<p>চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে শুক্লা দে (৩৮) নামের এক নারী কর্মকর্তা আত্মহত্যা করেছে। শনিবার (৪ জানুয়ারি) বিকেলে উপজেলার শ্রীপুর-খরণদ্বীপ ইউনিয়ন ৩ নম্বর ওয়ার্ড পাল পাড়ার জুনি পালের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। শুক্লা রান্না ঘরের চালের ডাসার সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে জানান তাঁর স্বামী সিদুল পাল। শুক্লা দে রূপসা সার্ভিস গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতির বোয়ালখালী শাখায় ফিল্ড অফিসার হিসেবে চাকরি করতেন। তার এক মেয়ে রক্তিমা পাল হাওলা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী ও এক ছেলে ঋক্তিক পাল অনার্সে প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত আছেন।</p> <p>তার স্বামী সিদুল পাল বলেন, সংস্থাটির কানুনগোপাড়া শাখায় ২০২৩ সালের মে মাস থেকে ফিল্ড অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। ওই সংস্থা এলাকায় মানুষজনকে ক্ষুদ্র ঋণ দেয়। এসব ঋণ কিস্তি আকারে আদায় করতেন শুক্লা। চাকরিরত অবস্থায় শুক্লার সঙ্গে গ্রাহকের আর্থিক লেনদেনের বিরোধ হলে শুক্লা তার বেতন থেকে পরিশোধ করবেন বলে জানান এবং গত নভেম্বর মাসে বেতন থেকে ৬ হাজার টাকা কর্তনও করেন। এরপরেও সংস্থার কানুনগোপাড়া শাখার ম্যানেজার কাঞ্চন দেবনাথ শুক্লাকে অপমান করতে থাকেন প্রতিনিয়ত। পরবর্তীতে পটিয়া উপজেলার ধলঘাট এলাকায় বদলি করেন শুক্লাকে। সেখানেও কাঞ্চন দেবনাথের প্ররোচনায় নন্দন, চিনু বিশ্বাস ও পলাশ নাথ দ্রুত সময়ের মধ্যে টাকা পরিশোধের কথা বলে মানসিক নির্যাতন করতে থাকেন। মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তিনি আত্মহত্যা করেন।</p> <p>তবে শুক্লার স্বামীর অভিযোগ অস্বীকার করে নন্দন দে ও চিনু বিশ্বাস বলেন, শুক্লা গত দেড় বছর ধরে আমাদের সংস্থায় কাজ করছে। গ্রাহক থেকে কিস্তির নির্দিষ্ট টাকার চেয়ে বাড়তি ৪ লাখ ৮ হাজার টাকা দফায় দফায় নিয়েছেন কিন্তু সে বাড়তি টাকা খাতায় না তুলে ব্যক্তিগত কাজে খরচ করেছেন। এ নিয়ে গত তিন মাস আগে তার সঙ্গে গ্রাহকদের একটি বিরোধ সৃষ্টি হয় এবং স্থানীয় সাবেক চেয়ারম্যান আজিজুল হক উভয় পক্ষের মাধ্যমে মিমাংসা করে দেন। ৪ লাখ ৮ হাজার টাকার মধ্যে ২ লাখ ৪ হাজার টাকা গ্রাহক সমিতিতে চালাবে বাকি ২ লাখ ৪ হাজার টাকা শুক্লা সমিতিকে দেবে। কিন্তু শুক্লা এক সঙ্গে দিতে না পারায় সমিতির কর্মকর্তাদের সম্মতিতে প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা সে সমিতিতে দেবে। গ্রহকদের সঙ্গে একটি মতবিরোধ হওয়ায় সে নিজেই পটিয়া ধলঘাট শাখায় যোগদান করেন।<br /> তাকে কেউ মানসিক নির্যাতন করা করেনি এবং বেতন থেকে টাকাও কেটে রাখা হয়নি। তার ১৫ হাজার টাকা বেতন ছিল। চিনু বিশ্বাস বলেন, আমার ধারণা তার স্বামীর কারণে সে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে। তার স্বামীকে ধরলে সব সত্যিটা বের হয়ে আসবে।</p> <p>স্থানীয় বাসিন্দা জুনু পাল বলেন, সম্ভবত টাকা আদায় করতে না পারার কারণে অথবা অফিসে এ টাকার জন্য অপমান করার কারণে সে আত্মহত্যা করেছেন।</p> <p>এদিকে খবর পেয়ে শনিবার রাতে থানা পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন। এরপর ময়নাতদন্তের জন্য রবিবার সকালে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তার মরদেহ পাঠানো হয়েছে। পরে সন্ধ্যা ৬টার দিকে বাড়িতে এনে তাকে দাহ করা হয়।</p> <p>বোয়ালখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম সরোয়ার বলেন, শুক্লার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ অনুযায়ী মামলা নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত প্রতিবেদন আসলে বিস্তারিত জানা যাবে।</p>