<p>বর্ষীয়ান সংগীতজ্ঞ মুত্তালিব বিশ্বাস। সংগীতের সঙ্গে রয়েছেন আট দশক ধরে। নব্বই বছর বয়সী এই শিল্পী শুক্রবার গান পরিবেশন করেছেন জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে। তার সঙ্গে কথা বলেছেন সুদীপ কুমার দীপ।</p> <p><strong>কেমন আছেন?</strong><br /> এই তো ভালো, সুস্থ আছি।</p> <p><strong>নব্বই বছর বয়সে এসেও সংগীত পরিবেশন করে চলেছেন। নিশ্চয়ই নিয়মিত রেওয়াজ করেন?</strong><br /> না। অনেক দিন হলো গান থেকে দূরেই আছি। বলতে পারেন এক বছরের বেশি। এবার দেশে ফেরার পর কাজী রওনাক হোসেন বারবার বলছিল, গানের একটা অনুষ্ঠান আয়োজন করবে। ওর পত্রিকা ‘সরগম’-এ নিয়মিত লিখি। সম্পর্কটাও দারুণ। তাই না করতে পারলাম না। ভাবলাম, নব্বই বছর বয়সী শিল্পীর গান যারা শুনতে আসবেন তারা নিশ্চয়ই ভুলভ্রান্তি মেনে নিয়েই শুনবেন। আসলে এত বছর বয়সে গাইতে গেলে একটু-আধটু ভুল হবেই। ২৯ নভেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে অনুষ্ঠানটি হয়েছিল। দেখলাম, শ্রোতারা সেটা মেনে নিয়েই আমার গান শুনলেন, মুগ্ধতা ছড়ালেন।</p> <p><strong>সব ধরনের গানেই আমরা আপনাকে পেয়েছি। ব্যক্তিগতভাবে কোন ঘরানার গান আপনাকে বেশি টানে?</strong><br /> রেডিও ও টেলিভিশনে আমি রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী হিসেবে তালিকাভুক্ত ছিলাম। তবে নজরুলগীতি, ভক্তিরসাত্মক, আধুনিক—সব ধরনের গানই গেয়েছি। শিল্পীর আসলে ব্যক্তি পছন্দ থাকা উচিত নয়। তার কণ্ঠে শ্রোতারা যে গান শুনতে চাইবেন সেটাই গাওয়া উচিত। আমিও সেটা করেছি। ফলে আলাদা করে বলার কিছু নেই।</p> <p><strong>সংগীত গুরুমুখী বিদ্যা</strong><strong>—</strong><strong>কথাটার সঙ্গে আপনি কতটা একমত?</strong><br /> একটা সময় এটা যতটা সত্য ছিল এখন অতটা সত্য নয়। আমাদের সময় এতগুলো টিভি চ্যানেল, রেডিও বা প্রযুক্তি ছিল না। ফলে গুরুর কাছেই শিখতে হতো। আর কোনো উপায়ও ছিল না। এখন তো টিভি চ্যানেলে গান বিষয়ক অনেক অনুষ্ঠান হয়। ইউটিউবেও অনেকে শেখায়। ফলে সরাসরি গুরুর কাছে না গেলেও চলে। তবে একটা কথা, আপনি অনলাইনে শিখলেন, চর্চাও করলেন; সেটা সঠিক হচ্ছে কি না তা বলার জন্যও কিন্তু একজন লাগবে। উচ্চারণ ঠিক আছে কি না, সুর লাগছে কি না, সেটা গুরুর মতো কেউ একজন না থাকলে বলবে কে?</p> <p><strong>সংগীতবিষয়ক বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন। নতুন কোনো বই লিখেছেন?</strong><br /> না। আসলে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি। ‘সংগীত ভাবনা’, ‘সংগীত বিতর্ক’ ও ‘মন্দ্রমধ্যতার’ নামে তিনটি বই লিখেছিলাম। খুব একটা বিক্রি হয়নি। এখন তো সংগীতের ওপর পড়াশোনা করা মানুষই পাওয়া যায় না। কী হবে লিখে!</p> <p><strong>পরের প্রজন্মের শিল্পীদের মধ্যে কার গান আপনার মনে প্রশান্তি এনে দেয়?</strong><br /> সবাইকে তো চিনি না। আবার অনেক টিভি চ্যানেল। কার গান কখন হয় সেটাও জানি না। তবে যে কয়েকজনের গান আমি শুনেছি, ভালো লেগেছে। আলাদা করে নাম বলতে চাই না। অনেকেই ভালো করছে। তাদের চেষ্টা আছে।</p> <p><strong>আট দশক ধরে গানের সঙ্গে আছেন। দীর্ঘ এই সময়ে গানের পরিবর্তন নিয়ে যদি বলতেন...</strong><br /> ফ্যাশন যেমন চেঞ্জ হয়, গানের ক্ষেত্রেও তাই। অনেকে বলেন, এখনকার গানের মান ভালো নয়। কথায় আগের মতো কাব্য নেই, সুরেও নেই মাধুর্যতা। আমি তাদের সঙ্গে একমত নই। এখনকার শ্রোতারাই হয়তো এ ধরনের গান পছন্দ করেন বলেই শিল্পীরা গাইছে, গীতিকাররা লিখছে, সুরকাররা সুর করছে। বাইরের দেশেও তো তাই হচ্ছে। পাশ্চাত্যের গানে কি আগের সেই মেলোডি আছে? নেই। সময়কে তো অস্বীকার করা যাবে না। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। আমাদের সময় শ্যামল মিত্র ছিলেন, জগন্ময় মিত্র ছিলেন। দেশে ছিলেন সোহরাব হোসেন, খালিদ হোসেন। তাদের কণ্ঠে যে দরদ ছিল এখন সেটা খুঁজতে গেলে তো হবে না।</p> <p><strong>দীর্ঘদিন ধরে নিউইয়র্কে বসবাস করছেন। সেখানে বাঙালি কালচারটা কতখানি প্রতিষ্ঠা পেয়েছে?</strong><br /> গত এক দশকে অনেকখানি এগিয়েছে। এখন নিয়ম করে, ঘটা করে পহেলা বৈশাখ পালিত হয়। পৌষ পার্বন হয়। বাঙালি সংস্কৃতির প্রতি আমেরিকানরাও আকৃষ্ট হচ্ছে। এটা ভালো দিক। সত্যি বলতে, প্রবাসীদের মধ্যেই কিন্তু দেশপ্রেমটা বেশি।</p> <p><strong>এবার দেশে ফিরে কী কী পরিবর্তন দেখলেন?</strong><br /> জুলাইয়ের ৬ তারিখ এসেছি। এরপর তো বিপ্লব শুরু হয়ে গেল। ৫ আগস্ট সরকার পতন। এখন অন্তর্বর্তী সরকার এসেছে। তারা আপ্রাণ চেষ্টা করছে দেশের ভালোর জন্য। এই তো! আপনারা যা দেখছেন আমিও তাই দেখছি।</p> <p><strong>কত দিন দেশে থাকবেন?</strong><br /> এখনো ঠিক করিনি। আপাতত আছি কয়েক দিন, যাওয়ার কথা এখনো ভাবিনি।</p> <p><strong>অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।</strong><br /> আপনাকেও ধন্যবাদ। সবার জন্য শুভকামনা।</p>