাত্রায় আরো বেড়ে যেতে পারে। এ জন্য পুলিশকে সজাগ থাকতে হবে।
যমুনা সেতুর পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনারুল ইসলাম বলেন, মহাসড়কের নিরাপত্তায় সেতুর পশ্চিম গোলচত্বর থেকে নলকা পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার এলাকায় থানার ৬০ জন পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি অতিরিক্ত ৮০-৮৫ জন সদস্য দিনে ও রাতে দায়িত্ব পালন করবে। দুই কিলোমিটার পরপর পুলিশের কড়া অবস্থান থাকবে। এ ছাড়া মটরসাইকেলের টিম মহাসড়কে টহল দেবে। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেকার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ২৬ মার্চ থেকে এ কার্যক্রম শুরু হবে।
যেকোনো পরিস্থিতিতে দ্রুত পুলিশের সহায়তা নেওয়ার জন্য চালকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, নির্জন স্থান, ফাঁকা ও অন্ধকার জায়গা টার্গেট করে ডাকাতরা অপরাধ করে থাকে। এক্ষেত্রে বডিতে ঢিলের শব্দ শুনলেই রাস্তায় গাড়ি থামানো যাবে না।
আরো পড়ুন
মহাখালীতে সাংবাদিকের ওপর শ্রমিকদের হামলা
হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রউফ বলেন, নলকা থেকে চান্দাইকোনা পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার এলাকায় ১৬টি স্থানকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। এসব স্থানে হাইওয়ে পুলিশের টিম ২৪ ঘণ্টা স্থায়ীভাবে দায়িত্ব পালন করবে। পাশাপাশি মোবাইল টিম ও মোটরসাইকেলের টহল অব্যাহত থাকবে। এ ছাড়া যানজট এড়াতে হাটিকুমরুল গোলচত্বরে বগুড়ামুখী রাস্তায় বাঁশ দিয়ে চারটি লেন আলাদা করে দেওয়া হয়েছে। মহাসড়কের নিরাপত্তায় থানা পুলিশের পাশাপাশি ৫০ জন এপিপিএন সদস্য ও অতিরিক্ত পুলিশ সদস্যরা যুক্ত হবেন।
রায়গঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, 'মহাসড়কের চান্দাইকোনা থেকে সিরাজগঞ্জের সীমান্তবর্তী বগুড়ার শেরপুর পর্যন্ত প্রায় ৭ কিলোমিটার এলাকায় দিনরাত ২৪ ঘণ্টা পুলিশ মহাসড়কে অবস্থান করবে। এ জন্য থানার ৩০ জনের পাশাপাশি পুলিশ লাইন থেকে অতিরিক্ত আরো অন্তত ৩০ জন পুলিশ সদস্য যুক্ত হবেন। আমরা আশা করছি, এবারের ঈদযাত্রা নিরাপদ ও ভোগান্তি মুক্ত হবে।'
আরো পড়ুন
২০২৭ সাল পর্যন্ত সিমন্সই বাংলাদেশের কোচ
সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার ফারুক হোসেন বলেন, ২৬ মার্চ থেকে ৬০০ পুলিশ সদস্য পোশাক এবং সাদা পোশাকে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে ২৪ ঘণ্টা মহাসড়কে দায়িত্ব পালন শুরু করবে। গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে স্থায়ীভাবে অবস্থান নেবে। মোবাইল টিমের পাশাপাশি থাকবে মোটরসাইকেলের টহল। বেশ কিছু স্থানে সিসিটিভি স্থাপন করা হয়েছে। প্রয়োজনে ড্রোন ক্যামেরাও ব্যবহার করা হবে।
পুলিশ সুপার আরো বলেন, অনুমোদনবিহীন যানবাহনগুলোকে কোনোক্রমে মহাসড়কে চলতে দেওয়া হবে না। ফিডার রোডগুলোর (পার্শ্ব রাস্তা) নিয়ন্ত্রণে প্রবেশপথে পুলিশ মোতায়েন থাকবে। আশা করছি, এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে যাত্রীদের নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিতের পাশাপাশি মহাসড়কের চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতি রোধ করা সম্ভব হবে।
হাইওয়ে পুলিশ বগুড়া রিজিয়নের পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত ডিআইজি) মো. শহিদ উল্লাহ বলেন, ঈদ উপলক্ষে মহাসড়কে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে তিন গুণ বেশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জের তিনটি মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশের প্রায় ৫০০ পুলিশ সদস্য পোশাক এবং সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করবে। থাকবে মোবাইল ও মোটরসাইকেলের টহল টিম। অত্যাধুনিক ড্রোন ক্যামেরায় দিনে ও রাতে মহাসড়কের সবকিছু মনিটরিং করা হবে। এ ছাড়া চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইরোধে মহাসড়কের ১৮টি পয়েন্টে গোপন সার্ভিলেন্স সিস্টেম চালু করা হয়েছে। হাটিকুমরুল গোলচত্বরে স্থাপিত ওয়াচ টাওয়ার থেকে সব কিছু মনিটরিং করা হবে।
আরো পড়ুন
টমেটো ভর্তা আর ভাত দিয়েই ইফতার-সেহেরি, কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন বিধবা সালেহা
তিনি আরো বলেন, মহাসড়কে কোন দুর্ঘটনা ঘটলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তিনটি রেকার এবং দুটি অ্যাম্বুলেন্স সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকবে। আমরা আশা করছি, এবারের ঈদযাত্রা নিরাপদ ও ঝুঁকি মুক্ত হবে।
যমুনা সেতুর প্রস্তুতি সর্ম্পকে সেতুর সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল জানান, সাধারণত প্রতিদিন যমুনা সেতু দিয়ে গড়ে ২০-২১ হাজার যানবাহন পারাপার হয়। ঈদযাত্রায় তা বেড়ে দ্বিগুণ বা তারও বেশি হয়ে থাকে। সেতু দিয়ে সার্বক্ষণিক টোল চালু রাখার চেষ্টা করা হবে। এবার সেতুর দুই প্রান্তে ৯টি করে বুথ দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হবে। এর মধ্যে মোটরসাইকেলের জন্য দুটি করে আলাদা বুথ থাকবে।
আরো পড়ুন
শ্রমিক দল নেতাকে ছাড়িয়ে নিতে থানায় হামলা, গ্রেপ্তার ৬