বরগুনার আমতলীতে ইসমাইল শাহ মাজারে বাৎসরিক ওরশ চলাকালে হামলা চালিয়ে আগুন দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে মাজারের ভিতরের সামিয়ানা ও দুইটি বৈঠকখানা পুড়ে চাই হয়ে গেছে। এতে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। মাজারের খাদেম অ্যাড. মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল এমন অভিযোগ করেছেন।
আমতলীর ইসমাইল শাহ মাজারে আগুন-ভাঙচুর, আহত ২০
বরগুনা ও আমতলী প্রতিনিধি

আমতলী পৌর শহরের বটতলা এলাকায় গতকাল রবিবার (১৬ মার্চ) রাত সোয়া ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে রাত পৌনে তিনটার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
জানা গেছে, আমতলী পৌর শহরের বটতলা এলাকায় ১৯৯৬ সালে ইসমাইল শাহ মাজার স্থাপন করা হয়। ওই সময় থেকে মাজার কর্তৃপক্ষ দুইদিন ব্যাপী ওরশ উৎযাপন করে আসছেন।
কিন্তু মাজারের খাদেম অ্যাড. মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল ওরশ বন্ধে অপরগতা প্রকাশ করেন। এ নিয়ে তাদের মধ্য দ্বন্ধ হয়।
খবর পেয়ে আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) তারেক হাসান ও ওসি মোঃ আরিফুল ইসলাম আরিফ ঘটনাস্থলে আসেন। তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এ ঘটনায় আহতরা হলেন, সোলায়মান (৩৮), রেজাউল (১৮), বাদল মৃধা (৪০), দুলাল মৃধা (৪২), আবু বকর (২৯), আবুল হোসেন (২৮), আব্দুল্লাহ আল নোমান (২৮), মোঃ মামুন (৪৩), আবুল কালাম (৪২), জোবায়ের (১৯) ও ফজলুল করিম (২৭)। আহতদের আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। অপর আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আমতলী শাখার সভাপতি মাওলানা ওমর ফারুক জেহাদী ও সাধারণ সম্পাদক গাজী বায়েজিদের নেতৃত্বে টুপি পরিহিত তাদের শতাধিক সমর্থক লাঠি সোঠা নিয়ে এসে মাজার ভাঙচুর করে ও আগুন দেয়। এ সময় ওরশে আসা হাজার হাজার ভক্তবৃন্দ ও স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
ইসমাইল শাহ মাজারের খাদেম অ্যাড. মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল বলেন, 'মাওলানা ওমর ফারুক জেহাদী ও গাজী বায়েজিদের নেতৃত্বে তাদের শতাধিক সমর্থক লাঠি সোঠা নিয়ে এসে অতর্কিতভাবে মাজারে হামলা চালায় এবং আগুন দেয়। এতে মাজারের ভিতরের গিলাব এবং দুটি বৈঠকখানা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। '
তিনি আরো বলেন, 'তারা ভক্তবৃন্দকে মারধর ও মাজারের বাক্সে থাকা টাকা পয়সা লুটপাট করেছে। আমি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দাবি করছি।'
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমতলী উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক গাজী বায়েজিদ বলেন, 'মাওলানা ওমর ফারুকসহ বেশ কিছু সমর্থক গিয়ে মাজারে খাদেম অ্যাড. মোস্তাফিজুর রহমান বাবুলকে পবিত্র রমজান মাসে মাজার পুজা ও গানবাজনা করতে নিষেধ করা হয়। কিন্তু তিনি তা মানতে নারাজ। এক পর্যায় তার ভক্তবৃন্দ ক্ষিপ্ত হয়ে মাওলানা ওমর ফারুক জেহাদীর গায়ে হাত তুলে। এতে জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে মাজার ভাঙচুর ও আগুন দিয়েছে।'
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আমতলী উপজেলা শাখার সভাপতি মাওলানা ওমর ফারুক জেহাদী বলেন, 'এ মাজারটি ভন্ডের আস্তানা। এখানে ওরশের নামে গানবাজনা ও গাজা, মাদক সেবন ও নারীর আসর বসে। যা সম্পুর্ণ ইসলাম বিরোধী। আমরা মাজারের খাদেম অ্যাড. মোস্তাফিজুর রহমান বাবুলকে এই রমজান মাসে অনৈতিক কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেছিলাম কিন্তু তিনি তা শুনেন নি। তার নির্দেশে তার ভক্তবৃন্দেরা আমরা লোকজনের ওপর হামলা করেছে। এই ভন্ড মাজারের খাদেম বাবুল উকিল ও তার দোসরদের শাস্তি দাবি করছি।'
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার ডা. রাসেদ মাহমুদ রোকনুজ্জামান বলেন, 'আহতদের যথাযথ চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।'
আমতলী ফায়ার ষ্টেশনের ওয়ার হাউস ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ হানিফ বলেন, 'দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে রাত ২ টা ৩৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। আগুণে মাজারের ভেতরের সামিয়ানা ও দুই ঘর পুড়ে গেছে।'
আমতলী থানার ওসি মো. আরিফুল ইসলাম আরিফ বলেন, 'খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, 'ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
সম্পর্কিত খবর

ডাকাতি করতে এসে এলাকাবাসীর হাতে আটক ২
আঞ্চলিক প্রতিনিধি, নারায়ণগঞ্জ

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ পৌরসভার নোয়াইল গ্রামে ডাকাতির সময় দুই ডাকাত সদস্যকে আটক করেছে এলাকাবাসী। গতকাল সোমবার দেড়টার দিকে ডাকাতদের আটক করে গ্রামবাসী। পরে আজ মঙ্গলবার সকালে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, গত রবিবার গভীর রাতে পৌরসভার নোয়াইল গ্রামের মামুনের বাড়িতে একটি দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটে।
সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমএ বারী জানান, ঘটনাস্থল থেকে দুজন ডাকাতকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। এছাড়াও পুলিশের একটি বিশেষ টিম ইতিমধ্যেই ডাকাতদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে অভিযান চালাতে শুরু করেছে।

গলাচিপায় নাব্য সংকটে ব্যাহত নৌ চলাচল, ভোগান্তি চরমে
গলাচিপা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

পটুয়াখালী জেলার উপকূলীয় এলাকা গলাচিপায় জালের মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য নদ-নদী। যার অধিকাংশই এখন দেখা দিয়েছে নাব্যতা সংকট। এতে ব্যাহত হচ্ছে নৌ চলাচল। দীর্ঘ পথ ঘুরে নৌযানগুলো চলাচল করায় সৃষ্টি হয়েছে ভোগান্তি।
গলাচিপা-চরমোন্তাজ রুটে চলাচলকারী লঞ্চ এমভি হামজা-৭ এর চুকানী আলী আক্কাস বলেন, গলাচিপার চরপাঙ্গাসিয়া, মাঝের চর, রাঙ্গাবালীর চরনজিরে নাব্যতা সংকট বেশি। ডুবোচরে চরমোন্তাজের কাছে গত কয়েকদিন আগেও তিন ঘণ্টা লঞ্চ আটকে ছিল। ডুবো চরের কারণে জোয়ার ভাটা দেখে অনেক পথ ঘুরে যেতে হয়।
গলাচিপার বাসিন্দা শাহদাত সোহাগ বলেন, গলাচিপার বিভিন্ন নদীতে নাব্যতা সংকট এখন তীব্র আকার নিয়েছে। নদ-নদীগুলোতে অসংখ্য ডুবোচর সৃষ্টি হওয়ায় এমনটি ঘটছে। চর কাজল এলাকার জিনতলা চ্যানেলটি পলিমাটি জমে ইতোমধ্যেই নষ্ট হয়ে গেছে। এ ছাড়া নষ্ট হয়ে গেছে গলাচিপা পৌর এলাকার একমাত্র নৌরুট রামনাবাদ চ্যানেলটি।
এলাকায় ছোট-বড় লঞ্চ, ট্রলার ডুবোচরে আটকে ঘটছে দুর্ঘটনা। অন্যান্য রুটেও কমবেশি নাব্যতা বিরাজ করলেও পানি মেপে মেপে নদী অতিক্রম করছে ট্রলার বা লঞ্চ চালকরা। এর ফলে মারাত্মক ভাবে ব্যাহত হচ্ছে নৌ চলাচল।
পক্ষিয়া গ্রামের ফেরদাউস বলেন, উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় প্রায় ৩ লাখ লোক বসবাস করে। এর মধ্যে ৪টি ইউনিয়ন মূল ভূখণ্ড থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন। এসব ইউনিয়নের আওতায় চর রয়েছে অর্ধশতাধিক। এসব চরে গত তিন দশকে মানববসতি গড়ে উঠেছে। যেখানে যাওয়ার একমাত্র মাধ্যম নৌ পথ। দুর্গম এ সকল চরে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হয় পুরো দিন পর্যন্ত। দুর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে অনেক সময় অসুস্থ ব্যক্তিদের বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করতে হয়।
তিনি আরো বলেন, নদ-নদীতে চর জেগে ওঠার কারণে নদীর স্রোতের গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে ভাঙছে জনপদ। চিরতরে হারিয়ে যাচ্ছে জমি, বাড়ি-বাগান, বাজার ও পুকুরসহ সহায়-সম্পদ। এসব সম্পদ হারিয়ে অনেক পরিবার চিরতরে হয়েছে ভূমিহীন।
পটুয়াখালী নৌ বন্দরের সহকারী পরিচালক মো. জাকি শাহরিয়ার বলেন, কেউ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করলে আমরা ওই সকল নদী বা পল্টুন এলাকায় ড্রেজিং করার সুপারিশ করি। এ ছাড়া বড় ড্রেজিংয়ের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলে তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

গাজীপুরে দুই কারখানায় শ্রমিক বিক্ষোভ
নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর

গাজীপুর সদর উপজেলার বানিয়ারচালা ও হোতাপাড়া এলাকায় মঙ্গলবার সকালে বিক্ষোভ করছেন ফুওয়াং ফুড ও জায়ন্ট টেক্সটাইলের শ্রমিকরা। বকেয়া বেতন পরিশোধসহ কয়েকটি দাবিতে আন্দোলন করেছে তারা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সকাল ৯টার দিকে হোতাপাড়া এলাকায় ফুওয়াং ফুড কারখানার শ্রমিকরা তিন মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে প্রথমে কারখানার ভেতর বিক্ষোভ শুরু করে। পরে কারখানার সমাসনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে তারা।
এতে এক ঘণ্টা ওই মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল বলে জানা গেছে। কারখানাটিতে সাড়ে ৬০০ শ্রমিক কাজ করেন।
শিল্প পুলিশ ও স্থায়ীয় সূত্রে জানা গেছে, কারখানার প্রশাসন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক ওমর ফারুকের পদত্যাগ ও ঈদুল ফিতরের ছুটি ১১ দিন করার দাবিতে বানিয়ারচালা এলাকার জায়ান্ট টেক্সটাইল লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা সকাল সাড়ে ৭টার দিকে কাজ বন্ধ করে কারখানার ভেতরে বিক্ষোভ শুরু করে।
জয়দেবপুর থানার ওসি আবদুল হালিম বলেন, ফুওয়াং ফুডের শ্রমিকরা অবরোধ তুলে কাজে ফিরে গেছে। জায়ান্ট টেক্সটাইলের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে।

ফেসবুকে মন্তব্যের জেরে দুপক্ষের সংঘর্ষ, আহত ২০
চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি

ফেসবুকে করা মন্তব্যকে কেন্দ্র করে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে দুপক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। সোমবার রাতে উপজেলার আলকরা ইউনিয়নের লক্ষীপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালে উপজেলার আলকরা ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামে জামায়াতের সমর্থক মো: তারেক চৌধুরীর বিরুদ্ধে একটি ধর্ষণ মামলা হয়।
আলকরা ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মো: শরিফ বলেন, ২০২০ সালে স্থানীয় জামায়াত সমর্থক মো: তারেক চৌধুরী এক স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণ করে। সে সময় স্থানীয়রা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিল। ১৩ মার্চ ওই স্ট্যাটাসে যুবদলের কর্মী হৃদয় মন্তব্য করে লিখেন— এ ঘটনায় তো এখনও ধর্ষণকারীর বিচার হয়নি। এর জের ধরেই তারা হৃদয়কে মারধর করেছে।
তিনি আরো বলেন, জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আমাদের উপর ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা করেছে এবং বেশ কয়েকটি বাড়ীঘরে ভাংচুর চালায়।
অন্যদিকে উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মো: বেলাল হোসেন বলেন, ফেসবুকে মন্তব্যকে ঘিরে এ ঘটনার সূত্রপাত। বিএনপির লোকজন পূর্ব পরিকল্পনা করে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করেছে। এতে হানিফ, জাহিদ, সাকিল, কুসুম, শরীফ ও নাছিরসহ আমাদের ১০ জন কর্মী আহত হয়েছেন। আমাদের কর্মী-সমর্থকদের বাড়ীঘর ভাংচুর করা হয়েছে। এ ঘটনায় আমরা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছি।
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিঃ শাহ আলম বলেন, জামায়াত পূর্ব পরিকল্পনা করে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে।
এ বিষয়ে চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: হিলাল উদ্দিন বলেন, হৃদয় এবং মো: তারেক চৌধুরী প্রতিবেশী। ফেসবুকে করা মন্তব্যকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষটি রাজনৈতিক রূপ নিয়েছে। সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ এবং সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।