পবিত্র মাহে রমজান এলেই আমাদের চারপাশে অন্য রকম আবহ তৈরি হয়। প্রতিদিনই সূর্য অস্ত যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মসজিদ থেকে আজানের সুর ভেসে এলেও রমজানের আজানে এক আলাদা আনন্দ পরিলক্ষিত হয়। আজানের সুরের আহ্বানে রোজাদাররা মিলিত হন ইফতারির টেবিলে। খাবারের পসরা সাজিয়ে বসেন অনেকে।
আবার কেউ বা কোনো রকমে ইফতার সারেন। ইফতারের সময় যখন কেউ কেউ বাড়ির খাবার টেবিলে বসেন, তখন কোনো রিকশাচালক হয়তো পথে ক্লান্ত শরীরে বিশ্রাম নিচ্ছেন, কোনো পথশিশু হয়তো অন্ধকার গলিতে শুকনা মুখে তাকিয়ে আছে অথবা কোনো শ্রমজীবী মানুষ হয়তো না খেয়ে পার করছে রোজার দীর্ঘ সময়।
এই বাস্তবতাকে বদলানোর স্বপ্ন নিয়েই বসুন্ধরা শুভসংঘ রাজধানীর মিরপুরের ইব্রাহিমপুরে আয়োজন করেছে এক অনন্য মানবিক কার্যক্রম—রমজান মাসব্যাপী ইফতার মাহফিল। রাজধানীর মিরপুরের ইব্রাহিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ প্রতিদিন বিকেল হলেই পরিণত হয় এক অনন্য মিলনমেলায়।
বসুন্ধরা শুভসংঘের স্বেচ্ছাসেবীরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন ইফতার প্রস্তুতির কাজে। কেউ খেজুর ও শরবত সাজাচ্ছেন আবার কেউ ব্যস্ত আছেন আগত রোজাদারদের বসার ব্যবস্থা করতে। ইফতারের সময়ের আগেই একে একে হাজির হয় সুবিধাবঞ্চিত মানুষ, রিকশাচালক, দিনমজুর, শ্রমিক, পথশিশু, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা কিংবা অসহায় নারী-পুরুষ। সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশ হয়ে ওঠে আরো আবেগময়। কেউ শরবত এগিয়ে দিচ্ছেন, কেউ খাবারের থালা সারিবদ্ধভাবে সাজাচ্ছেন। সারা দিনের ক্লান্তি যেন হারিয়ে যায় পরস্পরের এই সহযোগিতার মাঝে। এখানে ধনী-গরিবের ভেদাভেদ নেই, নেই কোনো সামাজিক বৈষম্য। সবাই বসুন্ধরা শুভসংঘের উন্মুক্ত ইফতার বৈঠকে বসে একসঙ্গে দোয়া করে ইফতারি গ্রহণ করেন।
এর মধ্যেই একদিন উন্মুক্ত ইফতার বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের একান্ত সচিব মাসুদুর রহমান মান্না।
তিনি বলেন, ‘সব ধরনের শুভ কাজের সঙ্গেই বসুন্ধরা শুভসংঘ কাজ করে যাচ্ছে। সারা দেশেই সংগঠনের কার্যপরিধি চলমান। আমরা চেষ্টা করছি সমাজের দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়াতে। এরই মধ্যে বসুন্ধরা শুভসংঘ সেলাই মেশিন বিতরণ, বিভিন্ন চরাঞ্চালে স্কুল প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছে। এরই অংশ হিসেবে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য মাসব্যাপী ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।’
এক বৃদ্ধ রিকশাচালক বললেন, ‘এই রকম ইফতারে বসার সুযোগ আমার জীবনে খুব কম এসেছে। এখানে সবাই আমাদের আপন করে নিয়েছে। মনে হচ্ছে, আমি কারো দয়া নয়, ভালোবাসার দাওয়াতে এসেছি।’ আয়োজকরা জানান, বসুন্ধরা শুভসংঘের এই আয়োজন কেবল ইফতারি দেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি সমাজে এক নতুন বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে। বসুন্ধরা শুভসংঘের উদ্যোগ যেন এক দীপশিখা, যা আলো ছড়িয়ে দিয়েছে বহু ক্ষুধার্ত মানুষের হৃদয়ে।
বসুন্ধরা শুভসংঘের মাসব্যাপী ইফতার কার্যক্রমের সার্বিক তত্ত্বাবধানে কাজ করছে ইব্রাহিমপুরের স্বেচ্ছাসেবী গ্রুপ সৌল জাংশন। সৌল জাংশনের আহবায়ক আব্দুল্লাহ আল মাহিনের নেতৃত্বে প্রায় প্রতিদিনই ইফতারে শামিল হচ্ছেন বসুন্ধরা শুভসংঘের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি রাফিউল আহমেদ বাপ্পি, তাহমিদ আরেফিন সাজিদ প্রমুখ।
আব্দুল্লাহ আল মাহিন বলেন, ‘প্রতিবছরই আমরা এই আয়োজন করে থাকি। আমাদের নিজস্ব অর্থায়নের পাশাপাশি কিছু মহানুভব মানুষ আমাদের ইফতার আয়োজনে নিয়মিত সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতেন। এবারই প্রথম পুরো আয়োজনের অর্থায়ন করছে দেশের শীর্ষ শিল্পপ্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপ। বসুন্ধরা শুভসংঘের সদস্যরা আমাদের সঙ্গে মিলে প্রতিদিনের ইফতার আয়োজন সম্পন্ন করছেন। এভাবেই প্রতিবছর আমরা এই রোজাদারদের পাশে থাকতে চাই।’ রাফিউল আহমেদ বাপ্পি বলেন, ‘বসুন্ধরা শুভসংঘ প্রতিনিয়তই ভালো কাজে অংশ নেয়। আমাদের এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।’
