বাংলা নতুন বছরকে বরণ করতে রাঙামাটির কাউখালীর ঘাগড়ায় শুরু হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের বর্ষবরণ উৎসব বৈসাবি। উৎসবটি ত্রিপুরাদের কাছে বৈসুব, বৈসু বা বাইসু, মারমাদের কাছে সাংগ্রাই এবং চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যাদের কাছে বিজু নামে পরিচিত। বৈসাবি নামকরণও করা হয়েছে এই তিনটি উৎসবের প্রথম অক্ষর গুলো নিয়ে। বৈ শব্দটি ত্রিপুরাদের বৈসু থেকে, সা শব্দটি মারমাদের সাংগ্রাই থেকে এবং বি শব্দটি চাকমাদের বিজু থেকে।
এই তিন শব্দের সম্মিলিত রূপ হলো ‘বৈসাবি’।
শুক্রবার (১০ এপ্রিল) থেকে নানা বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে বৈসাবি'র আমেজ। সকালে কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া কলেজ মাঠে, ঘাগড়া এলাকাবাসীর আয়োজনে বিজু, সাংগাই, বৈসুক, বিষু ও বিহু উদ্যাপনের কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন রাঙামাটি জেলা পরিষদের সদস্য লুৎফুন্নেসা বেগম।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাজী আতিকুর রহমান, উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোতালেব মেম্বার, বিএনপি নেতা ও বৈসাবি অনুষ্ঠান উদ্যাপন কমিটির সভাপতি অর্জুন মনি চাকমা, ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চন্দ্রা দেওয়ান, সাবেক ইউপি সদস্য শান্তি মনি চাকমাসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
দিনব্যাপী এই উৎসবে সকালে ফিতা কেটে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়। এরপর পরই স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনায় চাকমা গানের সাথে নৃত্য। এরপর ঘাগড়া কলেজ মাঠ থেকে বের করা হয় বর্ণাঢ্য র্যালির। র্যালিটি রাঙামাটি চট্টগ্রাম প্রধান সড়ক হয়ে ঘাগড়া বাজার ঘুরে কলেজ মাঠে এসে শেষ হয়।
র্যালি শেষে আগত অতিথি দর্শনার্থীদের পাহাড়ের ঐতিহ্যবাহী খাবার পাজন পরিবেশন করা হয়। শুক্রবার বিকেলে চাকমাদের ঘিলা খেলা, শিক্ষামূলক চাকমা নাটিকা উপস্থাপন করা হয়। সন্ধ্যার পর আয়োজন করা হয় মনোগ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের।
আয়োজন কমিটির সভাপতি অর্জুন মনি চাকমা বলেন, ‘বর্ষবরণ আমাদের প্রধান সামাজিক উৎসব। আমরা চাই সকল সম্প্রদায়ের মানুষ মিলে মিশে সম্প্রীতি রক্ষাকরে বসবাস করে যেতে।
এই উৎসবের মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মকে সম্প্রীতির মিল বন্ধনের বিষয়ে অবহিত করা আমাদের উদ্দেশ্য।’
চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যাগণ এ উৎসবটি ৩দিন ধরে পালন করে। চৈত্রের শেষ ২দিন ও বৈশাখের প্রথম দিন। চৈত্রের শেষ দিনটি এই উৎসবের মূল আকর্ষণ। এ দিন ঘরে ঘরে পাঁচ প্রকারের সবজি সহকারে বিশেষ খাদ্য পাজন রাঁধা হয়। তারা বিশ্বাস করেন, এই পাজনের দৈব গুণাবলি আগত বছরের অসুস্থতা ও দুর্ভাগ্য দূর করবে। তরুণীরা পানিতে ফুল ভাসিয়ে দেয়।