অবকাঠামোর নকশা তো অনেকেই করেন। কিন্তু মানুষের, বিশেষ করে উদ্বাস্তু বা উদ্বাস্তুর মতো পরিস্থিতিতে থাকা শিশুদের জীবন, চিন্তা-ভাবনা বদলে দেওয়ার মতো অবকাঠামো গড়ে বিশ্বের নজর কাড়তে পেরেছেন কজন! এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশি স্থপতি রিজভী হাসান সত্যিই ব্যতিক্রম। তাঁর কাজ নিয়ে ছবি ছাপা হয়েছে যুক্তরাজ্যের ‘দ্য গার্ডিয়ান’ পত্রিকায়।
আগামী ১৯ আগস্ট বিশ্ব মানবিক দিবস সামনে রেখে জাতিসংঘ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে মানবিকতার ক্ষেত্রে ব্যক্তিজীবনে সত্যিকারের যে নায়কদের তুলে ধরেছে, তাঁদের একজন রিজভী হাসান।
ওই তালিকায় স্থান পাওয়া আরেক বাংলাদেশি তানিয়া আক্তার। তিনি পেশায় একজন মিডওয়াইফ (ধাত্রী)। তাঁদের নিয়ে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সংস্থা (ইউএনওচা) গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় ‘বাস্তব জীবন-নায়কদের চিনে নিন’ শীর্ষক একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
রিজভী হাসানের সঙ্গে গতকাল রাত ৮টায় যখন কালের কণ্ঠ’র কথা হয়, তখনো তিনি ইউএনওচার ওই প্রকাশনার কথা জানতেন না।
তিনি বলেন, কাজগুলো তাঁরা করেছিলেন মূলত পরিবর্তন আনার জন্য। ‘শরণার্থী’ প্রেক্ষাপটে হয়তো কাজের সুযোগ থাকে। কিন্তু অনেক সময় এড়িয়ে যায়। মানুষের চিন্তা-ভাবনা, আশ্রয়দাতা ও আশ্রিত সম্প্রদায়—সবার কথা মাথায় রেখেই একটি উদাহরণ সৃষ্টির চেষ্টা ছিল। জাতিসংঘ বলেছে, স্থাপত্যের ছাত্র হিসেবে রিজভী ‘আর্কিটেকচারস ফার্স্ট রেসপন্ডার’ হিসেবে পরিচিত এরিক সেজাল ও খন্দকার হাসিবুল কবিরের মতো স্থপতিদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। তাঁর চেষ্টা ছিল প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবন বদলানো।
রিজভী বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক ও জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের সঙ্গে মিলে কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের জন্য সুন্দর ও টেকসই কমিউনিটি সেন্টার এবং নারী ও শিশুদের জন্য নিরাপদ স্থান গড়ে তুলেছেন। আরেক ‘রিয়েল লাইফ হিরো’ তানিয়া আক্তার ‘মিডওয়াইফ’কে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন মানুষের সেবা করার জন্যই। তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস, কাজের মাধ্যমে তিনি মাতৃমৃত্যু হার কমাতে ভূমিকা রাখতে পারবেন।
তিনি একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কাজ করেন।
তানিয়ার পেশাগত জীবনের মোড় বদলানোর বছরটি ছিল ২০১৬। সেই বছর তিনি ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে ‘উইম্যান ডেলিভার ২০১৬’ শীর্ষক সম্মেলনের জন্য নির্বাচিত হন। ওই বছরই কক্সবাজারের কুতুবদিয়ার একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তিনি বদলি হন।
তানিয়া রোগীদের আস্থা অর্জন করেছেন। তাই তাঁর কাছ থেকে সেবা নিতে রোগীর ভিড় লেগে থাকে। ২০১৭ সালের শুরু থেকেই তানিয়া মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা মায়েদের সেবা দেন। প্রত্যন্ত দ্বীপ ভোলায় তিনি মাতৃ ও শিশুমৃত্যু হ্রাস এবং প্রসব জটিলতার বেশ কিছু ঘটনা সামলেছেন। তানিয়া মিডওয়াইফারিকে বাংলাদেশে স্বতন্ত্র পেশা হিসেবে উন্নীত করার স্বপ্ন দেখেন।