ছুটিতে ভ্রমণপিপাসুদের জন্য পছন্দের অন্যতম জায়গা কিশোরগঞ্জের হাওর। প্রতিবছর ঈদের ছুটিতে থৈ থৈ জলরাশি দেখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ ছুটে যান হাওরে। শুকনো মৌসুমে একরকম, বর্ষায় অন্য রকম। এবার ঈদটা হলো শুকনো মৌসুমে।
গরমও বেশি। তবু থেমে নেই পর্যটকদের আনাগোনা। হাজারো পর্যটকের উপচে পড়া ভিড় হাওরে মাইলের পর মাইল ফসলি জমি, ধান আর ভুট্টার ক্ষেত বাতাসে দুলছে। শহর থেকে যাওয়া পর্যকটকদের দাপাদাপি, ছবি তোলা, সেলফিতে নিজেকে ধারণ করা সবই চলছে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। সাবমারসিবল ও দৃষ্টিনন্দন অলওয়েদার সড়ক রয়েছে পর্যকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে।
ইটনা ও মিঠামইনের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ধনু ও মেঘনা নদীতে এখন পানি কম। নদীতে ছোট ছোট নৌকায় ভাসছে লোকজন।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, জেলার নিকলী, বালিখলা, ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম অলওয়েদার সড়কের জিরো পয়েন্ট ও সেতুগুলোতে ভ্রমণপিপাসুদের কলরব।
তাদের বাধভাঙা ঢল আর উচ্ছ্বাসে মাতোয়ারা হাওর যেন পরিণত হয়েছে পর্যটনের এক স্বর্গপুরীতে। হাওরে পানি না থাকলেও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের টানে এবারের ঈদে হাওরে ঢল নেমেছে দর্শনার্থীদের। ঈদের দিন থেকে প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষ হাওরে পরিবার-পরিজন নিয়ে বেড়াতে আসছেন।
জেলা শহর থেকে খুব কাছের হাওরটি করিমগঞ্জ উপজেলার বালিখলা এলাকায়। ঘাট থেকে নৌকা বা স্পিডবোট ভাড়া নিয়ে অনেকেই ছুটছেন হাওর ভ্রমণে।
বালিখলা থেকে নৌকা ও ফেরি পার হয়ে সাবমারসিবল সড়ক ধরে বিভিন্ন যানবাহন চড়ে যেতে পারছেন মিঠামইন জিরো পয়েন্টে। সেখানে ফটোসেশন, আড্ডা আর ঘুরেফিরে সময় কাটাচ্ছেন দর্শনার্থীরা।
ঢাকা থেকে বড় বোনের বাসায় কিশোরগঞ্জ জেলা শহরে এসেছেন সানজিদা সামান্তা। অনেকদিন ধরেই তার ইচ্ছে হাওর দেখবে-তবে যখন চারিদিকে পানির সমারোহ থাকবে। কিন্তু যখন এসে শুনলেন হাওরে বর্ষার আগে পানির দেখা মিলবে না, তখন তার মনটাই খারাপ হয়ে যায়। কিন্তু বাস্তবে ঘুরতে এসে এখন তিনি মুগ্ধ। তিনি জানালেন, পানির সময় একবার এসেছিলাম, তাই ভেবেছিলাম হয়তো এখন ভালো লাগবে না। অথচ এসে দেখি চিত্র পুরোটাই উল্টো। এখানে হাজার হাজার মানুষের ভীড় শুধুমাত্র অলওয়েদার সড়ককে কেন্দ্র করে। তাছাড়া সবাই অনেক মজা করছে। এখন আমার মন অনেক ভালো।
রাজধানীর মোহাম্মপুর থেকে স্ত্রী ও ছেলেমেয়ে নিয়ে হাওরে বেড়াতে এসেছেন আরিফ হাসান। দু’বছর আগে বর্ষার সময় আরেকবার এসেছিলেন। এবার ঈদের ছুটিতে শুকনো মৌসুমে এলেন। তিনি বলেন, বর্ষায় হাওরকে সাগরের মতো লাগে। আর এই জলরাশির মধ্যে ভেসে থাকা সড়কটি দেখার মতো একটি বিষয় থাকে। আর শুকনো সময়ের রূপও মনোমুগ্ধকর। যেন সুবজের গালিচায় ঢাকা। তিনি বলেন খুব ভালো লাগছে। সুযোগ পেলে আবার আসব। তবে তিনি আক্ষেপ করে বলেন, হাওরে পর্যকটদের জন্য সুযোগ সুবিধা কম। রাতযাপনের সুবিধা নেই।
বুধবার (২ এপ্রিল) বিকেল ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম অলওয়েদার সড়ক (বর্ষায় ভেসে থাকা সড়ক) গিয়ে দেখা যায়, পুরো ৩০ কিলোমিটার অলওয়েদার সড়কজুড়ে হাজার হাজার মানুষের ভিড়। কেউ ঘোড়ার পিঠে, কেউ বন্ধুদের নিয়ে বাইকে। আবার কেউবা দলবেঁধে পিকআপে চড়ে গানের তালে তালে নেচে বেড়াচ্ছেন। টিকটক ও স্যোসাল মিডিয়ায় নিজেদের তুলে ধরতে অনেকেই বিভিন্ন সাজে ও অঙ্গভঙ্গিতে ছবি তুলছেন। ঈদকে কেন্দ্র করে অনেক ফটোগ্রাফারও ছবি তুলে আয় করছেন। আবার কেউ কেউ বিভিন্ন সাজে দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করছেন।
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিদিন ভ্রমণপিপাসু মানুষ দলবেঁধে ছুটে আসছেন হাওরে। ঈদের পর থেকে একটু আনন্দের খোঁজে দর্শনার্থীরা বেছে নিয়েছেন মিঠামইন অলওয়েদার সড়কের জিরোপয়েন্টকে। সকাল থেকে সন্ধ্যা এমনকি রাত পর্যন্ত সব বয়সীদের উপচে পড়া ভিড় সেখানে লেগেই রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, সাধারণত হাওরে বর্ষা থাকে বছরের প্রায় ছয় মাস। পানি আসতে শুরু করে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ থেকে। শেষ হয় আশ্বিন-কার্তিকে। তখন পুরো সময়জুড়েই হাওরে পর্যটকদের ভিড় থাকে। তবে এবার শুকনো মৌসুমেও উৎসবে মাতোয়ারা বিনোদনপ্রেমীরা।
মিঠামইন সদরের ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন বলেন, ‘নিরাপত্তার কোনো ঝুঁকি নেই। আমরা যারা এই সময়টাকে এখানে ব্যবসা করি বা অন্যরাও এ বিষয়গুলো খেয়াল রাখি। তবে উঠতি বয়সীদের বেপরোয়া বাইক চালানো আমাদের কিছুটা দুশ্চিন্তা রাখে। এ দিকটায় প্রশাসনের একটু নজর দেওয়া উচিত।’