<p>আমরা টেকনোলজির কাছে বর্তমানে বন্দি। টেকনোলজি এবং এআই আমাদের প্রতিনিয়ত নজরদারি করছে। আমরা কী করছি, কী বলছি এবং কোথায় যাচ্ছি ; সব কিছুর রেকর্ড রয়েছে তাদের কাছে। আমরা টেকনোলজি এবং এআইয়ের হাতের একটা পুতুল এই বর্তমান সময়ে। পুতুল বললেও ভুল হবে, আমরা মূলত একটা পণ্য। আর বর্তমান সময়ের এই টেকনোলজির বেড়াজাল নিয়েই নির্মিত হয়েছে বলিউড ফিল্ম ‘কন্ট্রোল’।</p> <p>নেটফ্লিক্সে সদ্য রিলিজ পেয়েছে বিক্রমাদিত্য মোতয়ানির নির্মিত চলচ্চিত্র ‘কন্ট্রোল’ । আমাদের বর্তমান সময়ের আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI)-এর ইতিবাচক এবং নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে নির্মিত এই ছবিটি। নির্মাতা বিক্রমাদিত্য এআই-এর নেতিবাচক দিকটাকেই মূলত ফোকাসে রেখে ‘কন্ট্রোল’ চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য সাজিয়েছেন। আর এটা করতে গিয়ে অনন্যা পাণ্ডে ও বিহান সম্মতের লাভস্টোরিকে মূল গল্প হিসেবে রেখেছেন নির্মাতা। ছবিটি মুক্তির পর বেশ প্রশংসা কুড়াচ্ছে দর্শকদের।</p> <p>ছবির গল্পে দেখা যায়, নলীনি/নেলা এবং জো দম্পতি। তারা মূলত সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার। তারা পণ্য বিক্রির পাশাপাশি তাদের জীবনের মুহূর্তগুলো সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করে। বেশ জনপ্রিয় এই জুটি সোশ্যাল মিডিয়ায়। একদিন নলীনি তার স্বামী জোকে এক মেয়েকে চুমু দিতে দেখে। সেটা দেখার পর নলীনি জোর সঙ্গে ঝগড়া করে বসে। তো তারপর এই দুঃখ ভুলতে নলীনি তার এক ভক্তের সাজেশনে ‘কন্ট্রোল’ নামক এআই অ্যাপের দ্বারস্থ হয়। নলীনি এই অ্যাপ ব্যবহার করে জো-এর সঙ্গে থাকা তার ছবিগুলো থেকে জোকে মুছে ফেলতে সেই এআইকে নির্দেশনা দেয়। এইআই তার টেকনোলজি ব্যবহার করে অনলাইনে তাদের একসঙ্গে থাকা সব ছবি থেকে জোকে মুছে ফেলে। কিন্তু বিপত্তি ঘটে তখন! যখন ছবিগুলো থেকে জোকে মুছে ফেলার পর বাস্তবতা থেকেও জো নিখোঁজ হয়ে যায়। অনলাইনে তাকে মুছে ফেলার সঙ্গে বাস্তব দুনিয়া থেকে জোর হারিয়ে যাওয়া, তার কারণ মূলত কী?</p> <p>এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়েই অবাক হবেন আপনি। এআইআর টেকনোলজি আমাদের কতটা গিলে খেয়েছে সেটা আঁচ করতে পারবেন এই ছবির দ্বিতীয়ার্ধে। বিক্রমাদিত্য মোতাওয়ানে মূলত, এই গল্পের আড়ালে এই প্রজন্মের মনস্তত্ত্বকে তুলে ধরতে চেয়েছেন। এবং সেদিক থেকে সফলও তিনি। তবে এই ছবির সবচেয়ে বড় সমস্যাই হলো অভিনয়। অনন্যা পাণ্ডে ও বিহান কেউই চিত্রনাট্যের প্রয়োজন মেটাতে পারেনি, বরং তাঁরা দুজনই বেশ দুর্বল। অনন্যার খুব ভালো সুযোগ ছিল এই গল্পে ভালো অভিনয় দেখানোর; কিন্তু সেই সুযোগটা তিনি হারিয়েছেন বলা চলে। এত ভালো গল্পে যে অভিনয়টা তার কাছ থেকে দর্শক প্রত্যাশা করেছে, সেটা ব্যর্থ বলছেন অনেকে। তবে বিক্রমাদিত্যের নির্মাণ বরাবরের মতোই ভালো ছিল। যদিও অভিনয়শিল্পীদের ওইভাবে কাজে লাগাতে পারেননি বলেই মন্তব্য অনেকের।</p> <p>ছবিটির সিনেমাটোগ্রাফি বেশ ভালো এবং বলিউডের জন্য ইউনিক বলা যায়। আবহসংগীতও চিত্রনাট্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য ছিল। ‘কন্ট্রোল’ ছবির মূল হিরো হচ্ছে চিত্রনাট্য। আপনাকে গল্প এবং চিত্রনাট্যের জন্য হলেও ছবিটি দেখা উচিত। এআইয়ের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী যে বিপ্লব শুরু হয়েছে ইতিমধ্যে; সেই বিষয়টা নির্মাতা সামনে এনেছেন এই ছবিতে। পাশাপাশি এআইয়ের সুফল ও কুফলকেও খুব সুন্দরভাবে আলাদা করেছেন নির্মাতা।</p> <p>আসলে ‘কন্ট্রোল’, কন্ট্রোলে থাকার ও কন্ট্রোলের বাইরে চলে যাওয়ার গল্প বলে। ছবিটি দর্শক হিসেবে আমাদের সবার দেখা উচিত। আমাদের অনেক কিছু জানার আছে এবং বোঝার আছে এই কন্ট্রোল ছবিটি থেকে। যদিও এই ছবিতে টেকনোলজির মাত্র সিকি ভাগ বিষয়ই উঠে এসেছে, কিন্তু তারপরও ছবিটি দেখা দরকার নিঃসন্দেহে। নেটফ্লিক্সে রয়েছে ছবিটি, দেখে নিতে পারেন সময় করে।</p>