নারায়ণগঞ্জের স্কুলছাত্রী জিসা মনির অন্তর্ধানকাণ্ড এখনো রহস্যঘেরা। ধর্ষণ ও হত্যার পর লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া, তিন আসামির আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি এবং ৫১ দিন পর হঠাৎ জিসা মনির অস্তিত্ব জানান দেওয়া—সবটাই চলচ্চিত্রের গল্পকেও হার মানিয়েছে। সবচেয়ে বেশি আলোচনার জন্ম দিয়েছে পুলিশের কথিত তদন্ত এবং আদালতে তিন আসামির জবানবন্দি। কেউ কেউ এই ঘটনাকে ‘জজ মিয়া নাটকে’র সঙ্গে তুলনা করেছে।
জিসা মনির অন্তর্ধান ও ফিরে আসা
তিন আসামির ‘ধর্ষণ-গুম’ জবানবন্দির প্রকৃত রহস্য খুঁজতে ২ তদন্ত কমিটি
নিজস্ব প্রতিবেদক ও নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

এদিকে নারায়ণগঞ্জের স্কুলছাত্রী জিসা মনির অন্তর্ধানকাণ্ডের সংশ্লিষ্ট মামলার নথি তলব চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেছেন সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ আইনজীবী। আবেদনে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় করা মামলা এবং মামলা-পরবর্তী কার্যক্রমের বৈধতা ও যৌক্তিকতা সম্পর্কে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
এদিকে কারাগারে বন্দি তিন আসামির স্বজনরা বলছে, তাদের সন্তানরা নির্দোষ। পুলিশ তাঁদের রিমান্ডে মারধর করবে না এবং ছেড়ে দেবে এমন আশ্বাস দিয়ে টাকা-পয়সা নিয়েছে।
মামালার আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রোকন উদ্দিন অভিযোগ করেন, পুলিশ নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে জিসা মনি উদ্ধারের পরও আদালতে এফআরটি না দিয়ে উল্টো তিন আসামির দেওয়া জবানবন্দির সূত্র ধরে অন্য মামলায় আসামিদের ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, ‘মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামিদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায় করেছেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নিজেকে হিরো বানাতে গিয়ে আরেকটি জজ মিয়া নাটক মঞ্চায়ন করেছেন, যেটা এখন প্রমাণিত। পুলিশ আদালতে এফআরটি না দিলে আমরা ন্যায়বিচারের জন্য উচ্চ আদালতে আপিল করব।’
জিসা মনির কথিত প্রেমিক কারাবন্দি আব্দুল্লাহর বাবা আমজাদ হোসেন বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ।
নারায়ণগঞ্জের ইস্পাহানি ঘাটে নৌকার মাঝি খলিলের ছোট ভাই আল আমিন বলেন, ‘আমার ভাই ১২ বছর ধরে শীতলক্ষ্যায় নৌকা বায়। থাকে বন্দরের একরামপুর। আমার ভাইয়ের নৌকা দিয়ে আসামিরা কোনো দিনও ঘুরে নাই। ওই দুজনকে চিনেই না। পুলিশের আন্দাগুন্দি মাইরের চোটে আব্দুল্লাহ ও রকিব ভাইয়েরে দেখাই দিছে। পরে যখন ওরা তিনজন থানায় একসঙ্গে হইছিল তখন ওরা ভাইয়েরে কইছে মাইরের ঠেলায় তারা উনাকে চিনাইতে বাধ্য হইছে।’ আল আমিন বলেন, ‘ভাইরে মারব না, ছাইড়া দিব কইয়া পুলিশ আমার ভাবির কাছ থেকে ছয় হাজার টাকা নিছে। কিন্তু শেষমেশ আর ছাড়ে নাই।’
অটোরিকশাচালক রকিবের বড় ভাই মো. সজিব হোসেন ভাইকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, ‘পুলিশ তারে দুই দফা রিমান্ডে নিয়ে মারধর কইরা স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করছে। রিমান্ডে মারব না কইয়া দুই দফায় ১০ হাজার টাকা নেয়। পরে ছাইড়া দিব কইয়া আরো ২০ হাজার টাকা নেয়। কিন্তু ছাড়ে তো নাই-ই বরঞ্চ ফাঁসাইয়া দিছে।’
জিসা মনির বাবা হোসিয়ারি শ্রমিক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘মেয়েকে আমরা ফিরে পেয়েছি। এতে আমরা খুশি। আমরা চাই কোনো নিরপরাধ লোক যেন সাজা না পায়।’ তিনি মামলা চালাতে রাজি নন মন্তব্য করে বলেন, ‘আইন অনুযায়ী আমি এগোব।’
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শামীম আল মামুন বলেন, ‘মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে ওই তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছি।’ নির্যাতন করে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছে—পরিবারের এমন অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, আদালতে ওই তিনজন বুঝেশুনেই স্বীকারোক্তি দিয়েছে। তাদের কোনো নির্যাতন করা হয়নি কিংবা কোনো ধরনের টাকা-পয়সাও আদায় করা হয়নি।
পুলিশ সুপার মো. জায়েদুল আলম বলেন, জিসা মনি ধর্ষণ, হত্যা, লাশ নদীতে ফেলে দেওয়া এবং ফিরে আসার বিষয়টি নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটনের জন্য দুটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। ঘটনাটি জজ মিয়া নাটকের মতো নয় উল্লেখ করে পুলিশ সুপার বলেন, ‘সেটি ছিল জাতীয় পর্যায়ের বড় ঘটনা। আর নারায়ণগঞ্জে জিসা মনির ঘটনা বাদী-বিবাদী উভয়েই গরিব ও সাধারণ মানুষ। আশা করছি, দ্রুততম সময়ের মধ্যেই প্রকৃত রহস্য জানাতে পারব। যে তিন আসামি জেলহাজতে রয়েছে তারা যেন ন্যায়বিচার পায় সেটিও লক্ষ রাখছি।’
গত ৪ জুলাই থেকে নিখোঁজ হয় নারায়ণগঞ্জ শহরের দেওভোগ পাক্কা রোড সরকারি প্রাইমারি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী জিসা মনি। নিখোঁজের প্রায় দুই সপ্তাহ পর গত ১৭ জুলাই নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় নিখোঁজের জিডি করেন জিসা মনির বাবা জাহাঙ্গীর হোসেন। এরপর ৬ আগস্ট থানায় অপহরণ মামলা করেন তিনি। একপর্যায়ে মেয়েটির মায়ের মোবাইল ফোনের কললিস্ট চেক করে রকিবের খোঁজ পায় পুলিশ। রকিবের মোবাইল নম্বর দিয়ে আব্দুল্লাহ জিসার সঙ্গে যোগাযোগ করত। ঘটনার দিনও ওই নম্বর দিয়ে কল করে আব্দুল্লাহ। এ ঘটনায় রকিব, আব্দুল্লাহ ও নৌকার মাঝি খলিলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গত ৯ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মিল্টন হোসেন ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ হুমায়ূন কবিরের আলাদা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয় আসামিরা। স্বীকারোক্তিতে তারা জানায়, জিসাকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে শীতলক্ষ্যা নদীতে।
সম্পর্কিত খবর

আছিয়ার মামলার চার্জশিট প্রস্তুত, দ্রুত বিচার শেষ হবে : আইন উপদেষ্টা
নিজস্ব প্রতিবেদক

মাগুরার আছিয়া হত্যা মামলার চার্জশিট প্রস্তুত হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, আছিয়া হত্যা মামলার চার্জশিট আজকেই আদালতে দাখিল হবে। এই বিচার অতি দ্রুত সময়ে শেষ করা হবে।
আজ রবিবার সমসাময়িক ইস্যুতে সংবাদ সম্মেলনে এসব বলেন আইন উপদেষ্টা।
মডেল মেঘনা আলমকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে তিনি বলেন, কিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে।
এ পর্যন্ত ৭ হাজার ১৮৪টি রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৮৮ মিলিয়ন ডলার চুরি হয়েছে জানিয়ে আইন উপদেষ্টা জানান, সেজন্য একটা রিভিউ কমিটি করা হয়েছে।

ডিবিপ্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হলো রেজাউলকে
অনলাইন ডেস্ক

রেজাউল করিম মল্লিককে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। গতকাল শনিবার ডিএমপি কমিশনারের কার্যালয়ের এক আদেশে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী স্বাক্ষরিত ওই আদেশে বলা হয়েছে, ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) রেজাউল করিম মল্লিককে ডিএমপির সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে।
আদেশে বলা হয়, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত প্রশাসনিক স্বার্থে রেজাউল করিম মল্লিককে তাঁর নামের পাশে উল্লিখিত স্থানে পদায়ন করা হলো।
এর আগে গত ১ সেপ্টেম্বর তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার মো. মাইনুল হাসান স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে রেজাউল করিম মল্লিককে ডিবিপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
১৭তম বিসিএস (পুলিশ) ব্যাচের কর্মকর্তা রেজাউল করিম মল্লিক ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ পুলিশে যোগ দেন। এর আগে তিনি বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগসহ (সিআইডি) বিভিন্ন ইউনিটে দায়িত্ব পালন করেন।

পহেলা বৈশাখ ঘিরে সাইবার ওয়ার্ল্ডেও মনিটর করছি : র্যাব ডিজি
অনলাইন ডেস্ক

পহেলা বৈশাখ উদযাপন ঘিরে কেউ যেন কোনো অপপ্রচার চালাতে না পারে, সেজন্য সাইবার ওয়ার্ল্ডেও মনিটর করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) একেএম শহিদুর রহমান।
তিনি বলেন, নববর্ষের অনুষ্ঠান ঘিরে ঢাকাসহ সারা দেশে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আমাদের মোটরসাইকেল পেট্রোল, গাড়ি পেট্রোল, চেকপোস্ট, অবজারভেশন টাওয়ার ও গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত আছে। আমরা সাইবার ওয়ার্ল্ডেও মনিটর করছি।
রবিবার পহেলা বৈশাখে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
র্যাব ডিজি বলেন, আমরা অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় রেখে এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী ও জনপ্রতিনিধিসহ আপামর জনগণের সঙ্গে সমন্বয় করে এই অনুষ্ঠানে যাতে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে করা যায়, তার সব রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।
সারা দেশে র্যাবের ২২৪টি পিকআপ টহল ও ১২২টি মোটরসাইকেল টহল চলবে।
তিনি আরো বলেন, আয়োজনে কোনো প্রকার ইভটিজিং যেন না হয়, সেদিকেও আমাদের সতর্ক দৃষ্টি থাকবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, সেনাবাহিনী থাকবে এবং র্যাব সদস্যও মোতায়েন আছে। সাদা পোশাকে আমাদের নজরদারি থাকবে।
চারুকলায় শেখ হাসিনার মোটিফ পোড়ানোর ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এ ঘটনায় তদন্ত হবে এবং যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা এটাও খতিয়ে দেখছি যে, আমাদের নিরাপত্তার দায়িত্বে যারা ছিলেন তাদের কোনো ঘাটতি ছিল কি না। সেটাও অনুসন্ধান করে দেখা হচ্ছে এবং যদি সেরকম কিছু পাওয়া যায়, অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মেঘনা আলমকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে যা বললেন আইন উপদেষ্টা
নিজস্ব প্রতিবেদক

মডেল মেঘনা আলমকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে কিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তার বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে বলে জানান তিনি।
আজ রবিবার সমসাময়িক ইস্যুতে সংবাদ সম্মেলনে এসব বলেন আইন উপদেষ্টা। এ সময় মেঘনা আলমকে যে প্রক্রিয়ায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে সেটা ঠিক হয়নি বলে অভিমত দেন আইন উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৮৮ মিলিয়ন ডলার চুরি হয়েছে। সেজন্য একটা রিভিউ কমিটি করা হয়েছে। যেখানে তিনি (আইন উপদেষ্টা) রয়েছেন। চুরি যাওয়া ৬৬ মিলিয়ন ডলার উদ্ধার হয়েছে।
উপদেষ্টা বলেন, মূলত ২ বিলিয়ন ডলার চুরির পরিকল্পনা ছিল। আসলে বাংলাদেশকে বিপদে ফেলার পরিকল্পনা ছিল তাদের। যারা এর সাথে জড়িত ছিল তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা হবে।
এ পর্যন্ত ৭ হাজার ১৮৪টি রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
মাগুরার আছিয়ার মামলার চার্জশিট প্রস্তুত হয়েছে বলেও জানান আইন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, আজকেই আদালতে দাখিল হবে চার্জশিট।