<p>লোকমান (আ.)-এর উপদেশ ওয়াহির মর্যাদায় স্বীকৃত। ওয়াহাব ইবনু মুনাব্বেহ (রহ.) বর্ণিত লোকমান (আ.) আইয়ুবের (আ.) ভাগ্নে। ইমাম বায়জাবি (রহ.), অন্য মতানুসারে তিনি দাউদ (আ.)-এর সময়ও জীবিত ছিলেন। ইবনু আব্বাস (রা.)-এর বর্ণনায় আছে, লোকমান (আ.) আবিসিনীয় ক্রীতদাস। তাঁর কাজ কাঠ চেরাই। জাবির (রা.) বলেন, তিনি বেঁটে, চেপ্টা নাকবিশিষ্ট। ইমাম মুজাহিদ (রহ.) বলেন, তিনি ফাটা পা ও পুরো ঠোঁটবিশিষ্ট ছিলেন।</p> <p>ইবনু কাসির (রহ.) বলেন, কাতাদা (রা.) বর্ণিত, মহান আল্লাহ লোকমান (আ.)-কে ‘নবুয়ত’ ও ‘হিকমাতে’র মধ্যে একটির সুযোগ দিলে তিনি হিকমত গ্রহণ করেন। ইমাম বাগবি (রহ.) বলেন, এ কথা সর্বসম্মত, তিনি নবী নন; বরং ফকিহ ও প্রাজ্ঞজন। (মাজহারি)</p> <p>ইবনু মুনাব্বেহ (রহ.) বলেন, ‘আমি লোকমান (আ.)-এর জ্ঞান-বিজ্ঞানের ১০ হাজারের চেয়েও বেশি অধ্যায় অধ্যয়ন করেছি। ’ (কুরতুবি)</p> <p>লোকমান (আ.) পুত্রকে দেওয়া ১০০টি উপদেশের ৪০টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সুরা লোকমানের ১৩ থেকে ১৯ নম্বর আয়াতের উপদেশগুলো:</p> <p>প্রথমত : লোকমান (আ.) ছেলেকে বলেন, ‘হে বৎস, আল্লাহর সঙ্গে শরিক করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহর সঙ্গে শরিক করা মহা অন্যায়। ’ (সুরা লোকমান, আয়াত : ১৩)</p> <p>মানবজীবনে তাওহিদই সব কাজের গ্রহণযোগ্যতা, বিশুদ্ধতার মানদণ্ড এবং পারলৌকিক মুক্তির শর্ত ও সোপান।</p> <p>দ্বিতীয়ত : ‘আর আমি মানুষকে তার মাতা-পিতার সঙ্গে সদ্ব্যবহারের জোর নির্দেশ দিয়েছি। তার মাতা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে। তার দুধ ছাড়ানো দুই বছরে হয়। নির্দেশ দিয়েছি যে আমার প্রতি ও তোমার মাতা-পিতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। অবশেষে আমারই কাছে ফিরে আসতে হবে। ’ (সুরা লোকমান, আয়াত : ১৪)</p> <p>প্রণিধানযোগ্য, মানুষের বিকাশধারা থেমে যেত, যদি মাতা-পিতা সযত্ন প্রয়াসে প্রজন্মান্তরে মানবসত্তাকে মেলে না ধরতেন।</p> <p>তৃতীয়ত : লোকমান (আ.)-এর উপদেশ : ‘মাতা-পিতা যদি তোমাকে আমার সঙ্গে এমন বিষয়কে শরিক স্থির করতে পীড়াপীড়ি করে, যার জ্ঞান তোমার নেই, তবে তুমি তাদের কথা মানবে না এবং দুনিয়াতে তাদের সঙ্গে সদ্ভাবে সহাবস্থান করবে। যে আমার অভিমুখী হয়, তার পথ অনুসরণ করবে। অতঃপর তোমাদের প্রত্যাবর্তন আমারই দিকে এবং তোমরা যা করতে, আমি সে বিষয়ে তোমাদের জ্ঞাত করবো। ’ (সুরা লোকমান, আয়াত : ১৫)</p> <p>চতুর্থত : লোকমান (আ.) অন্যায়, অপরাধের নিষেধ করেছেন : ‘হে বৎস, কোনো বস্তু যদি সরিষার দানা পরিমাণও হয় অতঃপর তা যদি থাকে প্রস্তর গর্ভে অথবা আকাশে অথবা ভূ-গর্ভে, তবে আল্লাহ তাও উপস্থিত করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ গোপন-ভেদ জানেন, সব কিছুর খবর রাখেন। ’ (সুরা লোকমান, আয়াত : ১৬)</p> <p>পঞ্চমত : নামাজ সম্পর্কে লোকমান (আ.) বলেন, ‘হে বৎস, নামাজ কায়েম করো। ’ [সুরা লোকমান, আয়াত : ১৭ (প্রথমাংশ)]</p> <p>ষষ্ঠত: সন্তানকে নম্রতা ও বিনয়ের শিক্ষা দিয়ে লোকমান (আ.) বলেন, ‘সৎ কাজে আদেশ দাও, মন্দ কাজে নিষেধ করো। ’ [সুরা লোকমান, আয়াত : ১৭ (মধ্যাংশ)]</p> <p>সপ্তমত : ধৈর্যশীলতা বিপদে সাহস, ভরসার অবলম্বন। লোকমান (আ.)-এর  উপদেশ : ‘বিপদাপদে সবর করো। নিশ্চয়ই এটা সাহসিকতার কাজ। ’ (সুরা লোকমান : ১৭ শেষাংশ)।</p> <p>অষ্টমত : মানুষের দিক থেকে মুখ ফেরানো মনুষ্যত্বের কলঙ্ক। লোকমান (আ.)-এর উপদেশ : ‘অহংকারবশে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা কোরো না। ’ [সুরা লোকমান, আয়াত : (১৮ প্রথমাংশ)</p> <p>আয়াতের মূল শব্দের মূল অর্থ : ‘উটের ঘাড় বাঁকানো’। মানুষও অহংকারের বশে ‘ঘাড় ত্যাড়া’ করে।</p> <p>নবমত : অহংকার প্রসঙ্গে উপদেশ : ‘পৃথিবীতে গর্বভরে পদাচারণ কোরো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না। ’ [সুরা লোকমান, আয়াত : ১৮ (শেষাংশ)]</p> <p>অন্যত্র আছে, ‘ভূ-পৃষ্ঠে দম্ভভরে বিচরণ করো না, তুমি কখনোই ভূ-পৃষ্ঠকে বিদীর্ণ করতে পারবে না এবং উচ্চতায় তুমি কখনোই পর্বতপ্রমাণ হতে পারবে না। ’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৩৭)</p> <p>দশমত : লোকমান (আ.) সন্তানকে বিনয়ের উপদেশ দিয়েছেন : ‘পদচারণে মধ্যবর্তীতা অবলম্বন কোরো। ’ (সুরা লোকমান, আয়াত : ১৯ প্রথমাংশ)</p> <p>মহানবী (সা.) স্বাভাবিক, মধ্যম গতিতে হাঁটতেন এবং বলতেন, ‘ইহুদিদের মতো দৌড়াবে না, খ্রিস্টানদের মতো ভার-অলস হয়েও চলবে না। ’</p> <p>একাদশতম : আকর্ষণীয় ভাষা মানুষকে বিমোহিত করে। লোকমানের (আ.) উপদেশ : ‘কণ্ঠ নিচু করো। নিঃসন্দেহে গাধার স্বরই সর্বাপেক্ষা অপ্রীতিকর। ’ [সুরা লোকমান : ১৯ (শেষাংশ)]</p> <p>এ ছাড়া ইবনে কাসিরে বর্ণিত, একদা লোকমান (আ.)-এর বিশাল জনসমাগমে বক্তব্যে, এক ব্যক্তির জিজ্ঞাসা : আপনি কি ওই ব্যক্তি, যে আমার সঙ্গে ছাগল চড়াত? লোকমান (আ.) বললেন, হ্যাঁ! লোকটি বলল : আপনার এমন যোগ্যতা কিভাবে হলো? লোকমান (আ.) বললেন, আমার দুটি কাজ : (০১) সর্বদা সত্য কথা বলা, (০২) অপ্রয়োজনীয় কথা পরিহার করা।</p>