নাটোরের লালপুরে পদ্মা নদীর চরাঞ্চলে হারিয়ে যেতে বসা ঢেমশি চাষ আবারও শুরু হয়েছে। তুলনামূলক কম খরচে ও স্বল্প সময়ে ফলন দেওয়ায় এই ফসল কৃষকদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। উপজেলা কৃষি বিভাগের উদ্যোগে চলতি মৌসুমে বিলমাড়িয়া এলাকার পদ্মার চরে ৩০ শতক জমিতে ঢেমশির পরীক্ষামূলক চাষ করা হয়েছে।
ঢেমশির বৈজ্ঞানিক নাম ফ্যাগোপাইরাম এস্কুলেন্টাম।
এটি দেখতে শরিষা দানার মতো এবং ইংরেজিতে বাকহুইট বা কমন বাকহুইট নামে পরিচিত। নব্বইয়ের দশক বা তারও আগে এ অঞ্চলে ঢেমশির চাষ হতো। তবে উচ্চ মূল্যের ফসলের আবাদ, খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন এবং কৃষকদের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার কারণে এটি ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পথে চলে যায়।
ঢেমশির চাল ও আটায় রয়েছে উচ্চমাত্রার প্রোটিন, মিনারেল, ফাইবার, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, কপার, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, জিংক, ভিটামিন ( B1, B2, B3, B6, B12) এবং সেলেনিয়ামের মতো পুষ্টিকর উপাদান।
গবেষণায় দেখা গেছে, ঢেমশি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ এবং অ্যাজমার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
চলতি মৌসুমে পদ্মার চরে ঢেমশির জমিতে ফুল ফুটেছে এবং কিছু ফুলে দানা ধরেছে। সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে সাদা ফুলগুলো বাতাসে দুলছে। চাষি মুনতাজ আলী জানান, তিনি ৩০ শতক জমিতে ঢেমশি চাষ করেছেন।
এতে তার প্রায় ৩ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বর্তমানে বাজারে ঢেমশির দাম মণপ্রতি ৬ থেকে ৮ হাজার টাকা। তিনি আশা করছেন, এবার প্রায় ২৫ হাজার টাকা লাভ হবে। মুনতাজ আলী আরও বলেন, আমার ঢেমশি চাষ দেখে অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আগামী মৌসুমে আরও বেশি জমিতে ঢেমশি চাষ করব।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রীতম কুমার হোড় বলেন, ঢেমশি চাষ সম্প্রসারণের মাধ্যমে কৃষকরা কম খরচে বেশি লাভবান হতে পারবেন। এটি অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি ফসল, যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। ঢেমশির চাল, আটা এবং মধু উৎপাদন করে বাজার সৃষ্টি করতে পারলে এটি স্থানীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
ঢেমশি চাষের এই উদ্যোগ শুধু কৃষকদের জন্য লাভজনকই নয়, বরং হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে এবং পুষ্টিকর খাদ্যের প্রসারে একটি বড় পদক্ষেপ।