সংখ্যালঘু নির্যাতনসহ ভুল তথ্য ছড়ানো নিয়ে মার্কিন সিনেটর গ্যারি পিটার্সের সহায়তা চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় মার্কিন সিনেটর গ্যারি পিটার্স সাক্ষাৎ করতে এলে প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন। ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে দুই নেতা পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় এবং বন্ধুত্বপূর্ণ দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরো গভীর করার উপায় নিয়ে আলোচনা করেন।
সিনেটর পিটার্স বলেন, ডেট্রয়েট শহরসহ মিশিগানে তার নির্বাচনী এলাকায় অনেক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বসবাস করেন।
তাদের কেউ কেউ সাম্প্রতিক সময়ে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়েও ব্যাপক ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছে। এই ভুল তথ্যের কিছু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়েছে, যা সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর মধ্যে উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলেছে।
এ বিষয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘ধর্ম-বর্ণ, জাতি-লিঙ্গ-নির্বিশেষে দেশের প্রতিটি নাগরিকের মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে তার সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ।
’
তিনি বলেন, ‘গত বছরের আগস্টে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সংখ্যালঘুদের, বিশেষত হিন্দুদের ওপর আক্রমণগুলো রাজনৈতিক ছিল, ধর্মীয় উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল না, তবে তার সরকার দোষীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে।’
প্রফেসর ইউনূস মার্কিন সিনেটরকে বাংলাদেশের বিভিন্ন শহর পরিদর্শন এবং অন্যান্য মার্কিন রাজনৈতিক নেতা, সাংবাদিক ও কর্মীদের বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।
তিনি বলেন, ‘আপনাদের সাহায্য আমাদের দরকার। আপনার সহকর্মীদের বাংলাদেশ ভ্রমণ করতে বলুন।
আমরা একসঙ্গে ভুল তথ্য প্রচার মোকাবেলা করতে পারি।’
মার্কিন সিনেটর পিটার্স অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার উদ্যোগ, মূল কমিশনগুলোর প্রতিবেদন এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরিকল্পনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন।
এ সময় অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো কম সংস্কারে সম্মত হলে চলতি ডিসেম্বরে নির্বাচন। তবে দলগুলো যদি সরকারের কাছ থেকে সংস্কারের আরো বড় প্যাকেজ চায় তবে কয়েক মাস পরে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’
তিনি বলেন, ‘উৎসবমুখর পরিবেশে আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে।
নির্বাচনের দিন বড় রকমের উৎসব হবে, যেমনটা আমরা অতীতে দেখেছি।’
ড. ইউনূস বলেন, ‘কমিশনগুলোর প্রস্তাবিত সংস্কারের ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হলে তারা জুলাই সনদে সই করবে।’ এই জুলাই সনদ দেশের ভবিষ্যৎ গতিপথ নির্ধারণ করবে বলেও জানান তিনি।
সিনেটর পিটার্স সরকারের সংস্কার এজেন্ডার প্রশংসা করে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে একটি মসৃণ গণতান্ত্রিক উত্তরণ প্রত্যাশা করছে।’
বৈঠকে দুই নেতা সামাজিক ব্যবসা, দারিদ্র্যমুক্ত বিশ্ব এবং যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বের অন্যান্য দেশে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের হাতিয়ার হিসেবে ক্ষুদ্রঋণ নিয়েও আলোচনা করেন।