<p style="text-align:justify">দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার পৌর শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মাকড়াই এলাকায় বসুন্ধরা শুভসংঘের পক্ষ থেকে বিনা মূল্যে তিন মাসের সেলাই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল বছরখানেক আগে। আশপাশের দরিদ্র পরিবারের পড়াশোনা করা মেয়ে এবং কয়েকজন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী নারী এই প্রশিক্ষণে অংশ নেন। প্রশিক্ষণ শেষে ২০ নারীর হাতে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে বিনা মূল্যে সেলাই মেশিন তুলে দেওয়া হয়েছিল। সেলাই মেশিন পাওয়ার পর এই নারীদের সংসারে কতটুকু সচ্ছলতা এসেছে, তা দেখতে প্রত্যেকের বাড়িতে গিয়েছিলাম।</p> <p style="text-align:justify">দীর্ঘ আলাপচারিতায় উঠে এলো তাদের দিনবদলের গল্প। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নারীরা এখন সেলাইয়ের কাজ করে নিজেদের স্বাবলম্বী করেছেন এবং পরিবারের আর্থিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। তাদের একজন আলফি বেগম (২৪)। স্বামী কাঠমিস্ত্রির কাজ করেন। সব সময় কাজ পান না। সংসারে অভাব-অনটন লেগেই থাকত। বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে সেলাই মেশিন পাওয়ার পর আলফি এখন ঘরে বসে পাড়া-প্রতিবেশীদের কাপড় সেলাই করেন। প্রতি মাসে কমবেশি দু-তিন হাজার টাকা রোজগার করেন।<br /> আলফি বেগম বলেন, ‘আগে স্বামীর একার আয়ে ঠিকমতো সংসারই চলত না। দুই ছেলের পড়ালেখার খরচ কিভাবে দেব, ছেলেরা পড়তে পারবে কি না, এগুলো ভাবতাম। এখন আমিও আয় করি। দুই ছেলেকে স্কুলে পড়াই। শুরুর দিকে একটু কম আয় ছিল, তখন ব্যাংকে একটি ডিপিএস করেছি।</p> <p style="text-align:justify">এখন আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আয় হয়। এখন সংসারের খরচের পাশাপাশি দুটি ডিপিএস চালাই। সবই সম্ভব হয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপের জন্য। তারা আমাকে কাজ শিখিয়ে সেলাই মেশিন দেওয়ায় আমি এখন স্বাবলম্বী।’ স্বামী পরিত্যক্তা মনিকা মুরমু (৩৬) বলেন, ‘আগে দিনমজুরি করতাম। যে টাকা পেতাম, তা দিয়ে ছেলের পড়াশোনার খরচ চালানো কঠিন ছিল। এখন ঘরে বসেই মাসে দুই হাজার টাকা আয় করি। ছেলে বিনা মূল্যে বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুলে পড়ছে। সংসারের আর্থিক সমস্যা এখন একেবারেই কেটে গেছে।’ শহর থেকে একটু দূরের গ্রামের বাসিন্দা সুফিয়া বেগম (৫৫) বলেন, ‘আগে কাপড় সেলাই করতে শহরে যেতে হতো। এখন গ্রামে বসেই ভালো মানের সেলাইয়ের কাজ করিয়ে নিতে পারছি। শহরের চেয়ে মজুরিও কম, তাই খুব ভালো লাগে। যারা বসুন্ধরা থেকে বিনা মূল্যে সেলাই মেশিন পেয়েছে, তারা কম টাকায় কাপড় সেলাই করে দেয়।’</p> <p style="text-align:justify">ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী নারী রিতা হেমব্রম খুব কষ্টে দিন কাটাতেন। স্বামী দিনমজুরের কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘মেয়েটাকে অনেক কষ্টে নার্সিংয়ে ভর্তি করিয়েছি। তার পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় ছিলাম। বসুন্ধরা গ্রুপ থেকে সেলাই মেশিন পাওয়ার পর নিয়মিত সেলাইয়ের কাজ করছি। মেয়ের পড়াশোনা ঠিকমতো চলছে। কিছু টাকা জমিয়ে অল্প জমি চুক্তিতে নিয়েছি। আমার স্বামী অন্যের জমিতে কাজ করার পাশাপাশি এখন চুক্তিতে নেওয়া জমিতেও চাষ করেন। আমরা খুব ভালো আছি। এখন আর আগের মতো কষ্ট করতে হয় না।’</p> <p style="text-align:justify">বীরগঞ্জ উপজেলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি কৃষ্ট চন্দ্র সাহা বলেন, ‘বসুন্ধরা শুভসংঘের মানবিক কাজগুলো অতুলনীয়। তাদের উদ্যোগে অসচ্ছল নারীরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারছে, যা আমাদের সমাজের জন্য একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।’</p>