নতুন বাংলাদেশের অঙ্গীকার নিয়ে আসছে আরেকটি নতুন রাজনৈতিক দল। নাম ‘জনতার দল’। দলের স্লোগান হবে ‘ইনসাফ জিন্দাবাদ’। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর খামারবাড়িতে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে দলটি।
দলটি গড়ার পেছনে রয়েছেন সাবেক সামরিক ও সাবেক সরকারি কর্মকর্তারা। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও এই দলে যোগ দেবেন। কৌশলগত কারণে সবার নাম প্রকাশ করছে না দলটি।
দলটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিচ্ছেন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম কামাল।
দলের মুখপাত্র হবেন জাতিসংঘে কাজ করে আসা সাবেক সেনা কর্মকর্তা এবং ভূ-রাজনৈতিক ও নিরাপত্তাবিষয়ক লেখক ডেল এইচ খান। নতুন দলটিতে নবীন-প্রবীণের সমন্বয় কমিটি গঠন করা হবে। মধ্যমপন্থা হিসেবে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ধারণ করেই বাংলাদেশের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করবে নতুন এই রাজনৈতিক দল।
জানা গেছে, কয়েক মাস ধরে এই রাজনৈতিক দলের গঠনপ্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে ব্যক্তিগত ও সামষ্টিকভাবে বেশ কয়েকটি বৈঠক ও আলোচনাসভা করেছেন প্রস্তাবিত এই দলের চেয়ারম্যান মো. শামীম কামালসহ অন্যরা।
দল গঠন ও পরিচালনার জন্য বেশ কয়েকটি কমিটি কাজ করছে। এর মধ্যে রয়েছে থিংকট্যাংক ও গঠনতন্ত্র প্রণয়ন কমিটি, উপদেষ্টা কমিটি, সংসদ সদস্য বাছাই কমিটি ও সাংগঠনিক পরিচালনা কমিটি। আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুধীসমাজের প্রতিনিধিদের কাছে আমন্ত্রণপত্র দিয়েছে দলটি।
এই দলে কারা যোগদান করছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে জনতার দলের মুখপাত্র ডেল এইচ খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা এই মুহূর্তে সবার নাম প্রকাশ করতে পারছি না। তবে সাবেক সামরিক কর্মকর্তা ও সৈনিকদের পাশাপাশি দেশের সব ধরনের শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি, মাদরাসাছাত্রদের সংগঠন প্রতিনিধি, এনজিওদের জোট, নারী সংগঠনের প্রতিনিধি, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সংগঠন প্রতিনিধি, দেশের শীর্ষস্থানীয় বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধি, প্রবাসের বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ এই দলে যোগ দেবেন।
আমরা খুব শিগগির দেশব্যাপী সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম পরিচালনা করব।’
জানা গেছে, দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলোর বেশ কয়েকজন নেতা জনতার দলে যোগ দিতে পারেন। সাবেক সামরিক কর্মকর্তা ছাড়াও সাবেক মন্ত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক আমলা, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, আইনজীবী নতুন এই রাজনৈতিক দলে যোগদানে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
এ ছাড়া দেশের শীর্ষ ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন উদ্যোক্তা এই দলে যোগ দিতে পারেন। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের নেতৃত্ব দেওয়া কয়েকজন ব্যবসায়ীর এই দলে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দলের গঠনপ্রক্রিয়া শেষ না হওয়ার কারণে সবার নামের তালিকা প্রকাশ করছে না দলটি। আইনগতভাবে গঠনপ্রক্রিয়া শেষে পূর্ণাঙ্গ কমিটিসহ তালিকা প্রকাশ করা হবে।
বড় সম্মেলনের মাধ্যমে জাতীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করবে দলটি। দেশের ও প্রবাসের আপামর মানুষের জনতার দলে যোগ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত অনেক সদস্য এই রাজনৈতিক দলে যুক্ত হতে পারেন। পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংগঠন থেকেও এই রাজনৈতিক দলে অনেকে যোগ দেবেন।
দল গঠনে সার্বিক কার্যক্রম সমন্বয় করছেন মেজর জেনারেল (অব.) মাহবুব, মেজর জেনারেল (অব.) ইসমাইল ফারুক চৌধুরী, মেজর জেনারেল (অব.) ইবনে ফজল সায়েখুজ্জামান, লে. জেনারেল (অব.) সাব্বির আহমেদ, মেজর জেনারেল (অব.) এফ এম জাহিদ হোসেন ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আবুল হাসেম।
দলের চেয়ারম্যান ব্র্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. শামীম কামাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ন্যায্যতাভিত্তিক বাংলাদেশ গঠনের উদ্দেশ্যে সত্, শিক্ষিত, দেশপ্রেমিক, নিঃস্বার্থ ভালো মানুষকে নিয়ে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের আদর্শের ওপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক দলটি পরিচালিত হবে। আমরা একেবারেই প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের সমন্বয়ে দলটি গঠন করতে চাই, যেখানে সত্ ও দক্ষ মানুষ নেতৃত্ব দেবেন। গত ৫৩ বছরের বিতর্কিত রাজনীতিকে পেছনে ফেলে স্বচ্ছ রাজনীতি করতে চাই আমরা।’
নির্বাচনের জন্য বিভিন্ন এলাকায় আঞ্চলিক কমিটির মাধ্যমে সত্ ও যোগ্য প্রার্থী খুঁজে বের করতে চায় দলটি। তবে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়াই তাদের মূল লক্ষ্য নয়। প্রাথমিকভাবে সামরিক সদস্য সমর্থিত হলেও এখানে সব পেশাজীবীর সমন্বয় থাকবে। এই দলের বড় অংশজুড়ে নেতৃত্ব দেবেন সমাজের তরুণ ও ছাত্ররা।
কেন এই রাজনৈতিক দল—এমন প্রশ্নের জবাবে দলের চেয়ারম্যান বলেন, ‘ইতিহাস বলছে, অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে ভূমিধস বিজয় নিয়ে ক্ষমতায় আসে। কিন্তু কিছুদিন পর তারা ভূমিছাড়া হয়ে যান। আমরা সেখান থেকে ব্যতিক্রম হয়ে দলটি এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। মীমাংসিত ঐতিহাসিক কোনো বিষয়ে আমরা বিতর্ক করব না। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কিংবা ভূ-রাজনৈতিক পক্ষভুক্ত হবে না দলটি।’