লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষে বিএনপি কর্মী সাইজ উদ্দিন দেওয়ান নিহতসহ হামলার ঘটনায় ১৭৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এতে উপজেলা বিএনপির সদস্য ফারুক কবিরাজসহ ২৬ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ১৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) দুপুরে রায়পুর থানার ওসি নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এদিকে উপজেলার উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের দু’পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত থাকায় বিএনপির ১৫ নেতাকর্মীকে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
একইসঙ্গে উপজেলা কৃষক দলের সদস্য সচিব জিএম শামীমকে বহিষ্কারের জন্য জেলা কমিটি কাছে সুপারিশ করেছে উপজেলা বিএনপি। রায়পুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জেডএম নাজমুল ইসলাম মিঠু বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আরো পড়ুন
গোয়ালন্দ পৌরসভার সাবেক মেয়রের জামিন নামঞ্জুর
বহিষ্কৃত নেতাকর্মরা হলেন- উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি কর্মী মেহেদী কবিরাজ, ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি এবাদ উল্যা গাজী, ইউনিয়ন বিএনপি নেতা ফারুক সর্দার ওরফে ফারুক কবিরাজ, ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সফিক রাঢ়ী, ৮ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আরিফ, ৭ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দল কর্মী ফারুক গাজী ও রায়হান, ৬ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দল কর্মী আল আমিন কবিরাজ, ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মানিক আহমেদ তারেক, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ওমর আলী হাওলাদার, ৬ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী নজরুল ইসলাম, ইউনিয়ন যুবদল কর্মী শরিফ বাগ, শাহজাহান মাঝি ও ইউনিয়ন কৃষক দলের সদস্য সচিব শাহ আলী। এরআগে ২০ ডিসেম্বর প্রথম সংঘর্ষের জের ধরে ইউনিয়ন বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের সব কমিটি বিলুপ্ত করা হয়।
পুলিশ জানায়, বুধবার (৯ এপ্রিল) রাতে নিহত স্পেন প্রবাসী সাইজ উদ্দিনের ভাই হানিফ দেওয়ান বাদি হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এতে বিএনপি নেতা ফারুক কবিরাজ ও তার ভাই মেহেদী কবিরাজসহ ২৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।
আরো পড়ুন
বিএনপি কার্যালয় ভাঙচুর, ৮ আ. লীগ নেতার জামিন নামঞ্জুর
বিএনপি নেতা নাজমুল ইসলাম মিঠু বলেন, ‘উপজেলা বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল, তাঁতীদলসহ সব সহযোগী সংগঠনের যৌথ সভায় সংঘর্ষে জড়িতদের আজীবন বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়। একইসঙ্গে জড়িত সব নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
’
রায়পুর থানার ওসি নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, ‘হত্যাসহ হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ কাজ করছে। এ ছাড়া অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ সতর্ক রয়েছে।’
প্রত্যক্ষদর্শী ও দলীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর উত্তর চরবংশী ইউনিয়নে উপজেলা কৃষক দলের সদস্য সচিব জিএম শামীম ও উপজেলা বিএনপির সদস্য ফারুক কবিরাজের লোকজনের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়।
এর জের ধরে দুই দফায় শামীম ও ফারুকের নেতাকর্মীদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এতে ওই ইউনিয়ন বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, কৃষক দলসহ সব অঙ্গসংগঠনের কার্যক্রম বিলুপ্ত করা হয়।
আরো পড়ুন
গোয়ালন্দ পৌরসভার সাবেক মেয়র কারাগারে
গত ৭ এপ্রিল আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বেড়ি ও বাবুরহাট এলাকায় কৃষক দল নেতা শামীম গাজী ও ফারুক কবিরাজের অনুসারী হিসেবে পরিচতি ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক গাজীর লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে একজন নিহত ও অন্তত ১৫ জন আহত হন। ঘটনার সময় বিল্লাল মাঝি, আবু তাহের মাঝি, জিহাদ হোসাইনের বসতবাড়িতে শামীমের অনুসারীরা ভাঙচুর ও লুটপাট করে।
এর জের ধরে গত মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) ফের হামলা চালিয়ে শামীম গাজীর অনুসারীরা ফারুক কবিরাজের লোকজনের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করে। পরে স্থানীয়রা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। দুই পক্ষের দফায় দফায় সংঘর্ষ, হামলা-ভাঙচুর, হত্যা, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় এলাকায় থমথমে অবস্থা এখনো বিরাজ করছে।