[জন্ম থেকেই সত্যিকারের বন্ধুর মতো বাংলাদেশের পাশে ছিল কিউবা। বঙ্গবন্ধুর কাছে ৫০ লাখ মার্কিন ডলারের পাটজাত দ্রব্য কিনে ফিদেল কাস্ত্রো। কিউবার সঙ্গে বাণিজ্যে লিপ্ত কোনো দেশকে পিএল ৪২০ সহায়তা দেওয়া হতো না। তাই বাংলাদেশে খাদ্য সহায়তা বাতিল করে যুক্তরাষ্ট্র, ফিরিয়ে নেয় খাদ্যবাহী জাহাজ।
মাথাটা একটু তেরছা করে ঘুরিয়ে কাস্ত্রো স্লোগান দিলেন ‘জয় বাংলা’
- মুজিব-কাস্ত্রো, আলজিয়ার্স ১৯৭৩
কালের কণ্ঠ অনলাইন

কটেজের গাড়িবারান্দায় সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি আর কালো মুজিব কোট পরে অভ্যর্থনার জন্য দাঁড়িয়ে স্বয়ং বঙ্গবন্ধু। হাতে জ্বলন্ত পাইপ।
বিশেষভাবে নির্মিত বুলেটপ্রুফ লিমুজিনে কাস্ত্রো এসে হাজির হলেন, তাতে জনা আটেক দেহরক্ষী। ড্রাইভারের পাশে দুজন এবং একেবারে পেছনের সিটে চারজন। আর মধ্যে যেখানে কমরেড কাস্ত্রো বসে তারও দুই পাশে দুজন।
গালভর্তি চাপদাড়ি, মাথায় গেরিলা টুপি আর পরনে জলপাই রঙের আধাসামরিক পোশাক। প্রায় ছয় ফুট লম্বা ফিদেল কাস্ত্রো যখন চুরুট হাতে গাড়ি থেকে নেমেই সহাস্য বদন বঙ্গবন্ধু দাঁড়িয়ে, তখন অমায়িক হাসি উদ্ভাসিত হলো তাঁর মুখে। এরপর পরস্পর উষ্ণ আলিঙ্গন আর চুম্বন।
ইংরেজি ভাষায় কাস্ত্রোর বিশেষ দখল নেই।
এই আলোচনার ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম। তাই কয়েক লাইনের নোট আর স্মরণশক্তির ওপর নির্ভর করে এই আলোচনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশবিশেষ পাঠকদের সমীপে উপস্থাপন করলাম।
কাস্ত্রো : এক্সিলেন্সি, আপনি বোধ হয় চিলির বিপ্লবী প্রেসিডেন্ট আলেন্দের সর্বশেষ অবস্থার কথা অবগত আছেন। বিদেশি ষড়যন্ত্রে তাঁর সরকারের পতন এখন যেকোনো মুহূর্তে হতে পারে। এক্সিলেন্সি, এ প্রেক্ষাপটে আপনাকে অত্যন্ত আপনজন মনে করেই আজ কয়েকটা কথা বলব।
মুজিব : এক্সিলেন্সি, আপনি নির্ভয়ে বলতে পারেন। আমি জানি যে আপনি হচ্ছেন আমাদের অকৃত্রিম শুভাকাঙ্ক্ষী এবং বন্ধু।
কাস্ত্রো : বাংলাদেশ এবং ভারত থেকে আমরা যেসব খবর পাচ্ছি, তাতে এ দুটি দেশের অবস্থা খুব একটা সুবিধার মনে হচ্ছে না। দুটি দেশেই সাম্রাজ্যবাদী এজেন্টরা খুবই তত্পর।
মুজিব : এক্সিলেন্সি, এত ভূমিকা না করে আসল কথা বললে আমি খুশিই হব।
কাস্ত্রো : এক্সিলেন্সি, তাহলে শুনুন। চিলির প্রেসিডেন্ট আলেন্দের মতো আমরা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী মুজিবকেও খরচের খাতায় রেখে দিয়েছি।
মুজিব : কমরেড, হঠাত্ এ কথা বলছেন কেন?
কাস্ত্রো : একটি পরাজিত প্রশাসনকে আপনি বাংলাদেশে আইনসংগত করেছেন।
মুজিব : এক্সিলেন্সি, আপনি জানেন বাংলাদেশ আয়তনে একটা ক্ষুদ্র দেশ এবং একাত্তরের যুদ্ধে ভয়ংকরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। তাই বাংলাদেশকে পুনর্গঠনের জন্য আমাদের অভিজ্ঞ ঝানু ব্যুরোক্রেট প্রয়োজন। এ জন্যই আমি পাকিস্তানি আমলের অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের বাংলাদেশের প্রশাসনে বসিয়েছি।
কাস্ত্রো : বেয়াদবি নেবেন না এক্সিলেন্সি। এদের প্রশাসনিক অভিজ্ঞতার কথা বলছেন? তাদের কী অভিজ্ঞতা আছে? এসব অভিজ্ঞতা এবং পরামর্শের জন্যই তো যুদ্ধে পরাক্রমশালী পাকিস্তান হেরেছে। আপনার মুক্তি ছেলেরা? কোনো অভিজ্ঞতা নেই। লড়াই, লড়াই আর লড়াই—বিজয় ছিনিয়ে আনল।
মুজিব : তাহলে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে পুনর্গঠনের কাজ করব কিভাবে?
কাস্ত্রো : আইনজীবীদের আনুন, সাংবাদিকদের আনুন, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের আনুন, ডাক্তারদের আনুন, প্রকৌশলীদের আনুন, অধ্যাপকদের আনুন—এদের প্রশাসনে বসান। তারা ভুল করবে, ভুল করে শিখবে, কিন্তু ষড়যন্ত্র করবে না। ঈশ্বরের দোহাই, আপনার মুক্তি ছেলেদের আরো দায়িত্ব দিন, তাদের পুরো বিশ্বাস করুন। না হলে আপনি শেষ।
মুজিব : কমরেড, সত্যি বলতে কি, গুটিকয়েক আঙুলে গোনা দালাল কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করে বাকি অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের সিনিয়রিটি দিয়ে দায়িত্বপূর্ণ পদে বসিয়েছি। আমার তো ধারণা, এদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে।
কাস্ত্রো : দুনিয়ার কোথাও যুদ্ধে পরাজিত প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নতুন প্রশাসনে আর দায়িত্ব দেওয়া হয় না। বাংলাদেশে আপনার মহানুভবতায় ওরা প্রাণে রক্ষা পেয়েছে, এই-ই তো যথেষ্ট। যুদ্ধোত্তর দেশে তো এ ধরনের কর্মকর্তা পুনর্বাসনের প্রশ্নই উঠতে পারে না। দেখুন না সাম্রাজ্যবাদী যুক্তরাষ্ট্রেও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের পরাজয় হলে উচ্চপদস্থ কর্মচারী, এমনকি রাষ্ট্রদূতদের পর্যন্ত বিদায় নিতে হয়।
মুজিব : আমার তো এখন একমাত্র চিন্তা বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে কিভাবে দ্রুত পুনর্গঠন করা সম্ভব।
কাস্ত্রো : তাহলে কিউবার দৃষ্টান্ত দিয়েই বলছি। মহান বিপ্লবের অব্যবহিত পর কমরেড চে গুয়েভারা স্বয়ং কিউবার পরাজিত প্রশাসনকে নিশ্চিহ্ন করে একেবারে নতুন করে ঢেলে সাজিয়ে দিয়েছেন। আজকের দিনে কিউবার মাটিতে অন্তত সাবেক বাতিস্তা সরকারের কোনো আমলার চিহ্ন মাত্র খুঁজে পাবেন না। এ জন্যই কিউবার ঠিক ঘাড়ের ওপরে মহাপরাক্রমশালী মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের অবস্থান হওয়া সত্ত্বেও আমার বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্রই সফল হচ্ছে না। এই যে দেখছেন, আমার কমরেড দেহরক্ষী। কেউই এঁদের কাউকে আমার বিরুদ্ধে দলে ভেড়াতে পারবে না। কিছুতেই এঁদের কিনতে পারবে না। ডিক্টেটর বাতিস্তার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের লড়াইয়ের সময় আমরা একই বাংকার থেকে যুদ্ধ করেছি। এ সময় খাদ্য, বিছানা—সব একসঙ্গে ভাগ করেছি। আপনি ধারণাও করতে পারবেন না এঁরা আমাকে কত ভালোবাসে। আমি চুরুট খাই। আমার ছেলেরা প্রথমে এটা টেস্ট করে। সিআইএর বিষক্রিয়ায় দুজন তো মরেই গেল। বাংলাদেশে আপনি কাদের বিশ্বাস করেছেন? কমরেড আলেন্দের মতো আপনিও নিশ্চিহ্ন হতে যাচ্ছেন কমরেড মুজিব।
এবার বিদায়ের পালা। হাতের অর্ধদগ্ধ চুরুটটা অ্যাশট্রেতে রেখে ধীর পদক্ষেপে ফিদেল কাস্ত্রো এগিয়ে এলেন বঙ্গবন্ধুর কাছে। এরপর কাস্ত্রো-মুজিব উষ্ণ আলিঙ্গন আর পরস্পর চুম্বন। আলিঙ্গনের শেষ মুহূর্তে মুজিবের কাঁধে মাথা রেখে অকস্মাত্ ঘরের নিস্তব্ধতা ভঙ্গ করে কাস্ত্রো বলে উঠলেন, ‘কমরেড মুজিব, আমি তোমায় ভালোবাসি—তোমায় ভালোবাসি। বাংলাদেশকে ভালোবাসি।’
গাড়িবারান্দায় স্টার্ট দিয়ে রাখা লিমুজিনে উঠতে গিয়ে হঠাত্ মাথাটা একটু তেরছা করে ঘুরিয়ে কাস্ত্রো একাই স্লোগান দিলেন ‘জয় বাংলা’।
ঝড়ের বেগে গাড়ি কটা বেরিয়ে গেল।

জাতীয় গণমাধ্যম সপ্তাহের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিতে তথ্য মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি
অনলাইন ডেস্ক

জাতীয় গণমাধ্যম সপ্তাহের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিতে ঢাকা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম (বিএমএসসএফ)। আজ মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) দুপুর ১২টায় জেলা প্রশাসক তানভীর আহমেদের মাধ্যমে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে একযোগে এ স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।
স্মারকলিপি প্রদানের সময় বিএমএসএফের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আহমেদ আবু জাফর গণমাধ্যমকে বলেন, দেশে শিক্ষা সপ্তাহ, স্বাস্থ্য সপ্তাহ, কৃষি সপ্তাহ, মৎস্য সপ্তাহ, পুলিশ সপ্তাহ, পুষ্টি সপ্তাহ, আনসার সপ্তাহ, বিজিবি সপ্তাহ, চিকিৎসা সপ্তাহ, নৌ সপ্তাহ এবং হাত ধোয়া, পা ধোয়াসহ অগণিত সপ্তাহ এবং দিবস রয়েছে।
স্মারকলিপিতে নেতারা উল্লেখ করেন, দেশ গঠনের ৫৪ বছরে সাংবাদিক সমাজকে নিজেদের দাবি এবং অধিকার নিশ্চিত করতে মাঠে আন্দোলন করতে হয়, যা বেমানান। সাংবাদিকতা এমনই একটি পেশা যারা নিজেদের রুটিরুজি-বেতন-ভাতা নিশ্চিত করতে, সাংবাদিকদের তালিকা প্রণয়ন করতে, সাংবাদিক নিয়োগ নীতিমালা কিংবা সাংবাদিক সুরক্ষা আইন প্রণয়নের জন্য আজও মাঠে কাঁদছে, অথচ কোনো সুরাহা নেই।
জাতীয় গণমাধ্যম সপ্তাহ-২০২৫ ইতোমধ্যে সাংবাদিকদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। সপ্তাহটিকে ঘিয়ে এ বছর আগের তুলনায় আরো বেশি কর্মসূচির ব্যবস্থা করা হবে। এবার বিএমএসএফ তার নিজস্ব গণ্ডি পেরিয়ে দেশের সবে প্রেস ক্লাবসহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন সপ্তাহটি পালন করবে।
বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম ২০১৭ সাল থেকে ৩ মে বিশ্ব গণমাধ্যম দিবসকে সামনে রেখে ১-৭ মে জাতীয় গণমাধ্যম সপ্তাহ নামে একটি সপ্তাহের প্রবর্তন করে। এ বছর প্রথমবারের মতো এটি উদযাপিত হবে। সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে জেলা ও উপজেলায় ব্যানার-ফেস্টুন টানিয়ে ১৪ দফায় লিফলেট বিতরণসহ পহেলা মে শোভাযাত্রা, ২ মে সাংবাদিকদের অংশগ্রহণে প্রীতি ফুটবল প্রতিযোগিতা, ৩ মে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে সাংবাদিকতার নীতি-নৈতিকতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালা, ৪ মে পেশাগত দায়িত্ব পালনে সাংবাদিকদের সমস্যা চিহ্নিত করতে মিট দ্য প্রেস, ৫ মে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে আন্তঃযোগাযোগ বৃদ্ধি, সোর্সদের সঙ্গে পারস্পরিক সমন্বয়, ৬ মে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা এবং ৭ মে জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিতব্য সাংবাদিক সমাবেশে যোগদান করবেন সারা দেশের সাংবাদিকরা।
সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সাংবাদিকদের এ সপ্তাহটির গুরুত্ব বিবেচনা করে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান করে কৃতজ্ঞতার বন্ধনে আবদ্ধ করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদ রানা, সেলিম নিজামীসহ সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

‘বাংলা মাস মনে রাখে শুধু কৃষক’
অনলাইন ডেস্ক

নববর্ষের প্রথম সপ্তাহ হয়তো মনে রাখে বাঙালি। বাংলার বাকি মাস, দিন থাকে ভুলে। তবে একেবারে আলাদা বাঙালি কৃষক। বৈশাখের সকাল থেকে চৈত্রের সন্ধ্যা পর্যন্ত বাংলা সন হিসেবে রাখে কৃষক তার সব কাজকর্মে।
এক সময় নববর্ষ পালিত হতো ঋতুধর্মী উৎসব হিসেবে। কৃষিকাজ ঋতুনির্ভর হওয়ায় এ উৎসবের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল কৃষকের। তাই কৃষক সমাজের সঙ্গে বাংলা সাল এবং নববর্ষের একটি গভীর আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে ঐতিহাসিকভাবে। কেননা বাংলা সনের উৎপত্তি হয় কৃষিকে উপলক্ষ করেই।
১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট আকবর বাংলা সনের প্রবর্তন করেন। বাংলা নববর্ষ পালনের সূচনাও হয় আকবরের সময়। বাংলা বর্ষপঞ্জিটি প্রথমে তারিখ-ই-এলাহি বা ফসলি সাল নামে পরিচিত ছিল। ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১০ অথবা ১১ মার্চ এটি বঙ্গাব্দ নামে প্রচলিত হয়।
আকবরের বিজয়কে মহিমান্বিত করে রাখার লক্ষ্যে সিংহাসনে আরোহণের দিন থেকে বাংলা সাল গণনা শুরু হলেও কৃষি কাজের সুবিধার্থে এবং কৃষকদের কাছ থেকে রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত উপায়ে অধিকতর সুবিধা পাওয়ার লক্ষ্যেই মূলত সম্রাট আকবর বাংলা সাল প্রবর্তন করেন। হিজরি চান্দ্রসন ও বাংলা সৌরসনকে ভিত্তি করে বাংলা সাল প্রবর্তিত হয়।
বাংলা সাল প্রবর্তনের আগে মুগল সম্রাটগণ রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে হিজরি বর্ষপঞ্জি ব্যবহার করতেন।
এ উদ্দেশে তিনি বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও জ্যোতির্বিদ আমির ফতুল্লাহ শিবাজীকে প্রচলিত বর্ষপঞ্জিতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের দায়িত্ব প্রদান করেন। তার প্রচেষ্টায় ৯৬৩ হিজরির মহররম মাসের শুরু থেকে বাংলা বর্ষের ৯৬৩ অব্দের সূত্রপাত হয়। যেহেতু ৯৬৩ হিজরির মহররম মাস বাংলা বৈশাখ মাসের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল, সেহেতু চৈত্র মাসের পরিবর্তে বৈশাখ মাসকেই বাংলা বর্ষের প্রথম মাস করা হয়। চৈত্র ছিল বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস, যা সে সময় ব্যবহৃত হতো।
বাংলা সন প্রচলিত হওয়ার পর হতে মুগলরা জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হওয়া পর্যন্ত পহেলা বৈশাখ পালন করতেন। কৃষকরাও নববর্ষ পালন করতেন যথেষ্ট আড়ম্বরে। সে সময়ে বাংলার কৃষকরা চৈত্র মাসের শেষ দিন পর্যন্ত জমিদার, তালুকদারদের খাজনা পরিশোধ করতেন। তারা পরদিন খাজনা পরিশোধকারীদের মিষ্টিমুখ করাতেন বিভিন্ন আয়োজনের মাধ্যমে। এ উপলক্ষে সে সময় মেলা এবং অন্যান্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো। ক্রমান্বয়ে পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মিশে আনন্দময় ও উৎসবমুখী হয়ে ওঠে পহেলা বৈশাখ। বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন পালিত হতে থাকে শুভদিন হিসেবে।
বাংলা সালের জন্মলগ্ন থেকে নববর্ষের সকল উৎসব গ্রামীণ জীবনের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্কে জড়িয়ে রয়েছে। ফলে গ্রামের সাধারণ মানুষ এবং কৃষকদের কাছে দিনটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হওয়ায় খাজনার দায় পরিশোধের বিষয়টি না থাকলেও সামর্থ্য মতো সারা বছরের ধারদেনা পরিশোধ করে নতুন বছরে নতুন জীবন শুরু করার অভিপ্রায় সব কৃষকের মনেই উৎফুল্লতা বয়ে আনে। এভাবেই দায়মুক্ত মানসিক প্রশান্তিতে কৃষকরা নববর্ষ পালন করে।
এদিকে কৃষক তার বাড়িঘর পরিষ্কার রাখে, কৃষি ও ব্যবহার্য সামগ্রী ধোয়া-মোছা করা, গবাদি পশুর জন্য পরিমাণমতো খাওয়া প্রস্তুত রাখা। সেদিন মাঠে পারতপক্ষে কাজ না করে এবং সকালে গোসল সেরে সেজেগুজে গ্রাম বা গঞ্জের বটতলায়, নদীর ঘাটে, হাটে বৈশাখী মেলায় উপস্থিত হয়। সেখানে আয়োজন থাকে গ্রামীণ ঐতিহ্যের প্রাচীন খেলাধুলা। নানা খাবারদাবারের এন্তেজাম। এদিনটিতে বিশেষ ভালো খাওয়া, ভালো থাকে। প্রতিবেশীদের সঙ্গে পারস্পরিক সম্প্রীতি বজায় রাখতে পারাকে তারা ভবিষ্যতের জন্য মঙ্গলজনক মনে করে। এদিন ঘরে ঘরে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও পাড়া-প্রতিবেশীদের আগমন ঘটে। মিষ্টি, পিঠা, পুলি-পায়েসসহ নানা রকম লোকজ খাবার তৈরি ও খাওয়ানোর ধুম পড়ে যায়। একে অপরের সঙ্গে নববর্ষের শুদ্ধ শুভেচ্ছা বিনিময় করে।
কৃষকদের বৈশাখ পালন একটু ভিন্ন আমেজ আর শুভ সুন্দরের বারতা নিয়ে হাজির হয় প্রতি বছর বৈশাখের প্রথম লগ্নে। আর এভাবে বাংলা মাস, দিন, বছর মনে রাখে বাঙালি কৃষক।
সব কৃষকের জন্য নিরন্তর শুভ কামনা। শুভ নববর্ষ।
লেখক : কামরুজ্জামান হিমেল
গণমাধ্যমকর্মী

স্বরণ
সাংবাদিক প্রফুল্লকুমার সরকারের মৃত্যুবার্ষিকী আজ
অনলাইন ডেস্ক
বাংলার খ্যাতনামা সাংবাদিক প্রফুল্লকুমার সরকারের মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের ১৩ এপ্রিল (আজকের এই দিনে) তিনি কলকাতায় প্রয়াত হন। তিনি ছিলেন আনন্দবাজার পত্রিকা গোষ্ঠীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে থেকে আজন্ম পত্রিকাটির সম্পাদকও হয়েছিলেন।
প্রফুল্লকুমার সরকারের জন্ম ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দে অবিভক্ত বাংলার অধুনা বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালিতে। পিতা প্রসন্নকুমার সরকার। তার পড়াশোনা শুরু হয় পাবনা জিলা স্কুলে। তারপর কলকাতার জেনারেল অ্যাসেমব্লিজ ইনস্টিটিউশনে তথা বর্তমানের স্কটিশ চার্চ কলেজে।
আইন পাশের পর তিনি কিছু দিন বর্তমানে বাংলাদেশের ফরিদপুরে ও বিহারের বর্তমান ঝাড়খণ্ডের ডালটনগঞ্জের মেদিনীনগরে ওকালতি করেন। পরে ওড়িশার ঢেঙ্কানল রাজপরিবারের গৃহশিক্ষক হন এবং ক্রমে দেওয়ানপদ লাভ করেন।
১৯২২ খ্রিস্টাব্দের ৯ সেপ্টেম্বর তিনি বাঘা যতীনের জীবনী ও তার বিষয়ে সম্পাদকীয় মন্তব্য প্রকাশ করে কারারুদ্ধ হন। ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে হতে আমৃত্যু তিনি আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। নিয়মিত সাহিত্যচর্চা করতেন।
রচিত গ্রন্থগুলি হলো: ভ্রষ্টলগ্ন, অনাগত, বালির বাঁধ, ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু, জাতীয় আন্দোলনে রবীন্দ্রনাথ, শ্রীগৌরাঙ্গ প্রভৃতি।
বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সঙ্গে তিনি ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন। তার স্ত্রী নির্ঝরিণী দেবী (১৮৯৪ - ১৯৬৩) ছিলেন একজন লেখিকা ও কংগ্রেসকর্মী। তিনিও স্বদেশী আন্দোলনে অংশ নিয়ে কারারুদ্ধ হন ১৯৩০ এবং ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে। তাদের সুযোগ্য পুত্র অশোক কুমার সরকার (১৯১২-১৯৮৩) ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে আনন্দবাজার পত্রিকা গোষ্ঠীর প্রধান হন।
খ্যাতনামা বাঙালি সাংবাদিক-সম্পাদক প্রফুল্লকুমার সরকার ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের ১৩ এপ্রিল কলকাতায় প্রয়াত হন। তার মৃত্যুর পর কলকাতা মহানগরীতে আনন্দবাজার পত্রিকা গোষ্ঠীর কার্যালয় সংলগ্ন রাজপথের নামকরণ হয় প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট।

তারাপদ চক্রবর্তীর জন্মবার্ষিকী আজ
অনলাইন ডেস্ক

সংগীতাচার্য তারাপদ চক্রবর্তীর জন্মবার্ষিকী আজ। ১৯০৯ সালের ১৩ এপ্রিল (আজকের এই দিনে) ব্রিটিশ ভারতের অধুনা বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার কোটালিপাড়ায় এক সঙ্গীতশিল্পী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তিনি নিজেও ছিলেন কণ্ঠশিল্পী ও সঙ্গীতাচার্য। তিনি কোটালি ঘরানার পথপ্রদর্শক যা কোনো রাগ উপস্থাপনের সময় আলাপের ধীর পরিবেশনের জন্য সর্বাধিক পরিচিত।
সংগীতাচার্য তারাপদ চক্রবর্তী ব্রিটিশ ভারতের অধুনা বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার কোটালিপাড়ায় এক সঙ্গীতশিল্পী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন সঙ্গীতজ্ঞ পণ্ডিত কুলচন্দ্র চক্রবর্তী এবং মাতা দুর্গারানী দেবী। তার পিতা, পিতামহ এবং প্রপিতামহ সকলেই সংগীতে পারদর্শী ছিলেন। সেই সূত্রে তিনি পরিবার থেকেই অনুপ্রেরণা পেয়েছেন।
শুরুতে কলকাতা বেতারে তবলা বাদকের চাকরি নেন। ক্রমেই উচ্চাঙ্গের শিল্পী হিসাবে খ্যাতি লাভ করেন। বাংলা খেয়াল ও বাংলা ঠুমরী গানের প্রবর্তক তিনি। তারাপদ বিভিন্ন সময়ে ওস্তাদ এনায়েত খাঁ, ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ, ওস্তাদ হাফিজ আলী খাঁ প্রমুখ সঙ্গীত সম্রাটের সঙ্গে তবলা সঙ্গীত করেন।
সুরতীর্থ নামে তার একটি গ্রন্থ রয়েছে।
তিনি বিভিন্ন উপাধিতে ভূষিত হন। ভাটপাড়া পণ্ডিতসমাজ কতৃর্ক সঙ্গীতাচার্য, বিদ্বৎ সম্মিলনী থেকে সঙ্গীতরত্নাকর ও কুমিল্লা সংগীত পরিষদ থেকে ‘’সংগীতার্ণব’’ উপাধি লাভ করেন।
তিনি ১৯৭৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর কলকাতায় মারা যান।