আমতলীর ইসমাইল শাহ মাজারে আগুন-ভাঙচুর, আহত ২০

বরগুনা ও আমতলী প্রতিনিধি
বরগুনা ও আমতলী প্রতিনিধি
শেয়ার
আমতলীর ইসমাইল শাহ মাজারে আগুন-ভাঙচুর, আহত ২০
সংগৃহীত ছবি

বরগুনার আমতলীতে ইসমাইল শাহ মাজারে বাৎসরিক ওরশ চলাকালে হামলা চালিয়ে আগুন দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে মাজারের ভিতরের সামিয়ানা ও দুইটি বৈঠকখানা পুড়ে চাই হয়ে গেছে। এতে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। মাজারের খাদেম অ্যাড. মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল এমন অভিযোগ করেছেন।

আমতলী পৌর শহরের বটতলা এলাকায় গতকাল রবিবার (১৬ মার্চ) রাত সোয়া ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে রাত পৌনে তিনটার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।

আরো পড়ুন

কর্মীদের কর্মবিরতিতেও স্বাভাবিক মেট্রো রেল চলাচল

কর্মীদের কর্মবিরতিতেও স্বাভাবিক মেট্রো রেল চলাচল

 

জানা গেছে, আমতলী পৌর শহরের বটতলা এলাকায় ১৯৯৬ সালে ইসমাইল শাহ মাজার স্থাপন করা হয়। ওই সময় থেকে মাজার কর্তৃপক্ষ দুইদিন ব্যাপী ওরশ উৎযাপন করে আসছেন।

২৮তম ওরশ শুরু হয় গত শুক্রবার। ওইদিন রাতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আমতলী উপজেলা শাখার সভাপতি মাওলানা ওমর ফারুক জেহাদী ও সাধারণ সম্পাদক গাজী বায়েজিদের নেতৃত্বে তাদের শতাধিক সমর্থক এসে মাজার পুজা ও গান বাজনা বন্ধ করতে বলেন। 

কিন্তু মাজারের খাদেম অ্যাড. মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল ওরশ বন্ধে অপরগতা প্রকাশ করেন। এ নিয়ে তাদের মধ্য দ্বন্ধ হয়।

এক পর্যায়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সমর্থকরা লাঠি সোটা নিয়ে মাজার ভাঙচুর করে এবং আগুন দেয়। এতে ওই ওরশে আসা হাজার হাজার ভক্ত ও স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মানুষ এদিক ওদিক ছুটাছুটি করতে থাকেন। 

আরো পড়ুন

গাছ থেকে পড়ে প্রাণ গেল যুবকের

গাছ থেকে পড়ে প্রাণ গেল যুবকের

 

খবর পেয়ে আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) তারেক হাসান ও ওসি মোঃ আরিফুল ইসলাম আরিফ ঘটনাস্থলে আসেন। তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

অপর দিকে, ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। ততক্ষণে মাজারের দুইটি বৈঠকখানা ও মাজারের মধ্যে সামিয়ানা পুড়ে ছাই হয়ে যায়। 

এ ঘটনায় আহতরা হলেন, সোলায়মান (৩৮), রেজাউল (১৮), বাদল মৃধা (৪০), দুলাল মৃধা (৪২), আবু বকর (২৯), আবুল হোসেন (২৮), আব্দুল্লাহ আল নোমান (২৮), মোঃ মামুন (৪৩), আবুল কালাম (৪২), জোবায়ের (১৯) ও ফজলুল করিম (২৭)। আহতদের আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। অপর আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। 

আরো পড়ুন

বিএনপি-জায়ামাত সমর্থকদের সংঘর্ষ, বাড়িঘর ভাঙচুর

বিএনপি-জায়ামাত সমর্থকদের সংঘর্ষ, বাড়িঘর ভাঙচুর

 

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আমতলী শাখার সভাপতি মাওলানা ওমর ফারুক জেহাদী ও সাধারণ সম্পাদক গাজী বায়েজিদের নেতৃত্বে টুপি পরিহিত তাদের শতাধিক সমর্থক লাঠি সোঠা নিয়ে এসে মাজার ভাঙচুর করে ও আগুন দেয়। এ সময় ওরশে আসা হাজার হাজার ভক্তবৃন্দ ও স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

ইসমাইল শাহ মাজারের খাদেম অ্যাড. মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল বলেন, 'মাওলানা ওমর ফারুক জেহাদী ও গাজী বায়েজিদের নেতৃত্বে তাদের শতাধিক সমর্থক লাঠি সোঠা নিয়ে এসে অতর্কিতভাবে মাজারে হামলা চালায় এবং আগুন দেয়। এতে মাজারের ভিতরের গিলাব এবং দুটি বৈঠকখানা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। '

তিনি আরো বলেন, 'তারা ভক্তবৃন্দকে মারধর ও মাজারের বাক্সে থাকা টাকা পয়সা লুটপাট করেছে। আমি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দাবি করছি।'

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমতলী উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক গাজী বায়েজিদ বলেন, 'মাওলানা ওমর ফারুকসহ বেশ কিছু সমর্থক গিয়ে মাজারে খাদেম অ্যাড. মোস্তাফিজুর রহমান বাবুলকে পবিত্র রমজান মাসে মাজার পুজা ও গানবাজনা করতে নিষেধ করা হয়। কিন্তু তিনি তা মানতে নারাজ। এক পর্যায় তার ভক্তবৃন্দ ক্ষিপ্ত হয়ে মাওলানা ওমর ফারুক জেহাদীর গায়ে হাত তুলে। এতে জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে মাজার ভাঙচুর ও আগুন দিয়েছে।'

আরো পড়ুন

বৈষম্যবিরোধী ৩ ছাত্র প্রতিনিধিকে মাইক্রোচালকদের মারধর

বৈষম্যবিরোধী ৩ ছাত্র প্রতিনিধিকে মাইক্রোচালকদের মারধর

 

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আমতলী উপজেলা শাখার সভাপতি মাওলানা ওমর ফারুক জেহাদী বলেন, 'এ মাজারটি ভন্ডের আস্তানা। এখানে ওরশের নামে গানবাজনা ও গাজা, মাদক সেবন ও নারীর আসর বসে। যা সম্পুর্ণ ইসলাম বিরোধী। আমরা মাজারের খাদেম অ্যাড. মোস্তাফিজুর রহমান বাবুলকে এই রমজান মাসে অনৈতিক কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেছিলাম কিন্তু তিনি তা শুনেন নি। তার নির্দেশে তার ভক্তবৃন্দেরা আমরা লোকজনের ওপর হামলা করেছে। এই ভন্ড মাজারের খাদেম বাবুল উকিল ও তার দোসরদের শাস্তি দাবি করছি।'

আরো পড়ুন

কিছু বিষয়ে মতবিরোধ না রাখার আহ্বান

কিছু বিষয়ে মতবিরোধ না রাখার আহ্বান

 

আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার ডা. রাসেদ মাহমুদ রোকনুজ্জামান বলেন, 'আহতদের যথাযথ চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।'
 
আমতলী ফায়ার ষ্টেশনের ওয়ার হাউস ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ হানিফ বলেন, 'দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে রাত ২ টা ৩৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। আগুণে মাজারের ভেতরের সামিয়ানা ও দুই ঘর পুড়ে গেছে।'

আমতলী থানার ওসি মো. আরিফুল ইসলাম আরিফ বলেন, 'খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, 'ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

জীবিত আছিয়াদের নিরাপত্তার দাবিতে স্কুল শিক্ষার্থীর অবস্থান

নওগাঁ প্রতিনিধি
নওগাঁ প্রতিনিধি
শেয়ার
জীবিত আছিয়াদের নিরাপত্তার দাবিতে স্কুল শিক্ষার্থীর অবস্থান

জীবিত আছিয়াদের নিরাপত্তার দাবিতে এক স্কুল শিক্ষার্থী অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে। সোমবার (১৭ মার্চ) সন্ধ্যা রাত ৮টায় শহরের মুক্তির মোড় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এই কর্মসূচি পালন করে সে। 

অবস্থান নেওয়া ওই স্কুল শিক্ষার্থীর নাম ফাতেমা ছোঁয়া।  সে নওগাঁ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী।

এসময় জীবিত আছিয়াদের নিরাপত্তা দেবে কে? লেখা প্লেকার্ড হাতে তাকে একাই মুখে কালো কাপড় বেঁধে প্রায় ১ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এ সময় তার চারপাশে মোমবাতি জ্বালানো হয়।

অবস্থান কর্মসূচি পালন করা ওই শিক্ষার্থী জানায়, আমরা এখন ঘরের বাইরে বের হতে ভয় পাই।  আমাদের কোনো নিরাপত্তা নেই।

আমাদের নিরাপত্তা দেবে কে? আমরা যাতে স্কুল-কলেজে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারি সেই নিরাপত্তা চাই। যাতে আর কোনো জীবিত আছিয়াকে ধর্ষণ বা কাউকে নারী নির্যাতনের শিকার হতে না হয়। এজন্যই অবস্থান কর্মসূচিতে দাঁড়িয়েছে। 

মেয়েটির বাবা যাযাবর ব্যান্ডের সঙ্গীত শিল্পী ক্যাপ্টেন বলেন, আমাদের ছেলে-মেয়েরা নিরাপদ নয়।

প্রতিনিয়ত ভয় কাজ করে। মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে আমরা দেখেছি সারা দেশের বিভিন্ন জেলায় অজস্র শিশু ও নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। আমরা আর কত প্রাণ হারাতে দেখব? আর কবেই বা আমার আপনার ছেলে-মেয়েরা ভয়মুক্ত সত্যিকারের স্বাধীন দেশ পাবে?

তিনি বলেন, স্বাধীন বাংলায় কোনো ধর্ষকের স্থান নাই। আমরা আছিয়ার কাছে ক্ষমা প্রার্থী। জীবিত আর কোনো আছিয়াকে আমরা হারাতে চাই না।

দ্রুত ধর্ষকদের বিচারকার্য শেষ করে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হোক এমনটায় আমার চাওয়া।

মন্তব্য

গাজীপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নারী শ্রমিকের মৃত্যু, রণক্ষেত্র মহাসড়ক

নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর
নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর
শেয়ার
গাজীপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নারী শ্রমিকের মৃত্যু, রণক্ষেত্র মহাসড়ক
ছবি: কালের কণ্ঠ

গাজীপুরে সোমবার (১৭ মার্চ) সন্ধ্যার পর সড়ক দুর্ঘটনায় এক নারী শ্রমিকের মৃত্যুর জেরে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় সদর উপজেলার বাঘের বাজার এলাকা। সহকর্মীর মৃত্যুর প্রতিবাদে শ্রমিক ও স্থানীয়রা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে। পুলিশ তাদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। শ্রমিকরা বেশ কিছু যানবাহন ভাঙচুর করে।

এ ঘটনায় ৩ পুলিশসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়।

নিহত সাবিনা আক্তার (২৮) ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর থানার খালসাইদ ফুনা গ্রামের মো. রাব্বির স্ত্রী এবং বাঘের বাজার এলাকার গোল্ডেন রিফিট কারখানার শ্রমিক ছিলেন। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ইফতারের পর রাত্রের শিফটে কাজ করার জন্য সাবিনা বাসা থেকে বের হন। পথিমধ্যে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক পার হওয়ার সময় দ্রুতগতির একটি মাইক্রোবাস ধাক্কা দিলে তিনি গুরুতর আহত হন।

স্থানীয়রা প্রথমে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই তার মৃত্যু হয়।

সাবিনার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে সহকর্মী শ্রমিক ও স্থানীয়রা বাঘের বাজার এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক দুই ঘণ্টা অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। এ সময় উত্তেজিত শ্রমিক ও জনতা কারখানায় ভাঙচুরের চেষ্টা চালায়।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে শ্রমিকদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। শ্রমিকরা তাদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে তিন পুলিশ সদস্য আহত হন। 

এরপর পুলিশ ও সেনাবাহিনী ধাওয়া দিলে শ্রমিকরাও প্লাল্টা ধাওয়া করে। এ সময় শ্রমিকরা ব্যাপক গাড়ি ভাঙচুর চালায়।

এতে অনেক যাত্রী আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সাউন্ড গ্রেনেড, রাবার বুলেট ও লাঠিচার্জ করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার চেষ্টা করে। পরে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশের সঙ্গে যোগ দিয়ে ধাওয়া করে শ্রমিকদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। এ সময় ১৫-২০ জন শ্রমিক আহত হয়। রাত পৌনে ১২টায় প্রতিবেদন লেখার সময় এলাকায় যৌথবাহিনীর অভিযান চলছিল।

জয়দেবপুর থানার ওসি আব্দুল হালিম বলেন, ‘শ্রমিকদের মহাসড়ক থেকে সরানোর সময় সুযোগ নিয়ে বহিরাগতরা কারখানায় ভাঙচুরের চেষ্টা চালায়। পুলিশ বাধা দিলে তারা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে তিন পুলিশ সদস্য আহত হন। পরে সেনাবাহিনীর সহায়তায় অভিযান চালিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হয় এবং ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই যান চলাচল পুনরায় শুরু হয়।’

মন্তব্য

ঝিনাইদহে বিজিবির অভিযান, স্বর্ণের বারসহ আটক ১

মহেশপুর (ঝিনাইদহ) সংবাদদাতা
মহেশপুর (ঝিনাইদহ) সংবাদদাতা
শেয়ার
ঝিনাইদহে বিজিবির অভিযান, স্বর্ণের বারসহ আটক ১

ঝিনাইদহের মহেশপুর অধীনস্থ জীবননগর সীমান্ত থেকে ৬টি স্বর্ণের বারসহ রাজ রফি (৩২) নামের একজনকে আটক করেছে (বিজিবি)। সোমবার (১৭ মার্চ) বিকালে জীবননগর সীমান্ত থেকে তাকে আটক করা হয়। আটককৃত রাজ রফি জীবননগর উপজেলায় গয়েশপুর গ্রামের রেজাউল হক লিটনের ছেলে।

মহেশপুর ব্যাটালিয়নের (৫৮ বিজিবি) অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. রফিকুল আলম কালের কণ্ঠকে জানায়, বাংলাদেশ থেকে ভারতে সোনা পাচার হচ্ছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে সীমান্ত এলাকায় টহল জোরদার করে বিজিবি।

সে সময় তাকে আটক করে ক্যাম্পে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে স্বীকার না করলেও পরবর্তীতে মলত্যাগ করানো হলে তার মলদার থেকে দুটি কস্টেপ প্যাচানো পোটলা বের হয়ে আসে।

উক্ত পোটলা দুটি খোলা হলে ৬ পিস স্বর্ণের বার পাওয়া যায়। উদ্ধারকৃত স্বর্ণের বারসমূহ জুয়েলারি সমিতির মাধ্যমে পরীক্ষা করত পুলিশ এবং আদালতের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

মন্তব্য
এক ট্রেন চালাতে তিন ইঞ্জিন

ঢাকা-কিশোরগঞ্জ ও ময়মনসিংহ-চট্টগ্রাম রেলপথে শিডিউল বিপর্যয়

নিজস্ব প্রতিবেদক, হাওরাঞ্চল
নিজস্ব প্রতিবেদক, হাওরাঞ্চল
শেয়ার
ঢাকা-কিশোরগঞ্জ ও ময়মনসিংহ-চট্টগ্রাম রেলপথে শিডিউল বিপর্যয়

একটি ট্রেন চালাতে তিন-তিনটি ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে। তবু প্রায় চার ঘণ্টা বিলম্বে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছেছে ট্রেনটি। এরকম ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে সোমবার (১৭ মার্চ) ঢাকা-কিশোরগঞ্জ রেলপথে চলাচলকারী ‘কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস’ নামক আন্তঃনগর ট্রেনটিতে। মূলত ট্রেনটির ইঞ্জিন বিকল হওয়ায় এ পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে।

ফলে ঢাকা-কিশোরগঞ্জ ও ময়মনসিংহ-চট্টগ্রাম রেলপথে সিডিউল বিপর্যয় ঘটায় এ দুই রেলপথের অন্তত চারটি ট্রেনের কয়েক হাজার যাত্রী আজ দিনভর সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েন।

প্রত্যক্ষদর্শী রেলযাত্রী ও রেলওয়ে সূত্রগুলো জানায়, শনিবার (১৭ মার্চ) নির্ধারিত সময় বেলা সাড়ে ১০টায় ‘কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস’ (৭৮১ ডাউন) নাম ট্রেনটি কিশোরগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। নির্দিষ্ট সময়ে ভৈরব জংশনে পৌঁছে বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে ট্রেনটি কিশোরগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়ার কয়েক মিনিট পরই তাতারকান্দি নামক স্থানে ট্রেনের ইঞ্জিন (নং ২৯১৩, এমইআই-১৫) বিকল হয়ে পড়ে। 

এতে কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা যাত্রীবাহী আন্তঃনগর এগারসিন্দুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি সরারচর স্টেশনে এবং ময়মনসিংহের বাহাদুরাঘাট থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা যাত্রীবাহী ‘নাসিরাবাদ এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি কুলিয়ারচর স্টেশনে আটকা পড়ে।

এরপর রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বিকল হয়ে পড়া ট্রেনটি ভৈরব জংশনে ফিরিয়ে নিতে নাসিরাবাদ এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনটি (নং ২৭১৪, এমইএল-১৫) এনে আটকেপড়া কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনটি উল্টো ধাক্কায় ভৈরব নেওয়ার চেষ্টা চালায়।

অবশ্য টানা প্রায় তিন ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়েও নাসিরাবাদ এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন বিকল বসে থাকা ট্রেনটিকে ভৈরবের দিকে নিতে পারেনি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, দেড় ঘণ্টার বেশি সময় ধরে ‘সচল’ ইঞ্জিনটি বিকল ট্রেনকে কিছুদূর সামনে নেয় তো আবার পিছিয়ে যায়। বিকাল ৪টা পর্যন্ত এরকম ‘ইঁদুর-বেড়াল’ খেলা চলার পর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া জংশন থেকে একটি রিলিফ ইঞ্জিন এসে বাকি দুই ইঞ্জিনসমেত বিকল ট্রেনটিকে ভৈরব স্টেশনে ফিরিয়ে নিতে সক্ষম হয়।

 

এরপরই সরারচর স্টেশনে আটকেপড়া এগারসিন্দুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি ভৈরব জংশন হয়ে নির্ধারিত সময়ের প্রায় দুই ঘণ্টা পর ঢাকার পথে ছেড়ে যায়।

কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী অ্যাডভোকেট শহীদুল ইসলাম হুমায়ুন ও তার স্ত্রী সৈয়দা তামান্না জানান, সন্ধ্যা ৭টার পর তিনি ট্রেন থেকে নেমে বাসায় পৌঁছাতে পেরেছেন। ইফতার করতে হয়েছে গচিহাটা স্টেশনে। চার ঘণ্টা ট্রেনে বসে থেকে তার স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এ ছাড়া নাসিরাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেনটি কয়েক ঘণ্টা বিলম্বে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।

নাসিরাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেনের সহকারী লোকোমাস্টার ইসমাইল হোসেন কালের কণ্ঠকে জানান, তার ট্রেনের ইঞ্জিনের সাধ্যে কুলায়নি বলেই বিকল ট্রেনটি চালাতে সক্ষম হননি। এদিকে ‘কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস’ ট্রেনের দুই চালক (লোকোমাস্টার) আব্দুল হান্নান খান ও মো. সুমন মিয়া জানান, তার ট্রেনের ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়ায় ট্রেন আটকে ছিল। 

ঢাকা-কিশোরগঞ্জ ও ময়মনসিংহ-চট্টগ্রাম রেলপথে নিয়মিত যাতায়াত ও চলাচলকারী যাত্রীরা জানায়, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও অবহেলায় এ দুই রেলপথের বিশেষ করে কিশোরগঞ্জ জেলার ট্রেনযাত্রীরা বছরের পর বছর ধরেই সীমাহীন কষ্ট-দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। এ রেলপথের উন্নয়নে কেউ কখনো নজর দিচ্ছে না। 

রাষ্ট্রের সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ূম গতকালের দুর্ভোগের বিষয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে লেখেন, ‘ঢাকা-কিশোরগঞ্জ রেল ব্যবস্থা বাংলাদেশের সবচাইতে অবহেলিতগুলোর একটি। অবিলম্বে এর সংস্কার দাবি করছি’। 

রেলওয়ের বিভিন্ন স্তরের কর্মচারীরাও স্বীকার করেন, ইঞ্জিনের সঙ্কট রয়েছে। ফলে বেশকিছু ইঞ্জিন পথিমধ্যে প্রায়ই বিকল হয়ে পড়ছে। এরকম একটি ত্রুটিপূর্ণ ইঞ্জিনই গতকাল সোমবার কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে যুক্ত করা হয়।

কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের গার্ড নজরুল ইসলাম ভূঁইয়া শনিবার রাত সাড়ে ৯টায় কালের কণ্ঠকে জানান, প্রায় চার ঘণ্টা বিলম্বে পৌনে ৭টা নাগাদ ট্রেন নিয়ে তিনি কিশোরগঞ্জ স্টেশনে পৌঁছান এবং একইরকম বিলম্বে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা করেন।

তবে বিকল ইঞ্জিন দিয়ে ট্রেন চালানোর কারণ জানতে ঢাকা রেলওয়ের নিয়ন্ত্রণ বিভাগের বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলী (লোকো) জহিরুল ইসলামের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে বারবার কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ