<p style="text-align:justify">২০০৪ সালের ২১ আগস্ট  ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় ২৪ জনের প্রাণহানি এবং তিন শতাধিক মানুষের আহত হওয়া, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মামলা সাজিয়ে নিরপরাধ কিছু মানুষকে নির্যাতন-হয়রানির শিকার করা এবং মর্মান্তিক ওই ঘটনার বিচার অনিশ্চিত হয়ে যাওয়ার দায় কাদের? এই প্রশ্ন এখন অনেকের।</p> <p style="text-align:justify">গত ১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট এ মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত সব আসামিকে খালাস দিয়ে রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেন, আইনের ভিত্তিতে মামলার অভিযোগ গঠন করা হয়নি। ২৫ জন সাক্ষীর জবানবন্দির একটি আরেকটিকে সমর্থন করেনি। কোনো চাক্ষুষ সাক্ষী ছিল না।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"> <p style="text-align:justify"><strong>আরো পড়ুন</strong></p> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3" style="text-align:justify"><img alt="নতুন বইয়ে তিন নেতার সঙ্গে শেখ মুজিব, স্বাধীনতার ঘোষক জিয়া" height="66" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/2025/01/02/1735790563-0e3edb44563d5bd4fedbe8c27fe30ee3.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p style="text-align:justify">নতুন বইয়ে তিন নেতার সঙ্গে শেখ মুজিব, স্বাধীনতার ঘোষক জিয়া</p> </div> </div> </div> <p style="text-align:justify"><a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/campus-online/2025/01/02/1464026" target="_blank"> </a></p> </div> </div> <p style="text-align:justify">মুফতি হান্নানের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির কোনো প্রমাণযোগ্য বা আইনগত ভিত্তি নেই। কারণ জীবদ্দশায় তিনি তাঁর স্বীকারোক্তি প্রত্যাহার করে গেছেন। ফলে বিচারিক আদালতের বিচারটিই অবৈধ। এই রায় এমন এক সময় দেওয়া হয়, যখন দেশ স্বৈরাচারমুক্ত।</p> <p style="text-align:justify">বিচার বিভাগে কর্তৃত্ববাদী কোনো শাসকের প্রভাব নেই। আলোচিত ওই রায়ের পর মামলাটি কেন ও কিভাবে সাজানো হয়েছিল, ‘জজ মিয়া’ কি আসলেই সাজানো নাটক, গ্রেনেড না চেনা নিরপরাধ-নিরীহ ব্যক্তি—এসব প্রশ্নের উত্তর মিলছে। জানা যাচ্ছে কিভাবে একজন সন্ত্রাসী ও ভয়ংকর অপরাধে একাধিক মামলার আসামিকে কারা ‘জীবনে গ্রেনেড দেখিনি, থানায় মামলা নেই’ বলে প্রচার চালিয়ে এ মামলার প্রথম তদন্তকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছিল। কোনো পত্রিকা ‘গভীর অনুসন্ধান’ হিসেবে ‘ইট ওয়াজ হাওয়া ভবন প্লট’ নামের প্রতিবেদন ছাপিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা এবং গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক কর্মকর্তাদের আসামি করতে আওয়ামী লীগ সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করে।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"> <p style="text-align:justify"><strong>আরো পড়ুন</strong></p> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3" style="text-align:justify"><img alt="এবার ট্রাম্পের হোটেলের সামনে টেসলার সাইবারট্রাকে বিস্ফোরণ" height="66" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/2025/01/02/1735790739-e06d061a77a7bde916b8a91163029d41.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p style="text-align:justify">এবার ট্রাম্পের হোটেলের সামনে টেসলার সাইবারট্রাকে বিস্ফোরণ</p> </div> </div> </div> <p style="text-align:justify"><a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/world/2025/01/02/1464028" target="_blank"> </a></p> </div> </div> <p style="text-align:justify">এদিকে গত ১৯ ডিসেম্বর প্রকাশিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ে এই অভিমত দেওয়া হয় যে যথাযথ ও বিশেষজ্ঞ সংস্থার মাধ্যমে নতুন করে তদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে এ মামলা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো উচিত। ১ ডিসেম্বর রায় ঘোষণার দিন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা উচিত বলে নিজের মত  জানান।</p> <p style="text-align:justify">নতুন করে মামলাটি তদন্তের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি আছে কি না জানতে চাইলে গতকাল বুধবার অ্যাটর্নি জেনারেল কালের কণ্ঠকে বলেন, রায় না দেখে এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না। </p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"> <p style="text-align:justify"><strong>আরো পড়ুন</strong></p> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3" style="text-align:justify"><img alt="সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সেবা পাচ্ছেন ১ কোটি ২৬ লাখ মানুষ" height="66" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/2025/01/02/1735789484-a9d877130b36b0d297e994d3f450f4d1.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p style="text-align:justify">সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সেবা পাচ্ছেন ১ কোটি ২৬ লাখ মানুষ</p> </div> </div> </div> <p style="text-align:justify"><a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/national/2025/01/02/1464024" target="_blank"> </a></p> </div> </div> <p style="text-align:justify">আলোচিত ওই মামলায় আসামিপক্ষের আইনজীবী এস এম শাহজাহান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মামলাটির তদন্ত নিয়ে হাইকোর্টের যে পর্যবেক্ষণ (পুনঃ তদন্তের), তাতে আইনে কোনো বাধা নেই। কিন্তু কথা হচ্ছে, কোনো একটি ঘটনা বা অপরাধের দুইবার বিচার হয় না। এরই মধ্যে যেসব আসামি মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন, তাঁদের আর বিচারের আওতায় আনা যাবে না।’</p> <p style="text-align:justify">ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ এই আইনজীবী বলেন, ‘এক হিসাবে এই মামলার বিচার হয়নি। কারণ সব আসামিই খালাস পেয়েছেন। এর প্রধান কারণ মামলার সঠিক তদন্ত না হওয়া। ঘটনার পর পরই তখনকার ক্ষমতাসীন দল (বিএনপি) সম্পর্কে যেটা বলা হয়, তারা জজ মিয়া নাটক সাজিয়েছিল। পরে যখন পটপরিবর্তন হলো, তখন তারেক রহমানসহ নিরপরাধ কিছু মানুষকে অযথাই এই মামলায় টেনে আনা হয়েছে।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"> <p style="text-align:justify"><strong>আরো পড়ুন</strong></p> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3" style="text-align:justify"><img alt="বৈষম্যহীনভাবে যোগ্যদের সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় আনা হবে" height="66" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/2025/01/02/1735789198-b379325dc50595f24f2751bd7628b878.jpeg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p style="text-align:justify">বৈষম্যহীনভাবে যোগ্যদের সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় আনা হবে</p> </div> </div> </div> <p style="text-align:justify"><a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/national/2025/01/02/1464022" target="_blank"> </a></p> </div> </div> <p style="text-align:justify">সব মিলিয়ে সঠিক তদন্তটা এই মামলায় হয়নি। হাইকোর্ট যে কথাটা (বিশেষজ্ঞ তদন্ত সংস্থার মাধ্যমে মামলাটি নতুন করে তদন্তের পদক্ষেপ নেওয়া) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলেছেন, ‘আমি মনে করি এটা যুক্তিযুক্ত। কারণ এত বড় ঘটনা, এত মানুষের জীবন গেল—কাজেই এই ঘটনার যথাযথ তদন্ত হওয়া দরকার। নতুনভাবে যদি তদন্তের আদেশ হয়, তবে সেটা অযৌক্তি হবে না। আইনের শাসনের জন্য একটি ভালো উদাহরণ হবে।’</p> <p style="text-align:justify">তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্য যুক্ত হওয়ায় মামলাটির অপরাধের গুরুত্ব (গ্রাভিটি অব দ্য অফেন্স) আড়াল হয়েছে। ৬১ জনের সাক্ষ্য নেওয়ার পর কোনো মামলায় দ্বিতীয়বার অভিযোগপত্র দেওয়ার নজির বাংলাদেশ কেন, এই উপমহাদেশের কোনো দেশে পাওয়া যাবে না।’</p> <p style="text-align:justify">তিনি  আরো বলেন, ‘স্বাধীন তদন্ত বা অধিকতর তদন্ত বলতে বোঝায়, সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে যদি কোনো আসামির নাম আসে, যার বা যাদের নাম এজাহারে ছিল, পরে অভিযোগপত্র দেওয়ার সময় বাদ দেওয়া হয়েছে, তখন অধিকতর তদন্ত হতে পারে। কিন্তু এই মামলায় যেটা হয়েছে, তা হলো, ৬১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণের পর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) একটা দরখাস্ত দিয়ে বললেন যে  গ্রেনেডের উৎস খুঁজে বের করতে হবে। </p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"> <p style="text-align:justify"><strong>আরো পড়ুন</strong></p> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3" style="text-align:justify"><img alt="রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় চিন্ময়ের শুনানি আজ, সতর্ক অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী" height="66" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/2025/01/02/1735788528-e06d061a77a7bde916b8a91163029d41.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p style="text-align:justify">রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় চিন্ময়ের শুনানি আজ, সতর্ক অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী</p> </div> </div> </div> <p style="text-align:justify"><a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/country-news/2025/01/02/1464021" target="_blank"> </a></p> </div> </div> <p style="text-align:justify">হোতা কারা, খুঁজে বের করতে হবে। তখন আদালত ফের তদন্তের নির্দেশ দিলেন। এরপর মুফতি হান্নানকে দিয়ে দ্বিতীয়বার একটি স্বীকারোক্তি করিয়ে তারেক রহমানসহ কয়েকজনের নাম অন্তর্ভুক্ত করানো হলো। কোনো মামলায় এ রকম নজির আগে-পরে ছিল না। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য যোগ হওয়ায় মামলাটি মূল স্রোত থেকে সরে গেছে, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না।’</p> <p style="text-align:justify">এই আইজীবী বলেন, ‘হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সরকার যদি আপিল করে, তবে হাইকোর্টের রায়টি স্থগিত হয়ে যাবে। তখন রায়ের কার্যকারিতা থাকবে না। আপিল বিভাগে মামলাটির নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কিছু করার থাকবে না।’</p> <p style="text-align:justify"><strong>জজ মিয়া কি আসলেই নিরীহ?</strong></p> <p style="text-align:justify">বিএনপি আমলের প্রথম তদন্তে গ্রেনেড হামলায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে জজ মিয়া নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। কিন্তু তখন জজ মিয়ার সংশ্লিষ্টতাকে সাজানো নাটক হিসেবে প্রচার করা হয়।</p> <p style="text-align:justify">প্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইন সম্প্রতি ‘২১ আগস্ট নিয়ে ভয়ংকর নাটক সাজায় ওরা’ নামে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে উল্লেখ করা হয়, প্রথম আলো গ্রেনেড হামলায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গ্রেপ্তার জজ মিয়া ‘জীবনে গ্রেনেড দেখিনি, থানায় মামলা নেই’ বলে প্রচার করলেও আসলে তার নামে পাঁচটিরও বেশি মামলা ছিল। </p> <p style="text-align:justify">সূত্রাপুর থানায় (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল মামলা ৭৩৬৯/৯১) অস্ত্র-বিস্ফোরক ও ছিনতাইয়ের মামলায় সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ড হয় তার। ২০০১ সালের ২ সেপ্টেম্বর  ৩৮৫, ৩২৪, ৩২৬ ও ৩০৭ ধারায় তেজগাঁও থানায় ২২ নম্বর মামলা দায়ের করা হয়। ২০০১ সালের ৩০ নভেম্বর মগবাজারের টাঙ্গাইল হোটেলে বাবর হত্যা মামলার আসামি ছিল জজ মিয়া। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার কয়েক মাস আগে রাজধানীতে তার বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা হয়। সিটি হচ্ছে গুলশানে রহমত হত্যা মামলা। </p> <p style="text-align:justify">একসময় রাজধানীর টিকাটুলীতে একটি মেসে থাকত জজ মিয়া।  সে সময় তাকে অস্ত্র ও বোমাসহ গ্রেপ্তার করা হয়। সেই মামলায় তার সাত বছর জেল হয় এবং দুই বছর পর জামিনে মুক্তি পায়। জজ মিয়ার আসল নাম মোহাম্মদ জালাল আহম্মেদ হলেও একাধিক নাম ব্যবহার করত। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের শাসন আমলে ঢাকায় উঠতি সন্ত্রাসী হিসেবে যারা পরিচিতি পেয়েছিল, তাদের অন্যতম জালাল আহম্মেদ ওরফে জজ মিয়া। </p> <p style="text-align:justify">নাখালপাড়ার নুরানী মসজিদের আশপাশ এলাকায় জজ মিয়া যে রায় দিত, সেটাই কার্যকর হতো। সে জন্যই তার নাম হয় জজ মিয়া। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার অভিযোগ থেকে বের হয়ে এসে জজ মিয়া বিভিন্ন সময় পেশাগত পরিচয় আড়াল করে নিজেকে কখনো সিডি ব্যবসায়ী, কখনো ফলবিক্রেতা, আবার কখনো গাড়িচালক হিসেবে পরিচয় দিয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">এ বিষয়ে এ মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত  এএসপি এম এ  রশীদ গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, জজ মিয়াকে নিরীহ বলে প্রমাণ করা হয় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে।  গ্রেনেড হামলার আগে তার বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র ও বিস্ফোরক রাখা এবং ছিনতাইয়ের অভিযোগে অনেক মামলা ছিল।</p> <p style="text-align:justify"><strong>নতুন গল্পের সেই প্রতিবেদন</strong></p> <p style="text-align:justify">আদালত সূত্র জানায়, ২০০৭-৮ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে আলোচিত গ্রেনেড হামলা মামলাটির পুনঃ তদন্ত শুরু হলে মুফতি হান্নান ও বিএনপি নেতা সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিনের নাম উঠে আসে। সে সময় তদন্তকারীরা প্রচার করেন, মাওলানা তাজউদ্দিনের সহায়তায় মুফতি হান্নানের নেতৃত্বে এ হামলা চালানো হয়। সে সময় তত্ত্বাবধায় সরকার সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পরিবারের ওপর দমন-পীড়ন চালালেও ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় ‘হাওয়া ভবন’ কিংবা তারেক রহমানকে সংশ্লিষ্ট করার অপচেষ্টা করেনি। </p> <p style="text-align:justify">২০০৮ সালের ১১ জুন হত্যার অভিযোগ এবং বিস্ফোরক আইনে আলাদা দুটি অভিযোগপত্র দেন সিআইডির জ্যেষ্ঠ এএসপি ফজলুল কবির। হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানসহ ২২ জনকে সেখানে আসামি করা হয়। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে ২০০৮ সালের ২৯ অক্টোবর অভিযোগ গঠন করে তাঁদের বিচারও শুরু হয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় আসার পর ওই মামলার অধিকতর তদন্তের উদ্যোগ  নেয়। </p> <p style="text-align:justify">২০০৯ সালের ২৬ অক্টোবর ডেইলি স্টারে প্রকাশ করা হয়, কথিত গভীর অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ‘ইট ওয়াজ হাওয়া ভবন প্লট’। এতে কোনো প্রমাণ ছাড়াও উচ্চপর্যায়ের সূত্রে বলা হয়, হাওয়া ভবনে গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনা নিয়ে অন্তত ৯ জনের একাধিক বৈঠক হয়। বিএনপি নেতা তারেক রহমান, হারিস চৌধুরী লুত্ফুজ্জামান বাবর, একজন শীর্ষ জামায়াত নেতাসহ   গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক কর্মকর্তারাও ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত। ওই বছরের ১৫ আগস্ট হাওয়া ভবনে আবার তাঁদের বৈঠক হয়।  </p> <p style="text-align:justify">এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর শুরু হয় অধিকতর তদন্ত। সিআইডির বিশেষ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দ (তিনি পরে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন) অধিকতর তদন্ত শেষে ২০১১ সালের ৩ জুলাই আসামির তালিকায় আরো ৩০ জনকে যোগ করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেন। সেখানে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ চারদলীয় জোট সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী ও বিএনপি-জামায়াতের নেতাদের নাম আসে, যাঁদের নাম ডেইলি স্টারের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছিল।</p> <p style="text-align:justify"><strong>উলফাকে দায়ী করে প্রচার </strong></p> <p style="text-align:justify">২০০৭ সালের ১৯ জানুয়ারি বিডিনিউজ২৪ডটকমে ‘উলফা কমান্ডার অ্যাডমিটস অ্যাটাকিং হাসিনা র‌্যালি ইন ২০০৪’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। বিডিনিউজের ভারতের গুয়াহাটির প্রতিবেদক স্মিতা মিশ্রর লেখা ওই প্রতিবেদনে আসাম পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান খগেন শর্মাকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, পল্লব সইকিয়া নামের এক উলফা জঙ্গি আসাম পুলিশ ও ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা আইবির জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, উলফার সামরিক শাখার প্রধান পরেশ বড়ুয়ার নির্দেশে তারা ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকায় আওয়ামী লীগের সমাবেশে হামলা করেন। </p> <p style="text-align:justify">পল্লব সইকিয়া ২০০৬ সালের ১৪ ডিসেম্বর শিলংয়ে গ্রেপ্তার হন। তিনি আসাম পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ এবং ভারতের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর জিজ্ঞাসাবাদের সময় জানান, উলফার সামরিক শাখার প্রধান পরেশ বড়ুয়ার সুস্পষ্ট নির্দেশনায় এই হামলা চালানো হয়। তাঁর নেতৃত্বে উলফার ১১ জন যোদ্ধা গ্রেনেড ও অ্যাসল্ট রাইফেল নিয়ে ওই হামলা চালান। ঢাকার গুলশানের একটি বাড়িতে বসে পরেশ বড়ুয়া ওই বছরের ২৬ জুলাই হামলার পরিকল্পনার কথা বলেন। বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার কয়েকজন কর্মকর্তা ওই হামলা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করেন। তবে পল্লব সইকিয়া তাঁদের চেনেন না।</p> <p style="text-align:justify">পল্লব সইকিয়া জানান, হামলায় তাঁর সেকেন্ড-ইন-কমান্ড ছিলেন রুবুল আলী। রুবুল ২০০৬ সালের মে মাসে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে এক সংঘর্ষে মারা যান। ২১ আগস্টে হামলাকারী উলফার ১১ জনের মধ্যে ছয়জন ওই সময় জীবিত ছিলেন বলেও দাবি করেন পল্লব।</p> <p style="text-align:justify">ভারতীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বিডিনিউজকে বলেন, বাংলাদেশের যেকোনো বাহিনী চাইলে পল্লবকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে। তবে যাতে কোনো ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি না হয়, সে জন্য তারাও ওই সময় থাকতে চান। চাইলে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলও তাঁকে জেরা করতে পারে।</p> <p style="text-align:justify">তবে পল্লবের দেওয়া ওই তথ্য অস্বীকার করে উলফা। উলফার মুখপাত্র রুবি ভুঁইয়া বিডিনিউজকে বলেন, ‘তিনি হয়তো প্রলাপ বকছেন, নয়তো তাঁকে চাপ দিয়ে এসব বলতে বাধ্য করা হয়েছে। আমরা অন্য কোনো দেশের রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামাই না। আমরা আসামকে ভারতের ঔপনিবেশিক নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত করতে সংগ্রাম করছি।’</p> <p style="text-align:justify">বিডিনিউজে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদন বাংলাদেশের কয়েকটি সংবাদপত্রেও প্রকাশ করা হয়। তবে দেশের সাবেক একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তার মতে, ২১ আগস্টের ওই হামলায় উলফার সংশ্লিষ্টতার খবরের সূত্র ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা; নিরপেক্ষ কোনো সূত্রের তথ্য নয়। ওয়ান-ইলেভেন-পরবর্তী সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং তার পরের আওয়ামী লীগ সরকার এ বিষয়টি খতিয়ে দেখেছে—এমন তথ্যও প্রকাশ পায়নি।</p> <p style="text-align:justify"><strong>২০ বছর আগের প্রশ্নগুলো আবার উঠছে </strong></p> <p style="text-align:justify">২০ বছর আগেই প্রশ্ন উঠেছিল, আওয়ামী লীগ সেদিন সমাবেশের স্থান মুক্তাঙ্গন থেকে হঠাৎ কেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নেওয়া হয়েছিল? পূর্বঘোষিত কর্মসূচি থাকলেও কেন ট্রাকের ওপর দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিলেন শেখ হাসিনা? শুধু কি গ্রেনেড বিস্ফোরণ হয়েছিল, নাকি প্রাণঘাতী নয়—এমন বোমাও ছিল? শেখ হাসিনার বক্তব্যের মাঝে হামলা না করে কেন হামলাকারীরা বক্তব্য শেষ করার সুযোগ দিয়েছিল? </p> <p style="text-align:justify">ট্রাকের পেছনে যে বোমা বিস্ফোরিত হয়েছিল তাতে হতাহত না হওযার কারণ কী? শেখ হাসিনা ট্রাক থেকে নেমে কিছু দূর হেঁটে নিজের গাড়িতে ওঠার সময় প্রশিক্ষিত হামলাকারীদের গুলি কিভাবে এড়াতে পারলেন? একমাত্র আইভী রহমান ছাড়া আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা মৃত্যু এড়াতে পারলেন কিভাবে? শেখ হাসিনা মার্সিডিজ গাড়ির কাচে যে চিহ্ন দেখানো হয়েছিল তা কি আসলেই গুলির চিহ্ন? এ হামলার জন্য আসলে করা দায়ী?</p> <p style="text-align:justify">ঘটনা তদন্তে বিচারপিত জয়নুল আবেদীন কমিশনের প্রতিবেদনে এ ঘটনার জন্য প্রতিবেশী দেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থাকে দায়ী করা হয়। <br /> অবসরপ্রাপ্ত  এএসপি এম এ রশীদও গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, আমাদেরও মনে হয়েছিল, ওই ঘটনায় প্রতিবেশী দেশের হাত রয়েছে। তবে নানা ধরনের সমালোচনা ও প্রতিবন্ধকতার কারণে বিস্তারিত তদন্ত করতে পারিনি।</p>