<p style="text-align:justify">বর্তমানে খাদ্যের উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষ সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছে। খাদ্যে মূল্যস্ফীতি গত মাসে ছিল প্রায় ১৪ শতাংশ। যা গত ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। খাদ্যে মূল্যস্ফীতি বাড়লে সবচেয়ে বেশি কষ্টে থাকে নিম্ন বা স্বল্প আয়ের মানুষ। প্রায় ২৯ শতাংশ মানুষ কম খাদ্য গ্রহণ করে এবং এর চেয়ে বেশি মানুষ খাদ্য কেনার পরিমাণ কমিয়ে ব্যয় সাশ্রয় করে।</p> <p style="text-align:justify">স্বল্প আয়ের মানুষের কষ্ট দেখা যায় না। কিন্তু তারা এখন খুবই কষ্টে দিন পার করছে। মানুষের কষ্টের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। খাদ্যে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণ মূলত দেশে খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদন ভালো না হওয়া। বাজারের সরবরাহ সংকট কাটাতে পণ্য আমদানি করে যে নিয়ে আসবে, সেটাও পর্যাপ্ত ছিল না। কারণ ডলারের সংকটে ঠিকমতো এলসি খোলা যাচ্ছিল না এবং ডলারের সঙ্গে টাকার বড় অবমূল্যায়নে পণ্যের দাম আরো বেড়ে গেছে। এতে খাদ্যমূল্যস্ফীতি বেড়ে মানুষকে কষ্ট দিচ্ছে।</p> <p style="text-align:justify">এই খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমাতে হলে আমাদের খাদ্যের উৎপাদন বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে কৃষকদের সহায়তার মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদনে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। কৃষিতে ভর্তুকি আরো বাড়াতে হবে। যেসব খাদ্যের সংকট আছে, সেগুলো অতি গুরুত্ব দিয়ে আমদানি করে বাজারে সরবরাহ বাড়াতে হবে। খাদ্যে উচ্চ মূল্যস্ফীতির জন্য বাজারের ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট চক্রও দায়ী। ব্যবসায়ী যে সিন্ডিকেট চক্র রয়েছে, সেটা দূর করতে হবে।</p> <p style="text-align:justify">যখন সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়, তখন সব ধরনের উপকরণের দাম বেড়ে যায়। তখন উৎপাদন খরচও বেড়ে যায়। উৎপাদন খরচ যখন বেড়ে যায়, তখন পণ্যের দামও বেড়ে যায়। এটিও খাদ্যে উচ্চ মূল্যস্ফীতির আরেকটি কারণ। তাই পণ্যের উৎপাদন খরচও কমাতে হবে। একই সঙ্গে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে হবে। আর সার্বিক মূল্যস্ফীতি যদি না কমে, তাহলে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি কমানো সম্ভব হবে না।</p> <p style="text-align:justify">বাংলাদেশে ইতিমধ্যে তিনবার নীতি সুদহার বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রয়োজনে আরো বাড়াতে হবে। এতে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে। কারণ নীতি সুদহার বাড়ালে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার চাহিদা কমে যায়। এর ওপর ভিত্তি করে কমে আসে মূল্যস্ফীতি। যদিও নীতি সুদহার বাড়ানোর প্রভাব তেমন পড়েনি। তবে এর প্রভাব পড়তে কিছুটা সময় লাগে। তাই সার্বিক মূল্যস্ফীতির সঙ্গে আমাদের খাদ্যের মূল্যস্ফীতিকে বিবেচনা করতে হবে।</p> <p style="text-align:justify">এখন খাদ্য উৎপাদনের মৌসুম। এতে শাক-সবজির দাম কমে এসেছে। ফলে ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতি কিছুটা হয়তো কমবে। কিন্তু খুব বেশি কমবে বলে মনে হয় না। যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের সার্বিক মূল্যস্ফীতি না কমবে, ততক্ষণ পর্যন্ত খাদ্যের মূল্যস্ফীতি খুব একটা কমবে না। অন্তর্বর্তী সরকার মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে ইতিমধ্যে নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু সেগুলোর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। সরকারের এসব উদ্যোগের কারণে সামনে যদি সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে আসে, তাহলে স্বাভাবিকভাবে খাদ্যের মূল্যস্ফীতিও কমে আসবে। </p> <p style="text-align:justify">লেখক : কৃষি অর্থনীতিবিদ</p> <p style="text-align:justify">অনুলিখন : সজীব আহমেদ</p>