‘জঙ্গিসংশ্লিষ্টতা’র প্রমাণ মেলেনি জামায়াত আমিরের বিরুদ্ধে

  • আদালতে সিটিটিসির অভিযোগপত্র
  • চারজনকে অভিযুক্ত, সাতজনকে অব্যাহতির সুপারিশ
মাসুদ রানা
মাসুদ রানা
শেয়ার
‘জঙ্গিসংশ্লিষ্টতা’র প্রমাণ মেলেনি জামায়াত আমিরের বিরুদ্ধে
শফিকুর রহমান

জঙ্গিসংশ্লিষ্টতার অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের ছেলে ডা. রাফাত সাদিক সাইফুল্লাহকে গ্রেপ্তার করা হয়। ছেলেকে গ্রেপ্তারের এক মাস পর একই অভিযোগে ২০২২ সালের ১৩ ডিসেম্বর ডা. শফিকুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)। গ্রেপ্তারের পর তাঁদের কয়েক দফায় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তবে দুই বছর চার মাস তদন্তের পর জানা গেছে, বাবা ও ছেলে কারো বিরুদ্ধে জঙ্গিসংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মেলেনি।

এ জন্য তদন্ত সংস্থা সিটিটিসি তাঁদের মামলার দায় থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেছে। 

জানা গেছে, গত ৬ মার্চ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সিটিটিসির পুলিশ পরিদর্শক মো. আবুল বাসার আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এতে চারজনকে অভিযুক্ত এবং সাতজনকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে। আগামী ১৩ মে আদালতে এই অভিযোগপত্র উপস্থাপন করা হবে।

এর আগে ২০২২ সালের ২ নভেম্বর সিটিটিসি পরিদর্শক মো. মোদাচ্ছের বাদী হয়ে মামলা করেন।

এ মামলার অভিযুক্ত আসামিরা হলেন মামুনুর রশিদ, সেজাদুল ইসলাম সাহাব তানিম, মো. জাহিদ হাসান ভূইয়া ও সৈয়দ রিয়াজ আহমদ। শফিকুর ও রাফাত ছাড়া আরিফ ফাহিম সিদ্দিকী, তায়েফ, মিজু, আঞ্জুম ও হোসাইনকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে। এঁদের মধ্যে মামুনুর পলাতক থাকায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয়েছে।

মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, আসামিরা সবাই পূর্বপরিচিত। তাঁরা নিয়মিত সিলেট জেলার সবুজবাগ এলাকার জামে মসজিদে নামাজ পড়তেন। সেই সময়ে আসামি সেজাদুল ইসলাম সাহাব তানিম এবং তাঁর বন্ধু তাহিয়াত অন্য আসামিদের নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকায় অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের মানবিক সাহায্য-সহযোগিতা করার জন্য প্রস্তাব দেন। তাঁদের প্রস্তাবে সাড়া দেন আসামিরা। তদন্তকালে প্রকাশ পায়, তানিম ও তাহিয়াতের মূল উদ্দেশ্য ছিল জঙ্গি সংগঠন আরএসএ ও আরএসওর সঙ্গে যোগাযোগ করে আরাকান রাজ্যের সশস্ত্র জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে জিহাদে যোগদান করা।

তানিম ও তাহিয়াত মূল মোটিভ সবার কাছে গোপন রেখে তাঁদের নিয়ে ২০২১ সালের ১৮ জুন নাইক্ষ্যংছড়ি যান। এ সময় ডা. রাফাত, আরিফসহ অন্য সদস্যরা তানিম ও তাহিয়াতের মূল উদ্দেশ্য বুঝতে পারেন। তখন ডা. রাফাত তাঁর বাবা শফিকুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে তাঁর বাবা সেখান থেকে নিরাপদে বাসায় আসার ব্যবস্থা করেন। তানিম ও তাহিয়াত নাইক্ষ্যংছড়িতে অবস্থান করে আরএসএ ও আরএসওর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। তাঁরা যোগাযোগ করতে না পেরে সিলেটের বাড়ি ফিরে আসেন। কিছুদিন পর তাহিয়াত জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করে হিজরত করেন। তদন্তকালে একাধিকবার চেষ্টা করে এবং সোর্স নিয়োগ করেও তাহিয়াতের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।

অভিযোগপত্রে আরো বলা হয়েছে, বাড়িতে অবস্থানকালে আসামি তানিম নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সিলেট অঞ্চলের দায়িত্বশীল মামুনুর রশিদ কাজল ওরফে ডাক্তার কাজলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তখন কাজল তাঁকে আনসার আল ইসলামে যোগ দিতে অনুপ্রাণিত করেন। দাওয়াতি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে জাহিদ ও রিয়াজের সঙ্গে তানিম নিয়মিত যোগাযোগ করেন। এক পর্যায়ে তাঁদের জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামে যোগদানের জন্য দাওয়াত দিলে জাহিদ ও রিয়াজ নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্য হিসেবে যুক্ত হন। আসামি কাজলের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে তাঁর পরামর্শ অনুযায়ী সংগঠনের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে থাকেন তানিম। 

এরই ধারাবাহিকতায় কাজলের নির্দেশে তাঁরা ঢাকায় হিজরত করেন। ঢাকায় নাশকতা ও সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার পরিকল্পনাকালে ২০২২ সালের ১ নভেম্বর রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানাধীন এলাকা থেকে আসামি তানিম, জাহিদ ও রিয়াজ গ্রেপ্তার হন। পরে আসামি তানিম স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান, তাঁর ছেলে ডা. রাফাত এবং সিলেট জামায়াতের শুরা সদস্য আব্দুল বাসেতের ছেলে আরিফের নাম প্রকাশ করেন। তদন্তকালে এ মামলার ঘটনার সঙ্গে আসামি ডা. রাফাত ও আরিফের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া সংগঠনের অন্যতম মাস্টারমাইন্ড মামুনুর রশিদ কাজলের সঙ্গে অনলাইন বা অফলাইনে ডা. রাফাত, আরিফ ও ডা. শফিকুর রহমানের কোনো যোগাযোগ বা সাংগঠনিক সম্পর্কের প্রমাণ তদন্তকালে বা বিশেষজ্ঞের মতামতে মেলেনি। পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদকালে আসামিরা তাঁদের পৃষ্ঠপোষকতায় জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানের নাম প্রকাশ করলেও মামলার তদন্তকালে ঘটনার সঙ্গে তাঁর জড়িত থাকার বিষয়ে প্রমাণ মেলেনি।

ডা. শফিকুর রহমানের আইনজীবী আব্দুর রাজ্জাক কালের কণ্ঠকে বলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে এ মামলায় জামায়াতে ইসলামীর আমির এবং তাঁর ছেলেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

 

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

চীনে স্বাস্থ্যসেবার পরিধি বাড়ছে

চালু হচ্ছে চট্টগ্রাম কুনমিং ফ্লাইট

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
চালু হচ্ছে চট্টগ্রাম কুনমিং ফ্লাইট

চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর কুনমিংয়ের হাসপাতালগুলোতে বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের মানুষদের সহায়তা করতে বন্দরনগর চট্টগ্রাম থেকে কুনমিং রুটে ফ্লাইট চালুর পরিকল্পনা করেছে চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইনস। গতকাল শনিবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

চীন এরই মধ্যে বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসার জন্য ইউনান প্রদেশের রাজধানী কুনমিংয়ের চারটি হাসপাতাল নির্ধারণ করেছে। তবে চড়া বিমানভাড়া শহরটিতে ভ্রমণের পথে বড় বাধা হিসেবে দেখা দিয়েছে।

কুনমিংয়ের সেরা তিনটি হাসপাতালকে বাংলাদেশের রোগীদের চিকিৎসাসেবার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। হাসপাতাল তিনটি হলো দ্য ফার্স্ট পিপলস হসপিটাল অব ইউনান প্রভিন্স; দ্য ফার্স্ট অ্যাফিলিয়েটেড হসপিটাল অব কুনমিং মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি এবং ফাওয়াই ইউনান হসপিটাল, চায়নিজ একাডেমি অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস। চিকিৎসার ধরন, ভিসা প্রক্রিয়া সহজীকরণ, দোভাষী নির্বাচনসহ সামগ্রিক চিকিৎসাসেবার প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে দুই দেশের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা কাজ করছেন।

কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রাম-কুনমিং রুটে সরাসরি ফ্লাইট চালু হলে যাতায়াত ব্যয় ও সময় কমে আসবে।

ফলে আরো বেশিসংখ্যক বাংলাদেশি সহজে চীনের স্বাস্থ্যসেবা নিতে পারবে।

চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, কুনমিংয়ের হাসপাতালে বাংলাদেশিদের জন্য আলাদা ফ্লোর বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, চিকিৎসার খরচ সহনীয়। একজন চীনা নাগরিকের সমান ফিই দিয়ে থাকেন একজন বাংলাদেশি রোগী।

বর্তমানে চায়না ইস্টার্নের ঢাকা-কুনমিং সরাসরি দৈনিক ফ্লাইট আছে। এ ছাড়া প্রতি মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনিবার অতিরিক্ত একটি ফ্লাইট পরিচালনা করে। রাউন্ড ট্রিপ ভাড়া ৩৫ হাজার থেকে ৪২ হাজার টাকা। কুনমিং ভ্রমণ সহজ করতে ঢাকা থেকে কুনমিং রুটে বিমানভাড়া কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকার বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।

চীনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা ভবিষ্যতে বাংলাদেশিদের জন্য আরো স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র উন্মুক্ত করবে।

আগামী এপ্রিল মাসে বাংলাদেশের একদল সাংবাদিককে কুনমিংয়ে পাঠানো হবে সরেজমিনে চিকিৎসার সুবিধাগুলো দেখে আসার জন্য।

গত মাসে প্রথমবারের মতো কয়েক ডজন বাংলাদেশি চিকিৎসার জন্য কুনমিংয়ে যান। তাঁরা সেখানকার হাসপাতালগুলোর মানের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তবে অনেকেই যাতায়াত ব্যয় নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন।

চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ব্যাবসায়িক দেশ। চীন থেকে বাংলাদেশের প্রায় সব শিল্প-কারখানার কাঁচামাল থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের তৈরি পণ্য আমদানি হয়। তাই প্রতিবছরই হাজার হাজার ব্যবসায়ী চীনের বিভিন্ন শহর ভ্রমণ করে থাকেন। তবে দুই দেশের মধ্যে এত দিন সরাসরি বিমানসেবা ছিল না।

কুনমিংয়ে রয়েছে বিশ্বের বিখ্যাত স্টোন ফরেস্ট। কুনমিংকে চীনারা নাম দিয়েছে চিরবসন্তের নগর। সারা বছরই সেখানে ফুল ফোটে। রঙিন থাকে কুনমিংয়ের পথঘাট ও বাসাবাড়ির আঙিনা।

এমনিতে কুনমিং হচ্ছে চীনের ট্রানজিট পয়েন্ট। বাংলাদেশ থেকে যেসব পর্যটক, শিক্ষার্থী বা ব্যবসায়ী চীনের বিভিন্ন প্রদেশে যান, তাঁদের পরদিন বিমানের ফ্লাইট ধরতে প্রথমে কুনমিংয়ে এক রাত অবস্থান করতে হয়।

বিমানে ঢাকা থেকে বাংলাদেশের সবচেয়ে কাছের ইউনান প্রদেশের কুনমিং মাত্র দুই ঘণ্টার পথ, অর্থাৎ প্রায় ১২০০ কিলোমিটার। বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ মায়ানমারের সীমানার পূর্ব পাশেই ইউনানের অবস্থান। চীনের ৪৩টি প্রদেশের একটি ইউনান।

মন্তব্য
সবিশেষ

আফগানি নতুন প্রজন্মের নারীরা বোরকা ছেড়ে আবায়ায় ঝুঁকছেন

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
আফগানি নতুন প্রজন্মের নারীরা বোরকা ছেড়ে আবায়ায় ঝুঁকছেন

নতুন প্রজন্মের আফগান নারীরা বোরকা থেকে আবায়ার দিকে ঝুঁকছেন। আবায়াও ইসলামী নারীদের পছন্দের পোশাক। আবায়ার সঙ্গে থাকে হিজাব, মাথার ওড়না, এমনকি নেকাবও। অথবা বলা যেতে পারে, আফগান আধুনিক নারীরা সৌদি স্টাইলের পোশাক আবায়া অথবা নিকাব-ঘোমটার দিকে ঝুঁকে পড়ছেন।

আফগান নারীরা প্রথাগতভাবে নীল রঙের বোরকা পরেন। এই বোরকার মুখের অংশে আলাদা একটা ঝালর বা পর্দা থাকে।

২০২১ সালে পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর তালেবানরা নারীদের ওপর কঠোর পর্দা প্রথা চালু করে। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত একই আইন চালু ছিল।

তালেবানরা ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক নারীর শরীর ও মুখ ঢাকার নির্দেশনা দিয়েছে। তবে এতে কোনো বিশেষ পোশাক, বিশেষত বোরকার কথা সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়নি। এ কারণে আধুনিক নারীরা বোরকার পরিবর্তে আবায়ার দিকে ঝুঁকছেন। অন্ততপক্ষে তাঁরা উপসাগরীয় দেশগুলোর নারীদের ফ্যাশনের দিকে নজর রেখেই আবায়ার দিকে ঝুঁকছেন বলে মনে করা হচ্ছে।

তরুণ আফগান নারীরা আবায়া পরলেও মাথায় ঠিকই হিজাব পরেন। আর যাঁরা হিজাব পরেন না, তাঁরা মুখে মেডিক্যাল মাস্ক লাগিয়ে ঘর থেকে বের হন। নিদেনপক্ষে সৌদি আবায়ার ওপর নিকাব পরেন, যা তাঁদের চোখ ছাড়া আর সব কিছু ঢেকে রাখে।

রাজধানী কাবুলের ২৩ বছরের নন্দিনী তাহমিনা আদেল বলেন, নতুন প্রজন্মের আফগান নারীরা মনে হয় না বোরকা বেছে নেবেন। ডিজাইন ও কালারের কারণে তাঁরা এটা মানতে অনাগ্রহী।

উল্লেখ্য, তালেবান সরকার মেয়েদের উচ্চশিক্ষার ব্যাপারে অনুদার হওয়ার কারণে তাহমিনা অর্থনীতিতে উচ্চতর ডিগ্রি নিতে পারেননি। তিনি বলেন, আমি আবায়া পছন্দ করি। কারণ এটা আমার কাছে বেশ আরামদায়ক। সূত্র : অ্যারাব নিউজ

মন্তব্য

প্রায় শতভাগ কারখানার বেতন-বোনাস পরিশোধ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
প্রায় শতভাগ কারখানার বেতন-বোনাস পরিশোধ

আন্দোলনের মুখে ঈদের আগে টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিকদের বেতন-বোনাসের তিন কোটি টাকা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম শফিকুজ্জামান। তবে তা মানেননি সাধারণ শ্রমিকরা। গতকাল শনিবারও শ্রম ভবনের সামনে শ্রমিকরা বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে তাঁদের প্রাপ্য বেতন-বোনাসের দাবি জানাতে থাকেন। কিন্তু গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিকদের সমস্যার সমাধান হয়নি।

এই পরিস্থিতিতে আগামী ৮ এপ্রিল আবারও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শ্রমসচিব।

এদিকে তৈরি পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ ও শিল্প পুলিশ জানিয়েছে, প্রায় শতভাগ কারখানার মালিক শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ করেছেন। আর টিএনজেডসহ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানে কাজ করছে সরকার। এদিকে গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শ্রমসচিব জানিয়েছেন, শ্রমিকদের বেতন-বোনাস সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত টিএনজেডের তিন মালিক শ্রম ভবনে নিরাপত্তা হেফাজতে থাকবেন।

এই সংকট সমাধানের পর তাঁরা ছাড়া পাবেন।

বিজিএমইএর তথ্যানুসারে ঈদের আগেই প্রায় শতভাগ কারখানার শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ করা হয়েছে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বিজিএমইএর সদস্য কারখানা দুই হাজার ১০৭টির মধ্যে দুই হাজার ৯৮টি কারখানা ঈদ বোনাস পরিশোধ করেছে, যা প্রায় ৯৯.৫৭ শতাংশ। এ ছাড়া মার্চ মাসের বেতন (১৫-৩০ দিনের) পরিশোধ করেছেএমন কারখানা দুই হাজার ৭৯টি, যা ৯৮ শংতাশের বেশি।

এদিকে শিল্প পুলিশ জানিয়েছে,  ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঈদের বোনাস, মার্চ মাসের বেতন বিজিএমইএসহ অন্য সংগঠনের প্রায় সব শিল্পপ্রতিষ্ঠান পরিশোধ করেছে।

তবে টিএনজেডসহ সাতটি কারখানা বেতন-বোনাস পরিশোধ করতে পারেনি। এই বেতন-বোনাস পরিশোধে বিজিএমইএ, শ্রম মন্ত্রণালয় ও শিল্পাঞ্চল পুলিশ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গার্মেন্টস ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সহসাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর মঈন কালের কণ্ঠকে বলেন, টিএনজেডসহ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধে প্রায় সাড়ে ১৭ কোটি টাকা দরকার। শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম শফিকুজ্জামান ঈদের আগে তিন কোটি টাকা দেওয়ার আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা সেটা মানেননি।

ফলে এর কোনো সুরাহা হয়নি। আমরা আশা করছি সরকার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখবে।

এ প্রসঙ্গে শ্রমসচিব এ এইচ এম শফিকুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, মালিকপক্ষের তিনজনকে হেফাজতে রাখা হচ্ছে। কারখানার যন্ত্রপাতি বিক্রি করে আপাতত শ্রমিকদের পাওনা তিন কোটি টাকা পরিশোধ করা হবে। আগামী ৮ এপ্রিল অফিস খোলার পর এ বিষয়ে পূর্ণ সমাধান দেওয়া হবে।

বিজিএমইএর প্রশাসক আনোয়ার হোসেন বলেন, টিএনজেড ও এসসেইন অ্যাপারেলসএ দুই কারখানার বেতন-ভাতা নিয়ে সমস্যা হয়েছে। টিএনজেডের পরিচালক শনিবার বিকেলের মধ্যে শ্রমিকের পাওনা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এসসেইন অ্যাপারেলসের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। এর বাইরে যেসব কারখানা বেতন বা বোনাস দেয়নি, তারা ছুটির আগেই দেবে।

বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, দুটি কারখানায় বেতন-ভাতা নিয়ে সমস্যা আছে। সেগুলো সমাধানের চেষ্টা চলছে। ৯০ শতাংশ কারখানা ছুটি দিয়ে দিয়েছে। বাকিরা বেতন-ভাতা পরিশোধ করে শনিবার ছুটি দিয়ে দেবে।

 

গাজীপুরে বেতন-বোনাস পাননি ৫ কারখানার শ্রমিকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর জানান, গাজীপুরে বেতন-বোনাস পাননি পাঁচ কারখানার কয়েক হাজার শ্রমিক। ফলে এই শ্রমিকদের ঈদের আনন্দ মাটি হয়ে গেছে। গাজীপুর শিল্প পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুরের জারা কম্পোজিট, মোগরখাল এলাকার এএনজেড অ্যাপারেলস, তিন সড়ক এলাকার স্টাইল ক্রাফট, শ্রীপুরের জৈনা বাজার এলাকার এইচডিএফ অ্যাপারেলস এবং কালিয়াকৈর উপজেলার কামরাঙ্গাচালা এলাকার হ্যাগ নিটওয়্যার গতকাল শনিবার দুপুর পর্যন্ত শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ করেনি।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার এ কে এম জহিরুল ইসলাম বলেন, জারা নিট কম্পোজিট  ও হ্যাগ নিটওয়্যার কারখানার মালিক লাপাত্তা। এতে বেতন ও ঈদ বোনাস থেকে বঞ্চিত হয়েছেন জারার ৪০০ এবং হ্যাগ নিটওয়্যারের ৩০০ শ্রমিক। এইচডিএফ অ্যাপারেলসের দুই হাজার ৩০০ শ্রমিকও বেতন-বোনাস থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের আশ্বাস দিয়েছে, ঈদের পর বেতন-বোনাস পরিশোধ করবে। শ্রমিকরা বিষয়টি মেনে নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।

 

মন্তব্য
আপন ভুবন বৃদ্ধাশ্রম

স্মৃতি হাতড়ে সান্ত্বনা খোঁজেন

মোবারক আজাদ
মোবারক আজাদ
শেয়ার
স্মৃতি হাতড়ে সান্ত্বনা খোঁজেন
এই বৃদ্ধাশ্রমেই কাটে তাঁদের দিনরাত। ঈদও কাটবে এখানেই। ইফতারের আগে মোনাজাত করছেন বাসিন্দারা। গত শুক্রবার রাজধানীর উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ২০ নম্বর রোডে আপন ভুবনে। ছবি : কালের কণ্ঠ

ঈদ মানে আনন্দ। ঈদ মানে পরিবার-পরিজন নিয়ে আনন্দ-খুশি ভাগাভাগি করে নেওয়া। তবে ঈদের এই আনন্দ-খুশিতে অংশ নেওয়ার সুযোগ হয় না অনেকের। উল্টো ঈদ এলে বিষাদ নেমে আসে তাঁদের জীবনে, দুই চোখ বেয়ে জল নামে।

হাতড়ে বেড়ান পুরনো স্মৃতি। এই হতভাগ্য মানুষগুলোর মধ্যে রয়েছেন বৃদ্ধাশ্রমে বসবাস করা বয়স্করা। ঈদ ঘিরে এই মানুষগুলোর জন্য ভালো মানের খাবার ও পোশাক বরাদ্দ থাকলেও তাঁদের পাশে আপনজন না থাকায় কোনোভাবেই দুঃখ ঘোচে না। তবে বৃদ্ধাশ্রমে কর্তব্যরত ব্যক্তিরা আদর ও সেবা দিয়ে পাশে থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন এই মানুষগুলোকে হাসিখুশি রাখতে।
গত শুক্রবার রাজধানীর উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ২০ নম্বর রোডে আপন ভুবন বৃদ্ধাশ্রম-এর কর্মী এবং সেখানে বসবাস করা কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। আপন ভুবন বৃদ্ধাশ্রমে পরিবারহীন, সন্তানহীন, মানসিক ভারসাম্যহীন এবং সড়কে যেসব অসহায় বৃদ্ধা অনাদরে অসহায়ভাবে পড়ে ছিলেন তাঁদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে ২৯ জন বৃদ্ধা রয়েছেন।

বৃদ্ধাশ্রমটির একজন বাসিন্দা জোহরা বেগম (৮০)।

তাঁর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তিনি সাত সন্তানের জন্ম দিলেও একে একে শৈশবেই সবাই মারা যায়। স্বামীও মারা গেছেন। শেষে ঘরহারা হয়ে বেশ কিছুদিন সড়কে থেকে অবশেষে এই বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় মেলে। এখন আর তাঁর কিছু মনে পড়ে না। তবে পরিবার-পরিজন হারানোর আক্ষেপ কোনোভাবেই দূর হচ্ছে না।

জোহরা বেগমের মতো আপন ভুবন বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় পেয়েছেন রেনু বেগম। তাঁর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, পুরান ঢাকার ইসলামবাগ এলাকায় তিনি তিন ছেলে, এক মেয়ে আর স্বামীর সঙ্গে থাকতেন। পারিবারিক শত্রুতার জেরে সব কিছু হারাতে হয় তাঁকে। স্বামী মারা যাওয়ার পর কিছুদিন মানুষের বাসাবাড়িতে কাজ করেছেন। এরপর অসুস্থ হলে হাসপাতালে তাঁকে একা তিন মাস কাটাতে হয়। পরে যে বাসায় ভাড়া থাকতেন, সে বাসার লোকজন আপন ভুবন বৃদ্ধাশ্রমের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁকে এখানে পাঠান। রেনু বেগম জানান, এখানে তিনি অনেক ভালো আছেন। এখানে আসার পর তাঁর নিঃসঙ্গতা দূর হয়েছে। কিন্তু তিনি কিছুতেই নিজের সংসার, সন্তান ও স্বামীর কথা ভুলতে পারছেন না।

আপন ভুবন বৃদ্ধাশ্রমের প্রধান কো-অর্ডিনেটর জারা জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, এই মায়েদের তো আপনজন বলতে আমরাই। আমাদের সঙ্গেই তাঁরা ঈদ করবেন। ঈদের দিন সেমাই, পিঠা, পোলাও-রোস্টসহ একটি পরিবারে সাধারণভাবে যা যা আয়োজন থাকে আমরাও এখানে এই মায়েদের জন্য সেসবের আয়োজন করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করি। ঈদের আগের দিন এই মায়েদের হাতে মেহেদি পরাব, ঈদের দিন নতুন শাড়ি, ম্যাক্সির সঙ্গে ইমিটেশনের গহনা পরিয়ে তাঁদের সাজাব। আর ঈদের দিন আবহাওয়া ভালো থাকলে এবং এই মায়েদের শরীর ভালো থাকলে তাঁদের পাশের পার্কে ঘুরাতে নিয়ে যাব।

ঈদের দিন এই অসহায় বৃদ্ধাদের মানসিক অবস্থা কেমন থাকে, জানতে চাইলে জারা জামান বলেন, এই মায়েরা আক্ষেপ করেন, যদি তাঁদের স্বামী-সন্তান থাকত, তাহলে তাঁদের এখানে আশ্রয় নিতে হতো না। আবার সন্তান থাকলে নিশ্চয় তাঁদের দেখতে আসত। ভালো মানের খাবার, পোশাক, আমাদের শতভাগ আদর-ভালোবাসা দেওয়ার পরও অনেকের পরিবার না থাকার আক্ষেপ ঘুচছে না। এ কারণে আমরা তাঁদের বেশি করে সঙ্গ দেওয়ার চেষ্টা করি, যাতে এই মায়েরা মন খারাপ না করেন।

প্রতিষ্ঠানটির মূল উদ্যোক্তা রুমি রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, শুরুতে ২০২২ সাল থেকে আমরা চারজন নিঃসন্তান নারী নিয়ে এই বৃদ্ধাশ্রম পরিচালনা শুরু করি। বর্তমানে এই সংখ্যা ২৯। মা-বাবাকে নিজের সন্তানরা যেভাবে ভালোবাসে, আদর-যত্নে রাখে, আমরাও এখানে থাকা মায়েদের সেভাবে রাখার চেষ্টা করছি। যেকোনো উৎসবের সময় আমাদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করি।

প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা জানান, বর্তমানে এখানে থাকা ২৯ জন মায়ের মধ্যে বেশির ভাগ মানসিক ভারসাম্যহীন। তাঁদের ৮০ শতাংশ প্রেসার, ডায়াবেটিসসহ নানা রোগে আক্রান্ত। এঁদের মধ্যে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মা-ও রয়েছেন। এই মায়েদের ঈদ উৎসব কাটে পরিবারের সদস্যদের কাছে না পাওয়ার কষ্ট ও অভিমান বুকে চেপে।

জানা গেছে, আপন ভুবন বৃদ্ধাশ্রম প্রতি মাসে এই ময়েদের ভরণ-পোষণে ব্যয় করে প্রায় ছয় লাখ টাকা। এই ব্যয় নিঃসন্তান চার নারীসহ তাঁদের পরিবার ও পরিচিতজনরা বহন করেন। কিছু অর্থ অনুদানের মাধ্যমেও পাওয়া যায়। মাঝেমধ্যে কেউ কেউ এক বেলা খাবার সরবরাহ কিংবা কেউ কিছু কাপড়চোপড় দিয়ে যান। তবে রমজান মাসে কিছু শাড়ি ও জাকাত পাওয়া যায়। তবে জাকাতের পরিমাণ আরো বাড়লে এই মায়েদের সেবায় আরো কিছুটা বেশি ব্যয় করা যেত।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ