কুড়িগ্রামে এবার সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে। আগামীতে এমন ফলন পেতে চাষিরা সরিষার বীজ সংরক্ষণ শুরু করেছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় চলতি মৌসুমে ২৫ হাজার ৬৩৫ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। আর বিঘাপ্রতি গড়ে ফলন পাওয়া যাচ্ছে প্রায় ৫ মণ করে।
আমন ধান কাটার পর এবং বোরো ধান রোপণ করার আগে এ সময়টাতে জমি অনাবাদি থাকত। তাই অল্প খরচে স্বল্পমেয়াদী ফসল হিসেবে সরিষা চাষ করে দুফসলি জমিকে তিনফসলি জমিতে রূপান্তরিত করে অর্থনৈতিক লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।
দেশে বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয় এবং প্রায় আড়াই লক্ষ টন তেল পাওয়া যায়। বিভিন্ন জাতের সরিষার বীজে প্রায় ৪০-৪৪% তেল থাকে।
খৈলে প্রায় ৪০% আমিষ থাকে। তাই খৈল গরু ও মহিষের জন্য খুব পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। দেশে টরি, শ্বেত ও রাই— এই তিন প্রকার সরিষার চাষ করা হয়। আমন ধান কাটার পর সরিষা লাগানো হয় এবং স্বল্পমেয়াদি এই ফসল চাষ শেষে বোরো ধান রোপণ করা হয়।
জেলায় বারি সরিষা-৭ জাতের গাছের পাতা বোটাহীন ও তল মসৃণ। ফুলের পাঁপড়ির রং সাদা। প্রতি গাছে ফলের সংখ্যা ৯০-১২৫টি।
বারি সরিষা-৯ জাতটি টরি-৭ এর চেয়ে শতকরা ১০-২৫ ভাগ বেশি ফলন দেয়। আমন ধান কাটার পর এবং বোরো ধান চাষের আগে স্বল্পমেয়াদি এ জাতটি সহজে চাষ করা সম্ভব।
বীজে তেলের পরিমাণ শতকরা ৪৩-৪৪ ভাগ। ফসল পাকতে ৮০-৮৫ দিন সময় লাগে। পরিমাণমতো সার ও সেচ দিলে হেক্টরে ১ দশমিক ২৫ হতে ১ দশমিক ৪৫ টন ফলন পাওয়া যায়।
বারি সরিষা-১৪ জাতের ফসল ৭৫ হতে ৮০ দিনে হয়। হেক্টরপ্রতি গড়ে ফলন হয় ১ দশমিক ৪ হতে ১ দশমিক ৬ টন। আমন ধান কাটার পর স্বল্পমেয়াদি জাত হিসেবে চাষ করে বোরো ধান রোপণ করা যায়।
বারি-৭, বারি-৯, বারি-১৪ জাতের সরিষা চাষ হয়েছে বেশি। এরমধ্যে বারি-১৪ জাতের সরিষায় কম সময়ে ফলন আসে এবং ফলনও ভালো হয়। তাই কৃষক নিজেরাই সরিষা বীজ সংরক্ষণের জন্য কাজ করছেন।
বীজ সংরক্ষণের জন্য প্রথমে মাড়াই করার পর রোদে ভালো করে শুকানো হয়। এরপর বীজগুলো ঠান্ডা করে প্লাস্টিকের পাত্রে, টিনে বা ড্রামে রেখে মুখ বন্ধ করে রাখা হয়, যেন পাত্রের ভিতরে বাতাস প্রবেশ করতে না পারে। বীজসহ পাত্র আদ্রর্তা কম এমন ঘরের শীতল স্থানে এক বছর থেকে দুবছর পর্যন্ত বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা বজায় রাখে।
রাজারহারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের বিশাল পাড় গ্রামের কৃষক লুৎফর রহমান বলেন, ‘বীজ, হালচাষ, সেচ, ওষুধ, কাটামাড়াসহ বিঘাপ্রতি সরিষা চাষে ৫-৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। গড়ে ৪-৫ মণ সরিষা পেয়েছেন।’
তিনি জানান, বর্তমানে তিন হাজার টাকা মণ বাজার হিসেবে ১২ হতে ১৫ হাজার টাকা বাড়তি আয় করেন। তাই বারি-১৪ জাতের সরিষা থেকে বীজ সংরক্ষণ শুরু করেছেন তিনি। আগামীতে নিজে চাষ করবেন এবং বীজ বিক্রি করবেন।
একই এলাকার কৃষাণী মর্জিনা বেগম বলেন, ‘আগে আমাদের জমি বছরে আমন ও বোরো ধান দুবার চাষ করতাম। কিন্তু এবার আমন শেষে আরডিআরএস বাংলাদেশের সহায়তায় বারি-১৪ জাতের সরিষা চাষ করেছি। ফলন ভালো হয়েছে। ধারদেনা করে আগে বোরো ধান চাষ করা লাগত। এবার ধারদেনা না করে সরিষা বিক্রি করে বোরো চাষ করেছি। সয়াবিন তেলের সংকটে সরিষার তেলের চাহিদা বেড়েছে।’
নারী শ্রমিক মমতা বেগম বলেন, ‘আগে শুধু ধানের আবাদের সময় কাজ জুটত। কিন্তু এবার এলাকায় সরিষা চাষের কারণে বাড়তি কাজের সুযোগ হয়েছে। দিনে ৩ শ টাকা মজুরি পাওয়া যাচ্ছে। এতে করে সংসারে কিছুটা অভাব কেটেছে।’
রাজারহাট উপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুন্নাহার সাথী বলেন, ‘তেল আমদানির নির্ভরতা কমাতে সরকারি-বেসরকারিভাবে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়াও সরিষার বীজ সংরক্ষণে কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।’