<p>বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, সময় টিভির বেশ কিছু সাংবাদিককে বরখাস্ত করার কথা জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা এএফপি। দুর্ভাগ্যবশত এই ঘটনাকে এমনভাবে চিত্রিত করেছে যে ছাত্ররা সাংবাদিকদের বরখাস্ত করতে মালিকদের বাধ্য করেছে, যা সত্য নয়।</p> <p>গতকাল বুধবার ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ দাবি করেন। পোস্টে হাসনাত বলেন, “জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে প্রায় দুই হাজার ছাত্র-জনতা নিহত হয়েছে। অনেক টিভি, সংবাদপত্র ও খবরের ওয়েবসাইট বিদ্রোহকালে সাংবাদিকতার ন্যূনতম নৈতিকতা প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা ছাত্র ও প্রতিবাদকারীদের ‘জঙ্গিবাদী’ এবং ‘ইসলামী চরমপন্থী’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। তাদের অমানবিকতার প্রতিবাদ করার জন্য শান্তিপূর্ণভাবে সম্প্রতি সিটি গ্রুপের অফিসে গিয়েছিলাম। কারণ তারা হাসিনার হত্যাকাণ্ডের ব্যাপক সমর্থন ও বৈধতা দিয়েছে।” তিনি আরো বলেন, ‘সময় টিভি এই প্রচেষ্টায় মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। স্টেশনটি গত ১৬ বছরে মানবতার বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার অপরাধকে সমর্থন ও বৈধতা দিয়েছে।’</p> <p>হাসনাত বলেন, ‘এএফপি ঘটনাটি এমনভাবে বর্ণনা করেছে যে আমরা সিটি গ্রুপে প্রবেশ করেছি মানে আমরা বৈধ প্রতিবাদ করার জন্য সেখানে যাইনি। আমরা পুনরায় বলতে চাই, আমরা সময় টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে জুলাইয়ে সময় টিভির জনবিরোধী ভূমিকা নিয়ে কথা বলেছি। বরখাস্তের জন্য আমরা মালিকদের কোনো সাংবাদিকের তালিকা দিইনি। আমরা টিভি স্টেশনের শেয়ারও দাবি করিনি। আমি এই অভিযোগগুলোকে আমার বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে বিবেচনা করি। টিভি স্টেশনের মালিক বা সিটি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কোনো বক্তব্যের ওপর ভিত্তি করে এসব অভিযোগ আসেনি।’</p> <p>হাসনাতকে ধন্যবাদ চাকরিচ্যুত পাঁচ সাংবাদিকের : গত রাতে সময় টিভির চাকরিচ্যুত পাঁচ সাংবাদিকের পক্ষে এক ফেসবুক পোস্টে বলা হয়, ‘অবশেষে মুখ খোলার জন্য হাসনাত আবদুল্লাহকে ধন্যবাদ। উনি যে সিটি গ্রুপের হেড অফিসে গিয়েছিলেন সেটি জানানোর জন্যও ধন্যবাদ। তবে সম্পাদকীয় নীতি বা সংবাদ নিয়ে কোনো আপত্তি থাকলে প্রথমত সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমে প্রতিবাদ পাঠানো; প্রেস কাউন্সিল এমনকি তথ্য মন্ত্রণালয় কিংবা প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং বা গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনে যেতে পারতেন। হাসনাত তা করেননি। উপরোক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো কিংবা অন্তর্বর্তী সরকারের বাইরে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপে যাওয়ার মানে কি? চাকরিচ্যুত কর্মীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো ধরনের তথ্য-প্রমাণ ছাড়া মনগড়াভাবে চরিত্র হনন করে যেসব পোস্ট দেওয়া হয়েছে, সেসব কেন হচ্ছে তার উত্তর দিতে হবে হাসনাত ও তাঁর টিমকে। এ ধরনের কার্যক্রম তো ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সময় আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে।’ সাংবাদিকদের ফেসবুক পোস্টে বলা হয়, ‘হাসিনা আমলে বিশেষ করে জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে সময় টিভির ভূমিকা সম্পর্কে দেশবাসী অবগত। এ নিয়ে কর্তৃপক্ষ তাদের মতো ব্যবস্থাও নিয়েছে। ৫ আগস্ট-পরবর্তী পরিস্থিতিতে চ্যানেলটি সাময়িক বন্ধ থাকার পর নতুন ব্যবস্থাপনায় সেটি পুনরায় সম্প্রচার শুরু করে। এরপর কর্মীদের নিরলস প্রচেষ্টায় স্বাধীন-বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার ফলে পিছিয়ে থাকা অবস্থান থেকে আবারও শীর্ষস্থানে ফিরে আসতে সক্ষম হয়।</p> <p>গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও এর কর্মীদের জীবন-জীবিকা রক্ষায় দায়িত্বশীলরা ভূমিকা রাখবেন, এটাই প্রত্যাশা করি। একই সঙ্গে, তালিকাটি কারা করেছে, কারা এটি প্রণয়নে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ মদদ দিয়েছে, কি উদ্দেশ্যে এটি করেছে; তা বের করতে আমরা হাসনাত আবদুল্লাহর সক্রিয় সহায়তা প্রত্যাশা করছি।’ ফেসবুক পোস্টে চারটি দাবিও জানানো হয়, সেগুলো হলো—‘১. অবিলম্বে চাকরিচ্যুত কর্মীদের পুনর্বহাল করতে হবে। ২. হাসনাত আবদুল্লাহ ও সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোকে স্বাধীন সাংবাদিকতা নিশ্চিত করতে হবে। ৩. জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে শুধু সময় টিভি নয়, সব গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে স্বাধীনভাবে তদন্ত করতে হবে। ৪. গণমাধ্যমের কর্মীদের কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিতে হবে। তারা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে।’ ফেসবুকে পোস্টদাতা সাংবাদিকদের মধ্যে রয়েছেন মো. আরিফুল সাজ্জাত, ওমর ফারুক, দেবাশীষ রায়, কামাল শাহরিয়ার ও বুলবুল রেজা।</p> <p> </p> <p> </p>