<p style="text-align:justify">ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেলওয়ে স্টেশনের মাঝামাঝি সেতুতে উঠতে গিয়ে প্রায়ই ‘ব্যর্থ হয়’ বিভিন্ন ট্রেন। বিশেষ করে ওই দুই স্টেশনে যাত্রাবিরতি দিয়ে আসা ট্রেনগুলো বেশি সমস্যায় পড়ে। পেছন দিকে গিয়ে গতি বাড়িয়ে আবার আসতে হয় ট্রেনগুলোতে। এটা যেন নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">দুর্বল লোকোমোটিভের (ইঞ্জিন) কারণে একটু উঁচুতে থাকা সেতুতে উঠতে সমস্যা হয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে শুধু এ ঘটনাই নয়, দুর্বল লোকোমোটিভের কারণে পূর্বাঞ্চল রেলপথে কচ্ছপগতি নিয়ে চলছে ট্রেন। মাঝপথে লোকোমোটিভ বিকল হওয়ার ঘটনাও ঘটছে অহরহ। এতে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">গত এক সপ্তাহ পূর্বাঞ্চল রেলপথের ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশনে সরজমিনে ঘুরে ও খোঁজ নিয়ে লোকোমোটিভ সমস্যায় ট্রেন চলাচলে বিলম্বের তথ্য পাওয়া যায়। কোনো কোনো ট্রেন ১২ ঘণ্টারও বেশি বিলম্বে চলাচলের তথ্য উঠে এসেছে।</p> <p style="text-align:justify">সংশ্লিষ্টরা লোকোমোটিভ সমস্যায় ট্রেন চলাচলের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। একই সঙ্গে চালক সংকটের কথাও জানিয়েছেন তারা। তবে এ বিষয়ে মুখ খুলে কিছু বলতে চাননি সংশ্লিষ্টরা। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কঠোর নীতির কথা বলে তারা বক্তব্য দিতে রাজি হননি।</p> <p style="text-align:justify">মূলত ২১০০ থেকে ২৭০০ সিরিয়ালের লোকোমোটিভগুলো বেশি পুরনো হওয়ায় স্বাভাবিক গতি নিয়ে চলতে পারে না। যে কারণে পরিচালন সময় ঠিক থাকে না। এ ছাড়া কিছু লোকোমোটিভ দিয়ে এত বেশি ধোঁয়া বের হয় যে এতে যাত্রীদের নাভিশ্বাস ওঠে।</p> <p style="text-align:justify">দুর্বল লোকোমোটিভ নিয়ে ট্রেন চলার সর্বশেষ ঘটনা ছিল বুধবার (২৫ ডিসেম্বর)। লোকোমোটিভ সমস্যায় তালশহর স্টেশনে আটকা পড়ে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী কর্ণফুলি এক্সপ্রেস। ট্রেনটি এক ঘণ্টার মতো দাঁড়িয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। প্রায় দুই ঘণ্টা বিলম্বে ট্রেনটি বিকেল সাড়ে ৩টার পর আখাউড়া এসে পৌঁছায়।</p> <p style="text-align:justify">সিলেট-চট্টগ্রাম পথের পাহাড়িকা এক্সপ্রেস গত সোমবার এমনিতেই তিন ঘণ্টার বেশি বিলম্বে চলাচল করছিল। সন্ধ্যা ৬টার দিকে হবিগঞ্জের মনতলা স্টেশনে এসে ট্রেনের লোকোমোটিভ নষ্ট হয়ে যায়। আখাউড়া থেকে আরেকটি লোকোমোটিভ এসে ট্রেনটিকে চট্টগ্রামের দিকে নিয়ে যায়। সব মিলিয়ে ৫ ঘণ্টার মতো বিলম্বে ট্রেনটি চলাচল করে। একই ট্রেনের লোকোমোটিভ ১২ ডিসেম্বরও বিকল হলে কয়েক ঘণ্টা বিলম্বে চলাচল করে।</p> <p style="text-align:justify">পুরোনো লোকোমোটিভের কারণে গতি কমিয়ে চলে বিধায় আখাউড়া-ঢাকা-আখাউড়া পথের তিতাস কমিউটার নিয়মিতই বিলম্বে চলছে। গত এক সপ্তাহের এক হিসেব থেকে দেখা যায়, আখাউড়া থেকে ঢাকা যাওয়া ও ফিরতি পথে ট্রেনটি এক থেকে তিন ঘণ্টার বেশি বিলম্বে চলাচল করে।</p> <p style="text-align:justify">গত ২১ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম-ঢাকা পথের কর্ণফুলি এক্সপ্রেস ট্রেনের লোকোমোটিভ ট্রেন দেড় ঘণ্টার বেশি বিলম্বে আখাউড়ায় আসে। ট্রেনটির লোকোমোটিভ থেকে এত বেশি ধোঁয়া বেরুচ্ছিল যে যাত্রীদের অনেকে চরম বিরক্তি নিয়ে পেছনের বগিতে চলে যান।</p> <p style="text-align:justify">কথা হয় ট্রেনের সহকারী চালক মো. শামসুদ্দিনের সঙ্গে। তিনি জানান, লোকোমোটিভ বেশি পুরোনো হওয়ায় স্বাভাবিক গতি নিয়ে ট্রেন চালানো যাচ্ছে না। একই কারণে এটা দিয়ে অতিরিক্ত ধোঁয়া বেরুচ্ছে। বেশ কয়েকজন যাত্রীও তাকে ঘিরে ধরে কম গতিতে চলা ও ধোঁয়া নিয়ে জানতে চান।</p> <p style="text-align:justify">চট্টগ্রাম-ঢাকা পথের মহানগর এক্সপ্রেস বুধবার প্রায় দেড় ঘণ্টা বিলম্বে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আসে। ১২ ডিসেম্বর ট্রেনের লোকোমেটিভ (ইঞ্জিন) বিকল হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পাঘাচং স্টেশনে আটকা পড়ে। একই দিন বিকল হয় চট্টগ্রাম-সিলেট পথের পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেনের লোকোমোটিভ। আখাউড়ায় থাকা অতিরিক্ত লোকোমোটিভ পাহাড়িকা এক্সপ্রেসকে আনতে যায়। ঢাকা থেকে আরেকটি লোকোমেটিভ এসে মহানগরকে নিয়ে যায়। এতে দুটি ট্রেনই সেদিন বেশ বিলম্বে চলাচল করে।</p> <p style="text-align:justify">আখাউড়া-নরসিংদী-আখাউড়া পথে নিয়মিত চলাচলকারী আখাউড়ার ব্যবসায়ী আশীষ সাহা জানান, ট্রেনে বিলম্ব এখন নিত্যদিনের ঘটনা। বেশিরভাগ সময়ই ইঞ্জিনের কারণে ট্রেন বিলম্ব হয়। গত ১৬ ডিসেম্বর নরসিংদীতে যাত্রাবিরতি দেওয়ার পর চট্টগ্রাম অভিমুখী চট্টলা এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন নষ্ট হয়। প্রায় দুই ঘণ্টা পর ট্রেনটি আবার ছেড়ে যায়।</p> <p style="text-align:justify">নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক লোকোমোটিভ চালক জানান, যেভাবে ট্রেন চলছে তাতে তারা সামনে ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখতে পাচ্ছেন। পুরোনো লোকোমোটিভগুলো একেবারেই অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। নতুন যেগুলো আনা হয়েছে সেগুলোতেও নানা রকমের ত্রুটি ধরা পড়ছে। এখন থেকে উদ্যোগ না নিলে কিছু ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দিতে হতে পারে।</p>